একটি শিশুর আত্মকথন......১
লিখেছেন লিখেছেন আফরোজা হাসান ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০২:৫৩:২১ দুপুর
বেশ আনন্দিত মন নিয়ে ঘুম ভাঙলো আসফিনের। গতরাতে ঘুমানোর আগে যেমনটা ভেবে রেখেছিল ঠিক তেমন স্বপ্নই দেখেছে। মনটা তাই অনেক ভালো কিন্তু আশেপাশে কাউকে না দেখে অবাক হলো খুব! প্রতিদিন তার ঘুম ভাঙে আম্মুতার ডাকে। একথা মনে হতেই লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো আসফিন। আম্মুতা প্রতিদিন সকালে তার সুন্দর স্বপ্নগুলো তছনছ করে দেয়। তছনছে একটা মন নিয়ে তার প্রতিটা সকাল শুরু হয়! গতকালই তো কি চমৎকার একটা স্বপ্ন দেখছিল। নিজের বানানো স্পেসশীপে করে মহাকাশে ঘুরে বেড়াচ্ছিল মনের আনন্দে। হঠাৎ চোখে পড়লো সবুজ ঘেরা ছোট্ট একটা গ্রহ। কয়েকজন এলিয়েনকে বাস্কেট বল খেলতে দেখে গ্রহে নামার লোভ সে সামলাতে পারলো না। তার স্পেসশীপ নামতেই ছুটে এসে ঘিরে ধরলো এলিয়েনরা। আসফিন বেড়িয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলল, ভয় নেই বন্ধুরা। আমি তোমাদের কোন ক্ষতি করতে আসিনি। আমি হচ্ছি আসফিন। আমি একজন মানুষ। আর আমি শুধু কিছুক্ষণের জন্য খেলা করতে এসেছি তোমাদের সাথে।
এলিয়েনদের একজন তখন চোখ বড় বড় করে বলল, আপনি মানুষ? আমরা মানুষ সম্পর্কে অনেক গল্প শুনেছি। তাই জানি মানুষ হচ্ছেন সৃষ্টির সেরা জীব। সবার কল্যাণ কামনা করার জন্যই নাকি মানুষের সৃষ্টি করা হয়েছে। স্বাগতম আপনাকে আমাদের গ্রহে আসফিন। আপনি আমাদের সাথে খেলবেন এরচেয়ে সৌভাগ্যের আর কি হতে পারে আমাদের জন্য! আনন্দে তখন মন ভরে গিয়েছিল আসফিনের। বাবার কাছ থেকে আগেই সে জেনেছে মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। বাবা আরো বলেছিল সেরা মানে হচ্ছে যারা সবসময় ভালো ভালো কাজ করে। এলিয়েনরাও সেই কথা জানে দেখে খুব ভালো লাগলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই এলিয়েনদের সাথে বন্ধুত্ব হয়ে গেলো আসফিনের। সবাই মিলে শুরু করলো বাস্কেট বল খেলা। দশজন এলিয়েন এক গ্রুপে আর অন্য গ্রুপে আসফিন একাই খেলছিল। সে একাই ওদের সবাইকে হারিয়ে দিচ্ছিলো প্রায়। শেষ বলটা যেই বাস্কেটের দিকে ছুঁড়ে দিয়েছে অমনি আম্মুতা তার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল, আসফিন জলদি ওঠো আব্বা তোমার স্কুলের সময় হয়ে গিয়েছে।
বড়রা কেন যে এমন হয়? কেন যে ছোটদের স্বপ্নগুলোকে কখনোই পূরণ হতে দেয় না? আবারো লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো আসফিন। সে যখন বাবা হবে তখন কখনোই তার ছেলেকে এমন অসময়ে ঘুম থেকে ডাক দিয়ে তার স্বপ্নকে তছনছ করে দেবে না। কক্ষনো না। সে খুবই ভালো বাবা হবে। অবশ্য তার বাবাও খুব ভালো। বাবা কখনোই তাকে বকাঝকা করে না। আম্মুতা বকা দিলে বাবা বরং তাকে আদর করে, সান্ত্বনা দেয়। কয়েকদিন আগে আম্মুতা আসফিনকে বলেছিল, থাপ্পড় দিয়ে সব দাঁত ফেলে দেবে। খুবই মন খারাপ হয়েছিলো আসফিনের তখন। বাবা তখন আদর করে বলেছিলো, এটা তো খুবই আনন্দের কথা আর তুমি কষ্ট পাচ্ছো? তোমার মুখে এখন যে দাঁত আছে এগুলো হচ্ছে দুধের দাঁত। পড়ে গেলে কোন সমস্যা নেই আবার উঠবে। তাই মন খারাপের কিছুই নেই এখানে। বরং তোমার আম্মুতা যদি থাপ্পড় দিয়ে সব ফেলে দেয় সেটা আরো ভালো। তাহলে দাঁত নড়া, সুতো বেঁধে সেই দাঁত টেনে তোলা এসব ঝামেলা থেকে তুমি বেঁচে যাবে। বাবার কথা শুনে তখন নিশ্চিন্ত হয়েছিলো আসফিন।
কিন্তু আম্মুতা আজ তাকে ডাকতে আসছে না কেন? হাত বাড়িয়ে টেবিল ঘড়িটা নিলো আসফিন। ওহ! এখনো তো আটটা বাজতে তের মিনিট বাকি! এজন্যই আম্মুতা এখনো ডাকতে আসেনি তাকে বুঝলো। ঘড়ি যথাস্থানে রেখে দিয়ে আবার চোখ বন্ধ করলো আসফিন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর মনে মনে অস্থির হয়ে উঠলো সে। তের মিনিট শেষ হচ্ছে না কেন? কখন আম্মুতা আসবে তার কাছে? মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলবে, আসফিন জলদি ওঠো আব্বা তোমার স্কুলের সময় হয়ে গিয়েছে। প্রতিদিনই সে চোখ খোলার সাথে সাথে কপালে আদর দিয়ে আম্মুতা বলে, আসসালামু’আলাইকুম আব্বাজান। আসফিন সালামের জবাব দিয়ে অভিমানী কণ্ঠে বলে, উফ আম্মুতা আজও তুমি আমার স্বপ্নটা ভেঙে দিয়েছো! আম্মুতা তখন হেসে বলে, কারণ আম্মুতা চাই তুমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে বন্ধ চোখে নয় বরং জাগ্রত অবস্থায় খোলা চোখে স্বপ্ন দেখো। আম্মুতা অনেক মজার মজার কথা বলে। আসফিন বেশির ভাগ সময়ই আম্মুতার কথা বোঝে না কিন্তু আম্মুতার কথা শুনতে তার খুব ভালো লাগে।
কিন্তু আম্মুতা এখনো আসছে না কেন? আর কতক্ষণ লাগবে তের মিনিট শেষ হতে? আম্মুতার আদর ও কথা শোনার জন্য ভেতরে ভেতরে অস্থির হয়ে উঠলো আসফিন। কান পেতে রইলো আম্মুতার পদশব্দ শোনার জন্য, তাকিয়ে রইলো দরজার দিকে পর্দা নড়ে উঠার অপেক্ষায়......
বিষয়: বিবিধ
১৯১৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন