একটি শিশুর আত্মকথন......৪
লিখেছেন লিখেছেন আফরোজা হাসান ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৪:৫৯:৪৬ বিকাল
গত তিন ঘণ্টায় আসফিন এটা বুঝে গিয়েছে নানুমণি আজ ঠিক অন্যান্য দিনের মতন না। তার ছোট্ট মন বুঝতে পারছে কোথাও কোন একটা সমস্যা হয়েছে। সবসময় এসেই দেখে টেবিল ভর্তি করে তার প্রিয় সব খাবার নিয়ে নানুমণি অপেক্ষা করছে। অবশ্য এটা নানুমণি আজও করেছে কিন্তু তাকে খাওয়াতে খাওয়াতে নানুমণি বাসায় আম্মুতা কি কি কর্মকান্ড করে সেটা জানতে চায়। আজ এখনো পর্যন্ত একবারও নানমণি বলেনি, আসফিন বল তো নতুন কি কি পাগলামো করেছে তোর মা? অথচ সারাপথ আম্মুতার সব কাণ্ড মনে মনে গোছাতে গোছাতে এসেছে সে নানুমণিকে বলার জন্য। নানুমণি আজ বেশি হাসছেও না, নানাভাইর সাথে দুষ্টুমিও করছে না। কি হলো আজ তার নানুমণির?
ভাবতে ভাবতে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলো আসফিন। একদম স্প্যাইডারম্যানের মতো লাগছে তাকে। নানাভাই তাকে স্প্যাইডারম্যানের এই ড্রেসটা উপহার দিয়েছে ক্লাসে বেষ্ট স্টুডেন্ট হবার জন্য। আয়নার সামনে বিভিন্ন ভাবে ঘুরে ঘুরে নিজেকে কিছুক্ষণ দেখলো। তারপর নিজের প্রতিচ্ছবির দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি এখন স্প্যাইডারকিড। স্প্যাইডারম্যানের মত তোমাকেও এখন মানুষের উপকার করতে হবে। শত্রুর হাত থেকে বাঁচাতে হবে অসহায় মানুষকে। কিন্তু অসহায় মানুষ সে কোথায় পাবে? মনে প্রশ্ন জাগলো! সাথে সাথেই জবাব পেলো নানুমণিই তো আছে। নানুমণির মন ভালো করতে হবে স্প্যাইডারকিড হয়ে। সেজন্য আগে জানতে হবে নানুমণির আসলে হয়েছে কি! নানাভাইর কাছে ছুটলো সে।
আসফিনকে দেখেই নানাভাই হাসি দিয়ে বললেন, আরে এসে গেছে দেখি আমার স্প্যাইডারম্যান। আসফিন সংশোধন করে দিয়ে বলল, ওহো নানাভাই স্পাইডারম্যান নাতো আমি স্প্যাইডারকিড। নানাভাই হা হা হা করে হাসতে হাসতে বলল, আরে হ্যা তাই তো স্প্যাইডারম্যান না তুমি হচ্ছো স্প্যাইডারকিড। আমাদের স্প্যাইডারকিড কি এখন নানাভাইর সাথে দাবা খেলবে নাকি? আসফিন নানাভাইর পাশে বসে বলল, একটু পরে খেলবো। নানুমণির কি হয়েছে নানাভাই? নানাভাই বলল, আমিও বুঝতে পারছি না ঠিক কি হয়েছে। তবে মনখারাপ মনেহচ্ছে। আসফিন বলল, কেন মনখারাপ নানুমণির? আমি এলে তো নানুমণির মন অনেক ভালো থাকে। নানাভাই আসফিনকে কাছে টেনে নিয়ে বলল, তোমার আম্মুতা আসেনি তো সেজন্য হতে পারে।
এইবার আসফিনের কাছে সব পরিষ্কার হয়ে গেলো। ঠিক একদম ঠিক আম্মুতা আসেনি বলেই নানুমণির মনখারাপ। নানাভাইর বাসায় এসে যতক্ষণ থাকে আম্মুতাকে নানুমণি বকাঝকা করতেই থেকে। আজও নিশ্চয়ই অনেক বকা রেডি করে রেখেছিল নানুমণি আম্মুতার জন্য। এখন বকাঝকা করতে পারছে না বলেই মনখারাপ হয়েছে। আচ্ছা সেকি এখন নানুমণিকে গিয়ে বলবে তাকে বকাঝকা করে মন ভালো করে নিতে? স্প্যাইডারম্যান হলে কি এমনটা করতো? মনেহয় না! নিশ্চয়ই মন ভালো হয়ে যাবে এমন কিছু করতো। তাকেও তাহলে তেমন কিছুই করা উচিত। কিন্তু কি করবে সে? কি করলে নানুমণির মন ভালো হয়ে যাবে? গভীর ভাবনাতে পড়ে গেলো সে! কি মুশকিল মাথায় কোন বুদ্ধিই আসছে না!
হঠাৎ বুদ্ধি পেয়ে গেলো সে। উত্তেজনায় খপ করে নানাভাইর হাত চেপে ধরে বলল, নানাভাই তোমার কাছে কি চিঠি লিখার সুন্দর কোন কাগজ আছে? নানাভাই বলল, হ্যা আছে। কিন্তু কি করবে তুমি? আসফিন বিশাল হাসি দিয়ে বলল, চলো আমরা দুজন নানুমণিকে চিঠি লিখি। চিঠি পড়লে নানুমণির মন ভালো হয়ে যাবে। আমি কয়েকদিন আগে একটা গল্পের বই থেকে এই কথা জেনেছি। শুনবে কি হয়েছিলো? নানাভাই বলল, অবশ্যই শুনবো। আসফিন বলল, ঘুম থেকে উঠার পর থেকেই সেদিন অনেক মনখারাপ ছিল উইলির। কিছুই ভালো লাগছিলো না তার। এমনকি হাত-মুখ ধুতে, স্লিপিং স্যুট চেঞ্জ করতে, নাস্তা করতেও ইচ্ছে করছিলো না তার। সে উদাস চোখে জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল।
যত সময় যাচ্ছিলো ততই তার মনখারাপের পরিমাণ বাড়ছিল। মনে হচ্ছিলো এই পৃথিবীর সে সবচেয়ে দুঃখী, কেউ তাকে পছন্দ করে না, কেউ তাকে ভালোবাসে না। উইলি বসে এসব ভাবছিল হঠাৎ শুনতে পেলো তার চিঠির বক্সে শব্দ হচ্ছে শুনতে পেলো। সে তখন উঠে গিয়ে দেখলো একটা চিঠি এসেছে তার কাছে। খুলে দেখে তাতে লেখা আছে, প্রিয় উইলি এই চিঠিটা তোমাকে সে পাঠিয়েছে যে তোমাকে ভীষণ ভালোবাসে। যার কাছে তুমি খুব স্পেশাল একজন। জীবনের তোমার মত একজন বন্ধু পেয়ে সে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করে। চিঠিতে কোন নাম লেখা ছিল না কিন্তু চিঠিটা পড়েই উইলির মন ভালো হয়ে গেলো। সে তখনই হাত-মুখ ধুয়ে, স্লিপিং স্যুট চেঞ্জ করে, নাস্তা সেরে কে তাকে চিঠিটা পাঠিয়েছে তাকে খুঁজতে বের হলো।
নানাভাই তাড়াতাড়ি কাগজ-কলম নিয়ে আসো। তাড়া দিলো আসফিন। নানাভাই বলল, তারপর কি হলো গল্পে? আসফিন অবাক হয়ে তাকালো নানাভাইর দিকে। নানাভাই সত্যি সত্যি গল্পের পরের অংশ জানতে আগ্রহী দেখে সে খুবই মজা পেলো। ভাবলো বড়ারাও আসলে বাচ্চাদের মতোই, হো হো হো......। আসফিন বলল, এটা তো অনেক বড় গল্প রাতে ঘুমানোর সময় নানুমণি আর তোমাকে একসাথে বলবো। এখন আমাকে কাগজ-কলম এনে দাও নানুমণিকে চিঠি লিখবো। নানাভাই উঠে গেলে আসফিন একা একা হাসতে লাগলো। নানাভাইকে গল্পের পরের অংশ শোনার জন্য অস্থির হত দেখে অনেক মজা লাগছে। আরো মজা লাগে যখন তার ধাঁধার উত্তর খুঁজে না পেয়ে নানাভাই টেনশনে শুধু মাথা চুলকায়।
আজও সে অনেকগুলো নতুন ধাঁধা নিয়ে এসেছে নানাভাইর জন্য। নানাভাইর মাথা চুলকানো দেখতে তার খুব ভালো লাগে। গতবার নানাভাইকে মাথা চুলকাতে দেখে আম্মুতা বলেছিল, বাবা আস্তে মাথা চুলকাও তো তোমার মাথায় চুল নাই কিছু নাই। চুলকানোর চোটে শেষে মাথার চামড়া উঠে যাবে। আম্মুতার কথা শুনে হাসতে হাসতে সেদিন নানাভাইর শ্বাসকষ্ট উঠে গিয়েছিলো। নানামণি আম্মুতাকে বকা দিতে দিতে বলেছিল, তুই আর আমার বাড়িতে আর কোনদিন আসবি না। প্রতিবার এসেই কোন না কোন অনিষ্ট করেই যাস তুই। অথচ আজ আম্মুতা আসেনি সেজন্যই নানুমণির মন খারাপ। উফ বড়রা কত অদ্ভুত! বড়দের কিছুই বোঝা যায় না! এজন্যই তো আসফিন কখনোই বড় হতে চায় না! আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল, আল্লাহ প্লিজ প্লিজ সারাজীবন যেন আমার বয়স আট থাকে!
বিষয়: বিবিধ
১৯৭৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন