একটি শিশুর আত্মকথন......৫
লিখেছেন লিখেছেন আফরোজা হাসান ০২ জানুয়ারি, ২০১৪, ০২:০৭:৩৬ দুপুর
নানুমণিকে চিঠিতে কি লিখবে সেটা নিয়ে খুব চিন্তাতে পড়ে গেলো আসফিন। একবার লিখলো নানুমণি আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি। তুমি খুব খুব খুব স্পেশ্যাল একজন আমার জন্য। কারণ তুমি আমার আম্মুতার আম্মুতা। কিন্তু নিজের কাছেই ভালো লাগলো না এই চিঠিটা। তাকে এমন কিছু লিখতে হবে যেটা পড়ে আনন্দে নানুমণি কান্না করে দিবে। আম্মুতাটাকে যখনই কোন কিছুতে আনন্দিত হয় কান্না করে। তাই আসফিন বুঝে গিয়েছে বড়রা আনন্দে কান্না করতে পছন্দ করে। কিন্তু সে এমন কি লিখবে যাতে নানুমণি কান্না করবে? অনেকক্ষণ চিন্তা করার পর হাসিতে মুখ ভরে গেলো তার। আরে এই তো পেয়ে গিয়েছে ফাটাফাটি একটা বুদ্ধি। আম্মুতা আর সে মিলে গতকাল রাতে যে স্বপ্নটা দেখেছে সেটা নানুমণিকে লিখলে অনেক খুশি হবে। আনন্দে কেদে ফেলবে এতে কোন সন্দেহ নেই।
প্রতিদিন রাতে ঘুমোনোর সময় আসফিন আর আম্মুতা চোখ বন্ধ করে স্বপ্ন দেখে। একদিন আম্মুতা আসফিনের স্বপ্নে আসে আর একদিন আসফিন যায় আম্মুতার স্বপ্নে। পরশুদিন সে আম্মুতাকে মহাকাশে নিয়ে গিয়েছিলো।দুজন মিলে অনেক মজা করে ঘুরে বেড়িয়েছে। কিছুক্ষণ লুকোচুরি খেলেছে। আম্মুতা তারাদের আড়ালে লুকিয়ে ডাকে ডেকে বলছিল, আসফিন বলো তো আমি কোথায়? আসফিন ঠিক ঠিক আম্মুতাকে খুঁজে বের করে ফেলেছে। আম্মুতাকে খুঁজে নিতে আসফিনের কখনো ভুল হতে পারে? কক্ষনো না। আসফিন যেমন আম্মুতার জান। আম্মুতাও তো আসফিনের জান। যখন মহাকাশ থেকে চলে আসছিলো আম্মুতা বলল, আসফিন আমার তো খেয়ালি ছিলো না যে ভালোবাসা বৃক্ষের অনেক বীজ সাথে করে নিয়ে এসেছি। আবার ফেরত নিয়ে যাবো? তারচেয়ে চলো ছড়িয়ে দেই আমাদের ভালোবাসা মহাকাশেও। উফফ আম্মুতা যে কি না! স্বপ্নের মধ্যেও তাকে দিয়ে মহাকাশে ভালোবাসা বৃক্ষের বীজ বপন করিয়েছে।
আর গতরাতে সে গিয়েছিলো আম্মুতার স্বপ্নে। বিছানায় শুয়ে একসাথে চোখ বন্ধ করার কিছুক্ষণ পর আম্মুতা বলল, আসফিন আম্মুতাকে দেখতে পাচ্ছো। ঐ দেখো মেঘেদের ভিড়ে আম্মুতা উড়ে বেড়াচ্ছি। আসফিন বলল, হ্যা আম্মুতা আমি দেখতে পাচ্ছি তো তোমাকে। তোমার ডান দিকের মেঘের উপরই তো আমি বসে আছি। আম্মুতা একা একা কোথায় যাচ্ছো আমাকে ফেলে? আম্মুতা হেসে বলল, ওহ লে আমার গুড্ডু বেবী তুমি এখানে! কোথাও যাচ্ছি না আমি তোমাকে ফেলে। তোমাকে ফেলে কি আমি কোথাও যেতে পারি বলো? বসে আছো কেন হাত ধরো আম্মুতার। চলো ডানা মেলে কিছুক্ষণ ঘুরে বেড়াই আকাশে। আসফিন বলল, কিন্তু আম্মুতা আমার তো তোমার মত ডানা নেই। আম্মুতা বলল, তাতে কি হয়েছে আম্মুতা তো আছি তোমার সাথে। তোমাকে শক্ত করে ধরে রাখবো। কখনো পড়তে দেবো না নীচে।
আসফিন তখন হাত বাড়িয়ে আম্মুতার হাত ধরলো। ইশশ কি মজা আকাশে উড়ে বেড়াতে। এত সুন্দর উড়তে কোথায় শিখেছে আসফিন জানতে চাইলে আম্মুতা জবাব দিলো, তুমি যেমন আমার কাছে উড়তে শিখছো, আমিও তেমন আমার মামণির কাছে উড়তে শিখেছি। আসফিন চলো তোমার নানুমণিকেও নিয়ে নেই আমাদের সাথে। ঐ যে দূরের মেঘের পাহাড়টা দেখছো সেখানে আছে নানুমণি। আবার না নানুমণি ঘুমিয়ে যায়! তারআগেই চলো আমাদের সাথী করে নেই নানুমণিকে। এরপর তো স্বপ্নে অনেক মজা হলো। একপাশে নানুমণি অন্যপাশে আম্মুতা আর মাঝখানে আসফিন। তিনজন মিলে মজা করে উড়ে বেড়ালো অনেকক্ষণ। বনের উপর দিয়ে উড়ে যাবার সময় এক বৃদ্ধ কাঠুরিয়াকে দেখে নীচে নেমে গিয়েছিলো তিনজন। কাঠুরিয়াকে অনেক কাঠ কেটে দিয়ে আবার আকাশে ডানা মেলেছিল। তারপর নানুমণিকে আবার মেঘের পাহাড়ে পৌছে দিয়ে আসফিন আর আম্মুতা ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমিয়েছিলো।
আসফিন খুব সুন্দর করে গতরাতের স্বপ্নটা লিখলো চিঠিতে। খামের উপর যত্ন করে লিখলো-“ ইট’স সাচ অ্য গ্র্যান্ড থিংগ টু বি অ্য মাদার অফ অ্য মাদার, দ্যাট’স হোয়াই দ্য ওয়াল্ড কল’স হার গ্র্যান্ডমাদার।” আই লাভ ইউ নানুমণি। এরপর ধীরে ধীরে পা টিপে টিপে রওনা হলো নানুমণির রুমের দিকে.........
বিষয়: বিবিধ
৩০৯৭ বার পঠিত, ৩৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক ভাল লাগলো।
আপি আবার হাজির নতুন বছরে। প্রথম দিন থেকেই।
ইনশাআল্লাহ আবারো তাহলে মন ছুঁয়ে যাওয়া মন্তব্য প্রতীক্ষমাণ আমার জন্য।
ভালো থেকো।
গল্পে যে ম্যাসেজ দিতে চেয়েছি সেটা বুঝতে পেরেছো কিনা সেটা বলো আমাকে।
ভালো লাগলো ভীষণ
আবার যদি যেতে পারতাম সেখানে
আমার আসফিন হয়ে যেতে ইচ্ছে করছে......
আপুজ্বী গল্পে আমি কি বোঝাতে চেয়েছি তা কি বুঝতে পেরেছেন?
পড়ের পর্বটিতে চলে গেলাম।
#বাচ্চাদেরকে মনরাজ্যে স্বপ্নের ঘোরে সত্যকে জাগাতে পারে
হয়তঃ
১.উদার মনের অধিকারী হতে সাহায্য করে
২.একে অপরের প্রতি ভালবাসা সৃষ্টি করাতে
৩.আর ঐ ভালবাসাকে আনন্দবাড়ির সকল সদস্যের মাঝে ছড়িয়ে দিতেই।
এই স্বপ্নীল রাজ্যের আগমন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন