একটি শিশুর আত্মকথন.......শেষ পর্ব
লিখেছেন লিখেছেন আফরোজা হাসান ০৪ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৮:০২:০৯ রাত
রাতে খাবার পর ব্রাশ করে, ড্রেস চেঞ্জ করে ডায়েরী নিয়ে বসলো আসফিন। সারাদিনের সব কথা সুন্দর করে ডায়েরীতে লিখে রেখে তারপর সে ঘুমোতে যায়। আম্মুতা তাকে ডায়েরী লেখার জন্য আধঘন্টা সময় দিয়েছিলো। কিন্তু সে সেটাকে বাড়িয়ে একঘণ্টা করে দিতে অনুরোধ করেছিল আম্মুতাকে। আধঘন্টায় কি সব কথা লেখা যায়? কক্ষনো না! ডায়েরী খেলে সে লেখাতে মন দিলো। প্রথমেই লিখলো আজ একটি ঘটনা বহুল দিন। ঘটনা বহুল মানে যেদিনে অনেক ঘটনা একসাথে ঘটে। এই শব্দটা আজই প্রথম শিখেছে আসফিন ছোটমামার কাছে। এরপর বন্ধু ইলিয়াসের ছোটভাইকে তার ছোটবেলার সব খেলনা দিয়ে দিয়েছে সেকথা লিখলো। খেলনাগুলোর কথা মনে পড়তেই আবারো কিছুটা বিষণ্ণ হয়ে গেলো সে। পরমুহুর্তেই নিজেকে সামলে নিলো। তার নতুন গাড়িটা নেবার জন্য যখন তার কাজিন খুব কান্না করছিলো। সে তখন দিয়েছিল কিন্তু পরে খুব মনখারাপ হয়েছিল। চেয়েছিলো গাড়িরা ফেরত নিয়ে আসতে। আম্মুতা তখন বলেছিল সে আমাদের প্রফেট (সঃ) বলেছেন, উপহার দিয়ে সেটা ফেরত নেয়া মানে নিজের বমি নিজে খাওয়া। ভাবতেই শিউড়ে উঠলো আসফিন। ইয়াক! তারমানে উপহার দিয়ে মনখারাপ করাও নিশ্চয়ই খারাপ কিছু হবে। তাই যে লিখলো আজ আমি একজনকে আনন্দ দিতে পেরেছি। সেজন্য আলহামদুলিল্লাহ্।
ক্লাসে বেষ্ট স্টুডেন্ট হবার জন্য নানাভাই তাকে স্প্যাইডারম্যানের ড্রেস কিনে দিয়েছে। নানুমণি তাকে সেই গেমসটা উপহার দিয়েছে যেটা কেনার জন্য দুইমাস ধরে টাকা জমাচ্ছিলো। চিঠি পড়ে নানুমণি আনন্দে সত্যিই কান্না করেছে। তাকে জড়িয়ে ধরে অনেক অনেক আদর করেছে। এরপর আর একটুও মনখারাপ করে থাকেনি। আসফিনকে নিয়ে শপিং করতে বেড়িয়েছিলেন। দুজন মিলে আইসক্রিম খেয়েছে। ফেরার সময় অনেক আনন্দিত কণ্ঠে নানুমণি বলেছে, আসফিন ভালোই হয়েছে তোর মা সাথে নেই। নয়তো সারাক্ষণ কটকট করতো। এই ঠাণ্ডার মধ্যে বাইরে কেন যাবে? গেমস কিনে টাকা নষ্ট করার কোন মানে হয়? এই টাকা কাউকে দান করো তার উপকার হবে সাথে আল্লাহও খুশি হবেন। আইসক্রিম খাবে মানে কি? তোমাদের দুজনেরই ঠাণ্ডার সমস্যা সেটা কি ভুলে গিয়েছো? নো আইসক্রিম। আসফিন নানুমণির কথা শুনে খুব হেসেছিলো। আম্মুতা কখন কি বলবে সব নানুমণির মুখস্ত। আসফিনের সব কথাও আম্মুতার এমন মুখস্ত। বাবার বলেছে পৃথিবীর সব আম্মুতারাই নাকি এমন। আসফিনও খেয়াল করেছে সে কি চিন্তা করে সেটাও আম্মুতা বুঝে ফেলে। এরজন্যই তো তাকে যখন প্রফ জিজ্ঞেস করেছিল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যাজিশিয়ান কে? সে জবাব দিয়েছিল, আমার আম্মুতা আর নানুমণি। যদিও সবাই তার কথা শুনে হেসেছিল।
মামার কাছ থেকে আজ ক্যালেন্ডারের ইতিহাস জেনেছে সে। নানাভাই তাকে বলেছিল জ্ঞান অর্জন করে সেটা ছড়িয়ে দিতে হয়। তাই মামার কাছ থেকে ওয়েব সাইটের অ্যাড্রেস নিয়ে নিয়েছে সব ফ্রেন্ডদেরকে দেবার জন্য। আজ সে একটা ভুল কাজ করেছে। ফুপ্পির সালামের জবাব না দিয়েই ফোন রেখে দিয়েছে। এটা খুব খারাপ ও অন্যায় কাজ। যখনই এই কথাটা তার মনে হয়েছে আবার ফোন করেছে বাসায়। ফুপ্পিকে সরি বলেছে। ফুপ্পি হাসতে হাসতে বলেছে, আপনার সাত খুন মাফ জামাই বাবাজ্বী। শুভ সংবাদ শোনেন একটা। ডাক্তার জানিয়েছেন আল্লাহ আমাকে একটা মেয়ে পাখীই পাঠাচ্ছেন। আমার সাথে সাথে বলেন, শোকর আলহামদুলিল্লাহ। আসফিনের বুকের মধ্যে ধড়াস করে উঠলেও সে শোকর আলহামদুলিল্লাহ বলেছে। ঐ সময় নানুমণি তাকে নিয়ে শপিংয়ে বের না হলে টেনশনে ঠিক সে হার্টফেল করতো। হার্টফেল কেন করে এই কথা সে খালামণির কাছে জানতে চেয়েছিল। খালামণি জবাব দিলো, বেয়াদব নাম্বার ওয়ান। পড়াশোনা করে না ফেল তো করবেই। আসফিন অবাক কণ্ঠে জানতে চেয়েছিল, আমাদের শরীরের ভিতরেও কি স্কুল আছে খালামণি? খালামণি বলল, হুম্ম..পরিমিত সুষম খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম করা, অকারণে টেনশন না করা, সর্বাবস্থায় আল্লাহ্র উপর ভরসা রাখা ইত্যাদি নিয়ম মেনে চলা হচ্ছে হার্টের সাবজেক্ট। অংক, বাংলা, ইংরেজীর মত। বুঝেছিস? না বুঝলে অপেক্ষা কর আমি নিজেই এখনো বুঝিনি কি বললাম তোকে। খালামণি যে পাগল আবারো টের পেয়েছে আজ আসফিন।
নানাভাইর কাছে জানতে চেয়েছিল আসফিন দেশে কি হয়েছে? নানাভাই আসফিনকে বলেছে, কিছু মানুষ নিজেদের অজ্ঞানতার কারণে অন্যায়কারীতে পরিণত হয়েছে। তাই তারা পরের অকল্যাণ করছে কিন্তু জানে না যে তারা আসলে নিজের অকল্যাণ করছে। এজন্যই তো তোমাকে অনেক অনেক জ্ঞানী ও কল্যাণকামী হতে হবে। যাতে অন্যায়কে প্রতিহত করতে পারো তোমার জ্ঞানের মাধ্যমে। সেজন্য তাকে কি করতে হবে জানতে চাইলে নানাভাই জবাব দিয়েছিল, আল্লাহকে ভয় করতে হবে। যদি তুমি আল্লাহকে ভয় করো তাহলে পৃথিবীর সবচেয়ে জ্ঞানীদের একজন হতে পারবে। আর সেজন্য তোমাকে আল্লাহ্র সম্পর্কে জানতে হবে। তাই করতে হবে বেশি বেশি জ্ঞানার্জন। যখন তুমি আল্লাহকে জানবে তখনই না আল্লাহ্র ক্ষমতাকে জানতে পারবে। আর যা তুমি নিজের জন্য পছন্দ করো সেটাই যদি অন্যের জন্যও পছন্দ করতে পারো। নিজের জন্য যা অপছন্দ করো, সেটা যদি অপরের জন্যও অপছন্দ করতে পারো তাহলে হতে পারবে সত্যিকার কল্যাণকামী। আর সেজন্যও তোমাকে অনেক অনেক জ্ঞানার্জন করতে হবে। আসফিন ডায়েরীতে লিখলো, আজ থেকে আমি আরো বেশি বেশি জ্ঞানার্জন করবো। তাহলে আমি জ্ঞানী ও কল্যাণকামী হতে পারবো।
ডায়েরী লেখা শেষ করে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো আসফিন। আজ রাতে কি স্বপ্ন দেখবে মহাকাশ নিয়ে সেটা ভাবে লাগলো আকাশের দিকে তাকিয়ে......
(আসফিনের আত্মকথন লেখার উদ্দেশ্য ছিল এটা বোঝানো যে, একটি শিশুর মনোজগতে তার পরিবারের প্রভাব কতখানিক। বিশেষ করে মায়ের। মাকে সবচেয়ে বেশি কাছে পায় এবং কাছ থেকে দেখে একটি শিশু। তাই নিজের অজান্তেই সে সবকিছুর জন্য মাকে মডেল বানিয়ে ফেলে। করণীয়-বর্জনীয় করার মতো কিছু যখনই তার সামনে আসে, মনের পর্দায় ভেসে উঠে এমন পরিস্থিতিতে তার মা বা পরিবারের সদস্যরা কি করে কিংবা কি করতে বলেছে। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে একটা শিশু কতকিছু খেয়াল করে সেটা বোঝানো। অনেক সময় ছোটমানুষ মনেকরে বুঝবে না ভেবে আমরা শিশুদের সামনে এমন অনেক কথা ও কাজ করে ফেলি যা শিশুকে ভুল পথে পরিচালিত করতে ভূমিকা রাখে। অনেক সময় পরিবারের সদস্যরা মজার ছলে এমন কথা বা আচরণ করে যা মানসিক অ্যাবিউজের পর্যায়ে চলে যায়। কারণ সেটা শিশুর মানসিক শান্তিকে বিঘ্নিত করে, মনে নানা বিরক্তির উদ্রেক করে।)
বিষয়: বিবিধ
২৬৮২ বার পঠিত, ৪৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক ধন্যবাদ।
আসলেই বাচ্চাদের সাথে এমন মজা করা ঠিক যা যেটা ওদের মানসিক যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ভাবী রোমান্টিক লেখা বাদ। এখন থেকে শুধু বাচ্চাদেরকে নিয়ে লিখবে তুমি। এরপর একটা মেয়ে বাচ্চার আত্মকথন লিখো।
ফালতু আইডিয়া দিলে ব্লগে ঢোকা নিষিদ্ধ করে দেয়া হবে।
শিশুর আত্মকথন পড়ে অনেক কিছু জানতে পাড়লাম বাচ্চাদের মনোভাব সম্পর্কে ।
তাছাড়া অনেক মজা নিয়ে পড়েছি প্রতিটি পর্ব। ভালো থাকুক আসফিন আব্বুতা সাথে তার আম্মুতা অনেক ভালো থাকুক ।
দুইজনের জন্য অনেক দোয়া রইলো
আপনিও ভালো থাকুন আপুনি।
গল্পের চরিত্রগুলোয় একটা চমত্কার ধারাবাহিকতা ছিল তা হচ্ছে সবাই আফসিনকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজেদের জ্ঞানটুকু উজার করে দেওয়া চেষ্টা করেছে।
এই ব্যাপারটা খুব ভাল লাগছে।
অনেক অনেক শুকরিয়া আপনাকে।
শুকরিয়া আপুনি।
যা বলার আমি বলেদিছিগো
মন্তব্য করতে লগইন করুন