ছোট ছোট ত্যাগ জীবনকে করে তোলে স্বপ্নিল......৪

লিখেছেন লিখেছেন আফরোজা হাসান ২৪ অক্টোবর, ২০১৩, ০৬:২৮:৪০ সন্ধ্যা



বাড়ির গেটে এসে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে শঙ্কিত বোধ করলো মঈন। বিকেলে ফেরার কথা ছিল তার, এখন বাজে রাত দশটা। ঘরে ঢুকেই আলিশবার ঘোমড়া মুখ দেখতে হবে। গতদিনের মত কান্না করতে না আবার শুরু করে দেয় সেই ভয় কাজ করতে লাগলো মনে। ইচ্ছে করে বা শখ করে দেরি করেনি এই কথাটা কেন যে বুঝতে চেষ্টা করে না...! মনখারাপ করা ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো মঈনের। ফোন করে জানাতে পারতো আলিশবাকে ফিরতে দেরি হবে একথা কিন্তু তাতে বাইরে থাকা অবস্থাতেই মনমালিন্য শুরু হয়ে যেত। তার মন খারাপ হত, সেই প্রভাব গিয়ে পড়তো কাজের উপর। এমনটা চায়নি বলেই ফোন করার রিস্ক নেয়নি সে। সমস্যা হচ্ছে একথা তো আর আলিশবাকে বলা যাবে না। এমন সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে ঘরে পৌছে গেল সে। ঘরে ঢুকে যা দেখলো তার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিল না মঈন। তার পছন্দের লাল শাড়ি পড়েছে আলিশবা, সেজেছে মনের মত করে। দেখে মনেহচ্ছিল চাঁদের এক টুকরো নেমে এসেছে ধরত্রীর বুকে। কিন্তু আলিশবার হাসিমুখের সালাম শুনে ভাবুকতা মুহুর্তে উবে গিয়ে, সেখানে স্থান করে নিল সংশয়। ঝড়ের আগের শান্ত প্রকৃতি নয় তো এটা? মৃদু কণ্ঠে সালামের জবাব দিল সে।

-আলিশবা হেসে বলল, তুমি এভাবে তাকিয়ে কি দেখছো আমার দিকে? যাও ফ্রেশ হয়ে এসো। জানো অন্তরা ভাবীর কাছে শিখে আমি তোমার জন্য মাছ রান্না করা করেছি। তাড়াতাড়ি চলো খেয়ে বলবে কেমন হয়েছে রান্না।

-ধীরে ধীরে আলিশবার কাছে গিয়ে মঈন বলল, দেরি হবার জন্য আমি সত্যি খুব সরি। তুমি নিশ্চয়ই অপেক্ষা করেছো, কষ্ট পেয়েছো? আসলে হঠাৎ করে কয়েকজন ফ্রেন্ডের সাথে দেখা হয়ে গিয়েছিল।

-আলিশবা বলল, এরপর থেকে এমন হলে আমাকে ফোন করে জানিয়ে দেবে। আমি রাগ করবো না বরং তোমার সমস্যা বুঝতে চেষ্টা করবো।

-হেসে, তুমি রাগ করবে ভেবে আমি ফোন করিনা সেটা কিভাবে বুঝলে?

-হেসে, সেটা তো বলবো না। তবে আজ ভাবী আমাকে এমন কিছু কথা বলেছেন, যা আমার চিন্তা ভাবনাতে অনেক পরিবর্তন এনেছে।

-কি বলেছেন ভাবী?

-বলেছেন, স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন আকাশে তৈরি হয়। আর জমিনে এই ঘরকে সাজানোর কাজ মেয়েরা করে। পুরুষ না ঘর বাঁধে, না সাজাতে পারে। এই কাজ শুধু একটা মেয়েই করতে পারে। শুধু একটা মেয়ে। কারণ পুরুষ জানেই না এই কাজ কিভাবে করতে হয়।

-হেসে, এতো সাংঘাতিক কথা।

-হেসে, সাংঘাতিক সত্যি কথা এটা। সেজন্যই তো কথাটা মেনে নিয়ে এর উপর আমল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি। এখন তুমি যাও ফ্রেশ হয়ে এসো। আমার অনেক ক্ষুধা লেগেছে। হাসিমুখে তখন ওয়াশরুমে রওনা করলো মঈন।

ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে পরিপাটি করে নেবার ফাঁকে আয়নায় মাঝে মাঝে স্বামীর দিকে তাকাচ্ছিল অন্তরা। মুখের সামনে বই ধরা কিন্তু চেহারা থমথম করছে। ভালোই রেগেছে আজ আবির তার উপর ভাবতেই দুষ্টুমির আবেশ ছেয়ে গেলো অন্তরার মনে। অবশ্য কিছুটা অপরাধ বোধও কাজ করতে লাগলো মনে। দেড় ঘন্টা আগে তাকে ডেকে পাঠিয়েছিল আবির কিন্তু সব কাজ শেষ করে আসতে আসতে দেরি হয়ে গেল অনেক। আবিরের মন ভালো হয়ে যাবে এমন কিছু শব্দ গোছানোর চেষ্টা করতে শুরু করলো মনেমনে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে অন্তরা বলল, আজ রাগের উপর দারুণ আর্টিকেল পড়েছি জানো।

-ইমন বই বন্ধ করে বলল, তোমার হলে দয়াকরে লাইট বন্ধ করো। ঘুম পাচ্ছে, আমি ঘুমবো এখন।

-অন্তরা হাসি চেপে বলল, জানো রাগ দমন করা ছাড়া নাকি আত্মিক সাধনার পথে অগ্রসর হওয়া সম্ভব নয়। এজন্যই তো রাগের ধ্বংসাত্মক দিন সম্পর্কে সব ধর্মেই সাবধান করা হয়েছে। আমাদের রাসূল(সঃ) বলেছেন, “ রাগান্বিত হয়ো না, যে ব্যক্তি রাগকে সংবরণ করতে পারে সেই প্রকৃত বীর। বুদ্ধদেব বলেছেন, “ রণক্ষেত্রে সহস্র যোদ্ধার উপর বিজয়ীর চেয়ে রাগ-ক্রোধ বিজয়ী বা আত্মজয়ী বীরই বীরশ্রেষ্ঠ।”বেদে আছে...

-চুপ করো তো অন্তরা। ঘুমোতে দাও আমাকে।

-আহা শোনই না। বেদে আছে, “ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অনিয়ন্ত্রিত রাগ-ক্রোধ থেকে দূরে থাকো। যিশুখ্রীস্ট বলেছেন, “ যখন কেউ তোমার সাথে অন্যায় আচরণ করে, তুমি তাকে ক্ষমা করে দাও। সদাপ্রভু তোমাকে ক্ষমা করবেন।” আর অন্তরা বলেছে..., থেমে যেতে দেখে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে আবির তাকালো অন্তরার দিকে।

-আবিরের কাছে গিয়ে মিষ্টি হেসে অন্তরা বলল, জীবনে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু মুহুর্ত আসতেই পারে তাই বলে কি অভিমানের জ্বালাবো দিয়া? নক্ষত্র ভরা রাতকে ঢেকে দেবো মেঘের চাদরে? নিরানন্দে ডুবাবো জীবনের স্বাদ? ভালোবাসাকে করবো না ধারণ? ক্ষমাকে করি চলো আপন... আবার সাজাই সুখের স্বপন...

না চাইতেও মুগ্ধতা জড়ানো হাসি ফুটে উঠলো আবিরের মুখে। হাত বাড়িয়ে দিলো সে অন্তরার দিকে......

চলবে.........(ইনশাআল্লাহ)

বিষয়: বিবিধ

১৫৮১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File