চাইল্ড ফিজিক্যাল অ্যাবিউজ-২

লিখেছেন লিখেছেন আফরোজা হাসান ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৪:৩১:৪২ রাত

চাইল্ড অ্যাবিউজ নিয়ে কথা বলছিলাম প্রতিবেশী কয়েকজন ভাবীর সাথে। সবাই চলে যাবার কিছুক্ষণ পর এক ভাবী ফিরে এলেন আবার। চেহারা দেখেই বুঝতে পারলাম কিছু বলতে চান। বেশ সময় নিলেন উনি নিজেকে গুছাতে তারপর বললেন, ভাবী আমি যখন ছোট ছিলাম আমাদের বাসায় আমার দূর সম্পর্কের এক মামা থাকতেন। উনি আমাকে খুব আদর করতেন, জড়িয়ে ধরতেন..........!! এসব কি তাহলে অ্যাবিউজ ছিল? কিন্তু আমি তো তখন অনেক ছোট ছিলাম। মাত্র আট বছর বয়স ছিল আমার। বেশির ভাগ সময় আড়ালে করলেও, মাঝে মাঝে তো আব্বু-আম্মুর সামনেও আমাকে আদর করেছে মামা। উনারা তো কখনো কিছু বলেননি। বলেন না ভাবী আমি কি অ্যাবিউজের স্বীকার তাহলে? সংসার জীবনে খুব সুখী এই মেয়েটিকে সে যে অ্যাবিউজের স্বীকার ছিল, বুঝিয়ে বলতে আমার অনেক কষ্ট হয়েছিলো। কিন্তু এখনো মেয়েটা সেসব ভেবে নীরবে কান্না করে।

ক্লাস টেনে পড়তাম তখনকার ঘটনা। আমার সবচেয়ে প্রিয় বান্ধবীটা ছিল ক্লাসের মধ্যে সবচেয়ে আমুদে স্বভাবের। হঠাৎ করে একদিন ওকে ভীষণ চুপচাপ দেখে কি হয়েছে জানতে চাইলাম। অনেক করে জিজ্ঞেস করার পর বললো, দুই সপ্তাহ ধরে আমার আব্বুর এক বন্ধু আমাকে টিউশন দিচ্ছে। প্রথম থেকেই উনি যেন একটু কেমন। প্রথমে ড্রইংরুমে বসে পড়তাম কিন্তু উনি শুধু বেডরুমে বসে পড়লে পড়ায় মনোযোগ বেশি এমন নানা কথা আম্মুকে বললে, পড়ার সুবিধার কথা চিন্তা করে বেডরুমে পড়ার পারমিশন দিয়ে দিলেন আম্মু। তারপর থেকে উনি পড়ার ফাঁকে ফাঁকে নানা ধরণের নোংরা জোকস বলা শুরু করলেন। আর গতকাল আমাকে বললেন যে, তুমি এতো ঢেকেঢুকে বসো কেন? আরো একটু খোলামেলা হয়ে বসবে, এতে দেখতে সুবিধা হয়........!! আমি এখনই কিছু না করলে লোকটা আরো সাহস পাবে। কিন্তু লজ্জার কারণে আব্বু-আম্মুকে বলতে পারছি না এসব কথা। পরে আমরা কয়েক বান্ধবী মিলে ওর আম্মুকে বলেছিলাম।

এমন অসংখ্য ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে আমাদের চারপাশে। বাবা-মার চোখের সামনে তাদের আদরের সন্তানটি অ্যাবিউজের স্বীকার হচ্ছে কিন্তু তারা বাঁধা দেয়া তো দূরে থাক টেরই পাচ্ছে না। বুক দিয়ে যাদের কাছ থেকে আগলে রাখার কথা সন্তানকে, অজ্ঞতার কারণে নিজেরাই ঠেলে দিচ্ছে তাদের কাছে। আর এই ধরণের ঘটনাগুলো বেশির ভাগই ঘটে ঘরের একান্ত কাছের আত্মীয়-স্বজনদের দ্বারা। যারা আদরের ছলে এমন সব বিকৃত কাজ করে, শিশুরা অস্বস্তিবোধ করলেও ঠিক বুঝে উঠতে পারে না যে এটা আদর নাকি অন্য কিছু। যার ফলে তারা কারো কাছে বিষয়টি জানায় না বা জানাতে যে হবে সেটাও বুঝতে পারে না। ঘরের মানুষ ছাড়াও যারা শিশুদের কাছে আসার সুযোগ পায়, যেমন বাসার কাজের মানুস, গৃহশিক্ষক, আশেপাশের বাড়ি বা ফ্ল্যাটের কেউ, স্কুলের কেউ তাদের সবার ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। শিশু ছেলে হোক বা মেয়ে উভয়ই এই ধরণের অ্যাবিউজের স্বীকার হতে পারে। আর এসব ঘটনা থেকে তাদের মধ্যে তৈরি হতে পারে নানা ধরণের ছোট-বড় মানসিক সমস্যা, হীনমন্যতা, ব্যক্তিত্বহীনতা, ঘৃণা-বিদ্বেষ প্রভৃতি। কেউ কেউ মারাত্মক কিংবা অপূরণীয় শারীরিক ক্ষতির স্বীকার হয় এরফলে।

শিশুরা যাতে এই ধরণের জঘন্য হয়রানির স্বীকার হতে না পারে, সেজন্য সবার প্রথমে বাবা-মাকে সচেতন হতে হবে। কে কি মনে করবে ইত্যাদি চিন্তা করে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব বা লজ্জায় না ভুগে ঘরে অবস্থানরত অন্যান্য সদস্যদের সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে যে শিশুদের কতটুকু আদর করা যাবে। আর শিশুদেরকে বুঝিয়ে বলতে হবে কোন ধরণের আদর গুলো পচা, শরীরের কোন কোন অংশে কাউকে ছুঁতে দেয়া যাবে না। এবং বাবা-মাকে অবশ্যই সন্তানদের সাথে এমন সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে যাতে তারা তাদের কোন কথা বাবা-মাকে বলতে দ্বিধা না করে। বাচ্চারা যদি কারো সাথে বাইরে যায় ফিরে আসার পর প্রশ্ন করে জেনে নিতে হবে বাইরে কি হয়েছে, কি দেখেছে, কি করেছে ইত্যাদি। তারমানে এই নয় যে, আমরা প্রতিটা সম্পর্ককেই সন্দেহের চোখে দেখবো। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য যে, বিভিন্ন কেস স্টাডি থেকে পাওয়া যায় এই ধরণের বিকৃত মানসিকতার মানুষগুলো চাচা-মামা-খালু-দুলাভাই-কাজিন-এমনকি দাদা-নানা..... পর্যন্ত হতে পারে।

সন্তানদের নিরাপত্তার জন্য যদি নিজেকেও সতর্কতার চোখে দেখতে হয়, আমার মনেহয় সেটাই করা উচিত। কে কি মনে করলো সেই চিন্তায় যেন আমরা আমাদের সন্তানদেরকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে না দেই।

চলবে...........(ইনশাআল্লাহ)

বিষয়: বিবিধ

১৩৩৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File