চলুন শিখি শিশুদের কাছ থেকে-১
লিখেছেন লিখেছেন আফরোজা হাসান ২২ নভেম্বর, ২০১৩, ০৪:১৭:৪৪ বিকাল
সপ্তাহে একদিন আমাদের বাড়ির ক্ষুদে সদস্যদের প্রকৃতির কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া হয়। ফুল-পাখী, গাছপালা মোট কথা প্রকৃতি থেকে শিক্ষাকে খুঁজে নিতে সাহায্য করা হয় ওদেরকে। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, শিশুদের কৌতুহলি মনই বরং আমাদের বড়দেরকে সাহায্য করে প্রকৃতিকে নতুন নতুন রূপে উপলব্ধি করতে। আসলে আমাদের চারপাশে ছড়ানো রয়েছে হাজারো জ্ঞান! শুধু খুঁজে নেবার ইচ্ছা ও চেষ্টা থাকে না বলেই আকাশের শূন্যতায় ছুটে বেড়ায় আমাদের দৃষ্টি অথচ আমাদের পদযুগল বিধৌত হচ্ছে জ্ঞানোস্রোতে।
আমার জীবনের সবচেয়ে সুতীব্র জ্ঞানোস্রোত গুলোর একটি ধারা প্রবাহিত শিশুদের থেকে। কত কিছু যে নতুন করে ভাবতে, উপলব্ধি করতে শিখছি ওদেরকে দেখে। যা সমৃদ্ধ করছে আমার বিবেক ও অভিজ্ঞতাকে। যারফলে বদলে যাচ্ছে আমার জীবনকে দেখার ও দেখানোর দৃষ্টি। যা আমার বিচারবোধকে করছে উন্নত! আমাকে করে তুলছে আরো মানবিক! আলহামদুলিল্লাহ্।
এক.
ভয় দেখানোর ছলে চমকে দিয়ে অনেক সময় মজা করা হয় বাচ্চাদের সাথে। এই ধরণের কাজ আমি কখনোই করি না কিন্তু সেদিন কি যে হলো রুম থেকে বেড়োতে যাচ্ছিলাম নাকিব ওর রুম থেকে এদিকেই আসছে বুঝতে পেরে আমি দরজার আড়ালে লুকালাম। যখন রুমে ঢুকতে গেলো চমকে দিলাম। যেহেতু আমি এমন করি না কখনোই নাকিব অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো তারপর তো শুরু করলো কান্না। আমি এই ধরণের একটা কাজ করেছি কিছুতেই হয়তো মেনে নিতে পারছিল না। আমারো প্রচণ্ড অপরাধবোধ হচ্ছিলো। বার বার সরি বললাম। কিছুটা সময় পর ঠাণ্ডা হয়ে প্রশ্ন করলো, আম্মু তুমি কেন এমন করলে? আমি বললাম, আমি ফান করার জন্য করেছি বাবা। নাকিব বলল, আম্মু মানুষকে আনন্দ ও হাসানোর জন্য যা করা হয় সেটা ফান। কাউকে ভয় দেখানো, চমকে দেয়া, কষ্ট দেয়া ফান না। আমাদের প্রফ বলেছেন এমন ফান কখনোই করা উচিত না যা কারো মনে কষ্ট বা বিরক্তি তৈরি করতে পারে।
আমরা বড়রা যখন ফান করি তখন কি এই কথাগুলো মনে রাখি? বেশির ভাগ সময়ই হয়তো রাখি না। আমরা মনের ইচ্ছের দ্বারা এমন ভাবে প্রভাবিত হই যে, মানান-বেমানান, শোভন-অশোভন, দৃষ্টিকটু সবকিছু তুচ্ছ করে শুধু ভেসে চলি মজার স্রোতে।
দুই.
সারামণিকে(সাদিয়া আপুর মেয়ে)নিয়ে কথা হচ্ছিলো সাদিয়া আপুর সাথে। সারার পরীক্ষার রেজাল্ট দেখার সময় ওর বন্ধুরা অনেক কম মার্কস পেয়েছে জেনে সাদিয়া আপু যখন বলল, এত কম মার্কস? ওরা কি পড়াশোনা করে না নাকি? সারা সাথে সাথে প্রতিবাদের স্বরে জবাব দিয়েছে, আম্মু তুমি এভাবে কেন বলছো? ওরা আমার বন্ধু তুমি ওদের সম্পর্কে এভাবে বলতে পারো না আমার কাছে। নিশ্চয়ই কোন না কোন কারণ আছে ওদের কম মার্কস পাবার পেছনে। তুমি আমি হয়তো সেটা জানি না। হয়তো কল্পনা করাও সম্ভব না আমাদের পক্ষে ওদের অবস্থা বা অবস্থান। তাহলে কেন আমরা মন্তব্য করবো ওদের ব্যাপারে? কারো সম্পর্কে না জেনে না বুঝে কথা বলা তো অন্যায়। তুমি কি এই অন্যায়টা করছো না?
আমরা বড়রা কি এভাবে চিন্তা করি? বরং যখন আমাদের সমপর্যায়ের মানুষদের দোষ বলা হয় আমরা নিজেদের শ্রেষ্ঠ ভেবে আনন্দিত হই। তার কোন দোষ জানা থাকলে সেটাও প্রকাশ করে দেই তাকে আরেকটু নীচে নামিয়ে নিজে আরেকটু উপরে উঠার জন্য।
নানা ধরনের ভুল আচরণের পেরেক একটু একটু করে আমাদের মনে বিদ্ধ হচ্ছে হাসি-আনন্দ-মজা কিংবা সমালোচনার মোড়কে। এবং ধীরে ধীরে পরিণত হচ্ছে আমাদের জীবনের অংশ হিসেবে। হ্রাস করে দিচ্ছে কোমলতা, সহমর্মিতা, ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে ভালোবাসার ক্ষমতা।
শিশুদের কাছ থেকে আমরা পেতে পারি শুদ্ধ-পবিত্র ও উন্নত চিন্তা করার প্রেরণা......
বিষয়: বিবিধ
১৬০০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন