ধূসর গোধূলি বেলা......১
লিখেছেন লিখেছেন আফরোজা হাসান ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ১১:৪১:৪৬ রাত
আলো ও অন্ধকারের মাঝে আলো অপ্রতিরোধ্য। সত্যিই কি তাই? হবে হয়তো! সেজন্যই হয়তো তীব্র আন্ধকারের মধ্যেও একবিন্দু আলো তার অস্তিত্ব জানান গিয়ে যায়। কিন্তু আলোকে ম্লান করতে অন্ধকারকে বিশাল চাদর নিয়ে হাজির হতে হয়। আচ্ছা ইতিবাচক অনুভূতি গুলোকে আলো আর নেতিবাচক অনুভূতিগুলোকে কি অন্ধকারের সাথে তুলনা করা যায়? যদি যায় তাহলে আনন্দ ও বেদনার মধ্যে কোন অনুভূতিটা অপ্রতিরোধ্য? ভালো লাগা ও মন্দ লাগার মধ্যে কার আধিপত্য বেশি মনের উপর? ধীরে ধীরে পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে যাতে থাকা সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে বিক্ষিপ্ত এসব ভাবনা দলে দলে দলে হানা দিতে লাগলো ইমরানের মনে। চোখ বন্ধ করলো সে। মনটাকে টেনে আরেকদিকে নিয়ে যেতে চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না। মনের ভাবনা গুলোকে ভাঁজ করে তুলে রাখাটা এখানো রপ্ত করতে পারেনি সে। মাঝে মাঝে কোন কারণ ছাড়াই মন খারাপ হয়ে যায় তার।
তুই এখানে আমি আরো লাইব্রেরী, ক্যান্টিন সব জায়গায় খুঁজে এলাম তোকে। বাসায় যাবি না? ইমরানের পাশে বসতে বসতে বললো জাহিদ।
বন্ধুর দিকে তাকিয়ে ম্লান হাসলো ইমরান। ছোটবেলা থেকে একই সাথে বড় হয়েছে ইমরান ও জাহিদ। একই স্কুলে ও কলেজে পড়েছে। ইউনিভার্সিটিতে এসেও একই বিষয় নিয়ে পড়ছে দুজন। একে অন্যেকে ছাড়া চলেই না দুজনের। পরিচিত মহলে ‘মানিকজোড়’ নামে খ্যাত দুজন।
বন্ধুর কাঁধে হাত রেখে জাহিদ বলল, কি রে তোর কি মন খারাপ কোন কারণে?
ইমরান বলল, বুঝতে পারছি না। কেন জানি না কিছুই ভালো লাগছে না। বুকের ভেতরটা কেমন যেন খালি খালি লাগছে। আচ্ছা তোর কি কখনো এমন হয় যে, অকারণেই মন খারাপ হয়ে যায়?
জাহিদ হেসে বলল, আগে মাঝে মাঝে এমন মনে হতো। কিন্তু একদিন ভাইয়ার কাছে জানতে পারলাম আমাদের মন খারাপ আসলে কখনোই অকারণে হয় না। মন খারাপের পিছনে সবসময়ই কোন না কোন কারণ থাকে। তবে সবসময় কারণটা আমরা বুঝতে পারি না বিধায় মনে করি অকারণে মন খারাপ হয়েছে।
হুমম...সেটাই হবে হয়তো।
হবে হয়তো না। আসলেই এটাই। তুই তো জানিস আমার বড় ভাইয়া একজন সাইকিয়াট্রিস্ট। ভাইয়া আমাকে চমৎকার করে বিষয়টা বুঝিয়ে বলেছিলেন। ভাইয়া বলেছিলেন, ব্যাপারটা অনেকটা এমন যে, আমাদের মনের এক কোণে বদ্ধ কুঠিরে আটকা পড়ে আছে বেদনাক্ত কোন স্মৃতি। মাঝে মাঝেই যে নিজেকে মুক্ত করার জন্য ডানা ঝাপটাতে শুরু করে। বদ্ধ ঘরের দূষিত বাতাস ও ধূলো-বালি ফাঁকফোকর দিয়ে তখন বাইরে চলে আসে। যার প্রভাবে ব্যহত হয় স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস। হাঁসফাঁস করতে থাকে মন তখন বিশুদ্ধ বাতাসের জন্য। ধূলো-বালির কুয়াশার আস্তর ফেলে দেয় যার ফলে বুঝে উঠতে পারে না কি থেকে কি হয়ে গেলো। ধারণা করে নেয় অকারণেই বুঝি তার এমন লাগছে। তুই আমার সাথে বাসায় চল। ভাইয়া বাসায় থাকলে তোর এই মাঝে মাঝে অকারণে কেন মন খারাপ হয়ে যায় এটার কারণ কি হতে পারে সেটা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা যাবে।
ইমরান হেসে বলল, সাইকিয়াট্রিস্টরা কত সহজেই মনের অবস্থা সমূহের ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে সমাধান দিয়ে ফেলেন। কিন্তু সমস্যার ব্যাখ্যার মত সমাধানগুলোও যদি সহজ হতো কতই না ভালো হতো।
এই কথা বলছিস কেন?
কিছুক্ষণ নীরবতার পর ইমরান বলল, আমার কাজিন শাফাত ভাইয়া একসময় অসৎ সঙ্গের কারণে নেশায় আক্রান্ত হয়েছিল। কিন্তু পরে সবাই মিলে বোঝানোর পর বেড়িয়ে এসেছে অন্ধকার সেই জগত থেকে। কিন্তু তারপরও সবাই এখনো উনাকে অবিশ্বাসের চোখে দেখে। চাচার এক বন্ধুর মেয়ের সাথে বিয়ের কথাবার্তা হয়েছিল কিন্তু এখন আর তারা তাদের মেয়েকে শাফাত ভাইয়ার সাথে বিয়ে দিতে চাচ্ছে না। মনে মনে বেশ ভেঙ্গে পড়েছেন ভাইয়া।
জাহিদ বলল, জানিস আমার বাবা সবসময় বলেন, নিজের ভুল বুঝতে পেরে যারা নিজেকে শুধরাতে চেষ্টা করে তাদেরকে কখনোই অবিশ্বাস করা ঠিক না। কারণ তাদেরকে বিশ্বাস না করতে তারা কখনোই নিজেকে ভালো প্রমাণ করতে পারবে না। আর আমরা যদি তাদের হাত না ধরি, তাহলে যে কোন সময় তারা আবার পথ হারিয়ে ফেলতে পারে। কিন্তু এসব নীতিকথা মনে করে আমাদের সমাজের মানুষেরা উড়িয়ে দেয়। তারা জেনে শুনে ঘুষখোর ছেলের কাছে মেয়ে বিয়ে দেবে কিন্তু নিজেকে সংশোধন করে সত্যের পথে পা বাড়ানো কারো দিকে হাত বাড়িয়ে দেবে না। আমাদের এই সমাজে তাই ভালো হতে চাইলেও ভালো হওয়াটা অনেক কঠিন।
হ্যা ঠিক বলেছিস তুই। এখন বুঝতে পারছি আমি আসলে শাফাত ভাইয়াকে নিয়েই ভাবছিলাম। তাই মন খারাপ লাগছিলো খুব।
জাহিদ হেসে বলল, ভাইয়া অবশ্য এই কথাটাও বলেছিল আমাকে। পছন্দের কারো সাথে মন খুলে কথা বললেও মনের গুমোট ভাব কেটে যায়। মন খারাপের অজানা কারণ বেড়িয়ে আসে কথার ফাঁকে।
ইমরান বলল, আচ্ছা তোর ভাইয়া কবে ফ্রী থাকে আমাকে জানাস তো। আমি তাহলে শাফাত ভাইয়াকে নিয়ে আসবো একদিন। আমার খুব ভয় হচ্ছে মানুষের নেগেটিভ আচরণের কারনে ভাইয়া আবার না ফিরে যায় অন্ধকার সেই জীবনে।
জাহিদ বলল, ইনশাআল্লাহ আমি তোকে জানাবো। এখন চল আমরা উঠি। জাহিদ উঠে দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে দিলো ইমরানের দিকে। ইমরান হেসে বন্ধুর বাড়িয়ে দেয়া হাত ধরলো।
বিষয়: বিবিধ
১৪২৬ বার পঠিত, ৩৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জায়গাদখলের পায়তারা মানি না মানবো না
দেখেন পুরা লেখাটাই ইমরান কে নিয়ে লেখা
অনেকদিন পর একসাথে এত জন ফাঁকিবাজকে দেখে মনটা সত্যি আনন্দে মুচকি কিন্তু তৃপ্তির হাসি দিলো।
কয়েকদিন আগে এই বিষয়ে একটা গল্প লিখেছিলাম। ইনশাআল্লাহ শেয়ার করবো আপনাদের সাথে।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।
ইচ্ছে করে হারিয়ে যাই না আসলে। আমিও খুব মিস করি আপনাদের সবাইকে।
একটা গল্পে আমাদের সব ব্লগারদের নাম দিয়ে লিখে ফেলেন প্লিজ।
তবে বৃত্ত কে বৃত্তের বাহিরে রাইখেন
এটা আমাদের দাবি
এজন্যই তো আপু এত আপন
অনেক শুকরিয়া আপুমণি।
অনেক অনেক শুকরিয়া।
মন্তব্য করতে লগইন করুন