একটি শিশুর আত্মকথন......৩

লিখেছেন লিখেছেন আফরোজা হাসান ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৩, ১০:৪৮:৫৮ সকাল



স্কুলে টিফিন পিরিয়ডে ক্লাসমেট ইলিয়াসকে খুঁজতে লাগলো আসফিন। সে আজ ইলিয়াস জন্যও টিফিন নিয়ে এসেছে। টুনাফিশ উইথ এগ স্যান্ডউইচ খুব প্রিয় আসফিনের। ইলিয়াস একদিন তার কাছ থেকে একটু খেয়ে ভীষণ পছন্দ করেছিলো। এরপর থেকে যেদিনই টিফিনে স্যান্ডুউইচ আনে ইলিয়াসের জন্যও নিয়ে আসে আসফিন। খেলার পার্কে একপাশে চুপ করে ইলিয়াসকে বসে থাকতে দেখে মন খারাপ হয়ে গেলো আসফিনের। ইলিয়াসের বাবার চাকরী চলে গিয়েছে কয়েকমাস আগে। এরপর থেকে নাকি ইলিয়াসদের অনেক সমস্যা। আম্মুতাকে আসফিন জিজ্ঞেস করেছিলো কি সমস্যা, কেমন সমস্যা, কেন সমস্যা? আম্মুতা বলেছে, বড়দের অনেক সমস্যা থাকে সেসব জানাটা তেমন জরুরী কিছু না। তবে তোমাকে অবশ্যই ইলিয়াসের সমস্যা জানতে চেষ্টা করতে হবে। আর সাধ্যমতো সাহায্য করতে হবে। তাহলেই তুমি খুব ভালো বন্ধু হতে পারবে।

আসফিন অবশ্য জেদ করে বলেছিল, আমি কেন জানতে পারবো না বড়দের সমস্যা? আম্মুতা জবাব দিয়েছিলো, কারো সমস্যা জানলে সেটার সমাধান করার চেষ্টা করা উচিত। কিন্তু তুমি তোমার এই ছোট ছোট হাত দিয়ে বড় মানুষের সমস্যার সমাধান কিভাবে করবে? তাই তুমি এখন তাদের সমস্যা শোন যাদের সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করতে পারবে। যাদের হাতের পাশে তোমার হাত দু’টাকে ছোট মনে হবে না। আসফিন সবসময় চেষ্টা করে কারো মন খারাপ দেখলেই কারণ জানার এবং সাধ্যমত সাহায্য করার। কারণ নানাভাই আসফিনকে বলেছে সে যদি অন্যেকে সাহায্য করে তাহলে আল্লাহ অনেক খুশি হবেন তার উপর। এবং সে যখন সমস্যা-কষ্ট-বিপদে থাকবে আল্লাহ কাউকে না কাউকে পাঠিয়ে দেবেন তাকে সাহায্য করার জন্য। এটা জানার পর থেকে তো আসফিন আরো বেশি চেষ্টা করে অন্যকে সাহায্য করতে।

ইলিয়াসের পাশে বসে আসফিন বলল, দেখো আজ আম্মুতা স্যান্ডুউইচ বানিয়ে দিয়েছে তোমার জন্য। আজ তুমি স্কুল ছুটির পর আমার সাথে বাসায় যাবে? স্যান্ডুউইচ নিয়ে তাতে কামড় বসিয়ে ইলিয়াস বলল, কেন যাবো? আসফিন বলল, তুমি না বলেছিলে তোমার ছোট ভাই খেলনার জন্য কান্না করে। আমি সে কথা আম্মুতাকে বলেছি। আমার ছোটবেলার অনেক খেলনা আছে। সেসব দিয়ে আমি আর খেলি না এখন। আম্মুতা বলেছে তোমার ছোট ভাইর জন্য সব খেলনা নিয়ে যেতে। ইলিয়াস অবাক কণ্ঠে বলল, তুমি সত্যি সব খেলনা দিয়ে দেবে? আসফিন বলল, হ্যা। ইলিয়াস বলল, তোমার মন খারাপ হবে না? আসফিন বলল, প্রথমে যখন আম্মুতা বলেছিল তখন একটু মন খারাপ হয়েছিলো। কিন্তু আম্মুতা বলেছে ভালো মানুষ হতে চাইলে আমাকে নিজের খুশির চেয়ে অন্যের কষ্টকে বড় করে দেখতে শিখতে হবে।

স্কুল ছুটির পর ইলিয়াসকে সাথে করে বাসায় নিয়ে এসে সত্যিই আসফিন তার ছোটবেলার সব খেলনা দিয়ে দিলো। কিন্তু ইলিয়াস চলে যাবার পর যখন রুমে ঢুকলো তখন অনেক মন খারাপ হলো আসফিনের। খেলনাগুলো সত্যিই তার ভীষণ প্রিয় ছিল। মুখ ভার করে বিছানায় বসে যেখানে খেলনা ছিল সেই খালি সেলফের দিকে তাকিয়ে বসে রইলো। বিদায়ের সময় মনে মনে সে খেলনাদেরকে বলে দিয়েছে যে, তাদেরকে সে অনেক ভালোবাসে, অনেক মিস করবে। তবে তারা যেন ওকে মিস না করে এবং নতুন বন্ধুকে আপন করে নেয়। পাশের রুম থেকে আম্মুতা বলল, আসফিন তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও। তোমার বাবা ফোন দিয়েছিলেন, এখনই আসছেন তোমাকে নানাভাইর বাসায় নিয়ে যাবেন। সাথে সাথে মন খারাপ ভুলে ব্যাগ গুছাতে ছুটলো আসফিন। দুই সপ্তাহের জন্য স্কুল বন্ধ। আম্মুতা বলেছে পুরো একসপ্তাহ আসফিন থাকতে পারবে নানাভাইর কাছে।

চলন্ত গাড়ি থেকে বাইরের সবকিছু দেখতে খুব ভালো লাগে আসফিনের। সে যখন আরেকটু ছোট ছিল ভাবতো বাইরের সবকিছুইও গাড়ির সাথে সাথে চলে। গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখতে দেখতে আসফিনের মনেহলো ইশশ...আম্মুতা সাথে এলে আরো বেশি ভালো হতো। আম্মুতাকেও সে এই কথা বলেছিলো। জবাবে আম্মুতা বলেছে, আমি সাথে যাচ্ছি নাতো কি হয়েছে আমার পরামর্শ তোমার সাথে যাচ্ছে। শোন আব্বা একদম সোনা বাচ্চা হয়ে থাকবে না। জ্বালা-যন্ত্রণা আর কটকট করে নানুমণিকে পাগল বানিয়ে দেবে। যেখানেই যাবে তোমাকে তোমার মায়ের নাম উজ্জ্বল করতে হবে। জ্বালা-যন্ত্রণা আর কটকট হচ্ছে সেটার শর্টকার্ট ফর্মুলা। আম্মুতার কথা শুনে বাবা শুধু হাসে কিন্তু কিছু বলে না। বাবার হাসি দেখে আসফিন বোঝে যে আম্মুতা নিশ্চয়ই মজার কোন কথাই বলছে। তাই সেও বাবার সাথে হাসিতে যোগ দেয় সবসময়।

বিষয়: বিবিধ

২২১৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File