শিশুদের নিয়মানুবর্তিতা

লিখেছেন লিখেছেন আফরোজা হাসান ০৫ জুন, ২০১৩, ১০:৫০:০৪ রাত



আমার ক্ষুদে স্টুডেন্টদের মাদের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি যে অভিযোগটা শুনতে হয় সেটা হচ্ছে বাচ্চারা কেউই নিয়ম মেনে চলতে চায় না। সারাক্ষণ যদি ওদের পেছনে লেগে থাকা হয় তাহলে রুটিন মতো কাজ করে কিন্তু একটু বেখেয়াল হলেই বাচ্চারা তাদের ইচ্ছে মতো চলে। আসলে বেশির ভাগ বাবা-মাই ভুলে যায় যে শিশুরা হচ্ছে দুরন্তপনার প্রতীক। যে কোন নিয়ম বা অভ্যাসের আদলে শিশুদের গড়ে তুলতে তাই সময়ের প্রয়োজন। আর তারচেয়েও বড় কথা হচ্ছে শিশুদের নিয়মানুবর্তিতা শেখাতে হলে নিজেদেরকে আগে নিয়ম মেনে চলতে হয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বাবা-মারা সন্তানদেরকে নিয়মানুবর্তি বানাতে যতটা আগ্রহী, নিজেরা নিয়ম মেনে চলতে ঠিক ততটাই উদাসীন।

শিশুরা অনুকরণ প্রিয় তাই যে কোন জিনিস বলার চেয়ে করে দেখালে তারা দ্রুত সেটা শিখে প্রয়োগ করতে পারে। আর একটা জিনিস তাদেরকে করতে বলা হচ্ছে এবং বাবা-মাকে যখন তার উল্টো করতে দেখে সেটারও একটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ে শিশুদের মনে। তারা তখন বুঝতে পারে না যে কাজটা যেভাবে তাদেরকে করতে বলা হচ্ছে সেটা সেভাবেই করা উচিত কিনা? আর যদি উচিত হয় তাহলে বাবা-মা কেন করছেন না? আমার ছেলেকে যখন খাবারের রুটিন করে দিয়েছিলাম সে প্রশ্ন করেছিলো তোমার আর বাবার খাবারের রুটিন কোথায়? যখন ছেলের খাবারের রুটিনের পাশে আমাদেরও একটা খাবার রুটিন লাগিয়ে দিলাম, সে আর কোন ঝামেলা না করে নিজের রুটিন মেনে নিয়েছিলো চুপচাপ।

বাচ্চারা যাতে নিজ থেকেই নিয়ম মেনে চলতে আগ্রহী হয় সেজন্য ছোট ছোট কিছু পদক্ষেপ নেয়া যায়। তারমধ্যে একটা হচ্ছে নিয়ম মেনে চলার জন্য উপহার দেয়া। আমরা এমনই একটি রুটিন করেছি বাচ্চাদের জন্য। যে রুটিনে প্রতিটা কাজ ঠিকমতো করার জন্য পয়েন্ট আছে। যেমন, স্কুল থেকে এসে নিজের ড্রেস, ব্যাগ সবকিছু জায়গা মতো গুছিয়ে রাখার জন্য ২০, সময় মতো গোছল ও খাওয়ার জন্য ২০, হোমওয়ার্ক করার জন্য ২৫, কুরআন তেলাওয়াতের জন্য ২৫, প্রতিটা কাজ করার আগে নিদিষ্ট দোয়া পড়লে ৩০, বাসায় মেহমান এলে বা বাইরে পরিচিত কারো সাথে দেখা হলে সুন্দরভাবে সালাম ও কুশলাদী বিনিময়ের জন্য ২০, ডায়েরী লেখার জন্য ১০, এমন মোট ২০০ পয়েন্টের রুটিন।

সপ্তাহ ভিত্তিক হওয়াতে এক সপ্তাহ মোট পয়েন্ট হবে ১৪০০(প্রয়োজনে পয়েন্ট কম-বেশি হতে পারে)। যে কমপক্ষে ১২০০ পয়েন্ট তুলতে পারবে তাকে ছোট্ট একটা উপহার দেয়া হবে। তবে ঠিকমতো কাজ করার জন্য যেমন পয়েন্টের ব্যবস্থা আছে ঠিক তেমনি কোন কাজ ঠিকমতো না করলে পয়েন্ট মাইনাস হবে। এছাড়া অকারণে কান্না করলে ৪০, স্কুল থেকে কমপ্লিন এলে ৪০ এবং মুখে মুখে তর্ক করলে ৪০ পয়েন্ট মাইনাস হবে। তবে রুটিন মেনে চলার ক্ষেত্রে যেটা খেয়াল রাখতে হবে সেটা হচ্ছে শিশুরা যেন এটা উপভোগ করে। ওদের কাছে যেন এটাকে বোঝা মনে না হয়। এবং অবশ্যই এই ধরণের রুটিন ছয় মাসের অধিক সময় শিশুদেরকে দিয়ে করানো উচিত নয়।

এই ধরণের রুটিনগুলো শুধুমাত্র শিশুদেরকে নিয়মের মধ্যে আনতে উৎসাহিত করার জন্য। যখন নিয়ম মেনে চলতে শিশুরা মোটামুটি অভাস্থ্য হয়ে যায় তখন এই রুটিন বন্ধ করে স্বাভাবিক রুটিন মেনে চলতে উৎসাহিত করতে হবে। তবে শিশুদেরকে নিয়মের মধ্যে আনার বা রাখার সবচেয়ে ফলপ্রসূ মাধ্যম হচ্ছে বাবা-মাকে নিয়ম মেনে চলা। নিজেরা সময় বা নিয়মকে সম্মান না করলে সন্তানের কাছ থেকে এমনটা আশা করা সত্যিই অন্যায়। শিশুরা বাবা-মাকে অনুসরণ করেই তাদের করণীয় নির্ধারন করে। সুতরাং বাবা-মাকে নিজে নিয়মানুবর্তি হয়ে তাদের শিশুকে উৎসাহিত করতে হবে নিয়মানুবর্তিতার প্রতি।

বিষয়: বিবিধ

৩১৬০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File