ভালোবাসার সুতোয় গাঁথি সম্পর্কের মোতি......

লিখেছেন লিখেছেন আফরোজা হাসান ২৮ নভেম্বর, ২০১৩, ০৪:৫৭:৫৭ বিকাল



সম্পর্কের বন্ধন আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তায়ালার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য এক বিশেষ নেয়ামত, অশেষ রহমত। কারণ জীবনকে জীবনের মত উপভোগ করার জন্য, হাসি-আনন্দে কাটানোর জন্য, পড়ে গিয়ে উঠে দাঁড়াবার জন্য, নিজের গুরুত্ব বোঝার জন্য, নিজের ভুলকে শুধরানোর জন্য, উন্নত হওয়ার লক্ষ্যকে বুকে ধারণ করার জন্য ইত্যাদি আরো বহু কারণে সম্পর্কের বন্ধনই আমাদের আশ্রয়। জীবনময় ছড়িয়ে থাকা এই নানা রঙের বন্ধন গুলোই আমাদের চলার পথের প্রেরণা।

সম্পর্কের বন্ধনটা আমার কাছে সবসময়ই খুব বেশি গুরুত্ব বহন করে। সম্পর্ক সেটা বাবা-মা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশী থেকে নিয়ে শুরু করে আমার টিচার, আমার স্টুডেন্ট কিংবা চলার পথে সদ্য পরিচিত কেউ যাই হোক না কেন! সবাই আমার কাছে যার যার স্থান অনুযায়ী গুরুত্ব বহন করে। অবশ্য পৃথিবীর বেশির ভাগ মানুষের কাছেই সম্পর্কের বন্ধন সামথিং স্পেশ্যাল। ধরণ ও প্রকাশ হয়তো ভিন্ন কিন্তু সম্পর্কের মূল্য সবাই বোঝে, জানে।

কিন্তু অনেকসময় আমরা আমাদের জীবনের এই মূল্যবান সম্পর্ক গুলোকেকে যত্ন করতে ভুলে যাই। যাদেরকে ঘিরে জীবনের সবকিছু আবর্তিত তাদেরকে মূল্যায়ন করতে ভুলে যাই। যারা আমাদের সুখী করে তাদেরকে সুখ দিতে কার্পন্য করি। যারা আমাদের মুখে হাসি ফোঁটায় তাদের মুখে এক টুকরো হাসি ফুটিয়ে তুলতে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করি না। আমাদের দুঃখে যারা দুঃখী হন আমরা তাদের দুঃখে বুলিয়ে দেই না মমতার পরশ।

অথচ কারো দুঃখে দুঃখী হতে কিংবা কারো মুখে হাসি ফোঁটাতে খুব বেশি কিছু করার প্রয়োজন পড়ে না বেশির ভাগ সময়ই। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয়েছে শুধু একটু চেষ্টা, ইচ্ছা ও ছোট্ট একটা উদ্যোগ আমাদের সম্পর্কের বন্ধন গুলোকে করে তুলতে পারে আরো দৃঢ়, আরো মজবুত, আরো অটুট। যারফলে বেড়ে যায় সম্পর্কের গভীরতা, একের কাছে অন্যের প্রয়োজনীয়তা, উভয়ের প্রতি উভয়ের নির্ভরতা।

প্রতিটা সম্পর্ক আলাদা তাই আমাদেরকে ঘিরে তাদের চাহিদাও আলাদা আলাদা। কোন সম্পর্ক আমাদের কাছে কি দাবী করে এটা বোঝা মোটেই কঠিন কিছু না। আমাদের চাওয়া-পাওয়া গুলোও একে অন্যেকে বোঝার চমৎকার একটা মাধ্যম। নিজের পাওয়াটাকে যাচাই করে দেখলে তাই খুব সহজেই অন্যের চাওয়া সম্পর্কে ধারণা করা সম্ভব হয়। আমি চেষ্টা করি সাধ্যানুযায়ী সম্পর্কগুলোতে মায়া-মমতা ও ভালোবাসার পরশ জাগিয়ে যেতে। আর সেজন্য কখনোই উল্লেখযোগ্য তেমন কিছু করতে হয় না আমাকে।

মায়েরা সবসময়ই মেয়েদের তার উপর নির্ভরশীল দেখতে পছন্দ করেন। কারণ তারা তাদের কন্যাদের সবকিছু জুড়ে থাকতে চান। আমার মামণিও এর ব্যতিক্রম না। আমি প্রায়ই যে কাজটা করি সেটা হচ্ছে জানা থাকা স্বত্ত্বেও মামণির কাছে নানা ধরণের সাংসারিক পরামর্শ, রান্নার রেসিপি নতুন করে জানতে চাই। হ্যা, না জানার এই ভাণটা আমি মামণিকে আনন্দ দেবার জন্যই করি। যা আমাদের সম্পর্কের মধ্যে একে অন্যের প্রয়োজনীয়তাকে সবসময় সতেজ রাখে।

বাবা জ্ঞান পিপাসু মানুষ। জ্ঞানার্জনই বাবার ধ্যান-জ্ঞান-শান্তি। দুনিয়া জুড়ে কত জ্ঞান ছড়ানো তার কিছুই জানা হলো না, কিছুই অর্জন করা হলো না! জীবন থেকে এত গুলো বছর পেড়িয়ে গেলো অথচ অজ্ঞ আর মুর্খই রয়ে গেলাম। এই যে জ্ঞানার্জনের আকাঙ্ক্ষা ও অজ্ঞ থাকার আক্ষেপ এটা বাবার থেকেই আমার মধ্যে ঢুকেছে। কিছুই জানিনা এই হাহাকার আমার মধ্যেও বিরাজ করে সারাক্ষণ। যা আমি বাবার সাথেই শেয়ার করি। বাবা-মেয়ে একসাথে বসে হায় হায় করি!

ঠিক তেমনি ভাইবোনদের পছন্দগুলো মনে রাখা, ছোটখাট সারপ্রাইজ গিফট দিয়ে মাঝে মাঝে তাদের চমকে দেয়া, তাদের একাকীত্বের সঙ্গী হওয়া, সমস্যা-প্রয়োজনে পরামর্শ দেয়া, ভাবীদেরকে টুকটাক কাজে সাহায্য করা। কখনো নিজেই ছোট্ট হয়ে গিয়ে নানারকমের বায়না নিয়ে হাজির হওয়া। আরুকে খুব জ্বালাই আমি বায়না ধরে। রান্না করতে চায় না একদম তাই আমি খাওয়ার জেদই ধরি। আমি সাধারণত খাবার খুব বেছে চলি, তাই যখন খেতে চাই জান পরাণ দিয়ে রান্নায় মশগুল হয় আরু। আমি যখন মজা করে খাই, আরুর চোখে চিকচিক করে আনন্দাশ্রু।

আবার প্রিয়জনরা যখন একে অন্যের দিকে পাথর ছুঁড়ে মারে তখন সেটা যাতে মাঝখানে দেয়াল না হয়ে সেতু হয় সেই চেষ্টা করা, নিজের জন্য কফি নেয়ার সময় কলিগের সামনেও এককাপ রাখা, মজার কোন রান্না করলে প্রতিবেশির বাসায় পাঠানো, আমাদের যে স্টাফ ভাইয়েরা আছেন তাদেরকে মাঝে মাঝে দাওয়াত করে খাওয়ানো, তাদের পরিবারের খোঁজ-খবর নেয়া, কারো কোন সমস্যা থাকলে সাধ্যানুযায়ী সাহায্য করা ইত্যাদি কাজগুলো আমি করতে চেষ্টা করি।

বাচ্চাদের টিফিন বক্সে খাবারের সাথে ছোট্ট একটা চিরকুট রেখে দেয়া। যাতে কখনো লিখে দেয়া ‘আই লাভ ইউ’ বা ‘আই মিস ইউ’ কিংবা ‘আম্মুর পক্ষ থেকে একটা সুপার টাইট হাগ’ অথবা ‘আজ তোমার ফেব্রেট মেন্যু রান্না হচ্ছে দুপুরে’। নাকীব যেমন কয়েকদিন আগে স্কুল থেকে ফিরে বলল, আম্মু আজ প্রফ ক্লাসের সবাইকে পানিসড করেছেন। আমার খুব মন খারাপ ছিল। কিন্তু টিফিন খুলে যখন তোমার সুপার টাইট হাগ পেলাম আমার মন মুহুর্তে ভালো হয়ে গিয়েছিল। আমি ফিল করছিলাম তুমি আমার কাছেই আছো।

স্বামীকে বাজারের লিস্ট তো প্রায়ই দিতে হয়। কখনো লিখে কখনো বা ফোনে। দশটা আইটেম লিখার সময় দুতিনটা আইটেম পর পর কিছু ‘আপন কথা গোপন কথা’ লিখে দেয়া। ফোনে যখন জানতে চায় আর কিছু আনতে হবে? একটু অবাক কণ্ঠে বলা, আরে আমি তো আসল জিনিসের কথাই বলতে ভুলে গিয়েছি। যখন জানতে চাইবে কি? উষ্ণ স্বরে বলা, তোমাকে। কখনো ম্যাসেজ পাঠানো, ইশশ...কাজ করতে করতে তো ক্লান্ত হয়ে গিয়েছো! ক্লান্তি দূর করার জন্য আমার পক্ষ থেকে দিলাম এককাপ কফি, চা কিংবা সামথিং সামথিং......

ব্লগের কল্যাণেও আমি কিছু অমূল্য সম্পর্ক পেয়েছি। আমার ক্রন্দসী প্লাস চিন্তাপু(সাদিয়া মুকিম)। এই নাম রাখার কারণ আমার চিন্তায় প্রায়ই সাদিয়া আপুর রাতের ঘুম নষ্ট হয়। আর আমার চেহারায় হাসি না দেখলে আপুর চেহারা কান্না কান্না হয়ে যায়। সকালে কাজে যেতে হবে তবুও রাত সাড়ে বারোটা-একটা পর্যন্ত বসে থাকে স্কাইপের সামনে কারণ আমার মন ভালো হয়েছে এটা নিশ্চিত না হয়ে সে নড়তে নারাজ। কাজে গিয়ে ফোন করবে রোজা তোমার মন ভালো হয়েছে, রাতে ঘুমাইছো তো ঠিকমতো, ঔষুধ খেয়েছো। পাগলী পাগলী পুরা পাগলী এই আপুনিটা।

পেয়েছি বৃক্ষাপু(রেহনুমা বিনতে আনিস) যার মূল্যবান পরামর্শ, মন্তব্য খুব উৎসাহ যোগায়। মুক্কুমণি(গন্ধসুধা) ওর উপস্থিত বুদ্ধি, জেনারেল নলেজ, বিপ্লবী সত্ত্বাটা খুব মন কাড়ে সবসময়। পাকনা বুড়ি(আশা জাগানিয়া) উফফ এই পিচ্চির দার্শনিক চিন্তা-ভাবনা শুনলে মাঝে মাঝে নিজেকেই শিশু মনেহয় আমার। মিষ্টি পুতুল(রাবেয়া রোশনি) এত্ত শান্ত আর লক্ষ্মী আমার এই বোনটা। কথা শুনলেই মায়াতে মনটা ভরে যায় একদম। সময় পেলেই আমাদের খুনসুটি চলতে থাকে স্কাইপে বা ফেসবুকে।

পেয়েছি আরো অনেক ভাই-বোনকেই। তেমন করে যোগাযোগ না হলেও যারা খুবই স্পেশ্যাল আমার জন্য। চেষ্টা করি সবাইকে ভালোবাসার বন্ধনে বেঁধে রাখতে। কখনো ইমো, কখনো সুন্দর কোন বাণী, নিজের কোন চিন্তা, রান্নার নতুন কোন রেসিপি ইত্যাদি পাঠিয়ে দেই সবার চ্যাট বক্সে। বদলে ওরা যখন লিখে পাঠায় ‘এত্ত গুলা ভালোবাসি’ মনে যে আনন্দ ধারা বয়ে যায় তাতে অনুভব করি আমার ম্যাসেজটা পেয়েও তাদের মনকে ছুঁয়ে গেছে আনন্দের মৃদু স্রোত ধারা।

আমার এই লেখাটায় আমি স্পেশ্যালী আমার সেই সম্পর্কটির কথা স্মরণ করতে চাই, তিন স্বীকারোক্তির ঐশী বাঁধনে যে সম্পর্কে আমি আবদ্ধ হয়েছিলাম আজ থেকে এগারো বছর আগে ঠিক আজকের এই তারিখে। যার ফলে আমি খুঁজে পেয়েছিলাম এমন এক বন্ধুকে যার কাছে মনের কোন অনুভূতিই গোপন করার প্রয়োজন পড়ে না কখনোই। জীবনের খুব কঠিন এক সময়ে যিনি নির্ভরতার পরম প্রশান্তিময় আশ্রয় হয়ে জীবনসাথীর বেশে আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। যিনি তার ভালোবাসা ও বন্ধুত্বের সুতোয় একত্রিত করেছিলেন ছড়িয়ে পড়া আমাকে। যার কাছে এখনো আমি ছোট্ট এক বালিকা, কথা বলা হীরামন পাখী।

কে বলে যে শুধু নারীরাই সংসারকে সাজায়? আমার সংসারের মোতিগুলো তো ঐ মানুষটিই গেঁথেছেন তার ভালোবাসা, ত্যাগ, ধৈর্য্য ও মানবিক গুণাবলীর দ্বারা। আসলে নারী বলি আর পুরুষ ভালোবাসার সুতো উভয়ের কাছেই আছে। উভয়েরই তাই ক্ষমতা আছে সম্পর্কের মোতিগুলোকে একত্রিত করে তাতে গাঁথার। তাই অন্যেরা মোতি গাঁথছে না সেই চিন্তা করে কারো বসে না থাকা ঠিক না। অন্যেরা হয়তো জানেই না কিভাবে মোতি গাঁথতে হয়। প্রত্যেকের তাই নিয়ত থাকা উচিত নিজে মোতি গেঁথে অন্যেদের মালা গাঁথা শেখানো, মালা গাঁথতে প্রেরণা যোগানোর...............



(উৎসর্গঃ আল্লাহর নির্ধারিত বিশেষ দিনগুলো ছাড়া অন্য কোন দিনই স্পেশ্যাল কিছু বহন করার যোগ্যতা রাখে না। কিন্তু কিছু কিছু তারিখ আমাদের মনকে অতীত অনুভূতির জোয়ারে প্লাবিত করে দেয় না চাইতেও। আজ তেমনই একটি তারিখ আমার জন্য। আর এই তারিখটি যার কারণে আমার মনের সৈকতে ছড়িয়ে দিচ্ছে স্মৃতির উর্মিমেলা...এই লেখাটি তাঁর জন্য। আমার জীবনসাথী গাজী হাসান এর জন্য।)

বিষয়: বিবিধ

২৮৩৭ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

289271
২৮ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:৩২
আরোহী রায়হান প্রিয়ন্তি লিখেছেন : হায় আল্লাহ এত্তোগুলা কমেন্ট গেলো কোথায়? Surprised আমি তো আরো সবার কমেন্ট পড়তে এসেছিলাম। Crying আর দেখতে এসেছিলাম দুলামিয়া শেষ পর্যন্ত কি কমেন্ট করেছিল এই লেখাতে। Love Struck

















২৮ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:৫২
232968
আওণ রাহ'বার লিখেছেন : আপু আপনার পূর্বের কোন পোষ্টের কমেন্টস নাই সব হাওয়া
মডুরা বলেছেন টেকনিক্যাল প্রবলেম।
বাট আমি বলছি ব্লগ আবার ব্যান খেলে হয়তো কমেন্টসগুলো পাওয়া যাবে।
এছাড়া আর কমেন্টসগুলো ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা নাই।
২৮ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:৫৪
232969
আওণ রাহ'বার লিখেছেন : আপু আপনি প্রথমদিক এর কমেন্টস গুলো দেখেন সব হাওয়া।
২৮ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:২৯
232982
আওণ রাহ'বার লিখেছেন : ইনশাআল্লাহ ব্লগ আরেকবার ব্যান খেলে কমেন্টস ফিরে পাবেন আশাকরি আমার এনালাইসিস ।
তা না হলে এ কমেন্টসগুলো হারিয়ে যাবে না ফেরার দেশে।Sad Crying
289272
২৮ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:৩৬
আওণ রাহ'বার লিখেছেন : সেকেন্ডু দখল বাই পিচ্চি আওণ বাবু।
২৮ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:৪২
232965
আরোহী রায়হান প্রিয়ন্তি লিখেছেন : আওণ মন্তব্য কোথায় গেলো পোষ্টের??!! Rolling Eyes Rolling Eyes Rolling Eyes
289273
২৮ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:৩৮
আওণ রাহ'বার লিখেছেন : হাই হাই এটা দেখি গতবছরের পোষ্ট নো প্রবলেম আবারো আসিতেছি।Good Luck Happy
২৮ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:৪৩
232966
আরোহী রায়হান প্রিয়ন্তি লিখেছেন : সেজন্যই তো কমেন্ট করলাম। যদি ব্লগে এসে দেখে আর নতুন কিছু লিখে আমাদের জন্য। Smug
289274
২৮ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:৩৮
আওণ রাহ'বার লিখেছেন : হাই হাই এটা দেখি গতবছরের পোষ্ট নো প্রবলেম আবারো আসিতেছি।Good Luck Happy
২৮ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:২১
232978
আরোহী রায়হান প্রিয়ন্তি লিখেছেন : হুমম...তাই তো দেখছি সব কমেন্ট হাওয়া Crying Crying Crying কত্তো মজার মজার কমেন্ট ছিল....Broken Heart

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File