বিক্ষিপ্ত চিন্তার ঢেউ.....
লিখেছেন লিখেছেন আফরোজা হাসান ০৮ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৪:৩৬:১২ বিকাল
বিষণ্ণতাকে আমার অদ্ভুত এক সমস্যা বলে মনেহয়। কারণ বিষণ্ণতা যখন কাউকে পেয়ে বসে, তার মনটা কেমন যেন মেঘাচ্ছন্ন হয়ে যায়, কিছুই ভাল লাগে না, কিংবা ভাল লাগার অনুভূতি গুলোই কেমন যেন ভোঁতা হয়ে যায়। এমন একটা পরিস্থিতি যখন সবচেয়ে কাছের বা সবচেয়ে প্রিয় মানুষদের সঙ্গও মনের উপর তেমন কোন প্রভাব ফেলতে পারেনা। মনকে জাগিতে তুলতে বা সতেজ করতে পারেনা। আর এই বিশ্রী সমস্যাটা আমার আছে। খুব ভালো মতই আছে।মাঝে মাঝে বিষণ্ণতা আমাকে তার অতল সাগরে ডুবিয়ে দেয়। মনের সব আনন্দময়তাকে বিষণ্ণতা তার অন্ধকার চাদরে ঢেকে ফেলে। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে এমনিতে শত চেষ্টা করেও আমি কবিতা লিখতে পারিনা। কিন্তু বিষণ্ণতা মনকে চেপে ধরলে না চাইতেও শব্দরা ছন্দে ছন্দে হাজির হয় আমার কাছে। যাদেরকে আমি বলি ‘ঘনকুয়াশার রঙহীন কাব্য’।
দুঃখ-ব্যথা মনে করে কেন সুখকে তাড়াও? ভুলে যাও মনকে বিষণ্ণ করে এমন সব মুহুর্ত! নিয়তির আকাঁ কষ্টগুলোকে ঘষে তুলে ফেলে, রঙের ছোঁয়ার ফুটিয়ে তোল সুখের কিছু মুহুর্ত....! খুব খুব প্রিয় এই লাইন ক’টি আমার। যদিও জীবনের ফিকে হয়ে যাওয়া অংশগুলোতে রঙের ছোঁয়া লাগানো এতটা সহজ কোন কাজ নয়। কিন্তু জীবনের অপ্রাপ্তির পাশে যখন প্রাপ্তিগুলোকে রাখা হয় অপ্রাপ্তিকে তখন অনেক মলিন দেখায়। জীবন থেকে যতটা সময় পেরিয়ে গিয়েছে তার হিসাব করতে গেলেও দুঃখের চেয়ে আনন্দের পাল্লাকেই ভারী মনেহয়। অসুন্দরের ঘোর আঁধারে সুন্দরকে মনেহয় জ্বলজ্বলে এক ধ্রুবতারা। মনের বদ্ধ কুঠিরে হাঁসফাঁস করছে স্বপ্নরা একটু আলো, একটু বাতাসের আশায়! কি এসে যায় তাতে? ঐ তো পূর্ণতার ডানা পেয়ে ভাসছে কিছু স্বপ্ন মনের আকাশে!
জীবনে যা ভেবেছিলাম আর যা হয়নি! যা চেয়েছিলাম আর যা পাইনি! তা হয়তো হবার ছিল না! তা হয়তো পাবার ছিল না! তাহলে কেন থেমে থাকবো তার জন্য যা আদৌ আমার নয়? কেন হতাশার চাদর জড়িয়ে জড়সড় হয়ে বসে থাকবো? কেন বাঁধা দেবো আশার নতুন সূর্যোদয়ে? যা চেয়েছিলাম তাতেই আমার সুখ এই কুয়াশাচ্ছন্ন ভাবনাতে পড়তে দেই...যা পেতে যাচ্ছি তাতেই নিহিত রয়েছে কল্যাণ... এই বিশ্বাসের সূর্য কিরণ! জীবনের যে পথে হেঁটে এসেছি সে পথে আর ফিরে যাওয়া যাবে না। তাহলে ঢাকা পড়ে যাক না বাতাসে উড়ে আসা বালির আস্তরে পদচিহ্নরা! কেন তবে ফেলে আসা পথে চোখ রাখতে গিয়ে বর্তমানকে হারিয়ে যেতে দেবো মনের গহীন অরন্যে? ওৎ পেতে থাকা নানা ফাঁদ, মরীচিকা, চোরাবালির ভিড়ে?
সামনে দেখো দণ্ডায়মান ব্যথার পাহাড়, চলো তাকে দেখাই ধৈর্য্যের বাহার! ব্যর্থতা-বেদনা মুখ লুকোবে লজ্জায়, আল্লাহতে ভরসা থাকে যদি মজ্জায়। আরো কয়েকটি প্রিয় লাইন। হার-জিত কিংবা সাফল্য-ব্যর্থতায় গড়া প্রতিটা মানুষের জীবন। একটা মানুষ অসংখ্য পরীক্ষার সংমিশ্রণ। তবে এটা মনে প্রাণে বিশ্বাস করি দুনিয়াতে যে যেখানে বা যে অবস্থানে আছে এর নিজস্ব একটা কারণ আছে। সেই কারণটা কখনো স্বচ্ছ পর্দার পেছনে থাকে, স্পষ্ট দেখা না গেলেও আন্দাজ করা যায় কিছুটা হলেও। আবার কখনো কারণটা থাকে ভারী ভেলভেটের পর্দার আড়ালে। চোখে হাই পাওয়ারের চশমা লাগিয়েও কিছুই দেখা যায় না, তাই আন্দাজও করা সম্ভব হয় না। আবার কিছু কিছু কারণ এমন থাকে যাকে বাইরে থেকে স্বচ্ছই মনেহয় কিন্তু কাছে গেলে বোঝা যায় সে স্বচ্ছতার আড়ালে যাকে দেখা যাচ্ছিলো সেটা আসলে আরেকটা ভারী পর্দার প্রতিচ্ছবি! তাই নিজকে ছাড়া আর কাউকেই জানার তেমন কোন প্রয়োজন অনুভব করি না। থাক না! আছে তো সবাই যার যার নির্দিষ্ট অবস্থানে। আদায় করে যাচ্ছে নিজ নিজ দ্বায়ভার...
আমার প্রায়ই যেটা হয় কোন কিছু খুব গভীর ভাবে অনুভব করতে চাইলে একটা সময় নিজেকে সেটার অংশ বলে মনেহয়। আঙুর বাগানে থোকা থোকা গুচ্ছ গুচ্ছ আঙুর ঝুলতে দেখতে দেখতে একটা সময় উপলব্ধি করলাম আমার মনের চারিধারেও গুচ্ছ গুচ্ছ থোকা থোকা কিছুর অস্তিত্ব। একটা সময় বুঝলাম সেসব হচ্ছে নানাধরনের অনুভূতির গুচ্ছ। রাগ-জেদ-অভিমান-হিংসা-ঘৃণা-বেদনা-অপ্রাপ্তি-হতাশা সবকিছুই একটি করে গুচ্ছ ঝুলছে! ভালোবাসার অনেক রূপ বলেই হয়তো শুধু ভালোবাসারই অসংখ্য গুচ্ছ! আমাদের সবার মনের মাঝেই আসলে এমন গুচ্ছ গুচ্ছ ভালোবাসা আছে। সেই ভালোবাসাকে গচ্ছিত না রেখে ছড়িয়ে দেয়া উচিত। আর যদি কোথাও গচ্ছিত রাখতেই হয় সেটা নিজের মনে না বরং ছোট্ট একটা বীজের আকারে অন্যের মনে বুনে দেয়া উচিত! যা হয়তো আমার অবর্তমানেও বিশুদ্ধ বাতাস সঞ্চার করে যাবে কারো কারো প্রাণে............
বিষয়: বিবিধ
৩১২৬ বার পঠিত, ৫০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এমন সমইয় বিষন্ন থাকা কি আর সাজে?
চলো ভালোবাসার সুবাস ছড়িয়ে দেই সবার মনে
ভালো থাকুক ভালোবাসা, শান্তি ছড়াক ক্ষনেক্ষনে!
পেছনে থাক পরে নিরানন্দতার আকর্ষণ
মুঠো মুঠো ছড়াই চলো ভালোবাসার বীজ
প্রকৃতি হবে জগতময় অতি নির্মল অতি সজীব......
সুন্দর লেখা আগে মন্তব্য করে পরে পড়তে হয়
লেখাটি মধ্যে হারিয়ে গিয়েছি
বিষণ্নতা মন ভরিয়ে নিয়েছি।
কিন্তু'অবর্তমানে' শব্দটি মোটেও পছন্দ হয়নি।
আর সর্বোপরি সর্বাবস্থায় আল্লাহর উপরে ভরসা এবং ঐকান্তিক ইচ্ছে ও চেষ্টার দ্বারা মনকে খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ভালো থাকুন।
ধন্যবাদ ধন্যবাদ
শুকরিয়া জাজাকাল্লাহু খাইরান
অনেক অনেক ধন্যবাদ।
ছড়িয়ে পড়ুক ভালোবাসা প্রাণ থেকে প্রাণ
হিংসা-ঘৃণা-বেদনা-অপ্রাপ্তি-হতাশা মুছে যাক ভালবাসার বাণে
হতাশার বুকে বুনে দেই ছোট্ট ছোট্ট আশা......
েএর চিকিৎসা অবশ্য তোমার লেখাতেই আছে
'সামনে দেখো দণ্ডায়মান ব্যথার পাহাড়, চলো তাকে দেখাই ধৈর্য্যের বাহার! ব্যর্থতা-বেদনা মুখ লুকোবে লজ্জায়, আল্লাহতে ভরসা থাকে যদি মজ্জায়।'
অনেক শুকরিয়া আপু।
অনেক শুকরিয়া আপু।
অনেকদিন পর আপনাকে দেখলাম। ভালো থাকুন আপু।
অনুভূতির মাত্রা যার মধ্যে যত বেশি যে কোন জিনিস সামলানো তার জন্য তত বেশি জটিল। বোকা বা যাদের অনুভূতি কম তাদের ক্ষেত্রে এসব জটিলতার কম হয়।
তবে হ্যা বুদ্ধিমান বলতে যদি সর্বাবস্থায় আল্লাহর উপর আস্থাকারী বুঝিয়ে থাকেন, আর বোকা বলতে যদি দুর্বল ঈমানকে বুঝিয়ে থাকেন তাহলে আপনার ধারণা ঠিকআছে।
অনেক শুকরিয়া।
লেখার জন্য ধন্যবাদ-
কুরআন তিলাওয়াত শুনে দেখেছেন কখনো মন খারাপের সময়? ট্রাই করে দেখুন না একটু! কয়েকদিন হয়তো সময় লাগবে। তারপর একটা সময় দেখবেন যে কুরআন তিলাওয়াত শুনলেই মন ভালো হতে শুরু করেছে, ইনশাআল্লাহ।
সুন্দর লিখেছেন আপু।
অনেক সময় এমন হয় কারো মুখের একটা শব্দ আমাদেরকে দিয়ে যায় হাজার পাওয়ারের এনার্জী। তবে যেহেতু সবসময় এনার্জী দেয়া মানুষগুলোকে কাছে পাওয়া নাও যেতে পারে, তাই এই পাওয়ারটা তাকেই দেয়া উচিত যিনি সর্বাবস্থায় আমাদের সাথে থাকেন।
একাকীত্বের সময় আমাদের সাথী হোক আল্লাহর বাণী। তাহলে বিষণ্ণতা এলেও, তার মাঝে ডুবিয়ে দিলেও, ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারবে না, ইনশাআল্লাহ।
বুদ্ধির সাথে যখন স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস যুক্ত হয়, তখন অন্ধকার থেকে ব্যক্তি নিজে যেমন বেড়িয়ে আসতে পারে। তেমনি অভিজ্ঞতা থাকার কারণে অন্যের পানেও বাড়িয়ে দিতে পারে সাহায্যর হাত।
আসলে অভিজ্ঞতা ভালো হোক বা মন্দ, সুখের হোক বা দুঃখের, আনন্দের হোক বা বেদনার, বিষণ্ণতার কিংবা আশা জাগানিয়া। চাইলে সবগুলোকেই কাজে লাগানো যায়। সম্ভব হয় নিজকে আরেকটু উন্নত করে, অন্যের জন্য এক টুকরো প্রেরণা হওয়া.....
মন্তব্য করতে লগইন করুন