একটি শিশুর আত্মকথন......৬
লিখেছেন লিখেছেন আফরোজা হাসান ০৩ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৩:০১:৪৩ দুপুর
নানুমণিকে চিঠি পৌঁছে দিয়ে ছোটমামার রুমে উঁকি দিলো আসফিন। ছোটমামাকে আসফিনের বিরাট পছন্দ। আবিষ্কার বিষয়ে ছোটমামাই সবচেয়ে বেশি পরামর্শ দেয় আসফিনকে। প্রতিটা পরামর্শই ফাটাফাটি। এই তো গত মাসেই ছোটমামা আসফিনকে একটা স্পেসশীপের মডেল ডিজাইন করে দিয়েছে। কয়েকদিন আগে মামা আসফিনকে বলল, শোনরে বেটা খালি মহাকশে ঘুরে ঘুরে বাস্কেট বল খেলা করলে হবে না। বন্ধু না তোমাকে হতে হবে এলিয়েনদের নেতা। আসফিন জানতে চেয়েছিল নেতা হয়ে আমি কি করবো মামা? মামা জবাব দিয়েছিলো, একটা ভ্রাম্যমাণ সুপারকিড দল গড়ে তুলতে হবে তোমাকে। তোমার মত আরো কয়েকজন সুপারকিড খুঁজে বের করো। সবার সাথে থাকবে একজন করে অদৃশ্য এলিয়েন। যেখানেই কোন অন্যায়-অত্যাচার হতে দেখবে ছুটে যাবে তোমরা। তারপর অন্যায়কারীকে মেরে ভর্তা করে মহাকাশে তৈরি জেল সেলে পাঠিয়ে দেবে। যাতে চাইলেও কেউ দুর্নীতি করে তাদের ছাড়িয়ে নিতে না পারে। অবশ্য এই কথা আম্মুতা শোনার পর ছোটমামাকে বকা দিয়েছে। মামার বুদ্ধিটা তো ফাটাফাটি তাহলে আম্মুতা বকা কেন দিলো? নাহ বড়দেরকে বোঝা আসলেই মুশকিল।
মামার রুমে উঁকি দিয়ে দেখলো মামা মন খারাপ করে ক্যালেন্ডারের দিকে তাকিয়ে আছে। আসফিন রুমে ঢুকলেও মামা কিছু বললো না। আসফিন পাশে বসে বলল, মামা তোমার কি হয়েছে? মামা লম্বা একটা শ্বাস ছেড়ে বলল, মনটা ভীষণ খারাপ রে বাপ। এই ক্যালেন্ডারটাকে দেখো আসফিন। গত একটা বছর ধরে বিশ্বস্ততা, দায়িত্বশীলতা ও নির্ভুলতার সাথে আমাকে প্রতিটা দিনের সঠিক দিক নির্দেশনা দিয়েছে। আমাকে বলে দিয়েছে আজ কোন মাসের কত তারিখ, কি বার, কি কি করণীয় আছে আজ। অথচ বছর শেষ তাই এর আর কোন মূল্য নেই। এখন একে ফেলে দিতে হবে। অমূল্য জিনিসগুলো সময়ের ব্যবধানে কেমন মূল্যহীন হয়ে যায়! কথা শেষ করে মামা আগের চেয়েও লম্বা আরেকটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। আসফিন মামার কথাটা ঠিক বুঝতে পারলো না। অমূল্য জিনিস আবার মূল্যহীন হয় কিভাবে? সে দুই মাস থেকে টাকা জমাচ্ছে একটা নতুন ভিডিও গেমস কেনার জন্য। কিন্তু তার মূল্য তো এখনো আগের মতোই আছে। আসফিনেরও মামার মত দীর্ঘশ্বাস ছাড়তে ইচ্ছে করলো। তবে পুরনো জিনিসকে মানুষ যত্ন করে না এটা সে জানে। তার পুরনো জামা-কাপড়, খেলনা, বই সব আম্মুতা স্টোররুমে নিয়ে রাখে। অথচ যখন নতুন ছিল তখন কত যত্ন করে আসফিনের রুমে রাখতো। কিন্তু এখানে মন খারাপের কি আছে সেটা ঠিক বুঝে আসলো না তার। নাহ বড়রা আসলেই অদ্ভুত।
আসফিনের মাথায় হঠাৎ একটা প্রশ্ন এলো। আচ্ছা ক্যালেন্ডার কি কেউ আবিষ্কার করেছিল নাকি? ক্যালেন্ডার এলো কিভাবে? মামার কাঁধ ধরে ঝাঁকি দিয়ে আসফিন বলল, মামা ক্যালেন্ডার কে আবিষ্কার করেছে? মামা হাসি দিয়ে বলল, ইন্টারনেট ঘেঁটে আমি এইমাত্রই ক্যালেন্ডারের ইতিহাস পড়লাম। আচ্ছা শোন বলছি ক্যালেন্ডারের ইতিহাস। ধারণা করা হয় যীশুখ্রিষ্টের জন্মেরও প্রায় ২৫০০০ বছর আগে প্রথম ক্যালেন্ডার তৈরি করা হয়েছিল। সে সময়ের একটা হাড়ের তৈরি বস্তু পাওয়া গেছে যেটাকে অনেকের মতে ক্যালেন্ডার হিসেবে ব্যবহার করা হতো। আবার ১৫০০০ বছর আগে একটা গুহাচিত্রও পাওয়া গেছে। যেটাকে সে সময়ের ক্যালেন্ডার হিসেবে ব্যবহার করা হতো। এ দুটোকেই বলা হয় ইতিহাসের প্রথম ক্যালেন্ডার। যদিও নিশ্চিত নয় এটা শুধু ধারণা যে ওগুলো ক্যালেন্ডার ছিল। তবে সেগুলো এখানকার দিনের ক্যালেন্ডারের মত ছিল না মোটেও। ওগুলোতে দিন-মাস-বছর কিছুই ছিল না। চাঁদ দেখে বানানো ঐ ক্যালেন্ডার গুলো দিয়ে একরকম করে সময়ের হিসাব রাখা হতো কেবল। প্রথম মাস ও তারিখ ওয়ালা ক্যালেন্ডার বানিয়েছিল সম্ভবত রোমানরা। তবে তারাও প্রথম ক্যালেন্ডার বানিয়েছিল চাঁদকে অনুসরণ করেই। আর সেটাতে মাস ছিল মোট দশটা। আর দিন ছিল ৩০৪ টা।
তাদের আসলে জানা ছিল না ৩৬৫ দিনে এক বছর হয়। পরে রোমান সম্রাট নুমা পন্টিলাস খ্রিষ্টপুর্ব ১৫৩ অব্দে ১০ টা মাসের সঙ্গে জানুয়ারী ও ফেব্রুয়ারী যোগ করে ১২ মাস করেন। ১২ মাস ঠিক হলো কিন্তু ৩৫৬ দিন আর ঠিক হলো না। পরে খ্রিষ্টপুর্ব ৪৬ সালে আরেক রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার ঠিক করলেন যে দিন ঠিকঠাক করতে হবে। তিনি চাঁদের হিসেবে দিনকে ঠিকঠাক করে সাজালেন। চাঁদ দেখে হিসাব করার কারণে সিজারের গণনায় দিন আসলো ৩৫৫ টা। এভাবেই বছর হিসাব চলতে থাকলো। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে অন্য হাজারটা সমস্যাও হতে লাগলো। কৃষকরা দেখল তাদের ফসলের হিসাব মেলে না। আগের বছর যেই দিনে ফসল তুলেছিল, এবার আর সেই দিনে ফসল তোলা যাচ্ছে না। তখন আবার সিজার দিনকে গোনাতে বসলেন। এবার তিনি আর চাঁদ দিয়ে দিন সাজালেন না। একেবারে বর্তমানের মত সূর্য দেখেই দিন ঠিকঠাক করতে বসলেন। অনেকে বলে সূর্য দেখে নাকি সিজার প্রথমে বছর ঠিক করেন ৪৪৫ দিনে। পরে তিনি ৩৬৫ দিনে বছর বেঁধে দেন। কিন্তু ক্যালেন্ডারের পরিবর্তন কিন্তু থেমে থাকেনি। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারণে ক্যালেন্ডারের পরিবর্তন করা হয়। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ পরিবর্তন হয় ১৫৮২ সালে। পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি যে ক্যালেন্ডার বের করেন সেটা এতটাই ভালো ছিল যে, এখনো সেই ক্যালেন্ডারই ব্যবহার করা হয়।
মামার কাছ থেকে ক্যালেন্ডারের ইতিহাস জানার পর আসফিনের ছুটে গেলো ফোনের কাছে। দ্রুত ডায়েল করলো আম্মুতার নাম্বার। কোন কিছু শিখলে সে সবার আগে আম্মুতাকে জানায়। কিন্তু ঐপাশ থেকে সালাম শুনেই থমকে গেলো আসফিন। এটা তো আম্মুতার কণ্ঠ না! এটা তো তার ছোট ফুপ্পির কণ্ঠ। তাড়াতাড়ি ফোন রেখে দিলো আসফিন। ছোট ফুপ্পি যদি টের পায় লাইনে আসফিন তাহলে কথা বলতে বলতে মাথা ধরিয়ে দেবে। ছোট ফুপ্পির কথা মনে হলেই আজকাল তার চিন্তা বেড়ে যায়। কারণ ছোট ফুপ্পি তাকে বলেছে খুব শিঘ্রীই আল্লাহ্ ছোট্ট একটা পাখী পাঠাচ্ছেন আকাশ থেকে ফুপ্পিকে। পাখীটা মেয়ে হলে নাকি আসফিনের সাথে পাখীটাকে বিয়ে দেবে। এরপর থেকে আসফিন নামাজের পর আল্লাহকে বলে হে আল্লাহ তুমি ফুপ্পিকে মেয়ে পাখী দিও না। এই দোয়া করা ঠিক কিনা সেটা অবশ্য আসফিন জানে না। আম্মুতা তাকে বলেছে যে কোন দোয়া করার আগে একবার আম্মুতাকে সেটা শুনিয়ে নিতে। বাসায় গিয়ে তার দোয়াটা শোনাতে হবে আম্মুতাকে। এই সময় খালামণির ডাক ভেসে এলো তার কানে। ফোঁস করে শ্বাস ফেললো আসফিন। আজ তার বিপদের শেষ নেই। খালামণির কাছে যতক্ষণ থাকবে একটু পর পর খালামণি শুধু তার গাল ধরে টানবে। মানা করলে বলবে তোর মাকে থাপড়া মারতে পারি নাতো তাই তোর গাল ধরে টানি। দোষ আমার না তোর মায়ের। যা বলার বাসায় গিয়ে তোর মাকে বলবি। এখন গাল টানা খেতে থাক চুপচাপ। নিজের অসহায় গালে একবার হাত বুলিয়ে খালামণির কাছে রওনা করলো আসফিন......
বিষয়: বিবিধ
২০৬৮ বার পঠিত, ৩১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আর আপনার এই ভাল লেখাটির জন্য ধন্যবাদ জানাচচ্ছি --
কথাটা লাগলো খুবই দামী
দূর করতে সকল আঁধার
ছড়াতে হবে আলোর বাহার......
সত্যের পথে আপনার কলম/কিবোর্ড চলুক অবিশ্রান্ত...
স্বাগতম ও শুভকামনা......
তুমি অনেক পড়াশোনা করছো এখন ক্ষান্ত দাও। শুধু গল্প লিখো আমার ব্লগের জন্য।
খালামণি আর ফুপ্পিকে তুমি ভিলেন হিসেবে দেখিয়েছো। কিন্তু জেনে রাখো যে.......
আজকে নতুন একটা ক্যালেন্ডার পেয়েছি অনেক ভালো লেগেছে মনটাও ভরে গেছে ক্যালেন্ডার টি পাওয়ার পর। অনেক ধন্যবাদ আপু সুন্দর লিখাটির জন্য।
হুমম...পরামর্শ করে কাজ করা অনেক ভালো।
অনেক অনেক শুকরিয়া আপু।
মন্তব্য করতে লগইন করুন