গল্পে গল্পে শিশুদের কুরআন শেখা.....১
লিখেছেন লিখেছেন আফরোজা হাসান ০১ মার্চ, ২০১৪, ০৪:৫২:৫৮ বিকাল
আজ মিহিরের মনে অনেক আনন্দ কারণ দেড়মাস পর দাদুভাই আর দাদুমনিকে আবার কাছে পেয়েছে। দুজনই হজ্জ করতে সৌদিআরব গিয়েছিলেন। মিহিরের জন্য অনেক উপহার নিয়ে এসেছেন তারা। সব উপহারের মধ্যে থেকে কাবা ঘরের শোপিস হাতে নিয়ে মিহির বলল, এটা দিয়ে আমি কি করবো দাদুভাই? দাদুভাই মিহিরকে কাছে টেনে হেসে বললেন-
তুমি জানো এটা কি?
হুম জানি তো এটা হচ্ছে কাবা ঘর। এখানেই তো তোমরা গিয়েছিলে হজ্জ করতে। আচ্ছা দাদুভাই আল্লাহই কি এটা বানিয়েছেন?
(হেসে)না দাদুভাই। তবে আল্লাহর নির্দেশে ইবরাহীম(আ)তাঁর ছেলে ইসমাইল(আ)কে নিয়ে কাবা ঘর বানিয়েছিলেন। সে এখন থেকে বহু বহু বছর আগের কথা। একবার কি হয়েছিলো জান?
কি হয়েছিলো দাদুভাই?
আবরাহা নামে এক দুষ্টু রাজা ছিল। সে ঠিক করেছিল সেই কাবাটা সে ভেঙে ফেলবে। কারণ তার ছিল অনেক শক্তি। ইবরাহীম(আ)আর ইসমাইল(আ)আল্লাহর কথা মত কাবা বানানোর পর থেকে অনেক দূর থেকে মানুষরা আল্লাহর ইবাদত করার জন্য কাবায় আসতো। তাই তার মনে কাবাকে ঘিরে খুব হিংসার সৃষ্টি হলো। সে অনেক টাকা-পয়সা খরচ করে দামি দামি জিনিসপত্র দিয়ে ভীষণ সুন্দর একটা উপাসনালয় বানালো। তারপরে মানুষকে দাওয়াত দিলো যাতে সবাই তার উপাসনালয়ে আসে। কিন্তু কেউ এলো না বরং সবাই আগের মতোই কাবা ঘরেই যাচ্ছিল ইবাদতের করতে। তাই সে ভীষণ রেগে ঠিক করলো কাবা ঘর ধ্বংস করে দিবে।
দুষ্টু রাজাটা তখন কি করলো দাদুভাই?
সে তখন অনেক সৈন্য সামন্ত আর বিশাল এক হাতি নিয়ে কাবা ধ্বংসের উদ্দেশ্যে রওনা করলো।
তারপর কি হলো দাদুভাই?
আবরাহা তার সৈন্য বাহিনী আর বিশাল এক হাতি নিয়ে কাবা ধ্বংস করতে আসছে শুনে তো মক্কার মানুষেরা অনেক ভয় পেয়ে গেল। তাদের তো অস্ত্র বলতে ছিল শুধু ঢাল, তলোয়ার আর বর্ষা। এত বিশাল সেনাবাহিনীর সাথে কিভাবে লড়াই করবে তারা ভেবে পাচ্ছিলো না। তাই তারা দুষ্টু রাজা ও তার সৈন্যদের কোন বাঁধা দিতে চেষ্টা করলো না।
মিহির ভীত কণ্ঠে বলল, তাহলে দুষ্টু রাজা ও তার সৈন্যরা কাবা ঘর ভেঙ্গে ফেলেছিল?
না দাদুভাই দুষ্টু রাজা ও তার সৈন্যদের সেই ক্ষমতা কোথায় যে তারা আল্লাহর ঘর ভেঙ্গে ফেলবে। আল্লাহ তো সর্ব শক্তিমান। নিজের ঘরকে দুষ্টুদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য আল্লাহ আকাশ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ছোট ছোট আবাবীল পাখী পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।
হাসি ফুটে উঠলো মিহিরের চেহারাতে। উচ্ছ্বাসিত কণ্ঠে বলল, আবাবীল পাখীরা দুষ্টু রাজা ও তার সৈন্যদের সাথে লড়াই করেছিল?
হেসে, তা বলতে পারো।পাখীদের প্রত্যেকের কাছে ছিল তিনটি করে পাথর। যা তারা সেনা বাহিনীর উপরে ছুড়ে দিয়েছিল। সেই ছোট্ট ছোট্ট নূরী পাথর বৃষ্টির ফোঁটার ঝরে পড়েছিল দুষ্টু রাজা ও তার সৈন্যদের উপর। যারফলে দুষ্টু রাজা ও তার সৈন্যদের ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।
আনন্দে লাফিয়ে উঠে হাততালি দিয়ে মিহির বলল, খুব ভালো হয়েছে। কত্তো বোকা আল্লাহর ঘর ভাঙতে এসেছিল। উচিত শিক্ষা হয়েছে দুষ্টু রাজা ও তার সৈন্যদের।
হেসে নাতীকে কোলে টেনে নিয়ে, ঠিক বলেছো দাদুভাই দুষ্টু রাজা ও তার সৈন্যরা ভীষণ বোকা ছিল। এমন অনেক বোকা মানুষ আছে যারা ক্ষমতা ও সম্পদের কারণে নিজেদেরকে অনেক বিশাল কিছু মনে করে। যারফলে তারা আল্লাহ্র সাথে লড়াই করতে চায়। কিন্তু...
দাদার মুখ থেকে কথা ছিনিয়ে নিয়ে বলল, আল্লাহ তো সর্বশক্তিমান তাই কেউ জিততে পারে না লড়াইতে।
হেসে, একদম ঠিক বলেছো। আল্লাহ্র বিরুদ্ধে যারা লড়াই করতে আসে দুষ্টু রাজা ও তার সৈন্যদের মতই করুণ অবস্থা হয় তাদের।
চোখের সামনে কাবাঘরের শোপিসটা তুলে ধরলো মিহির। কিছুক্ষণ দেখে বলল, আমি আল্লাহর ঘরকে কোথায় রাখবো দাদাভাই?
তুমি কোথায় রাখতে চাও?
একটু চিন্তা করে মিহির বলল, আমার পড়ার টেবিলের উপর। এক্ষুনি রেখে আসি আমি। দাদার কোল থেকে নেমে নিজের ঘরের দিকে ছুট লাগালো মিহির।
বিষয়: বিবিধ
১৪২৫ বার পঠিত, ৩৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যাযাকাল্লাহু খাইরান।
একটি বিষয় আপু - আবরাহার সেনাদলে হাতির সংখ্যা ছিল একটি (সূত্রঃ দা স্পিরিট অফ ইসলাম - সৈয়দ আমীর আলী)।
পবিত্র কুরআনেও সূরা ফিল-এ হাতি শব্দটি এক বচনে এসেছে।
"Seest thou not how thy Lord dealt with the Companions of the Elephant?" (105:1)
আমার ভুল হলে ক্ষমা করবেন।
বারাকাল্লাহু ফীক।
অনেক শুকরিয়া। বারাকাল্লাহু ফীক।
অনেক ধন্যবাদ সুন্দর গল্পটির জন্য। কালেকশনে রাখলাম।
কালকের ভবিষ্যত।চমত্কার।
সিরিজটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বড়দের জন্যেও মনে হল।
শুকরিয়া আপ্পি।
বাচ্চার মা-বাবা, বড় ভাইবোনদের উপকারে আসবে অনেক! জাযাকাল্লাহ খাইরান...
শুকরিয়া আপুনি। বারাকাল্লাহু ফিক।
মন্তব্য করতে লগইন করুন