অন্তর মম বিকশিত করো......
লিখেছেন লিখেছেন আফরোজা হাসান ১৯ নভেম্বর, ২০১৩, ০৪:০৭:৫০ বিকাল
গত কয়েকদিন থেকে অদ্ভুত একটা ব্যাপার হচ্ছে হানিয়ার সাথে। কোন কিছুর দিকেই বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারছে না। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পরই অনুভব করে সেই জিনিসটা তার ভেতরে চলে এসেছে। নতুন দিনের প্রারম্ভে কিছুক্ষণ এপাশ ওপাশ করে গা থেকে আলসামো ঝেড়ে ফেলে আড়মোড়া দিয়ে উঠে বসে, তন্দ্রাকে তাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে ধীর পায়ে পৃথিবীর বুকে পদচিহ্ন রাখার প্রতি মুহুর্তে প্রকৃতিকে যে কত রঙে সাজায় সূর্যিমামা! মুগ্ধ চোখে প্রতিদিন সূর্যিমামার সেই কর্মকান্ড অবলোকন করে হানিয়া। কিন্তু গত কয়েকদিন থেকে কেন জানি পারছে না এসব উপভোগ করতে।
কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেই অনুভব করে প্রকৃতির মতো তার মনের আকাশ জুড়েও সূর্যোদয় শুরু হয়েছে। প্রতি মুহুর্তে নতুন নতুন সাজে সাজাছে মনের প্রকৃতি। ঐ তো সূর্যের প্রথম কিরণ তীব্র গতিতে ছুটে আসছে মন বাগিচার ফুলগুলোর দিকে। আর ফুলগুলোরও সেই স্পর্শ সুখে স্নাত হবার জন্য অধীর প্রতীক্ষারত। রংবেরঙয়ের প্রজাপতিরা ফুলেদের বুকে দোল খাওয়াতে ব্যস্ত। পাখীদের কিচির মিচির বেশও লাগে। কিন্তু মধু আহরণের নেশায় যখন ছুটে আসে মৌমাছির দল তাড়াতাড়ি চোখ বন্ধ করে ফেলে তখন হানিয়া। প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন করে নেয় নিজেকে। নিজের মিষ্টতাকে কিছুতেই কাউকে শুষে নিতে দিতে চায় না।
দুপুর আর বিকেলের মাঝামাঝি সময়টার কি আলাদা কোন নাম আছে? মনের অভিধানে চোখ বুলিয়ে নিলো একবার কিন্তু খুঁজে পেলো না কোন শব্দ। এই সময়টাতে নিবিষ্ট মনে কিছুটা সময় আকাশ দেখতো হানিয়া। সেটাও সম্ভব হচ্ছে না! আকাশের দিকে তাকানোর কয়েক মিনিটের মধ্যেই চোখের গলি পথে মনের গহীনে চলে আসে আকাশটা! শুরু হয় মেঘেদের দুরন্তপনা, ছুটোছুটি, রেষারেষি, কানামাছি খেলা। আর নিজের রং বদলে তো জুড়ি নেই আকাশে! তবে এই রং বদলের খেলাটা সত্যি খুব মনোমুগ্ধকর। মেঘেদের দুরন্তপনাও কম আনন্দের না কিন্তু মনের মধ্যে এসব ধারণ করাটা যে সত্যিই খুব কষ্টকর।
সকাল থেকে রিমঝিম ধ্বনি তুলেছে বৃষ্টির নূপুর! জানালা খুলে দিয়ে দু’হাতের তালুতে মুখ রেখে আকাশ পানে দৃষ্টিকে নিবদ্ধ করলো হানিয়া! অনেকদিন এমন মুষলধারে বৃষ্টি দেখে না! বৃষ্টির ছটা এসে ভিজিয়ে দিচ্ছে! শীতল স্পর্শে কাঁপন ধরে যাচ্ছে কিন্তু অনড় দাঁড়িয়ে অপলক তাকিয়ে রইলো আকাশ পানে! কিছুটা সময় যেতেই আকাশ থেকে নেমে আসা জলকণা গুলো ঝরে পড়তে শুরু করলো তার মনের বনভূমি জুড়ে। ভিজিয়ে দিচ্ছে পরম মমতায় মনের শুষ্ক অঞ্চল! চোখ বন্ধ করে ফেললো হানিয়া। মনের কিছু অংশকে যে সে শুকনোই রাখতে চায়! একি যন্ত্রণা শুরু হয়েছে তার সাথে? কেন সে প্রকৃতির সাথে নিজেকে মিলিয়ে ফেলছে?
প্রকৃতির মাঝে ছড়ানো রয়েছে হাজারো শিক্ষা! কার কাছে শুনেছিলো প্রথম এই কথাটা? বাবা নাকি ভাইয়ার কাছে? আশ্চর্য মনে করতে পারছে না কেন? শুধু মনে পড়ছে কারো হাত ধরে এলোমেলো পা ফেলে হাঁটছে ছোট্ট হানিয়া! এটা কি? ওটা কি? প্রশ্নে প্রশ্নে জর্জরিত করছে সাথের মানুষটিকে। একটুও বিরক্ত না হয়ে হাসি মুখে সব প্রশ্নের জবাব দিচ্ছে মানুষটি। কি বলছে মানুষটি শোনার চেষ্টা করলো হানিয়া। গাছ থেকে শেখো কিভাবে মন্দকে শোষণ করে ভালোকে ছড়িয়ে দিতে হয়! ঐ দেখো জোনাকি! মাত্র এক বিন্দু আলো সম্বল হলেও সেটুকু নিয়েই নিরবধি পালন করে যাচ্ছে আলো ছড়ানোর কাজ!
প্রকৃতির ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে আছে শিক্ষার হাজারো উপকরণ। দয়া-মায়া-প্রেম-ভালোবাসা, উদারতা, বিশালতা, সৌন্দর্যতা, বায়বীয়তা, দৃঢ়তা, নমনীয়তা, কমনীয়তা, আনন্দময়তা, শূন্যতা! আবার এই প্রত্যেকটিরই আছে বহু রূপ। আর প্রকৃতির নিষ্ঠুরতা? এরও প্রয়োজন আছে বৈকি! আলো ও আঁধারের সংজ্ঞায় যার অস্তিত্ব মেলে!
এই সব শিক্ষাকে অর্জন করে নিজকে বিকশিত করার সুপ্ত ও তীব্র বাসনা লালন করে হানিয়া একান্ত সঙ্গোপনে। এটাই কি কারণ হতে পারে প্রকৃতিকে নিজের মাঝে অনুভবের? হয়তো বা! হয়তো বা না............!!!!!
বিষয়: বিবিধ
২২৩৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন