নিজেকে খুঁজে ফিরি নিজেরই মাঝে......৬
লিখেছেন লিখেছেন আফরোজা হাসান ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৭:৪৭:২৫ সন্ধ্যা
স্কাইপ ওপেন করতেই হড়বড় করে কথা বলতে শুরু করলো সাদাত। আপ্পি তোমাকে সেই কবে থেকে বলছি আমাকে এমন কোন মেডিসিন দাও যাতে আমার অভিমান করার অভ্যাসটা ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু তুমি আমার কথায় কানই দিচ্ছো না। তুমি সারাক্ষণ সমাজ সেবায় ব্যস্ত থাকে। ঘরের মানুষের জন্য সময়ই নেই তোমার।
ভাইয়ের কথা শুনে হেসে ফেললো অধরা। ওরে বাবা এত্তো অভিযোগ? আচ্ছা বল দেখি কি হয়েছে তোর শুনি।
তোমাকে তো বলেছিই যে, মানুষের সামান্য কথাতেই অভিমান হয় আমার। খুব খুব রাগ হয় তখন। এতে বিঘ্নিত হয় আমার স্বাভাবিক কাজকর্ম। আজ কোন সমাধান না নিয়ে আমি ছাড়ছি না তোমাকে।
অধরা বলল, ঠিকআছে সমাধান দিয়েই নাহয় যাবো। কিন্তু অভিমান হলে আবার রাগ হবে কেন? অভিমান আর রাগ তো এক জিনিস না। রাগ হচ্ছে একটি নেতিবাচক অনুভূতি আর অভিমান হচ্ছে অধিকার ও ভালোবাসার সংমিশ্রণের মিশ্র অনুভূতি। যখন কারো আচরণ বা কথা আমাদেরকে মনকে ব্যথাতুর করে দেয় সেটা হচ্ছে অভিমান। কিন্তু কারো কথা বা আচরণ যখন মনে বিদ্বেষ ও ঘৃণা তৈরি করে, মন প্রতিশোধ নিতে চায়। কিংবা তাকে মন থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে চায় সেটা কিন্তু অভিমান না বরং রাগ। কেননা অভিমান আসে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকে। আর রাগ আসে অহং ও প্রতিহিংসা থেকে।
আরো একটু বুঝিয়ে বলো আপ্পি।
হেসে, তোর সমস্যার সমাধান দেবার আগে জানতে হবে তোর অভিমানটা কি ধরণের? অভিমানের আসলে অনেক ধরণ। সমাধান দেবার জন্য তাই জানা দরকার অভিমানের উৎস কোথায়। তোকে আমি কয়েকটি প্রশ্ন বলে দিচ্ছি। চিন্তা ভাবনা করে জবাব দেবার চেষ্টা কর। ভেবে দেখ তো কতটা ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর বিষয়ে অভিমান হয় তোর? ধর কাউকে ফোন করেছিস কিন্তু সে কোন কারণে রিসিভ করলো না। কারণ কি হতে পারে সেই চিন্তা না করেই কি আগে অভিমান দানা বেঁধে উঠে মনে? কিংবা কেউ কথা দিয়ে কথা রাখতে পারলো না। এর পেছনের কারণ জানার আগেই কি অভিমান হয়? কারো বলা একটা শব্দও যদি অপছন্দ হয় তাহলে কি তার প্রতি অভিমান হয়?
হ্যা আমার এমন একটুতেই অভিমান হয়। একটা শব্দ অপছন্দ হলেও আমি কষ্ট পাই।
আচ্ছা অভিমান হলে তোর মনে কি ধরণের চিন্তার উদ্রেক হয়। নেগেটিভ নাকি পজেটিভ? মানে মনে কষ্টের মেঘ জমে নাকি রাগের লাভা তৈরি হয়? কেউ আঘাত করলে কোন স্বত্ত্বাটি আগে নড়ে উঠে? বেদনার নাকি যন্ত্রণার? ভেতরটা কি দুমড়ে মুচড়ে ওঠে নাকি ধিকি ধিকি জ্বালা করে?
কিছুক্ষণ চুপ থেকে সাদাত বলল, নেগেটিভ চিন্তাই বেশি কাজ করে।
কষ্ট পাস নাকি মেজাজ খারাপ হয়? ভেবে জবাব দিতে হবে।
হুম...মেজাজই আসলে খারাপ হয় আমার।
আমিও সেটাই ভাবছিলাম। তুই যাকে অভিমান ভাবছিস সেটা আসলে অভিমান না রাগ। তোর ইগো। আর ইগো বলেই তোর মনে রাগের উদ্রেক হয়, তার কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে চেষ্টা করিস তুই নিজেকে। কোন কোন ক্ষেত্রে সম্পর্ক ভেঙ্গে ফেলার কথাও ভাবিস।
হ্যা সত্যিই আমার এমনটাই হয়। এত রাগ হয় ইচ্ছে করে আর সম্পর্কই রাখবো না।
হেসে, জানিস মানুষ কিন্তু সবার উপর অভিমান করে না। খুব কাছের বা প্রিয়জনদের উপরই অভিমান করে। যাদেরকে সে পছন্দ করে, ভালোবাসে। আর ভালোবাসার একটা দাবী আছে। সেই দাবী থেকে মানুষ আশা করে যে প্রিয়জন তার অভিমানটা বুঝবে এবং তাকে মানাতে আসবে। কিন্তু এমনটা যদি না হয় তাহলে মনে কষ্ট তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। ক্রমাগত এমনটা ঘটতে থাকলে কষ্ট একসময় রাগে, রাগ ক্ষোভে এবং ক্ষোভ অহংয়ে পরিবর্তিত হতেই পারে। কিন্তু এক্ষেত্রে লক্ষণীয় হচ্ছে এই অহংয়ের উৎপত্তি অভিমানে। যা অনাদর-অবহেলা-অবমূল্যায়নের বিষ পান করে করে একসময় বিরক্ত হয়ে রাগ ও ক্ষোভের পথ ধরে অহংয়ের মঞ্জিলে পৌছেছে। তাই বাইরে থেকে দেখতে একে অহংয়ের মত নাক উঁচু মনে হলেও, সঠিক মূল্যায়ন, একটু আদর ও আহ্লাদ এবং স্বীকৃতি পেলেই বরফের মত গলে যাবে। কিন্তু এর বদলে যদি অপবাদ কিংবা অপমানের বৃষ্টি ঝরতে থাকে অনবরত। মনের গহীনে তৈরি হয়ে যায় কোন খরস্রোতা নদী। তাহলে সমাধানটা বেশ জটিল। কেননা তখন আর কোন কিছুই প্রভাব ফেলতে পারে না মনে। কিন্তু তোর সমস্যা এটা না। পান থেকে চুন খসলেই তোর রাগ হয়। তুই যেটাকে অভিমান ভাবছিস সেটা আসলে অভিমানরা বরং রাগ। আর রাগ বলেই সেটা তোর স্বাভাবিক কর্মকান্ডকে ব্যহত করে।
এখন তাহলে আমি কি করবো?
মানুষকে বোঝার চেষ্টা করবি। নিজেকে দিয়ে অন্যকে যাচাই করার চেষ্টা করবি। মানুষকে বিচার কথা ছেড়ে দিবি। আমরা যখন মানুষকে বিচার করতে শুরু করি, তখন তাকে আর ভালোবাসতে পারি না। কারণ এই পৃথিবীতে কোন মানুষই অন্য কারো মত না। কেউই দোষ ও গুণের উর্দ্ধে না। কেউই একশো ভাগ তোর মনের মত হবে না। কারোই সব কথা তোর মনকে ছুঁয়ে যাবে না ভালো লাগার পরশ হয়ে। দেখ প্রত্যেকটা মানুষ চিন্তা করে তার নিজ নিজ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার আলোকে। প্রত্যেকে প্রভাবিত হয় নিজ নিজ পরিবেশ-পরিস্থিতি ও পরিমণ্ডল দ্বারা। সুতরাং, এটা আশা করাও অন্যায় সবাই তোর মত ভাববে। আমরা সবাই যার যার দৃষ্টিতে জগতকে দেখি। তুই তাই তোর দৃষ্টিভঙ্গী অন্যের উপর চাপিয়ে দিতে পারিস না। শরীয়ত ছাড়া অন্য কোন ক্ষেত্রে কারো দিকে আঙ্গুলও তাক করতে পারিস না। আমরা সবাই আলাদা। আমাদের উপলব্ধিও তাই আলাদা। এই কথাটা মনে রাখলেই যে কোন সম্পর্কের মাঝে জটিলতা অনেক কমে যায়। কিন্তু আমরা সেটা না করে অন্যের উপর নিজ উপলব্ধি চাপিয়ে দিতে চেষ্টা করি।
হুমম...তুমি একদম ঠিক বলেছো আপ্পি।
হেসে, আরেকটা গুরুত্বপুর্ণ কথা কি জানিস? আমরা যাদেরকে ভালোবাসি তাদেরকে ঘিরে আমাদের চাহিদাটা উচ্চাশার পর্যায়ে চলে যায়। আমরা তাদের কাছ থেকে শুধু ইতিবাচক আচরণই প্রত্যাশা করি। কিন্তু এই পৃথিবীতে কারো পক্ষেই সবসময় একই রকম আচরণ করা সম্ভব নয়। তাই আপনজন, প্রিয় ও পছন্দের মানুষদেরকে যদি আমরা কিছু কষ্ট দেবার অধিকারও দিয়ে দিতে পারি তাহলেও সম্পর্কের টানাপোড়ন অনেকটা কমে যেতে পারে।
হেসে, বাবার কথা মনেআছে আপ্পি তোমার? বাবা যে বলেন, প্রতিটা মানুষের মধ্যে এক টুকরো করে মেঘ আছে। যে মেঘ কখনো ঝরঝর বারিধারা হয়ে তোমার মনের বৃক্ষকে সেচ দিয়ে যাবে। আবার কখনো কালবৈশাখী হয়ে ভেঙ্গে দিয়ে যাবে কিছু ডালপালা।
হেসে, হুমম...এই তো আমার ছোট্ট ভাইটি বুঝতে পেড়েছে। আমাকেও যখন কোন প্রিয়জন কষ্ট দেয় আমি মনে মনে বলি, এত শ্রাবণ দিলো যে আমারে, কিছু ডালপালা দিলাম তাহারে।
শব্দ করে হেসে ফেললো সাদাত। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, মানুষকে বোঝার জন্য আমাকে কি করতে হবে আপ্পি?
নিজেকে বুঝতে হবে। যখন তুই নিজেকে বুঝতে পারবি তখন অন্যের প্রত্যেকটা কথা ও আচরণের পেছনে যে কোন না কোন কারণ আছে সেটা অনুধাবন করতে শিখে যাবি।
ঠিকআছে আপ্পি আমি এখন থেকে নিজেকে খুব ভালো মতো বোঝার চেষ্টা শুরু করবো, ইনশাআল্লাহ। তুমি আমাকে সাহায্য করবে তো?
হেসে, ইনশাআল্লাহ অবশ্যই সাহায্য করবো। এখন তুই যার উপর রাগ করেছিস ও যে কারণে করেছিস সেটা শান্ত মনে চিন্তা করে দেখ। নিজেকে ঐ অবস্থানে নিয়ে চিন্তা করে দেখতে চেষ্টা কর। এবং ঐ ব্যক্তির অবস্থানকে অবশ্যই খেয়াল রাখবি। যাচাই যেন নিজের অবস্থান দিয়ে না হয়। যাচাই হতে হবে সেই ব্যক্তির অবস্থান দিয়ে।
ঠিকআছে আপ্পি।
ইনশাআল্লাহ পরে তাহলে আবার কথা বলবো তোর সাথে এই বিষয়ে। এখন রাখি।
ভাইকে বিদায় দিয়ে দুই শিষ্য মিলে রাতের খাবারের কি অবস্থা করলো সেই খোঁজ নেবার জন্য রওনা করলো অধরা।
বিষয়: বিবিধ
১৮৪৩ বার পঠিত, ৩৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যদি পারেন আজ আমার ব্লগ বাড়িতে দেখে আসবেন আপু
অনেক অনেক শুকরিয়া।
বানান ভুল হলে আমি কিছু জানিনা।
সাংঘর্ষিক, শুদ্ধ, জাঝাকিল্লাহ, পোষ্ট!
আমি এত লিখি তাও একশোটা বানান ভুল করি।
ভালো লাগলো তোমার মন্তব্য দেখে।
সময় করে একে একে পড়ে নিব ইনশা আল্লাহ!
তোমার লেখাগুলি মন দিয়ে না পড়লে মাথায় ঢুকেনা তো তাই!
আপু আমিও বহুত চিকিৎসা নিয়েছি(মানে অনেকেই বুঝানোর চেষ্টা করে)
কিন্তু যেই লাও সেই কদু।
আবার ঠিকই অভিমান,কান্না,রাগ,জিদ সবই এসে ভর করে
এককথায় সেলফ হিপনোটিজম।
এ পর্বে আসবো ৫ নম্বর পর্ব পড়ে।
কারন বুঝতে চেষ্টা করছি চতুর্থ পর্ব।
তবে মন নামক বইটার প্রতিটি পৃষ্ঠার প্রতিটি শব্দ সম্পর্কে যদি ধারণা রাখা যায় তাহলে অনুভূতি গুলোকে কোট করা সম্ভব হয়।
সেজন্য নিজের সাথে সময় কাটাতে হবে। কিন্তু দুনিয়ার সবাইকে সময় দিতে গিয়ে আমাদের যে নিজস্ব সময় বলে যে কিছুই থাকে না। বিশেষ করে সংসার জীবনে একবার যখন পদচিহ্ন পরে যায় আমাদের।
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
আমি সিরিয়াজ কনফিউশ্যানে পড়েগেছি। আমার কি তাহলে রাগ বেশি, (কিন্তু আমারতো অহং ও প্রতিহিংসা নেই মনেহয়, তাহলে রাগ বলবো কেমনে?) আর অভিমানও বলতে পারতেছি না, নিশ্চিত করে! এই মুহুর্তে
অর্ধেক পড়ে আটকে আছি। আর পড়তে পারতিছি না। যাক বাবা, আরও কয়েকবার পড়েই মন্তব্য করবো ঠিকাছে আপ্পি?
আমি চিন্তার মাঝে ছিলাম যে আমার কোনটি বেশি?
বা সত্যিই আমি কি অভিমানী?
না রাগী?
নিজেকে নিয়ে অনেক ভাবার পর এ সিদ্ধান্তে উপনিত হয়েছি যে " আমি অভিমানি কিন্তু প্রায় সময়ই আমি নিজের অভিমানকে গিলে ফেলি হজম করে ফেলি এবং কাউকে বুঝতেও দেইনা শুধু নিজেই কষ্ট করি।"
আর আমার রাগটা হচ্ছে অভিমানের তুলনায় অনেক কম কিন্তু এই ব্যাটাকে হজম করতে পারিনা। মাঝে মাঝে এর জন্য অন্যকেও কষ্ট দিয়ে ফেলি।
ছোট বিষয় গুলোকে আমি কন্সিডার করতে পারি । যেমন কেউ আমাকে বললো ৪টায় দেখা করবে তো সে একদিন ৪টা বলে ৫টায় আসলো। আরেকদিন এমন করলো। আরেকদিন করলো। পরপর এমন করলে তখন অনেক ক্ষেপে যাই। প্রচন্ড রাগ করি তখন। কিন্তু দু একদিন এমন করলে রাগ করিনা অভিমানকে হজম করে ফেলি। গুলিয়ে ফেললাম মনে হয়?
পর্বটি আমার জন্য অনেক ভালো নিজেকে বুঝতে পারছি।
আপু এ পর্বগুলো পড়ার পর নিজের অনেক পরিবর্তন হচ্ছে যেমন এখন আমি আমার নিজেকে নিয়ে ভাবছি। নিজের দৈনিক কাজগুলোকে নোট করে নিচ্ছি সময়ের কাজ সময়েই করছি।
অনেক বিষয়ই চিন্তা করেছি।
কিন্তু নিজের প্রিয় রংটা এখনও বের করতে পারলাম না
আরেকটা প্রবলেম আমার সেটা হলো অনেক বিষয়ে কিছু না করার জন্য মন থেকে তীব্র বাধা আসে। কিন্তু যখন সেই কাজটি মনের তীব্র বাধার পরেও সম্পাদন করি।
তখন অনেক ভালো হয় অথবা খারাপ হয়।
যেমনঃ মনে হলো এই দোকানের চটপটি খেওনা তারপরেও যদি খাই তবে মনের খচখচের কারনে তীব্র অশান্তি হয়।
আবার ধরুন একটি লেখা পড়তে ইচ্ছে করছেনা সেটি জোড় করে পড়লে আমার অন্নেক ফায়দা হয়।
পড়ের পর্বে চললাম আপু ।
অনেক শুকরিয়া
নিজের পছন্দ- অপছন্দ বোঝার জন্য মজার একটা পদ্ধতি আছে। দেখি কোন গল্পে আনতে পারি কিনা।
কথায় বলে ''ভক্তিতে মুক্তি'' আবার বলে ''বনের বাঘে খায় না মনের বাঘে খায়" আরেকটা কথাও আছে "জোড় যার মুল্লুক তার"। আসলে সব প্রবাদ যেমন সবার ক্ষেত্রে খাটে না। মনের ইচ্ছারাও তেমনি অবস্থা ও পরিস্থিতি ভেদে ভিন্ন ভিন্ন অ্যকশন রেখে যায় মনে।
অনেক শুকরিয়া আপনাকেও।
মন্তব্য করতে লগইন করুন