অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ

লিখেছেন লিখেছেন আফরোজা হাসান ১৫ জুন, ২০১৩, ০৯:৫১:৪৬ রাত

কয়েকদিন আগে এক বাসায় দাওয়াত থেকে ফিরে এসেই আমার কাজিন ঘোষণা দিলো ঐ বাসায় জীবনে আর কোনদিন যাবে না। কারণ জানতে চাইলে বলল, বাচ্চারা মিলে দুষ্টুমি করার সময় একটা শোপিস পড়ে ভেঙ্গে যাওয়াতে মেজবান ভাবী খুবই অসন্তুষ্ট হয়েছেন। বিভিন্ন কথার ফাঁকে কৌশলে মেজবান ভাবীটি বাচ্চাদের ভদ্রতা শেখানোর ব্যাপারে ছোটখাট কিছু পরামর্শও দিয়ে দিয়েছেন উপস্থিত অন্যান্য ভাবীদেরকে। এতে করে সবাই কম-বেশি অপমানিত বোধ করেছেন। সামাজিকতা রক্ষার্থে অনেক সময়ই আমাদেরকে এই ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণের স্বীকার হতে হয়। বিশেষ করে যখন বাচ্চাদেরকে সাথে করে কোন বাসায় দাওয়াতে যাওয়া হয় তখন অনেক সময় না চাইতেও মেহমান ও মেজবানদের মধ্যে সূক্ষ্ম ভুল বোঝাবুঝির তৈরি হয়ে যায়। শিশুরা স্বভাবতই দুরন্ত, ছটফটে, চঞ্চল। আর কিছু কিছু শিশু তো আছে যারা মাত্রাতিরিক্ত ছটফটে ও চঞ্চল। এক মুহুর্ত এক জায়গায় স্থির থাকতে চায় না, সবকিছুতেই দুষ্টুমি করা চাই। সব বাসাতেই মুল্যবান কিংবা গুরুত্বপুর্ণ নানা জিনিসপত্র থাকে। শিশুরা না বুঝে সেসব ধরে এবং অনেকসময় না চাইতেও নষ্ট করে ফেলে। এই ধরণের পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হচ্ছে যদি শিশুদেরকে দিয়েই শিশুদের বোঝানোর কাজটা করিয়ে নেয়া যায়।

আমার বাসায় সবচেয়ে মূল্যবান বলতে যা আছে তা হচ্ছে বই। আমার ছেলে যখন হাঁটতে শিখলো তার সবচেয়ে প্রিয় কাজ ছিল সেলফ থেকে বই নামানো আর উঠানো এবং আমি খেয়াল না করলেই বই থেকে পৃষ্ঠা ছিড়ে সেটা খেয়ে ফেলা। কি করা যায় ছেলেকে নিয়ে জানতে চাইলে ছেলের বাবা হেসে বললেন, এক কাজ করো ভক্ষককে রক্ষক বানিয়ে ফেলো। রাজকন্যা আর রাক্ষসের গল্প জানা থাকার কারণে আমার ছেলে জানতো যে রাক্ষসের প্রাণ থাকে সাগরের গভীর নীচে এক নীল ভোমরার ভিতর। ওকে বললাম রাক্ষসের প্রাণ যেমন ভোমরার ভেতর থাকে আম্মুর মন তেমন এই বইয়ের ভেতর। চোখ বড় বড় করে বলল, বইয়ের পাতা ছিঁড়লে কি তোমার হাত ছিড়ে পড়ে যাবে আম্মু? বললাম, আম্মুর হাত ছিড়ে যাবে না, আম্মু মারাও যাবো না কিন্তু আম্মুর মনে অনেক কষ্ট হবে। আম্মুর চোখ কান্নাও করতে পারে। করুণ স্বরে বলল, আমি চাই না তোমার মন কষ্ট পাক, তোমার চোখ কান্না করুক। এরপর থেকে আর কোনদিন সে আমার বই ধরে না আর ধরলেও ছিড়ে না। বাসার যখনি ওর বন্ধুরা আসে আগেই বলে দেয় যাতে বইয়ের সেলফের কাছে না যায়। এবং বইয়ের যতটুকু যত্ন তারপক্ষে করা সম্ভব করার আপ্রাণ চেষ্টা করে।

আমার বাসায় যেহেতু অনেক বাচ্চা আসে তাই ওদেরকে বোঝানোর দায়িত্ব আমি আমার ছেলেকেই দিয়েছি। বন্ধুরা আসার পর নিজেই বুঝিয়ে বলে যে, কিচেনে যাওয়া যাবে না, কোন কিছু খেতে ইচ্ছে করলে আম্মুর কাছে চাইতে হবে, ওয়াশরুম গিয়ে কোনকিছু নোংরা করা যাবে না, খেলনা ছাড়া অন্য কোন কিছু অনুমতি ছাড়া ধরা যাবে না ইত্যাদি। এতে আরেকটা সুবিধা হচ্ছে এই কাজগুলো সে অন্য কারো বাসায় বেড়াতে গেলেও করে না। আসলে বাচ্চাদেরকে যদি প্রত্যেকটা জিনিসের গুরুত্ব বুঝিয়ে বলা যায় তাহলে তারা বোঝে এবং মেনে চলতে চেষ্টা করে। বন্ধুরা বাসায় আসলে তাদের সাথে কোন কোন খেলনা দিয়ে, কোথায় বসে খেলতে হবে, কোন কোন জিনিস ধরা যাবে না, কোন কোন কাজ করা যাবে না ইত্যাদি বাচ্চাকে সুন্দর মতো বুঝিয়ে বলে দিতে হবে। যাতে বাচ্চারাই করণীয় বর্জনীয় বুঝে সেইমতো চলতে পারে। বিষয়টা একটু কঠিন তবে বাবা-মা ধৈর্য্য ধরে চেষ্টা করলে ধীরে ধীরে বাচ্চারা এসব রপ্ত করে ফেলতে পারে। আর বাবা-মা মুক্ত থাকতে পারেন অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণের স্বীকার হওয়া থেকে।

বিষয়: বিবিধ

২৬৬৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File