দাদুর পাঠশালা-৬

লিখেছেন লিখেছেন আফরোজা হাসান ১৩ মে, ২০১৩, ০৪:২২:৫৪ বিকাল



বারান্দায় দাঁড়িয়ে নাতী-নাতনীদের সাথে যুদ্ধারত দাদুকে দেখে মায়া এবং মজা দুটাই লাগছিলো রিসাবের। এই বাড়ির প্রতিটা বাচ্চা এতো বেশি চঞ্চল যে তাদের বাবা-মায়েরাই রীতিমত হিমশিম খায় বাচ্চাদেরকে সামলাতে। সেখানে দাদুদের কি অবস্থা হবে সেটা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সাহায্য করতে যাবে কিনা ভাবছিলো। বাবাকে হাত-পা ছড়িয়ে বসে পড়তে দেখে পাশে গিয়ে বসে সালাম দিলো রিসাব। জবাব দিয়ে আরমান সাহেব বললেন, ঈশপের একটা গল্প মনে পড়ে গেলো বুঝলে রিসাব।

-কোনটা বাবা?

-একটা গাধা মাঠে চড়ে বেড়াচ্ছিল। হঠাৎ একটি খেক শিয়ালকে তার দিকে ছুটে আসতে দেখে তার প্রাণ ওষ্ঠাগত হবার উপক্রম হলো। তার মাথায় একটা বুদ্ধি এলো আর সে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলা শুরু করলো। শেয়াল কাছে এসে ঘটনা কি জানতে চাইলে সে বলল,তার পায়ে একটা কাঁটা বিঁধে গিয়েছে। সে আরো বলল শেয়াল যেন কাঁটাটি খুলে তাকে খায়। নইলে তার গলায় কাঁটা আটকে যেতে পারে। এই কথা বিশ্বাস করে শেয়াল পড়লো ফাঁদে। গাধার পা নিজের চোখের সামনে তুলে ধরে কাঁটা পরীক্ষা করতে যেতেই গাধার প্রচণ্ড লাথি খেয়ে শেয়ালের দাঁত কটা উড়ে গেলো। নিজের নির্বুদ্ধিতা ক্ষুব্ধ হয়ে শেয়াল বলল, আমার বাবা আমাকে কসাইয়ের কাজ শিখিয়েছিলেন, ডাক্তারি তো নয়। জাত ব্যবসা ছেড়ে ডাক্তারি করতে গিয়েই আমার এই বিপত্তি। এই গল্পের শিক্ষা হচ্ছে যার যে কাজ তাকে তাই করা উচিত। আমি শিক্ষক হবো নাকি দাদুই থাকবো সেটাই ভাবছি এখন।

-(হাসতে হাসতে) এমন ভাবছো কেন বাবা? নাতিরা কি খুব বেশি যন্ত্রণা দিচ্ছে তোমাকে?

-ঠিক তা না। তবে কথা শুনতে চায় না কেউই। ওরা আমাদেরকে দাদু ভাবতেই পছন্দ করে।

-ওরা যাতে তোমাদেরকে টিচার ভাবতে পারে সে পদক্ষেপ তো তোমাদেরকেই নিতে হবে বাবা। আদরের সাথে সাথে শাসনও করতে হবে। প্রয়োজনে মাঝে মধ্যে শাস্তি দিতে হবে।

-(আঁতকে উঠে) শাস্তি? কি বলছো রিসাব তুমি? নাতিদের শাস্তি দেবো?

-(হেসে) শাস্তি হবে ঐ প্রবাদ স্টাইলে বাবা। অর্থাৎ, সাপও মরবে আবার লাঠিও ভাঙবে না।

-সেটা কি রকম?

-শাস্তি হবে গঠনমূলক। অর্থাৎ বাচ্চারা বুঝবে যে তারা শাস্তি পাচ্ছে কিন্তু এটা তাদের মনে চাপ সৃষ্টি করবে না। অনুশোচনা হবে, ভবিষ্যতে না করার ব্যাপারে সতর্ক হবে কিন্তু নিজের বা অন্যের উপর কোন ক্ষোভ কাজ করবে না মনে। এককথায় শাস্তিটাও উপভোগ্য করে তুলতে হবে বাচ্চাদের জন্য। এতোটা না যে শাস্তি বিনোদনে পরিণত হবে, আবার এমনও না যে বাচ্চারা দুঃখী বা ব্যথিত বোধ করবে।

-(হেসে) শুনতে তো খুবই চমৎকার লাগছে। তা ঠিক কি ধরণের হবে এই শাস্তিগুলো?

-বাবা শাস্তি দেয়ার কারণ হচ্ছে বাচ্চাদের বোঝানো যে তারা যা করছে বা বলছে সেটা ঠিক নয়। কোনটা ভুল কোনটা সঠিক শাস্তি সেটা বুঝতে সাহায্য করবে বাচ্চাদেরকে। যে শাস্তি বাচ্চাদেরকে নিজের ভুলকে যদি মেনে নিতে উৎসাহিত করতে না পারবে, সে শাস্তি দেয়া অর্থহীন। আর গায়ে হাত তোলা, বকাঝকা করা কিংবা পছন্দের জিনিস বন্ধ করে দেয়া ইত্যাদি শাস্তির মধ্যে একটা পাওয়ার প্লের গন্ধ লুকিয়ে আছে। এসবের দ্বারা তাই বাচ্চাদের দমিয়ে রাখা যায় কিন্তু সংশোধন করা যায় না।

-শাস্তি দেয়াও তো দেখছি অনেক জটিল ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

-(হেসে) না বাবা আমরা খুব সহজ শাস্তিই দেবো বাচ্চাদেরকে। সহজ কিন্তু মাপ মতো।

-মাপ মতো মানে?

-একেকটা বাচ্চা একেক রকম তাই তাদের শাস্তি তো একরকম হতে পারেনা। কিন্তু শাস্তি পাবার পর সবার অনুভূতিটা একরকম হওয়া জরুরি। আর এমনটা শুধু তখনই সম্ভব যখন এমন কিছু করতে দেয়া হবে যা করতে সব বাচ্চাদেরই কম বেশি একই রকম লাগে।

-আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।

-(হেসে) আমি বুঝিয়ে বলছি। যেমন ধরো তোমার সবচেয়ে অপছন্দের কাজ আর আমার অপছন্দের কাজ একরকম নয়। কিন্তু সম্পুর্ন ভিন্ন হলেও যার যার অপছন্দনীয় কাজ করতে তোমার আর আমার যে কষ্টটা হবে সেটা কিন্তু প্রায় একই ধরণের।

-(হেসে) এবার বুঝতে পেরেছি। এটা তো সত্যিই খুব সুন্দর পদ্ধতি।

-আমি তো প্রথমেই বলেছি শাস্তি হবে গঠনমূলক। অপছন্দনীর পুষ্টিকর খাবার তো থাকবেই এছাড়া যার মুখস্ত করতে আপত্তি তার শাস্তি হবে ছড়া-কবিতা-গল্প-সুরা মুখস্ত করা, যার ড্রইং করতে ভালো লাগে না তাকে বলা হবে ছবি আঁকতে। এছাড়া বয়স অনুযায়ী নিত্য প্রয়োজনীয় ছোট খাট সাংসারিক কাজ করিয়ে নেয়া যায় শাস্তি স্বরূপ। এতে শাস্তির সাথে সাথে কাজ করার অভ্যাস এবং কাজ শেখাও হয়ে যাবে।

-(হেসে) তোমার সাথে কথা বললে সবকিছু সত্যিই খুব সহজ আর সুন্দর মনেহয়।

-(হেসে) আলহামদুলিল্লাহ্‌! এখন চলো বাবা বাচ্চাদের কাছে যাই। তোমাদের সবার সাথে সময় কাটাবো বলেই আজ তাড়াতাড়ি এসেছি বাসায়।

চলবে..............(ইনশাআল্লাহ)

বিষয়: বিবিধ

২০২৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File