অনুভবের অধরা শব্দমালা......
লিখেছেন লিখেছেন আফরোজা হাসান ২০ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৪:০০:৩৮ রাত
মাদ্রিদের রিয়ো পার্ক
ফুলের সৌরভকে কোন ভাবেই শব্দে ধারণ করার সম্ভব নয়! কারণ সৌরভ শুধুই অনুভবের! ঠিক তেমনি আমাদের জীবনেও এমন কিছু কিছু মুহুর্ত আসে যাদেরকে কখনোই শব্দে প্রকাশ করা সম্ভব হয় না। শত চেষ্টাকে নিষ্ফল প্রমাণিত করে সেই মুহুর্তগুলো অধরাই থেকে যায়। তারার মত ঝিকমিকে, ফুলের মত সুবাসিত, জোছনার মত স্বিগ্ধ, রংধনুর মত বর্ণিল সেই মুহুর্তগুলো শুধুই অনুভবের। মন বাগিচায় অতি চঞ্চলা প্রজাপতি হয়ে লুকোচুরি খেলাতেই তাদের আনন্দ। ক্লান্ত হয়ে চুপটি করে মনের এক কোনে জড়ো হয়ে যদিও বা বসে, ধরতে গেলেই মেলে দেয় পাখনা! শব্দগুলো তখন ছড়িয়ে যায় চারপাশে বর্ণ হয়ে। শুরু হয় আবার তাদের লুকোচুরি খেলা। এমনই ভালোবাসার কিছু শব্দমালাকে একত্রিত করার চেষ্টা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে শেষপর্যন্ত মেনেই নিলাম যে, নাহ কিছুতেই ধরা যাবে না তাদের...!
সাদিয়া আপুদের অপেক্ষায় বাসার গেটের বাইরে আমাদের মা-ছেলের প্রতীক্ষারত প্রতিটি ক্ষণ ঠিক এমন অধরা অনুভূতি, যাকে শব্দে ধারণ করা সম্ভব নয়। প্রিয় বোন, বন্ধুটিকে বহুদিন পর আবার জড়িয়ে ধরা, আদর করে কাছে টেনে নেয়া তার ছোট্ট ছোট্ট অংশ দুটিকে(সারা ও আফনান)। কেমন করে গাঁথবো মালা সেই অনুভূতির? ঘরে ঢুকেই সাদিয়া আপু আবেগ জড়ানো কণ্ঠে বললেন, এটাই সেই বাসা যেখানে তুমি থাকো? মনেহচ্ছে এখনো বুঝি স্বপ্ন দেখছি! আসলেই সুন্দর কোন স্বপ্নের মতোই যেন ছিলো আমাদের গত একটি সপ্তাহ। এক মুহুর্তের জন্যও মনে হয়নি আমার বাসায় মেহমান এসেছে! বরং সারাটা ক্ষণ আপনজনদের কেউ সাথে আছে এমনটিই অনুভব করেছি। আপুরা আসার আগে শারীরিকভাবে কিছুটা দুর্বল ছিলাম। কিন্তু আপুদেরকে দেখে আমার দুর্বলতার যেন ডানা গজিয়ে গেলো। ডানা ঝাঁপটাতে ঝাঁপটাতে আমাকে ছেড়ে উড়ে গেলো দূর বহুদূর...!
সারা, আফনান, নাকীব তিনজনের কলোরব আনন্দের ঝংকার রূপে অবিরাম মন জুড়ে তুলেছে নানারঙের সুর। সারার দুষ্টুমি মাখা কথা, আফনানের একটু পর পর অভিমান, নাকীবের স্কুলে না যাবার জন্য ইনিয়ে বিনিয়ে করা বায়না! বিন্দু বিন্দু স্মৃতি কিন্তু সিন্ধু সিন্ধু ছলাৎ ছলাৎ আনন্দ। আলহামদুলিল্লাহ উপভোগ করেছি গত সাত দিনের প্রতিটা মুহুর্ত। সাদিয়া আপুর আদর-ভালোবাসা-শাসন-ধমক-পরামর্শ-কল্যাণকামীতা ছুঁয়ে ছুঁয়ে গেছে মনকে। রান্নাবান্না থেকে শুরু করে ঘরের প্রতিটি কাজে সাদিয়া আপু সাহায্য করেছেন। আব্দুল মুকিম ভাইয়াও কম যান না। একদিন শপিং থেকে আমাদের ফিরতে দেরি দেখে ভাইয়া নিজেই বিরিয়ানি বানিয়ে বাচ্চাদের খাইয়ে দিয়েছেন। হাঁড়ি-পাতিল ধুয়ে রান্নাঘরও গুছিয়ে রেখেছেন। নাকীব আর আফনানকে ঘুম পাড়ানোর দায়িত্বও পালন করেছেন প্রতিদিন। সকালের নাস্তার সময় হাসান জ্বী আর আব্দুল মুকিম ভাইয়ার খুনসুটি আমাদের ছোট্ট কুটিরে বইয়ে দিতো হাসির মৃদু ধারা।
সাদিয়া আপু আর আমার এই মিলনমেলায় আমাদের অন্যান্য বোনদের(আরোহী, রোদেলা, গন্ধসুধা, ইশরাত, আশাজাগানিয়া, রাবেয়া, রূপকথা, লুকোচুরি)মনের আকাশ জুড়ে চলেছে রোদ-বৃষ্টির খেলা। কখনো আনন্দে সবাই উদ্ভাসিত হয়েছে, কখনো ওরা কেন আমাদের সাথে নেই সেকথা ভেবে বিষণ্ণ হয়েছে। কিছুক্ষণ পর পরই ফোন, ম্যাসেজ দিয়ে জানতে চেয়েছে এখন তোমরা কি করছো? সবার সাথে দুষ্টুমি করার সুযোগ মোটেই হেলায় হারাতে দেইনি আমি আর সাদিয়া আপু। রান্না করে খাবারের ছবি, বাইরে ঘুরে বেড়ানোর আনন্দঘন মুহুর্তের ধারণকৃত টুকরো টুকরো স্মৃতি শেয়ার করে সবাইকে অংশীদার করতে চেষ্টা করেছি আমাদের সাথে। টুকরো টুকরো কিছু স্মৃতি......
ইতালি থেকে ব্লগার রূপকথা আপুনির ভালোবাসায় মোড়ানো ‘মুরালি’। মাশা আল্লাহ খেতে ভীষণ মজা হয়েছে। জাযাকিল্লাহ রূপকথা আপুনি এত্তো ভালোবাসার জন্য।
আমি বেগুনী রঙ পছন্দ করি তাই সারামণি আমাকে উপহার দিয়েছে বেগুনী রঙয়ের ব্রোচ। জাযাকিল্লাহ ছোট্ট পরীটাকে।
নাকীব ও আফনানের বানানো কাপুচিনো। আফনান বানিয়ে দিয়েছিলো আমাকে আর নাকীব সাদিয়া আপুকে। এমন স্বাদে ও ঘ্রাণে অতুলনীয় কাপুচিনো আবার কবে পান করার সৌভাগ্য হবে আল্লাহ জানেন...
সাদিয়া আপু আর আমি প্রচণ্ড ঠাণ্ডার মধ্যেই ছাদে গিয়েছিলাম জোছনা দেখতে। হাতে হাতে ধরে বলেছি কত শত না বলা কথা......
আমার বাসার ছাদ থেকে রাতের মাদ্রিদ......
শপিং থেকে ফেরার পথে রাতের মাদ্রিদ। মেঘলা আকাশে মেঘাচ্ছন্ন পুর্ণিমার চাঁদ।
রোদের সাথে ঝগড়া করে গত একসপ্তাহ জুড়েই আকাশ এমন বেদনাক্ত। অভিমানে মাঝে মাঝে ঝুপঝাপ কিছু অশ্রু বর্ষণ করে আবারো এমন মুখ অন্ধকার করে বসে থাকে।
সবার জন্য সাদিয়া আপুর বানানো কেক।
আপুদের নিয়ে আমার প্ল্যান যেমনটা ছিলো তেমনটা ঠিক হয়নি কোন কিছুই। অসুস্থ্যতা, ব্যস্ততা আর মেঘলা আবহাওয়া সবকিছু মিলিয়ে ঘরেই কেটেছে আমাদের বেশির ভাগ সময়। সেই আনন্দঘন মুহুর্তগুলো আমার লেখাতে নয়, সাদিয়া আপুর ভালোবাসা মিশ্রিত শব্দে শব্দে ফুটে উঠুক উনার ব্লগ বাগিচায়। আমার অধরা শব্দমালা এখানেই থাক প্রতীক্ষারত.........
বিষয়: বিবিধ
২৭৮৭ বার পঠিত, ৭১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক অনেক ভালোবাসা ও শুকরিয়া আপুজ্বী আপনাকে।
ফাঁকি দেয়া কমেন্ট মানিনা।
দুজনের জন্য অনেক ভালোবাসা
অনেক অনেক শুকরিয়া ও ভালোবাসা আপুনি। আপনার কাছে মুরালি বানানো শিখবো, ইনশাআল্লাহ।
ভালো আছো তো জোছনার আলো?
তুমি কেম্ন আছো এবার বলো।
শুভকামনা রইলো তোমার তরে জোছনার আলো।
অনেক অনেক দোয়া, আদর ও শুভকামনা রইলো জারিফা আম্মুনিটার জন্য।
আপনার লেখনীও চমৎকার হয়েছে। দু জনের গুণে গুণান্বিত পোষ্ট।
বহত ইন্টারেস্টিং তো...
অনেক ধন্যবাদ তোমাকে।
তোমরা দেশে কবে আসবে? সাথে কিন্তু ফাঁকিবাজটাকেও নিয়ে আসবে
আপু রামাদানে আমি দেশে আসবো ইনশাআল্লাহ। তবে আরু মনেহয় না আসতে পারবে সাথে। শুকরিয়া আপু।
আসুন দেখি আপুনিরা ভাইয়ানি ছাড়া চলে কি করে??
MAN ছাড়া কি WOMEN লেখা যায়???
MR ছাড়া কি MRS লেখা যায়???
MALE ছাড়া কি FEMALE লেখা যায়???
HE ছাড়া কি SHE লেখা যায়???
প্রমানিত হইলো = আপুনিরা ভাইয়ানি ছাড়া চলে না।
ভয় লাগতাছে কোন আপুনি যেনো কি বলে আমারে
মজা পেলাম। তবে এই প্রমাণ না দিলেও আমি বিশ্বাস করি যে, কখনো আপুনিরা ভাইয়ানিদের ছাড়া অচল, তো কখনো ভাইয়ানিরা অচল আপুনিদের ছাড়া।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
আসলে আপুনিরা আর ভাইয়ানিরা একজন আরেক জনের পরিপূরক।
তাই... নো ঝগড়া, থাকি মিলেমিশি
নিজে ঝগরাটে তাই অন্যদেরকেও ঝগড়াটে মনে করো কেনুকেনুকেনু???
আমার আপুটা এতো অসুস্হতার পরেও যে আমাদের প্রত্যেকের পছন্দ- অপছন্দের দিকে খেয়াল রেখেছে- বিশেষত আমার সারা মনি খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে অনেক চুজি অথচ আফরোজা সারার প্রতিটি বিষয় এতো যত্নের সাথে এত্ত এত্ত ভালোবাসা দিয়ে করেছে কন্যা এখন বলে যে ওর অর্ধেক আমার আর বাকি অর্ধেক আফরোজার! আর হাসান ভাইয়া উনার ভীষন ব্যস্ততার পরও আমাদের নিয়ে বাইরে যাওয়া, সময় দেয়া কোনো কিছুই করতে বাদ রাখেননি! নাকিব সোনাপাখিটা পর্যন্ত আমাদের নির্মল আনন্দদানে শরীক হয়েছে। বন্ধুত্বের এই ভালোবাসার মায়ায় আমরা জড়িয়ে আছি, থাকবো ইনশাআল্লাহ !
আমি মনের ভাব প্রকাশ করতে পারছিনা একদমই! শুধু চোখে পানি চলে আসছে ! সময় নিয়ে লিখব ইনশা আল্লাহ!দোআ করি সদা সর্বদা ভালো থাকুক প্রীতি বোনটি আমার!
সুখগুলো ছবির ফ্রেমের মত মনের প্রেমে বাঁধা থাকুক, ফুল হয়ে ফুটুক জীবন গানে।
দুয়া দুয়া দুয়া
হৃদয়ের ঝরা ঝর্ণা,বৃষ্টি,আর জোসনার আলো ছড়িয়ে পড়বে।
খুশ অনুভূতি।
সত্যি অনন্য সুন্দর একটি সপ্তাহ কেটেছে আমাদের। শুকরিয়া তোমাকে।
আমিও
অনেক শুকরিয়া।
মায়াবী বন্ধনগুলো ছবির ছায়ায়, ব্লগের পাতায়, রোজনামচার খাতায়, ক্বলবের মণিকোঠায়, কলমের কালিতে, স্মৃতির আঙিনায়, স্বপ্নের গহীনে, আবেগের গভীরে, মুনাজাতের অশ্রুতে বারবার কড়া নাড়ুক এই কামনাই করি।
জান্নাতেও যেনো আল্লাহ এই বন্ধনকে অটুট রাখুন । আমিন।
আপু অসাধারন একটি পোষ্ট বরাবরের মতই ভালো লাগলো শুকরিয়া আপু। হাতুড়ি আপু/ হাতুড়ি কন্যা আপুদেরকে অনেকদিন দেখছিনা।
ছবিগুলোর জন্য
আল্লাহপাক আপনার অনুভবের শব্দমালাগুলোকে ক্বলবের সাথে কলমের বন্ধন করে দিন। আমিন
কারন শব্দগুলোতো মহান রবেরই এহসান।
জাজাকাল্লাহু খাইরান
হাতুড়ি আপু/ হাতুড়ি কন্যা আপুরাও ফিরে এসেছে আবার।
ভালো থাকুন। বারাকাল্লাহু ফীক।
মন্তব্য করতে লগইন করুন