গল্পে গল্পে বাচ্চাদেরকে শেখানো

লিখেছেন লিখেছেন আফরোজা হাসান ২৮ মে, ২০১৩, ০৫:৪৫:১৭ বিকাল



সপ্তাহে একদিন মেয়েকে সাথে নিয়ে ঘর গোছানোর কাজ করে নাবিলা। মা-মেয়ে দুজন মিলে আসবাবপত্র মুছামুছি থেকে নিয়ে শুরু করে ঘরের সবকিছু যথাস্থানে গুছিয়ে রাখা, ঘর ঝাড়ু দেয়া ইত্যাদি সবকিছুই করে। আজকেও মা-মেয়ে মহা আনন্দে ঘরের কাজ শুরু করলো। হঠাৎ নাবিলার মেয়ে নুশেরার হাত থেকে একটা শোপিস পরে ভেঙ্গে গেলো। চোখ বড় বড় করে অপরাধী ভঙ্গিতে মায়ের দিকে তাকালো নুশেরা। নাবিলা বলল, তুমি এতো ভারী জিনিসটা কেন ধরতে গেলে মা? যদি তোমার পায়ে পড়তো কতোটা ব্যথা পেতে জানো। সোফায় উঠে বোস নয়তো তোমার পা কেটে যেতে পারে। সোফায় বসে নুশেরা বলল, আমি কিছুই পারিনা তাইনা মা? নাবিলা মেয়ের কাছে গিয়ে আদর করে বলল, কে বলেছে তুমি কিছু পারোনা?

-কেউ বলেনি কিন্তু আমি জানি আমি ছোট তাই কিছুই করতে পারিনা।

-মামণিও তো কতকিছু করতে পারিনা। সবাই সবকিছু পারবে না এটাই হচ্ছে নিয়ম। খরগোশ আর ব্যাঙের গল্পটা শোননি তুমি?

-(কৌতূহল মেশানো কণ্ঠে)কোন গল্পটা মামণি? উমম… আমার তো মনে পড়ছে না। আরেকবার বলো না মামণি প্লীজ।

-(হেসে)আচ্ছা শোন বলছি। এক বনে ছিল অনেকগুলো খরগোশ। একদিন তারা সবাই মিলে গোলটেবিল বৈঠকে বসলো।

-গোলটেবিল বৈঠক কি মামণি?

-গোল একটি টেবিলকে ঘিরে বসে যখন সবাই কথাবার্তা বলে তখন তাকে গোলটেবিল বৈঠক বলে।

-হিহিহি……বনে খরগোশরা গোলটেবিল কোথায় পাবে?

-(হেসে)তাই ত! আচ্ছা আমার আম্মাজান বিরাট ভুল হয়ে গিয়েছে। খরগোশরা সবাই গাছের ছায়ায় বসে কে কত দুর্বল তা নিয়ে আলোচনা করছিলো। সবার ভীষণ মনখারাপ ছিল কারণ তাদের না আছে শক্তি না আছে সাহস। মানুষ-পশু-পাখী সবাই তাদের শত্রু। সবাই তাদের ধরে ধরে খায়।

-(মন খারাপ করে) ইশ কত্তো দুঃখী খরগোশরা। আমারো মনখারাপ হচ্ছে। তারপর কি হল মামণি?

-হুম….বলছি শোন। খরগোশদের মনেহলো তাদের এই যন্ত্রণা সহ্য করার থেকে মরে যাওয়া ভালো। যেই চিন্তা সেই কাজ। একদিন খরগোশরা সবাই মিলে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করার জন্য পুকুরের ধারে হাজির হলো। সেই পুকুরের ধারে বসে ছিল অনেকগুলো ব্যাঙ। খরগোশদের সাড়া পেয়ে ব্যাঙরা সবাই লাফিয়ে পড়লো পানিতে।

-ব্যাঙরা ভয় পেয়েছিলো খরগোশ দেখে তাই না?

-হুম…ভীষণ ভয় পেয়েছিলো আর ব্যাঙদের ভয় পেতে দেখে সবচেয়ে বয়স্ক যে খরগোশটি ছিল সে বলল, দাঁড়াও তোমরা পানিতে এখনই লাফ দিয়োনা। তোমরা কি খেয়াল করোনি ব্যাঙয়ের দল আমাদের ভয়ে কেমন ঝাঁপিয়ে পড়লো পানিতে? তারমানে ওরা আমাদের চেয়েও দুর্বল। অর্থাৎ, আমরাই এই পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্বল প্রাণী না। আমাদের চেয়েও দুর্বল প্রাণী আছে।

-মামণি ছোট খালামনির ছেলে রাফিদ তো আমার চেয়েও দুর্বল তাই না? হিহিহি……… রাফিদ তো নিজ হাতে খেতেও পারেনা।

-(হেসে)সেটাই তো আমি তোমাকে বলছি মা। নিজেকে কক্ষনো ছোট আর দুর্বল ভাববে না। কারণ তুমি যত ছোট আর দুর্বলই হও না কেন, খুঁজে দেখলে এমন কাউকে অবশ্যই পেয়ে যাবে যে তোমার চেয়েও ছোট আর দুর্বল।

-(সোফা থেকে লাফিয়ে নেমে)আমি আর কক্ষনো এমন ভাববো না। চলো মামণি ঘরগোছানো শেষ করি।

জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে উৎসাহের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। উৎসাহ এমন একটি জিনিস যা অসাধ্য সাধন করার প্রেরণা যোগায় মানুষের মনে।

বিষয়: বিবিধ

২৫২৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File