কুরআনের তাফসীর থেকে কিছু বাণী-৩
লিখেছেন লিখেছেন আফরোজা হাসান ২২ মে, ২০১৩, ০৪:১৭:৪০ রাত
সূরা-কাহাফ
১। আধ্যাত্মিক জীবনের সর্বোচ্চ রহস্যের সন্ধান দেয় কুরআন। আধ্যাত্মিক উন্নতির তারতম্য অনুযায়ী কুরআনের বাণীর বোধগম্যতার তারতম্য ঘটে থাকে। নয়তো এই বিশাল কিতাবের কোথাও রহস্যময়তা নাই, - মানুষের যুক্তি বা চিন্তাকে রহস্য দ্বারা আবৃত করার কোনও প্রবণতা নাই। এ গ্রন্থের উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে আধ্যাত্মিক জগত সম্বন্ধে সাবধান করে দেয়া যেনো পরলোকে সে বিপদের সম্মুখীন না হয়। মানুষ যেনো পরলোকে সর্বোচ্চ শান্তির সন্ধান লাভ করে। (আয়াত- ২)
২। গুণাবলীই হচ্ছে মানুষের যোগ্যতার মাপকাঠি। আল্লাহ্র কাছে গ্রহণযোগ্যতার একমাত্র মানদন্ড হচ্ছে গুণাবলী বা আচরণের শ্রেষ্ঠতা। সুতারাং আমাদের যে বিশ্বাস 'পীর ' বংশ বা এরূপ আধ্যাত্মিক নেয়ামতে ধন্য বংশ, তা নিতান্তই ভ্রান্ত ধারণা। (আয়াত-৭)
৩। সময়ের ধারণা সব সময়েই আপেক্ষিক। মানুষের নিজস্ব অভিজ্ঞতার মধ্যে তা সীমাবদ্ধ। আল্লাহ্ যে কোনও মূহুর্তে মানুষের চিন্তা চেতনাকে স্তব্ধ করে দিতে পারেন, আবার তাঁর বাণী ও জ্ঞানের উপযুক্ত করতে পারেন। (আয়াত-১২)
৪। দৃঢ়তা হচ্ছে ধীরে ধীরে পুঞ্জিভুত শক্তি। একদিনে তা লাভ করা যায় না। ধাপে ধাপে তার ক্রমন্বতির পথে অগ্রসর ঘটে। উর্দ্ধে আরোহণের সিড়ির মত একধাপ পরের ধাপের প্রতি অগ্রসর করে। এবং আল্লাহ্র করুণা ও দয়া তাঁকে সাহায্য করে। (আয়াত-১৩)
৫। মানুষ তার অভিজ্ঞতার কারাগারে বন্দী থাকে। আর মানুষের কর্মপ্রণালীও অভিজ্ঞতার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় যা অনেক সময়েই প্রকৃত সত্যের বিপরীত হয়। (আয়াত-১৯)
৬।আল্লাহ্র উপরে নির্ভরশীলতা কখনও বৃথা যেতে পারে না। বরং আল্লাহ্র উপরে নির্ভরশীলতা চিত্তকে ভয় শূন্য করে। এ কথা আমাদের চরম হতাশা, ব্যর্থতার মাঝেও স্মরণ রাখতে হবে। (আয়াত-২১)
৭। সর্ব যুগে সর্বসময়েই সাধারণ মানুষ অর্থহীন, গুরুত্বহীন বিষয়ের প্রতি অধিক মনোযোগ, পরিশ্রম ও সময় ব্যয় করে বিষয়ের মূল বা মর্মার্থ উপলব্ধির চেষ্টা অপেক্ষা। (আয়াত-২২)
৮। কোন ব্যাপারে মতবিরোধ দেখা দিলে জরুরী বিষয়গুলি বর্ণনা করা উচিত। এর পরেও যদি কেউ অনাবশ্যক আলোচনায় জড়িত হয়ে পড়ে , তবে তার সাথে সাধারণ আলোচনা করে বিতর্ক শেষ করে দেয়া বাঞ্জনীয়। নিজের দাবী প্রমাণ করার জন্য উঠে পড়ে লেগে যাওয়া এবং প্রতিপক্ষের দাবী খন্ডনে অধিক জোর দেয়া অনুচিত। কারণ এতে তিক্ততার সম্ভাবনা ঘটে। (আয়াত-২২)
৯। মানব জীবনের জীবন বৃত্ত আবর্তিত হয় আল্লাহকে কেন্দ্র করেই। আল্লাহ্র সান্নিধ্য লাভের সাধনাই তার পার্থিব জীবনের সাধনা। আল্লাহ্কে কেন্দ্র করেই মানুষের আত্মার পরিক্রমা এই পৃথিবীর সুদীর্ঘ জীবন পথে। মানব আত্মা যত আল্লাহ্র নির্দ্দেশিত পথে চলে , তত তার অবস্থান আল্লাহ্র সান্নিধ্যের বা সত্যের নিকটবর্তী হয়। তার জীবন বৃত্তের আয়তন ছোট হয়ে আসে। (আয়াত-২৪)
১০। যারা আল্লাহ্র রাস্তা ত্যাগ করে বিপথে যায়, আল্লাহ্র করুণা তাদের বিপথ হতে ফিরে আসতে প্রভাবিত করে। নানা বিপর্যয় ও দুঃখ কষ্টের মাধ্যমে তাদের আল্লাহ্র আশ্রয়ে ফিরে আসার জন্য অনুপ্রাণীত করা হয়। কিন্তু এত কিছুর পরেও যারা উদ্ধত একগুয়ে ভাবে আল্লাহ্র পথে বাঁধা সৃষ্টি করে, এবং তাদের বিকৃত আকাঙ্খাকে চরিতার্থ করে তাদের আল্লাহ্র রাস্তায় ফেরার আশা নাই। তারা এমন এক অবস্থায় পৌঁছে যায় যেখান থেকে ফিরে আসার আর কোনও পথ খোলা থাকে না। এরূপ অবস্থায় তাদের নিকট আল্লাহ্র করুণা ধারা পৌঁছায় না। অন্ধ অহংকার ও গর্ব তাদের উদ্ধত ও একগুয়ে করে তোলে এবং আল্লাহ্র করুণা পৌঁছানোর সকল রাস্তা অহংকার ও গর্বের বেড়াজালে ঢাকা পড়ে যায়। (আয়াত-২৮)
১১। আল্লাহ্র নিকট ব্যক্তির চারিত্রিক গুণাবলীই কাম্য , অর্থ সম্পদ বা মিথ্যা গর্ব নয়। ধন-সম্পদের মোহ ব্যক্তির মনে অহংকারের জন্ম দেয়, তার অন্তর্দৃষ্টিকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। আর রীপু আচ্ছাদিত আত্মাতে আল্লাহ্র নূর প্রবেশে বাধা পায়, তারা সত্যকে চিনতে পারে না, অনুধাবন করতে পারে না। (আয়াত-৩৪,৩৫)
১২। জীবনের বৈভব , বিত্ত, ক্ষমতা, সবই আল্লাহ্র করুণার উপরে নির্ভরশীল। এগুলির নিজস্ব কোনও স্থায়ীত্ব বা ক্ষমতা নাই - সবই ক্ষণস্থায়ী। কিন্তু ব্যক্তির "সৎকর্ম " স্থায়ী। আল্লাহ্ সৎকর্মকে স্বীকৃতি দেন। ব্যক্তি তাঁর সৎকর্মের পূণ্য পরকালেও বহন করে নিয়ে যাবে। যারা সৎকর্ম করে তারা আল্লাহ্র অনুগ্রহকে সরাসরি তাদের অন্তরে অনুভব করতে পারে, ফলে তাদের বিশ্বাসের ভিত্তি আরও মজবুত ও দৃঢ় হয়। আত্মার মাঝে স্রষ্টার অনুগ্রহের অনুভব, পরকালেও আল্লাহ্র করুণা পাওয়ার যোগ্যতার অনুভুতিকে তীব্র করে। (আয়াত-৪৬)
সূত্রঃ কুরআন এন্ড তাফসীর ডট কম
বিষয়: বিবিধ
২৬৫৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন