দাদুর পাঠশালা- ( শেষ পর্ব)

লিখেছেন লিখেছেন আফরোজা হাসান ২৫ মে, ২০১৩, ০৫:৫৫:০৬ বিকাল



রাতে ঘুমোতে যাবার আগে বাচ্চাদেরকে দেখতে এলো রিনিলা। সবাই লক্ষ্মীসোনার মতো ঘুমোচ্ছে। এই নিস্পাপ চেহারাগুলো দেখলে কে বলবে যে সারাটা দিন এরা সবাই মিলে বাড়ি মাথায় তুলে রাখে দুষ্টুমি দিয়ে। তবে যতই দুষ্টুমি করুক বাচ্চারা আছে বলেই বাড়িটাকে এতো সুন্দর আর প্রাণবন্ত মনেহয়। ঘুমন্ত বাচ্চাদের দিকে তাকিয়ে থাকতে ভীষণ ভালো লাগছে। রিসাব পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলল, চা আর চানাচুর খাবে রিনিলা? রিনিলা বলল, এতো রাতে চা আর চানাচুর? আচ্ছা ঠিকআছে খাবো।

-তাহলে যাও বানিয়ে নিয়ে আসো তোমার সাথে আমিও খাবো।

-(স্বামীর দিকে তাকিয়ে কপট রাগের ভঙ্গী তারপর হেসে ফেলে) চা আর চানাচুর খেতে ইচ্ছে করছে বললেই হতো। চালবাজি করার দরকার কি ছিল?

-(হেসে) চালবাজি না করলে এই সুন্দর ভঙ্গী আর হাসিটা যে দেখার সৌভাগ্য হতো না।

-(হেসে)কিছুক্ষণ আমার সোনামণিদেরকে একটু দেখি তারপর দিচ্ছি তোমাকে চা আর চানাচুর।

-(কিছুক্ষণ নীরবতার পর) কি ভাবছো?

-ভাবছি না স্বপ্ন দেখছি যে আমাদের এই ছোট ছোট বাচ্চাগুলো একদিন বড় হয়ে অন্ধকারের বুকে আলোর মশাল হাতে পথ হারানো মানুষকে গন্তব্যের সন্ধান দিচ্ছে। আমার এই স্বপ্নটা পূরণ হবে তো রিসাব?

-ইনশাআল্লাহ! অবশ্যই হবে। মেধা আর প্রতিভা তো আল্লাহ ওদেরকে দিয়েই পাঠিয়েছেন কিন্তু সেগুলোকে বিকশিত করার দায়িত্ব আমাদের। কোন প্রতিভাই নিজ থেকে বিকশিত হয় না। বাচ্চাদের উৎসাহ দিতে হয়। তা না হলে যথাযথ মেধার বিকাশ ঘটতে পারে না।

-হুম..এই বাচ্চাগুলো যে মেধা ও প্রতিভা নিয়ে পৃথিবীতে এসেছে সেটার যথাযথ ব্যবহার হবে কিনা নির্ভর করছে আমাদের উপর। বাচ্চাদেরকে উৎসাহ দেয়ার জন্যই তো আমাদের দাদুর পাঠশালা।

-হ্যা বাবার পাঠশালার আইডিয়াটা সত্যিই চমৎকার। ঘরোয়া পরিবেশে এভাবে যদি বাচ্চাদেরকে জীবনের প্রয়োজনীয় শিক্ষাগুলো দিয়ে দেয়া যায় তাহলে চলার পথে হোঁচট খেয়ে পরার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।

-রিসাব আমি চাই আমাদের পরিবারের প্রতিটা বাচ্চা আমাদের ভাইবোনদের মতো হোক। আমরা যেমন কঠিন একটা জীবনে যুদ্ধ করতে করতে একজন আরেকজনের ভেতরে উৎসাহ, প্রেরণা, সাহস, ভালোবাসা, তৃপ্তি , শান্তি, সুখ, আনন্দ, হাসি খুঁজে পাই...ওরাও তেমন খুঁজে পাবে একে অন্যের মধ্যে। হবে একে অন্যের ভরসা আর আশ্রয়স্থল। সবসময় চেষ্টা করবে অন্যেকে কিভাবে খুশি করা যায়। অন্যের মুখে কিভাবে হাসি ফোটানো যায়।

-আমিও চাই ওরা সবাই এমন হোক যাদের মধ্যে কোন হতাশা থাকবে না, সর্বাবস্থায় যারা হবে হাসিখুশি, আনন্দময়। যারা হবে উৎসাহী, উদ্যমী ও পরিশ্রমী। ভবিষ্যতের চিন্তায় যারা বর্তমানকে নষ্ট করে দেবে না।

-হ্যা আমিও এমন স্বপ্ন দেখি যে ওরা সবাই অনেক বড় মাপের মানুষ হয়েছে। সত্যিকার মানুষ, পূর্ণ মানুষ। যাদের সৃষ্টির সেরা জীব বলা যায় চোখ বন্ধ করে। নিজেকে নিয়ে তৃপ্ত মানুষ, সর্বাবস্থায় আল্লাহর শোকরগোজার করা মানুষ। বর্তমানের অবস্থান যে এক মুহুর্তে সেই এক মুহুর্তকে নিয়ে খুশি থাকা মানুষ।

-ইনশাআল্লাহ! আমাদের স্বপ্ন পূরণ হবে। কারণ আমরা শুধু স্বপ্ন বুনেই যাবো না, সাথে সাথে সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টাও করবো। আর একথা তো তুমিও জানো যে কোন কঠিন কাজকে সহজ করে নেয়া যায় শুধুমাত্র ইচ্ছাশক্তি আর চেষ্টার জোড়ে।

-(হেসে) তোমার কথা শুনলে সত্যিই মনের জোড় আরো অনেক গুণ বেড়ে যায়। আমার স্বপ্নদের উড়ার জন্য পাখা লাগিয়ে দেয় তোমার কথা। এমন পাখা আমি আমাদের বাচ্চাদের স্বপ্নেও লাগাতে চাই। যাতে ওরা উড়ে যেতে পারে স্বপ্নহীন মানুষদের কাছে। যারাই ওদের কাছাকাছি আসবে তাদের বদলে দেবে স্বপ্নের ছোঁয়ায়। অনেক অনেক কাজ করবে মানুষের জন্য, পৃথিবীর জন্য।

-সেজন্য আগে ওদেরকে জীবনবোধে উজ্জীবিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে আমাদেরকে। ইনশাআল্লাহ! দাদুর পাঠশালা ওদেরকে এইসব গুণাবলী অর্জনে উদ্বুদ্ধ করবে।

-ইনশাআল্লাহ! ঠিকআছে আমি তোমার জন্য চা নিয়ে আসি। তুমি দেখতে থাকো আমাদের সোনা সোনা বাচ্চাদেরকে।

-আপনি যা বলবেন আমি তাই করবো। জানেনই তো আমি আপনার অতি বাধ্য স্বামী।

-জ্বি আমি খুব ভালো করেই জানি যে যখন অবাধ্য হবার কোন সম্ভাবনা থাকে না। শুধু তখনই আপনি আমার অতি বাধ্য স্বামী সেজে থাকেন। (দুজনই হেসে ফেললো)

(দাদুর পাঠশালা মূলত বাচ্চাদেরকে সঠিক মূল্যবোধ ও জীবনবোধের আলোকে গড়ার লক্ষ্যে একটি আয়োজন। আসলে ভালো মানুষ হবার জন্য, ঠিকমতো নিজের দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করার জন্য প্রয়োজন ভারসাম্য। সমস্যা হচ্ছে ভারসাম্যপুর্ন জীবন গড়ে তোলার জন্য একক কোন ফর্মুলা মানুষের হাতে নেই...একমাত্র শরীয়ত ছাড়া। শরীয়তের জ্ঞানই বিবেকের মধ্যে সেই আলো প্রজ্বলিত করে যা মানুষকে বুঝতে সাহায্য করে কোনটা উচিত আর কোনটা উচিত না। মানুষকে সাহায্য করে নিজের সম্পর্কে সবসময় সক্রিয় থাকতে এবং করনীয় বাছাই করতে। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় শরীয়তের জ্ঞান অনুপস্থিত বললেই চলে, তাই ঘরোয়া ভাবে যদি বাচ্চাদেরকে এই জ্ঞান শিখতে, পড়তে ও বুঝতে সাহায্য করা না হয় তাহলে দুনিয়াবী পরীক্ষায় পাশ করলেও, জীবনের আসল পরীক্ষায় তারা অকৃতকার্যই থেকে যাবে।)

বিষয়: বিবিধ

১৮৭৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File