শিশুদের এইম ইন লাইফ
লিখেছেন লিখেছেন আফরোজা হাসান ২৯ মে, ২০১৩, ১০:১৫:২৫ রাত
গতকাল ছিল আমার ক্ষুদে স্টুডেন্টদের সাথে করা শেষ ক্লাস। স্কুলে ঢোকার আগেই বুকের মধ্যে কেমন জানি হাহাকার আর শূন্যতা ছেয়ে গিয়েছিলো। মনেহচ্ছিলো আজকেই শেষ এরপর আর আমাকে দেখে বাচ্চারা ছুটে আসবে না, জড়িয়ে ধরবে না, আমার সাথে এসে বোস এমন বায়না ধরবে না কেউ, প্রশ্নে প্রশ্নে জর্জরিত করবে না, কেউ আমাকে আম্মু ডাকলে আমার ছেলে তার দিকে ফোঁস ফোঁস করে তাকাবে না। আরো কত শত স্মৃতি তৈরি হয়েছে বাচ্চাগুলোকে ঘিরে। আর শুধু স্মৃতিই বা বলি কেন ওরা আমার জীবনেরই একটা অংশে পরিণত হয়ে গিয়েছে গত কয়েক মাসে। ওদের সাথে কাটানো মুহুর্তগুলোকেও জীবন ভাণ্ডারের মূল্যবান মোতিই মনেহয় আমার। ওদের কাছ থেকে বিদায় নিতে হবে ভাবতেই কেমন যেন লাগছিলো। তারপরও জীবনের প্রয়োজনে প্রিয় মানুষদের আমাদেরকে বিদায় জানাতেই হয়।
ক্লাসে ঢুকতেই অন্যদিনের মতো সবাই ছুটে এলো। শেষ ক্লাস তাই পড়াশোনা ছিল না। ওদের প্রফেসর আর আমরা ভলান্টিয়ার টিচাররা সবাই মিলে কিছুক্ষণ গল্প করলাম সবার সাথে। গল্পের মধ্যে বাচ্চাদেরকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো তাদের এইম ইন লাইফ কি? অর্থাৎ, তারা বড় হয়ে কে কি হতে চায়। বাচ্চারা তো মহা উৎসাহে যার যা ইচ্ছে সেটা বলতে শুরু করলো। কেউ টিচার হবে, কেউ খেলোয়াড় হবে, কেউ গায়ক হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু কেন হবে অর্থাৎ, যে টিচার হতে চায় সে কেন হতে চায়? যে খেলোয়াড় হতে চায় সে কেন হতে চায়? এই প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে বাচ্চারা থমকে গেলো। ভালো লাগে তাই বললো কয়েকজন আর বেশির ভাগই ঠিক মতো কিছু বলতে পারলো না। তবে যে গায়ক হতে চায় সে খুব উৎসাহ নিয়ে বলল যে সে অনেক ধনী হতে চায় তাই গায়ক হবে। ওর কথা সবার হাসির খোরাক যুগিয়েছিল।
আজ স্কুলে অভিভাবকের সাথে মিটিং ছিল প্রফেসরের। প্রতিটা বাবা-মাকে প্রফেসর জিজ্ঞেস করলেন কি স্বপ্ন তাদের মনে বাচ্চাদের ভবিষ্যতকে ঘিরে? বেশির ভাগ বাবা-মাই কিছু বলতে পারলেন না দেখে খুব অবাক হলাম। সবার কথার সারমর্ম যা ছিল সেটা হচ্ছে বাচ্চারা তো এখনো অনেক ছোট তাই সেভাবে করে ভেবে দেখা হয়নি। প্রফেসর বললেন, তোমাদেরকে আমি ভেবে দেখার কথা বলছি না। তবে বাচ্চারা যাতে নিজেকে নিয়ে ভাবে সেইজন্য ওদের মনে ইচ্ছা, উৎসাহ, উদ্দীপনা তোমাদেরকেই তৈরি করতে হবে। বাচ্চারা বাবা মার স্বপ্নের কারনেই স্বপ্ন দেখা শুরু করে তাই ওদের লক্ষ্য তোমরা নির্ধারন না করলেও ওদের জীবনে স্বপ্ন তৈরি করে দেবার দায়িত্ব তোমাদেরই। অর্থাৎ, ওদের জীবনের যে একটা লক্ষ্য আছে সেই ধারণার বীজ বাচ্চাদের মনে গেঁথে দেয়ার দায়িত্ব তোমাদেরকেই পালন করতে হবে। এটা ঠিক যে এখন ওরা অনেক ছোট আর চলতে চলতে অসংখ্য বার ওদের ইচ্ছা ও পছন্দ বদলাবে কিন্তু জীবনের একটা লক্ষ্য আছে জানা থাকার কারণে ওরা কখনই দিগ্বিদিক ছুটবে না।
অসম্ভব ভালো লেগেছিল প্রফেসরের কথাগুলো। আসলেই বাচ্চাদের মনে যদি শুধু স্বপ্ন তৈরি করে দেয়া যায় ওরা নিজেরাই তখন লক্ষ্য স্থির করে সেই পানে ছুটে চলে। আসলে বাচ্চারা স্বভাবতই অস্থির ও চঞ্চল স্বভাবের। ধারণা করা হয়ে থাকে যে প্রতিভার একটি বড় অংশের স্ফুরণ ঘটে কল্পনার মাধ্যমে। কল্পনাকে তাই প্রতিভাও বলা হয়ে থাকে। বাচ্চারা সাধারণত কল্পনাপ্রবণ হয়। তাদের কল্পনা তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে দুরন্ত পঙ্খীরাজের পিঠে চেপে উড়ে বেড়ায় স্বপ্নপুরীর দেশ থেকে দেশান্তরে। বাস্তব জীবনে বাচ্চার চারপাশে যারা আছেন বা যেসব বস্তু রয়েছে কিংবা যে ধরণের ঘটনা ঘটে সেই সবকিছুর উপর ভিত্তি করে তাদের মনে ধারণার বীজ জমা হয়, এবং বীজটির শাখা প্রশাখা বিস্তৃত হয়। স্বতঃস্ফূর্তভাবেই এমনটি ঘটতে থাকে আর সমৃদ্ধ হতে থাকে তাদের কল্পনার রাজ্য। আর শিশুদের এই কল্পনা শক্তিকে সুশোভিত করতে প্রয়োজন সঠিক গাইডেন্সের। অভিভাবকদের তাই বাচ্চাদের কল্পনা শক্তিকে গতিশীল করার জন্য, জাগিয়ে তোলার জন্য নানানভাবে সহায়তা করতে হবে। যাতে তাদের জীবনের লক্ষ্যটা তাদের কাছে পরিস্কার থাকে।
বিষয়: বিবিধ
১৬৩৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন