একটি শিশুর আত্মকথন......২

লিখেছেন লিখেছেন আফরোজা হাসান ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৪:১৬:৪৯ বিকাল



আসফিনকে যদি কেউ জিজ্ঞেস করে এই পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজ গুলো কি কি? এক মুহুর্ত দেরি না করে সে জবাব দেবে সকালের নাস্তা করা। অথচ রোজ এই কঠিন কাজটা তাকে করতে হয় মাত্র পনেরো মিনিট সময়ের মধ্যে। আজও মুখ ভার করে হেলতে দুলতে নাস্তা করতে এলো সে। কিন্তু টেবিলে চোখ পড়তেই আঁধার মুখ উজ্জ্বল হয়ে গেলো তার। নাস্তার প্লেটের সাথে ছোট্ট একটা মগও রাখা আছে। ওহ! সে তো ভুলেই গিয়েছিলো আজ যে মঙ্গল বার। প্রতি মঙ্গলবার আম্মুতা তাকে এক মগ কফি দেয়।যদিও সপ্তাহে এক কাপ কফি আদায় করার জন্য অনেক যুদ্ধ করতে হয়েছে তাকে। আম্মুতাকে যখন সে জানিয়েছিল কফি পান করতে ভীষণ পছন্দ। আম্মুতা বলেছিল এটা বাচ্চাদের খাবার নয়। তোমাকে আমি কফির ক্যান্ডি কিনে দেবো, এতই যখন পছন্দ তুমি সেটা খেও। বড়রা যে এত বোকার মত কথা কেন বলে মাঝে মাঝে বুঝে আসে না আসফিনের। আচ্ছা কফি আর কফির ক্যান্ডি কি কখনো এক হতে পারে?

কিন্তু আম্মুতাকে সেই কথা বুঝানো কি এত সহজ? মোটেই না! আসফিনকেও অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হয়েছে সপ্তাহে এক কাপ কফি আদায় করে নিতে। প্লেট থেকে পরোটা নিয়ে আড় চোখে একবার আম্মুতার দিকে তাকালো সে। মোবাইলে নিউজ শুনছে আম্মুতা। নাস্তার টেবিলে বই-মোবাইল-নিউজ পেপার সব নিষিদ্ধ। নিষিদ্ধ কাজটা আম্মুতা কেন করছে ঠিক বুঝে আসছে না আসফিনের। তবে এইটুকু জানে দেশে কোন সমস্যা চলছে। গতরাতে বাবা ও মামা কথা বলার সময় কিছু কথা তার কানে গিয়েছে। মানুষ নাকি মানুষের সাথে খুব ঝগড়া করছে। তার ক্লাসেও কয়েকজন ছেলে আছে যারা সারাক্ষণ ঝগড়া করে। আম্মুতা বলেছে ওরা হচ্ছে দুষ্টু বাচ্চা। ওদের কাছ থেকে সবসময় দূরে থাকতে। নয়তো ওদের সাথে মিশে আসফিনও ওদের মত দুষ্টু হয়ে যাবে। কিন্তু ওদেরকে কখনোই কষ্ট দিতে মানা করেছে আম্মুতা। কারণ ভালো বাচ্চারা কখনো কাউকে কষ্ট দেয় না। আর আসফিন খুব ভালো বাচ্চা হতে চায়।

দেশে কি হয়েছে নানাভাইকে জিজ্ঞেস করতে হবে। নানাভাইকে আসফিনের ভীষণ পছন্দ। সবকিছু অনেক সুন্দর করে বুঝিয়ে বলে নানাভাই। আজ বিকেলেই বাবাকে বলতে হবে তাকে নানাভাইর কাছে নিয়ে যেতে। আড় চোখে আরেকবার আম্মুতার দিকে তাকিয়ে টুপ করে কফির মগে পরোটা ডুবিয়ে মুখে দিলো ঝটপট। আরো দুই বার একই কাজ করে বুঝে গেলো আজ আম্মুতার মনোযোগ সত্যিই অন্যদিকে। মনের আনন্দে কফির মগ আরো কাছে টেনে নিয়ে বাবার দিকে চোখ পড়তেই থমকে গেলো আসফিন। তার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে বাবা। আম্মুতার দিকে নজর রাখতে গিয়ে পাশে যে বাবা আছে সে কথা তো ভুলেই গিয়েছিল সে। এমন প্রায়ই হয় তার সাথে। একদিকে খেয়াল রাখতে গিয়ে আরেকদিকে ধরা পড়ে যায়। এটা থেকে বাঁচার জন্য তার আসলে আরো কয়েকটা চোখ দরকার। মাত্র দুইটা চোখ দিয়ে কি সবদিকে খেয়াল রাখা সম্ভব? আজ থেকেই নামাজের পর আল্লাহর কাছে আরো কয়েকটা চোখ চেয়ে দোয়া করা শুরু করবে সে।

আড় চোখে এবার বাবার দিকে তাকালো আসফিন। বাবাকে চুপচাপ নাস্তা করতে দেখে স্বস্থি পেলো মনে। বাবা আসলেই অনেক বেশি বেশি ভালো। বাবার সাথে একা যখন ঘুরতে বের হতো, মাঝে মাঝে তাকে ক্যাফেটেরিয়াতে নিয়ে কফি কিনে দিত বাবা। এটা ছিল তার আর বাবার সিক্রেট। আম্মুতার কাছে কোনভাবেই যাতে এই খবর না পৌছায় সেই ব্যাপারে বাবা ও সে দুজনই সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতো। কিন্তু একদিন বাবা আর সে ক্যাফেটেরিয়াতে বসে কফি পান করছিলো এমন সময় আম্মুতাও সেখানে এসে গেলো। তবে আম্মুতা রাগ করেনি অনেক অনেক হেসেছিলো। সাথে বাবা আর সেও যোগ দিয়েছিলো হাসিতে। বাসায় ফিরে বাবা তাকে বলেছিল, আসফিন আজ জেনে ও শুনে রাখো ‘দশদিন চোরের একদিন গৃহস্থের’। কোনদিন ভুলবে না এই কথা। আসফিন ভোলেনি কথাটা মনে রেখেছে। ‘দশদিন চোরের একদিন গৃহস্থের’ মানে হচ্ছে দুষ্টু কাজ করলে একদিন না একদিন ধরা পড়তেই হয়। তাই কখনোই দুষ্টু কাজ করা ঠিক না।

নাস্তা শেষ করে স্কুল ব্যাগ নেয়ার জন্য রুমে আসলো আসফিন। স্কুলে যেতে তার একটুও ভালো লাগে না। ক্লাসের সবাই সারাক্ষণ শুধু হৈচৈ আর দুষ্টুমি করে। এতে ঠিকমতো চিন্তা-ভাবনা করতে পারে না সে। অথচ অনেক বড় মহাকাশ বিজ্ঞানী হবার জন্য তার বেশি বেশি চিন্তা করা দরকার। নানাভাই বলেছে বিজ্ঞানী হতে চাইলে তাকে চিন্তাশীল হতে হবে। প্রতিটা জিনিস পড়ার সাথে সাথে সেটা নিয়ে চিন্তা করতে হবে। কিন্তু ক্লাসে কি সেই উপায় আছে? দীর্ঘশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে মনে মনে বলল, কবে যে বাচ্চারা নিজের ভালো বুঝতে শিখবে.........

বিষয়: বিবিধ

১৭৬৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File