শিশুদের বিনোদন ও খেলা

লিখেছেন লিখেছেন আফরোজা হাসান ০২ জুন, ২০১৩, ০৫:০২:৫৩ বিকাল



চার বছর আগে আমাদের এখানে শিশুদেরকে নিয়ে একটি সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছিলো। বিষয় ছিল ‘শিশুদের মানসিক বিকাশ’। বক্তব্যের এক পর্যায়ে একজন শিশু বিশেষজ্ঞ ভাই বলছিলেন যে, বাবা-মায়েরা সন্তানদের মধ্যের সৃজনশীলতা বিকাশের জন্য কিংবা বিনোদন দেবার জন্য নানানভাবে চেষ্টা করে থাকেন। অথচ শিশুদের খেলা হতে পারে সৃজনশীলতা বিকাশের এবং বিনোদন দানের একটা খুব কার্যকরী মাধ্যম। কিন্তু এক্ষেত্রে খেলা এমন হতে হবে যে সকল খেলা থেকে শিশুরা সৃষ্টিশীলতা অর্জন করতে পারে, এবং সাথে সাথে তাদের বিনোদনের চাহিদাও পূরণ হয়। আর এজন্য বাবা-মাকে নিত্য- নতুন উপায়ে খেলার কৌশল খুঁজে বের করতে হবে এবং শিশুদেরকেও নতুন নতুন খেলা খুঁজে বের করতে উৎসাহিত করতে হবে।। সৃজনশীল কাজের ভেতর থেকে যেহেতু আনন্দ খুঁজে পাওয়া যায়, আনন্দের জন্যই শিশুরা যে কোন খেলার মধ্যে নতুনত্ব পছন্দ করে এবং তা উপভোগের মাধ্যমে তাদের বিনোদনের চাহিদাও পূরণ হয়।

আমরা আমাদের বাচ্চাদের জন্য তাই চেষ্টা করেছিলাম নতুন নতুন খেলা খুঁজে বের করতে। কিন্তু চিন্তা করতে গিয়ে যে খেলাই মাথায় আসছিলো ইতিমধ্যেই তার চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে। তখন আমরা যা করেছিলাম তা হচ্ছে পুরনো খেলাগুলোকেই নতুন পদ্ধতিতে খেলার আয়োজন করেছিলাম। যেমন লুডু খেলা। আমরা নিজেরা একটা লুডু বানালাম, খেলার পদ্ধতি একই থাকলো শুধু উপকরণ বদলে দিলাম। যেমন, খেলা শুরুর পর কারো হয়তো তিন পরল, তখন তাকে দেখতে হবে সেই ঘরে কি লেখা আছে এবং সেটা করতে হবে। এমন প্রতিটা ঘরে কিছু না কিছু লেখা আছে যা করতে হবে। কোন ঘরে লেখা আছে একটা কবিতা বলো, কোন ঘরে পাঁচটি ফল-ফুল বা প্রানীর নাম বলো, কোন ঘরে যে কোন একটা ফল খাও, কোন ঘরে দশ ঘর সামনে যাও, কোন ঘরে মাকে দশটা আদর দাও, কোন ঘরে বাবার সাথে এক মিনিট ফাইট কর, কোন ঘরে আবার প্রথম থেকে খেলা শুরু করো...ইত্যাদি ইত্যাদি। একই কাজ বেশিদিন করতে যেহেতু শিশুদের ভালো লাগে না, তাই কয়েকদিন পর পর ঘরের মধ্যের লেখাগুলো বদলে নতুন কিছু যোগ করতে হবে।

এছাড়া বিভিন্ন ধরণের খেলা আছে যা শিশুদের সাথে নিয়ে খেলা যায়। যেমন, বড়রা মনে মনে একটা জিনিস চিন্তা করবে আর শিশুদের কাজ হচ্ছে যে দশটা প্রশ্ন করে সেটা বোঝার চেষ্টা করা। আবার কখনো শিশুরা মনে মনে চিন্তা করবে বড়রা প্রশ্ন করে খুঁজে বের করবে। কখনো একটা জিনিস সম্পর্কে পাঁচটা প্রশ্ন দেয়া থাকবে, প্রশ্ন পড়ে বা শুনে শিশুদেরকে বুঝতে হবে যে জিনিসটা কি। এই খেলার সাহায্যে খুব সহজেই শিশুদের চিন্তাশীলতার বিকাশ ঘটে। তারপর একটা ট্রেতে পঁচিশ-ত্রিশ রকমের জিনিস রেখে শিশুদেরকে তিন মিনিট খুব ভালো মতো দেখতে দেয়া, এরপর একটা কিছু দিয়ে ট্রেটা ঢেকে দিয়ে বলা যে কি কি দেখেছো লিখো বা মুখে বলো। কখনো দেশ, ফুল, ফল, পাখী ইত্যাদির নাম কাগজে লিখে সব একসাথে মিশিয়ে দিয়ে, প্রত্যেকটা খুঁজে আলাদা করতে বলা। আমি একটা জিনিস দেখছি, তুমি কি দেখছো? এভাবেও প্রশ্ন করার মাধ্যমে একটা জিনিস খুঁজে বের করাটাও হতে পারে বেশ মজার একটা খেলা শিশুদের জন্য।

কখনো কখনো শিশুদেরকে উৎসাহিত করতে হবে নতুন কোন খেলা খুঁজে বের করতে। কয়েকদিন আগে স্কুলের বাচ্চাদেরকে বলছিলাম তোমরা আজ একটা খেলা খুঁজে বের করো। একজন বলল, আমি তোমার কানে কানে একটা শব্দ বলবো, তুমি পাশের জনের কানে বলবে, সে বলবে তার পাশের জনের, এভাবে গ্রুপের প্রত্যেকের কানে কানে শব্দটা ঘুরে বেড়াবে। সবাই বলতে পারলে নতুন আরেকটা শব্দ নিয়ে আবারো চলবে খেলা আর কেউ যদি সঠিক শব্দটা বলতে না পারে সে আউট খেলা থেকে। যেহেতু কানে কানে ফিসফিস করে বলা হয় তাই প্রায়ই ভুল হয়। খুব মজা পাচ্ছিলো বাচ্চারা খেলাটা খেলতে। আরেকজন বলল, আমি একটা শব্দ বলবো সেটার শেষ অক্ষর দিয়ে অন্য একটা শব্দ বলতে হবে, যে বলতে পারবে না সে আউট। খুবই সহজ আর কমন খেলা কিন্তু বাচ্চারা ভীষণ আনন্দ পায়। বাচ্চাদের সামনে একটা কবিতা ধীরে ধীরে পড়া আর ওদেরকে খেয়াল করতে বলা কোন শব্দটা সবচেয়ে বেশি বার এসেছে কবিতাতে। এই খেলা বাচ্চাদেরকে মনোযোগী হতে বেশ সহায়তা করে।

মোটকথা শিশুদেরকে বিনোদন দেবার জন্য খেলা হতে পারে খুবই কার্যকরী একটা মাধ্যম। কমন খেলাগুলোকেই একটু ভিন্নভাবে খেললেই যেটা আর কঠিন কিছু মনেহয় না। তবে খেয়াল রাখতে হবে একই খেলা যেন বেশিদিন ধরে খেলা না হয় শিশুদের সাথে, এতে ওদের মনে বিরক্তি কাজ করবে এটাই স্বাভাবিক। আর শিশুদের সাথে এইসব খেলা খেলতে খুব বেশি সময়েরও দরকার হয় না। শুধু ইচ্ছা আর সামান্য চেষ্টা থাকলেই খেলাকে করে তোলা যায় শিশুদের সৃজনশীলতা বিকাশ ও বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম।

বিষয়: বিবিধ

৩০৫৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File