ধূসর গোধূলি বেলা......২
লিখেছেন লিখেছেন আফরোজা হাসান ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ১২:০২:০১ রাত
বিবেক যদি টেবলেট আকারে পাওয়া যেত দুনিয়াতে এত আত্মিক দীনতার ছড়াছড়ি থাকতো না। শারীরিক রোগের সমাধানের জন্য কত ধরনের ঔষুধ আছে। মনের রোগেরও এমন ঔষুধ থাকা উচিত ছিলো। মানুষের মধ্যে যখন নুন্যতম বিবেক বোধেরও অনুপস্থিতি দেখি সত্যি অনেক খারাপ লাগে। বিবেক বোধ তো দূরে থাক কমনসেন্স বলে যে একটা জিনিস আছে সেটাও অনুপস্থিত বেশির ভাগ মানুষের মধ্যে।
ফাইল থেকে মুখ তুলে স্ত্রীর দিকে তাকালো রুশান। বাচ্চাদের এলোমেলো করে রাখা খেলনা গুছাতে গুছাতে নিজ মনেই গজগজ করছে মাঈশা। ফাইল পাশে রেখে হাসিমুখে বলল, কমনসেন্স না থাকা কিংবা কম থাকাই আসলে ভালো। একজন জ্ঞানী ব্যক্তি কি বলেছেন জানো? বলেছেন, কমনসেন্স ইজ নট অ্য গিফট, ইট’স অ্য পানিশমেন্ট। বিকজ ইউ হ্যাভ টু ডিল উইথ এভরিওয়ান হু ডাজনট হ্যাভ ইট।
কিছুটা বিরক্তি মাখা কণ্ঠে মাঈশা বলল, আমার এমনিতেই মেজাজ গরম। তুমি এইসব পাগল টাইপ কথাবার্তা বলো নাতো এখন।
হাসতে হাসতে রুশান বলল, তা তোমার মেজাজ গরম হইবার মত কর্মখানা কার দ্বারা সংঘটিত হইলো?
উফফ...রুশান ফান করো নাতো এখন। সত্যি অনেক মেজাজ খারাপ আমার।
আচ্ছা ফান বন্ধ। বরং তোমার মেজাজ ভালো করার মত কোন পরামর্শ দেই চলো।মাঝে মাঝে মানুষের উদ্ভট কথাবার্তা ও কর্মকান্ড দেখে বা শুনে আমারো প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। বিক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে মন। তখন আমি নিজেকে বলি, হে আমার রব আমাকে এমন একটা ধৈর্য্যশীল ও প্রশান্ত মনের অধিকারী করো যা সর্বদা থাকবে সদ্য প্রস্ফুটিত কোন ফুলের ন্যায়। যার সৌন্দর্য মানুষকে মুগ্ধ করবে, যার সুগন্ধ সবাইকে করবে বিমোহিত। এমন আত্মিক সুষমা মণ্ডিত সুমধুর শব্দভাণ্ডার দাও আমাকে।যার আলোকময়তা স্পর্শ করে যাবে সবার হৃদয় বীণা। আমাকে করে দাও জ্ঞানের আলোকবর্তিকা। পথহারা একটি মানুষের তরেও যেন হতে পারি বাতিঘর। কখনো যেন কাউকে ঘৃণা ভরে অবজ্ঞা না করি। না হই যেন কারো মর্মবেদনার কারণ। দিতে পারি যেন অকৃত্তিম ভালোবাসা। ক্রোধকে করতে পারি যেন দমন। প্রতিহিংসা যেন হয় পরাভূত আমার উদারতার কাছে। হে দয়াময় আমাকে সর্বোত্তম সম্পদ উত্তম আখলাক দান করো। বিনয় যেন হয় সেই প্রদ্বীপের তেল যেই আলো আমি ছড়াতে চাই। কিছুক্ষণ পরই আমি অনুভব করি যে, পাখীর পালকের মত নরম, কোমল, পেলব কিছু পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে আমার মেজাজে। অদ্ভুত এক পশলা শান্তির শ্রাবণধারা ধুয়ে মুছে দিয়ে যায় মনের সমস্ত বিরক্তি।
স্বামীর দিকে তাকিয়ে কপট রাগের ভাণ করে মাঈশা বলল, তুমি আর তোমার সাইকোলজির ভুজুংভাজুং দুইটাই অসহ্য। সুপার অসহ্য। এইসব শোনার চেয়ে গিয়ে বাচ্চাদের হৈচৈ শোনা ভালো।
রুশান হেসে বলল, এটা অবশ্য ঠিক বলেছো তুমি বাচ্চাদের হৈচৈ এর চেয়ে মনোমুগ্ধকর আসলে খুব কম জিনিস আছে পৃথিবীতে।
এবার হেসে ফেললো মাঈশা। তুমি সবসময় এমন পজিটিভ মাইন্ডের থাকো কিভাবে বুঝি না আমি!
সবসময় থাকি কে বললো? তাছাড়া কোন মানুষই সবসময় পজেটিভ মাইন্ডের থাকতে পারে না। এমন অসংখ্য ব্যাপার আছে যা আমাকেও অস্থির করে তোলে। কিন্তু মানুষের ব্যাপারে তো ধৈর্য্য রাখতেই হবে। আমার প্রফেশনই এটা। তাছাড়া আমার কি মনেহয় জানো? ব্লক, বুটিক, সেলাইয়ের কাজ বা ভালো রান্না জানা যেমন একজন মানুষের এক্সট্রা কোয়ালিটির মধ্যে পড়ে। ঠিক তেমনি উদারতা, সহনশীলতা, সহানুভূতি, কমনসেন্স এসবও মানুষের এক্সট্রা কোয়ালিটি। এখন কেউ ভালো রান্না না জানলে যেমন আমরা তাকে শিখে নিতে উৎসাহিত করি, ক্ষেত্র বিশেষে সাহায্য করি। উদারতা, সহনশীলতা ইত্যাদির ঘাটতিতেও যদি তেমনটা করতে পারতাম তাহলে কতই না ভালো হতো। কিন্তু আমরা তেমনটা সচারচর করি না। আমরা তাদের উপর ক্ষুব্ধ হই, তাদের নিন্দা ও সমালোচনা করি। তাদেরকে বিভিন্ন ভাবে বুঝিয়ে দেই যে তারা মানুষ সুবিধার না। যারফলে মানুষ হিসেবে সুবিধা জনক স্থানে তারা কখনোই উঠে আসতে পারে না।
বুঝলাম তোমার কথা কিন্তু উদারতা, সহনশীলতা, সহানুভূতি, কমনসেন্স এসব মানুষের এক্সট্রা কোয়ালিটি এটা মেনে নিতে পারলাম না। এগুলো মানুষের ফিতরাতের অন্তঃর্গত। প্রতিটা মানুষ জন্মের সময়ই এসব সাথে করে নিয়ে আসে।
একটা বীজের ফিতরাত কি জানো? তাকে মাটিতে বপন করা হবে, চারা বের হবে, ধীরে ধীরে বড় হবে এবং ফুল ও ফল দেবে। এখন একটা বীজকে তুমি মাটিতে বপন করলে কিন্তু অনুকূল পরিবেশ ও আবহাওয়া দিলে না। সে কি ফিতরাতে অবিচল থাকতে পারবে? হ্যা অনুকূল পরিবেশ ও আবাহাওয়া ছাড়াও গাছ জন্মে। কিন্তু তাদের নাম দেয়া হয় আগাছা। অবশ্য ব্যতিক্রম কিছু ঘটনাও ঘটে। কিন্তু সেজন্যই তো সেটা ব্যতিক্রম বলে খ্যাত হয়। রাসূল (সাঃ) কিন্তু এই কথাটি বলে গিয়েছেন। "প্রতিটি শিশু (ইসলামের) ফিতরাতের উপর জন্মগ্রহণ করে। তার পিতামাতাই তাকে ইহুদি বানায়, খ্রিষ্টান বানায় অথবা অগ্নিপূজক বানায়।" ঠিক তেমনি পিতামাতা সন্তানদেরকে অমানবিক, অসৎ ইত্যাদিও বানায়।
আর কিছু না বলে হেসে নিজের কাজে মন দিলো মাঈশা। কিছুক্ষণ পর বলল, ওহ! তোমাকে তো বলতে খেয়ালই ছিলো না। জাহিদ বিকেল থেকে কয়েকবার খোঁজ নিয়েছে তোমার। এখন তো আবার বাইরে গিয়েছে জাহিদ। বার বার খোঁজ করছিলো হয়তো জরুরি কিছু বলবে তোমাকে।
হুমম...কথা হয়েছে আমার জাহিদের সাথে। ফোন দিয়েছিল।
জরুরি কিছু?
ইমরানের ওর এক কাজিনকে নিয়ে আসতে চাইছে কথা বলার জন্য। আগামীকাল বিকেলে আসতে বলেছি।
কথা শেষ করে আবার ফাইল টেনে নিতে দেখে মাঈশা বুঝতে পারলো এই বিষয়ে আর কথা বলতে চাইছে না রুশান। পরিচিত হোক বা অপরিচিত কারো ব্যক্তিগত সমস্যা নিয়েই আলোচনা করে না রুশান কখনোই। বিয়ের প্রথম প্রথম এই স্বভাবটা মনে কষ্ট তৈরি করলেও এখন মাঈশা বোঝে এটা রুশানের অনেক বড় একটা গুণ। প্রতিটা সম্পর্কের মধ্যে রেসপেক্ট অত্যাবশ্যকীয় একটা জিনিস। একজন ডক্টর ও পেশেন্টের সম্পর্কও এর বাইরে নয়। অনেক ভরসা নিয়ে একজন পেশেন্ট ডক্টরের কাছে আসে। খুলে বলে তার শারীরিক ও মানসিক সমস্যা। সবদিক দিয়ে এই ভরসা যারা অক্ষুণ্ণ রাখতে পারেন তারাই আসলে প্রফেশনাল ও পারসোনাল উভয় দিক দিয়ে একজন কল্যাণকামী মানুষ। অনেক কেস স্টাডি করতে দেয় রুশান মাঈশাকে কিন্তু কখনোই পেশেন্টদের নাম পরিচয় বলে না। নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনেহয় মাঈশার এমন একজন মানুষের জীবনসঙ্গিনী হতে পারার জন্য।
বিষয়: বিবিধ
১৮৯৪ বার পঠিত, ২৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
দুই পর্বের মন্তব্য একসাথে করলাম। খুব ভালো সিরিজ। শুভকামনা রইল আপু
অনেক অনেক শুকরিয়া এত সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
অনেক অনেক শুকরিয়া আপনাকে।
হে আমার রব আমাকে এমন একটা ধৈর্য্যশীল ও প্রশান্ত মনের অধিকারী করো যা সর্বদা থাকবে সদ্য প্রস্ফুটিত কোন ফুলের ন্যায়। যার সৌন্দর্য মানুষকে মুগ্ধ করবে, যার সুগন্ধ সবাইকে করবে বিমোহিত। এমন আত্মিক সুষমা মণ্ডিত সুমধুর শব্দভাণ্ডার দাও আমাকে।যার আলোকময়তা স্পর্শ করে যাবে সবার হৃদয় বীণা। আমাকে করে দাও জ্ঞানের আলোকবর্তিকা। পথহারা একটি মানুষের তরেও যেন হতে পারি বাতিঘর। কখনো যেন কাউকে ঘৃণা ভরে অবজ্ঞা না করি। না হই যেন কারো মর্মবেদনার কারণ। দিতে পারি যেন অকৃত্তিম ভালোবাসা। ক্রোধকে করতে পারি যেন দমন। প্রতিহিংসা যেন হয় পরাভূত আমার উদারতার কাছে। হে দয়াময় আমাকে সর্বোত্তম সম্পদ উত্তম আখলাক দান করো।
আমীন!
শুভকামনা রইলো সুন্দর গল্পটির প্রতি!
কিন্তু আমি আপনার উপর গোসসা। ভেরি ভেরি গোসসা।
আচ্ছা "কমনসেন্স ইজ নট অ্য গিফট, ইট’স অ্য পানিশমেন্ট। বিকজ ইউ হ্যাভ টু ডিল উইথ এভরিওয়ান হু ডাজনট হ্যাভ ইট।" কোন বিজ্ঞানির কথা এটা? খুব নাইস লাগছে আমার কাছে।
হে আমার রব আমাকে এমন একটা ধৈর্য্যশীল ও প্রশান্ত মনের অধিকারী করো যা সর্বদা থাকবে সদ্য প্রস্ফুটিত কোন ফুলের ন্যায়। যার সৌন্দর্য মানুষকে মুগ্ধ করবে, যার সুগন্ধ সবাইকে করবে বিমোহিত। এমন আত্মিক সুষমা মণ্ডিত সুমধুর শব্দভাণ্ডার দাও আমাকে।যার আলোকময়তা স্পর্শ করে যাবে সবার হৃদয় বীণা। আমাকে করে দাও জ্ঞানের আলোকবর্তিকা। পথহারা একটি মানুষের তরেও যেন হতে পারি বাতিঘর। কখনো যেন কাউকে ঘৃণা ভরে অবজ্ঞা না করি। না হই যেন কারো মর্মবেদনার কারণ। দিতে পারি যেন অকৃত্তিম ভালোবাসা। ক্রোধকে করতে পারি যেন দমন। প্রতিহিংসা যেন হয় পরাভূত আমার উদারতার কাছে। হে দয়াময় আমাকে সর্বোত্তম সম্পদ উত্তম আখলাক দান করো। বিনয় যেন হয় সেই প্রদ্বীপের তেল যেই আলো আমি ছড়াতে চাই।
অনেক ভাল লাগল
মন্তব্য করতে লগইন করুন