শৈশবেই বুনে দিতে হবে কল্যাণকামীতার বীজ

লিখেছেন লিখেছেন আফরোজা হাসান ২৭ নভেম্বর, ২০১৩, ০৩:৪৩:৫১ রাত



আজ আমাদের ক্লাসের আলোচনার বিষয় ছিল মানুষের মধ্যের কল্যাণকামীতা। মানুষের পরহিতব্রতী স্বভাব। পরহিতব্রতী অর্থাৎ, পরের হিতে যে ব্রতী। শব্দটা শুনলেই মনের মধ্যে কেমন সুখ সুখ একটা অনুভূতি জেগে ওঠে। আমাকে কল্যাণকামীতা সম্পর্কে কিছু বলতে বললে কবিতা ভীষণ প্রিয় কয়েকটা লাইন বলেছিলাম,“পরের কারনে স্বার্থ দিয়া বলি, এ জীবন মন সকলি দাও। তার মতো সুখ কোথাও কি আছে, আ্পনার কথা ভুলিয়া যাও। পরের কারনে মরনেও সুখ; 'সুখ' 'সুখ' করি কেঁদ না আর, যতই কাদিঁবে, যতই ভাবিবে ততই বাড়িবে হৃদয় ভার। আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে আসে নাই কেহ অবনী পরে, সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে মো্রা পরের তরে।"

সাইন্স প্রমান করেছে যে মানুষের মধ্যের কল্যাণকামীতা চর্চার দ্বারা বাড়ানো যায়। কিন্তু আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় দেখেছি স্বার্থপরতা একবার যাদের মনে ঘর বেঁধে ফেলেছে তাদের জন্য কল্যাণকামী হওয়াটা খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার। কয়েকজনের ভেতর থেকে স্বার্থপরতা হ্রাস করে সেখানে কল্যাণকামীতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্য বেশ কয়েক মাস কাজ করেছিলাম। আমার চেষ্টায় তেমন কোন ত্রুটি ছিল বলে মনেহয় না, আবার তাদেরও ইচ্ছায় কোন ঘাটতি দেখিনি। কিন্তু তারপরও ফলাফল আশানুরূপ হয়নি। আসলে চারপাশ থেকে অভিজ্ঞতার দ্বারা মানবিক গুণসমূহ অর্জন করার সময়গুলো হেলা ফেলায় কেটে গেলে, পরবর্তিতে জ্ঞানার্জনের দ্বারা এইসব গুণসমূহকে মনের মধ্যে ধারণ ও প্রয়োগ করা খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার। কেননা পরিবেশ একটু প্রতিকূল হলেই মনের মধ্যের স্বার্থপরতা নাড়াচাড়া দিয়ে উঠে।

আলোচনায় প্রফ বলছিলেন, একবার যদি আমিত্ব মনের মধ্যে ঘর বানিয়ে ফেলে, তাকে ঘর ছাড়া করতে প্রাণ দেহ ছাড়া হবার উপক্রম হয়। তাই আমিত্ব মনে ঘর বাঁধার আগেই মনে পরার্থবাদকে প্রবেশের সুযোগ করে দিতে হবে। আর সেজন্য ত্যাগ করা শিখাতে হবে সর্বাগ্রে। কেননা আত্মত্যাগই কল্যাণকামীতার ভীত। শিশুরা যেহেতু খুব সহজেই যে কোন জিনিস রপ্ত করে প্রয়োগ করতে শুরু করে, সুতরাং সঠিক গাইডেন্সের মাধ্যমে ছোটবেলা থেকে তাদেরকে দয়ালু বা কল্যাণকামী হিসেবে গড়ে তোলা খুব সহজ। কেননা বেড়ে উঠার পরিবেশ থেকে স্বভাবে কল্যাণকামীতার বীজ রোপিত না হলে তা আর মহীরুহতে পরিণত হতে পারে না।

মানুষ নিজের ইচ্ছে-খুশি-পছন্দ-ভালো লাগা, নিজের মত, নিজের ধারণা ইত্যাদিকে সবচেয়ে বেশি প্রায়োরিটি দিতে গিয়ে নিজেই নিজের জন্য সর্বনাশ ডেকে আনে। এই প্রতিটা ইচ্ছে-খুশি-পছন্দ-ভালোলাগা-মত-ধারণা তাকে একটু একটু করে ভুল পথে পরিচালিত করে। এবং একটা সময় সে নিজের মতকেই চূড়ান্ত ভাবতে শিখে যায়। যারফলে বদলে যায় তার পুরো চরিত্রটাই। নিজের মত প্রতিষ্ঠা করতে অন্যকে অন্যায়ভাবে আঘাত করতেও সে দ্বিধা করে না। কারণ তার ধ্যান জ্ঞান জুড়ে বিরাজ করে তাকে জিততেই হবে। কারণ তার স্বার্থপর আমিত্ব তাকে কিছুতেই হারার অনুমতি দেয় না।

এই ধরনের মানুষেরা নিজের সাথে সাথে অন্যের জীবনের শান্তিও বিঘ্নিত করে। তাই ছোটবেলা থেকেই বোঝাতে হবে কল্যাণকামী হবার আনন্দকে। কোন কাজ মানুষ তখনই মন থেকে করতে পারে যখন কাজটা তাকে আনন্দ দেয় বা কাজটা করে সে তৃপ্তি পায়। মানুষের স্বভাব সে বিনিময় হিসেবে কিছু পেতে চায়। যখন প্রাপ্তি সম্পর্কে ধারণা থাকবে তখনই মানুষ ত্যাগ করে আনন্দ পাবে। বার বার করার উৎসাহ ও প্রেরণা পাবে। তাই বাবা-মাকে ছোটবেলা থেকেই সচেষ্ট হতে হবে যাতে তাদের সন্তানদের জীবনের প্রায়োরিটি আমিত্বতে গিয়ে না ঠেকে।

বিষয়: বিবিধ

১৮০৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File