আমার বোনেরা
লিখেছেন লিখেছেন আফরোজা হাসান ১৬ আগস্ট, ২০১৩, ১২:৪৮:৫০ দুপুর
জীবন মানেই আনন্দ-বেদনা, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির মিলন মেলা। জীবনের অপ্রাপ্তি গুলো নিয়ে আমার তেমন কোন মাথাব্যথা কখনোই ছিল না। কিন্তু কিছুদিন পরপর প্রাপ্তির খাতাটা উল্টে পাল্টে দেখা আমার অভ্যাস। প্রায় আট মাস আমি ব্লগে লিখছি। ব্লগ জীবনের প্রাপ্তির খাতাটা খুলে আজ মনের সাথে সাথে চোখও ভরে গেলো আমার। এত অল্প সময়ে কত শত প্রাপ্তি যোগ হয়েছে জীবনের ডায়েরীতে। আমার ব্লগ জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি অসাধারণ কিছু বোন পেয়েছি আমি। যাদের কারো ছোঁয়া আমার দিনগুলোকে করেছে আরেকটু বর্ণিল, কারো আলো জীবনকে করেছে আরেকটু আলোকিত, কারো রং আমার ভুবনে দিয়েছে রঙের আরেকটি আঁচড়, কারো কথা মনে জাগিয়ে দিয়েছে আশার ছোট্ট প্রদ্বীপ, কারো ভালোবাসা আমাকে করেছে সিক্ত, আর কারো আদর আমার আহ্লাদী স্বভাবে দিয়েছে মৃদু ঢোলের বাড়ি।
আশা জাগানিয়া
আমার এই ছোট্ট পরীটার সাথে পরিচয় হয়েছিলো এসবি ব্লগের বার্তার মাধ্যমে। সেখান থেকে স্কাইপে কথা, তারপর আর কখনো থমকে দাঁড়ায়নি আমাদের সম্পর্ক। সময়ের টানে এগিয়ে গিয়েছে আর চলে যেতে যেতে সময় আমাদের সম্পর্কের মাঝে বুলিয়ে দিয়ে গিয়েছে ভালোবাসা ও বন্ধুত্বের পরশ। ওর “আশা জাগানিয়া” নামটি আমার দেয়া। কারণ ওর কথা মাঝে আমি সত্যিই আশার আলো দেখতে পাই। ছোট্ট একটা মানুষ অথচ এত বিজ্ঞ বিজ্ঞ কথা বলে যে আদর লাগে খুব। ওর পাকনা পাকনা কথায় অতিষ্ঠ হয়ে আরেকটি নাম দিয়েছি ‘তালেবর’। কিন্তু জীবনকে ঘিরে ওর উপলব্ধিগুলো আমাকে সত্যিই মুগ্ধ করে। আমাদের দুজনের পড়াশোনার সাবজেক্টে বেশ মিল তাই মাঝে মাঝে আমরা একসাথে ডুব দেই মনোজগতে। রিয়ালাইজেশন নামের মতিগুলো তুলে আনতে চেষ্টা করি মনের গহীন থেকে। গতরাতে কথায় কথায় ওকে বলেছিলাম যে, পৃথিবীতে কিছু কিছু মানুষ থাকেন যাদেরকে ভালোবাসতে পারাটাকে ভাগ্য বলে মনেহয়। কিংবা যেই মানুষগুলো আমাদেরকে ভালোবাসে ভাবলে প্রাপ্তিতে মন ভরে যায়। আশা জাগানিয়ার জবাব ছিল, তুমিও আমার জন্য তেমন একজন মানুষ আপুনি। না গতরাতে ওকে কিছু বলতে পারিনি। আজ বলছি যে, আপুনিও তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি। দোয়া করি তুমি বড় হও ঐ আকাশ ছোঁয়া, কথায় কাজে হয়ে ওঠো সবার তরে আশা জাগানিয়া।
রাবেয়া রোশনি
মন্তব্যের ঘরে একদিন দেখি লেখা রয়েছে যে, আপু আপনার পোস্টগুলো চুপিচুপি পড়ে চলে যাই। কারণ কি মন্তব্য করবো ভেবে পাইনা। আমার এই লুকিয়ে লুকিয়ে থাকা ছোট্ট পুতুল রোশনি মণিকে একদিন আমি ধরেই ফেললাম স্কাইপে। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত প্রতিদিন অন্তত একবার শুভেচ্ছা বিনিময় না হলে আমাদের চলেই না। আমার মতে ওর হওয়া উচিত ছিল ডাক্তার। কারণ বড় বেশি কেয়ারিং স্বভাবের আমার এই ছোট্ট বোনটি। স্কাইপে ওর প্রশ্ন চলতেই থাকে, আপু কেমন আছো? আপু খেয়েছো? মেডিসিন নিয়েছো? ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলে? কেন এত অনিয়ম করো? ইত্যাদি ইত্যাদি। কিছু কিছু মেয়ের মধ্যে নাকি মাতৃভাব প্রবল থাকে। আমার রোশনি মণি মনেহয় সেই আম্মা গ্রুপের সদস্যা। তবে কি যে ভালো লাগে যখন এমন করে আমার খবর নেয়। কেউ আমার জন্য ভাবছে, আমার কেয়ার করছে এই ভাবনাটা জীবনের প্রাপ্তির খাতাটাকে অনেক ভারী করে দেয়। এই ছোট্ট আপুটা আমার জীবনের অনেক বড় একটা প্রাপ্তি। দেশে যাবার আগে আমাকে লিখে যাওয়া ওর চিঠি পড়ে আমি ঝরঝর কান্না করেছি। রোশনি লিখেছিলো- “জীবনের অনেক সুন্দর উপহারের চেয়েও বড় উপহার হচ্ছে একজন ভাল মানুষ কে কাছে পাওয়া । একজন বোন কে পাওয়া । তুমি আমার সেই বোন যার আদেশ , উপদেশ সব কিছু আমার মানতে ইচ্ছে করে । যার ভালবাসা আমাকে সিক্ত করে । আলহামদুলিল্লাহ । অনেক লক্ষ্মীআপু যার কথা সজীবতা ফিরে পায় হৃদয়ে ! তোমার সেই সুন্দর হাসি ভরা কথা অনেক মিস করব আপুমণি । আদর ভরা শাসন , মায়া ভরা ভালবাসা অনেক মিস করব । নিজের প্রতি অনেক খেয়াল রেখ আপুসোনা । অনেক ভাল থেকো আর সব সময় আলোকবর্তী হয়ে পাশে থেকো।” জবাব দিতে পারিনি তখন এই ভালোবাসার। রোশনি মণি আজ বলছি, দুঃখের পরে সুখের হিমেল পরশ যেমনি, আমার ভুবনে তোমার উপস্থিতিও তেমনি।
এমন আরো কিছু অসাধারণ বোন পেয়েছি আমি ব্লগের মাধ্যমে। যারা আমাকে আমার মধ্যে যে অন্য আর সবার মত এক টুকরো আলো আছে, সেই আলোটা ছড়িয়ে দেবার অনুপ্রেরণা জুগিয়ে যাচ্ছে। অসাধারণ কিছু ভাইও পেয়েছি আমি ব্লগে এসে। ব্লগ সম্পর্কে আমার ধারণা একটা সময় খুব খারাপই ছিল বলা যায়। কিন্তু নিজ অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয়েছে যে, বিশ্বকে আপন করে নেবার চমৎকার এক প্রয়াসের নাম ব্লগ। আমরা চাইলেই ব্লগের মাধ্যমে গড়ে তুলতে পারি বন্ধুত্ব ও সহানুভূতিশীলতার বন্ধন। হয়ে উঠতে পারি কারো জন্য আশা জাগানিয়া কিংবা ঘোর আঁধারের মাঝে এক টুকরো রোশনি।
বিষয়: বিবিধ
২৬০৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন