ব্লগার থেকে বন্ধুত্ব, অতঃপর তোমারে লেগেছে এতো যে ভালো.........
লিখেছেন লিখেছেন আফরোজা হাসান ১৯ জুলাই, ২০১৩, ০৯:২১:৩৪ রাত
ব্লগার সাদিয়া মুকিম আপুর সাথে আমার পরিচয় আমার বোন আরোহীর এক্সিডেন্টের সুবাদে। আর আরোহীর সাথে সাদিয়া আপুর পরিচয় ব্লগের মাধ্যমে। আরোহীর শারীরিক অবস্থার খবর নেবার জন্য ফোন করলে প্রথম যেদিন সাদিয়া আপুর সাথে কথা হয়েছিলো উনি অবাক হয়ে বলেছিলেন, তোমার কণ্ঠস্বর তো একদম আরোহীর মতো আর প্রথম যেদিন আমাকে স্কাইপে দেখেছিলেন আরো অবাক হয়ে বলেছিলেন, তুমি তো দেখতে হুবহু আরোহীর মতো। আমি হেসে ফেললে উনি বললেন তুমি তো হাসোও আরোহীর মতো। বেশ মজা পেয়েছিলাম সাদিয়া আপুর কথাতে। কারণ জীবনে প্রথম একজন মানুষ পেলাম যিনি বললেন যে আমার সবকিছু আরোহীর মতো। নয়তো চারপাশ থেকে শুধু আমাদের দুই বোনের অমিলের তালিকাই জোটে কপালে। সেই গল্প নাহয় পরে কোনদিন লিখবো। আরোহীর খবর নেবার জন্য প্রতিদিনই সাদিয়া আপু ফোন করতেন আর আমি যেহেতু সারাক্ষণ বাসায় থাকি তাই আমার সাথেই কথা হতো। এভাবেই ধীরে ধীরে কথা বলাটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেলো। কেমন অভ্যাস? একদিন কথা না হলে মন খালি খালি লাগে তেমন অভ্যাস।
সাদিয়া আপুর উৎসাহেই এসবি ব্লগে রেজিস্ট্রেশন করেছিলাম। আর টুডে ব্লগে তো আপু জোর করে আমাকে রেজিস্ট্রেশন করিয়েছিলেন। ব্লগে লেখা আর স্কাইপে কথা বলা চলতে থাকলো আমাদের। এতো অল্প সময়ে আমার মনের এতো আপন খুব কম মানুষই হয়েছেন। আর এর পুরো ক্রেডিট আমি সাদিয়া আপুকেই দেবো। আপুর যখন কাজে ছুটি চলছিলো আমার সকালে ঘুম ভাঙতো উনার ফোন পেয়ে। ফোন দিয়ে বলতেন, কি ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিলাম রাজকন্যার? সন্ধ্যায় স্কাইপে অনলাইন না দেখলেই ফোন দিয়ে বলতেন, স্কাইপে আসো কথা বলি। আপু এমনটা না করলে আমার মতো অসামাজিক মানুষের পক্ষে কখনোই সম্ভব হতো না নিজ ইচ্ছায় বার বার উনাকে ফোন করে এমনি করে আপন করে নেয়া। শারীরিক দুর্বলতার একটা সময় পার করছিলাম কিছুদিন আগে। সারাদিনে কতবার যে আপু খবর নিতেন আমার। এমনকি ফজরের সময় উঠেও ফোন দিতেন খবর নেবার জন্য। একবার তিনদিন আপু ফোন দেননি আর আমিও দেইনি। তিনদিন পর ফোন করে অভিমানী কণ্ঠে বললেন, দেখলাম তোমাকে... কতোটা নিষ্ঠুর তুমি। কিন্তু আমি তোমার মতো না তাই আর থাকতে পারলাম না ফোন না দিয়ে।
যখন প্ল্যান নিলাম সামার ভ্যাকেশনে ইতালি যাবার। সাদিয়া আপুর যে সেকি আনন্দ। বললেন শোন আমি কিন্তু তোমাকে এরারপোর্টে রিসিব করতে আসবো না। কারণ তোমাকে দেখার পর জড়িয়ে ধরে একটা চিৎকার দেবো সেটা এয়ারপোর্টে দেয়া যাবে না। আরেকদিন বললেন তুমি আসার পর আমি কিন্তু শুধু তোমাকে চিমটি কাটবো, সত্যিই তুমি এসেছো কিনা বোঝার জন্য। মজা করে বলা এই কথাগুলোর মধ্যে আমার প্রতি আপুর ভালোবাসাকেই উপলব্ধি করেছি আমি। সেই ভালোবাসার টানেই আমার মতো ঘরকুনো ব্যাঙ স্পেন থেকে ইতালি সফর করে এসেছে। মনকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে গিয়েছে আপুর আদর-ভালোবাসা আর আপ্যায়ন। কিচেন আর বাথরুমকে নিয়ে আমার খুঁতখুঁতে স্বভাব জানার পর আপু আমার যাবার উপলক্ষ্যে উনার বাসার কিচেন আর বাথরুম চেঞ্জ করে ফেলেছেন। সবকিছু নতুন করে লাগিয়েছেন। আমি যখন বাথরুমে ঢুকতে যেতাম আপু বলতেন দাড়াও আমি আগে চেক করে দেখে আসি সবকিছু পরিস্কার পরিচ্ছন্ন আছে কিনা। আমার হাজবেন্ড খাবার-দাবারের ব্যাপারে খুব বেশি চুজি। প্রতিটা বিষয় খেয়াল রেখেছেন আপু। খেয়াল রেখেছেন আমার ছেলের দিকেও। জানি না কি দিয়ে শুধবো এতো ভালোবাসার ঋণ.........
শুধু বলবো আপিয়া জেনে রেখো আমার মনের বাগিচায় বন্ধন আর ভালোবাসার অংশে সাদিয়া নামের নতুন একটা বৃক্ষ রোপিত হয়েছে। আর আল্লাহ সুবহানাহুওয়াতায়ালার দরবারে শুকরিয়া জানাই আমাকে এমন একটি বোন দেবার জন্য। প্রার্থনা করি এই ভালোবাসার বাঁধন যেন কখনো ছুটে না যায়। আমরা যেন একে অন্যেকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসতে পারি। হতে পারি সর্বাবস্থায় একে অন্যের কল্যাণকামী।
(ইতালিতে একসাথে কাটানো সুন্দর সুন্দর মুহুর্তগুলো সাদিয়া আপু লিখবে বলে আমি আর লিখলাম না। অপেক্ষায় রইলাম আপুর লেখার)
বিষয়: বিবিধ
৩৯১৯ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
নাকি এসবি লিজেন্ড এস.দেওয়ানের মত
- ট্যাগ মেরেছিলেন ?
মন্তব্য করতে লগইন করুন