প্রবাসী ভাইদের সাথে আরেকটি ঈদ
লিখেছেন লিখেছেন আফরোজা হাসান ১০ আগস্ট, ২০১৩, ০৯:১০:৫১ রাত
প্রবাসে আমার প্রথম ঈদের স্মৃতিটা সবসময়ই আমাকে খুব আনন্দ দেয়। আমার হাজবেন্ড বলেছিলেন যে, পরিবারকে ছেড়ে আমাদের মতো হাজার হাজার মানুষ ঈদ করে প্রবাসে। আমাদের পক্ষে যে কয়জনকে সম্ভব চলো চেষ্টা করি পরিবারের সাথে ঈদ করার আনন্দ দিতে। উনি উনার বন্ধু, পরিচিত ভাইদের আর আমাদের স্টাফ ভাইদেরকে ফোন করে জিজ্ঞেস করলেন কার কি খেতে ইচ্ছে করে ঈদ উপলক্ষে। কিংবা মার হাতের কোন খাবারটা সবচেয়ে বেশি ভালো লাগতো ঈদের দিন। সেদিন সারারাত আমরা দুজন রান্না করেছিলাম। ফজরের নামাজ আদায় করে কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রাম নিয়ে আবার ঈদের নামাজে ছুটতে হয়েছিলো। মোট চল্লিশজন ভাই এসেছিলেন। ডাইনিং টেবিল খুলে ফেলে সবাই গোল হয়ে নিচে বসেছিলেন। আর খাবার সময় সবার কণ্ঠের সেই তৃপ্তি আর আনন্দ আমি এখনো ভুলতে পারিনা। চলে যাবার সময় এক ভাই আমার হাজবেন্ডকে বলেছিলেন, ভাইয়া আপুকে আমার পক্ষ থেকে শুকরিয়া পৌছে দিবেন। আর বলবেন আজ পাঁচ বছর পর কেউ আমার কাছে জানতে চাইলো ঈদে কি খেতে ইচ্ছে করছে। উনার কণ্ঠের সেই বেদনা আমার চোখে অশ্রু নিয়ে এসেছিলো।
যারা প্রবাসে থাকে ঈদের দিনটা তাদের জন্য খুব বেশি আনন্দ বয়ে আনতে পারেনা। পরিবার-পরিজন নিয়ে যারা থাকেন তাদের কথা ভিন্ন কিন্তু যারা ব্যাচেলার তাদের জন্য ঈদটা সত্যিই খুব কষ্টের। ব্যাচেলারদেরও আবার ভাগ আছে, বিবাহিত ও অবিবাহিত। তবে বিবাহিত হোক আর অবিবাহিত সবারই পরিবারের জন্য মন কাঁদে। সবসময়ই কাদে কিন্তু বিশেষ আনন্দের দিনগুলোতে সেই চাপা পড়ে থাকা কান্না বেড়িয়ে আসে বাইরে। আমরা খুব পরিবার পাগল মানুষ তাই পরিবারকে ঘিরে মনের চাহিদাগুলো খুব বেশি অনুভব করি। সেদিন থেকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে আমরা জীবনে যতগুলো ঈদ প্রবাসে করবো, সব ঈদ পরিবার থেকে দূরে থাকা ভাইদের সাথে করবো। ঈদের দিন আমরা কোন ফ্যামিলি বাসায় যাইনা, কোন ফ্যামেলিকে দাওয়াতও করিনা। আমাদের ঈদ হয় তাদেরকে নিয়ে যারা পরিবার থেকে দূরে ঈদ করছে নানা কারণে বাধ্য হয়ে। এখন আর জানতে চাইতে হ্য় না, ঈদের আগে সবাই ফোন করে আবদার করতে থাকে আপু এবার ঈদে এটা খাবো, ওটা খাবো। জানিনা এতে কারো কষ্ট সামান্য হলেও লাঘব হয় কিনা? কেউ ফিল করে কিনা যে নিজের বোনের বাসায় এসেছি? কেউ মায়ের হাতের রান্নার সুবাস অনুভব করে কিনা? তবে আমি খুব তৃপ্তি পাই। অনেক আনন্দ নিয়ে রান্না করি। অনেক শান্তি পাই এই ভাইদেরকে খাইয়ে। অবশ্য উনারাও অনেক সাহায্য করেন। বাজার করে দেয়া, মসলা রেডি করে দেয়া, সালাদ কাটা ইত্যাদি। আমি মূলত শুধু রান্নাটাই করি। পরিবেশনের কাজ, খাবার পর সবকিছু ধুয়ে মুছে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করার কাজ উনারাই করেন। তাই আয়োজন বড় হলেও খুব বেশি কষ্ট হয়না।
বাবার খুব গাছ লাগানোর শখ। ছোটবেলায় যখন আমাদেরকে সাথে করে নিয়ে গাছ লাগাতেন বলতেন, দেখবে একদিন এই গাছ অনেক বড় হবে আর এর ছায়া ক্লান্ত শ্রান্ত মানুষের আশ্রয় হবে। প্রত্যেকটা মানুষেরও এমন হওয়া উচিত। অনেক মানুষ না হলেও অন্তত একজন মানুষ যাতে তার ছায়ায় এসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আবার পথ চলার শক্তি সঞ্চার করতে পারে। আমরা এই ছায়া হবারই চেষ্টা করি। পরিবারের অভাব তো কখনোই পূরণ করা সম্ভব নয়, অন্তত কিছুক্ষণের জন্য যদি আপনজনদের মাঝে আছে এই অনুভূতি তৈরি করা যায় কারো মনে সেটাই বা কম কি? ঈদেরদিন তাই আমরা সেই চেষ্টাই করি। ঈদ মানে খুশি কিন্তু সেই খুশি শুধু নিজে উপভোগ করার জন্য নয়। সেই খুশি সবার মাঝে ছড়িয়ে দেবার জন্য। সবাইকে নিয়ে একসাথে উপভোগ করার ফলে ঈদের আনন্দও বেড়ে যায় অনেক অনেক গুণ বেশি।
বিষয়: বিবিধ
২৯২১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন