কুরআনের তাফসীর থেকে কিছু বাণী-২
লিখেছেন লিখেছেন আফরোজা হাসান ১১ মে, ২০১৩, ১০:০৫:৪৯ রাত
১। মানুষ যদি প্রশান্ত মনে আল্লাহ্র সৃষ্টি কৌশল সম্বন্ধে চিন্তা করে ; তবে অবশ্যই সে অনুধাবনে সক্ষম হবে যে, কি গভীর মমতায় বিশ্বস্রষ্টার কল্যাণময় হস্ত আমাদের ঘিরে আছে। মানুষ তবেই প্রকৃত সত্যকে অনুভবে সক্ষম হবে এবং ভবিষ্যতের জবাবদিহি সম্পর্কে সাবধান হবে।
২। বিস্ময়কর বা অলৌকিক কিছুর মধ্যে আল্লাহ্কে অনুসন্ধান না করে আমাদের চারিপাশের প্রকৃতির মাঝে, তাঁর সৃষ্টির মাঝে, চেনা পৃথিবীর মাঝে, আল্লাহ্র সৃষ্টি নৈপুণ্যের মাঝে তাঁর ক্ষমতা ও দয়াকে অনুধাবন করতে বলা হয়েছে। প্রকৃতির আইনের মাঝে তাঁর ক্ষমতার প্রকাশ ঘটে।
৩। মানুষের সৃষ্টিতে, তার বুদ্ধিমত্তায়, প্রকৃতির মাঝে, প্রত্যাদেশের মাঝে আল্লাহ্র সৃষ্টি কৌশল বিদ্যমান। দিনের উষ্ণতা সূর্যের দীপ্তির সাথে জড়িত, পানির চক্রের মাধ্যমে রক্ষা হয় পৃথিবীর জীবন ও বিশোধনের কাজ; মানুষের বুদ্ধিমত্তা বা বিজ্ঞানের দ্বারা প্রকৃতিকে জয় করা এ সবই হচ্ছে আল্লাহ্র অসীম অনুগ্রহ তাঁর সৃষ্টির প্রতি - আল্লাহ্র সাহায্য ও প্রতিপালনের মাধ্যম বিশেষ।
৪। পৃথিবীতে একমাত্র সত্য, সুন্দর ও ভালো চিরকালের জন্য স্থায়িত্ব লাভ করে, যা অসুন্দর, মন্দ তা সময়ের আবর্তনে ধবংস প্রাপ্ত হয় - যেমন ভাবে বুদ্বুদ বাতাসে মিশে যায় । আল্লাহ্ হচ্ছেন সত্য ও সুন্দরের প্রতীক।
৫। স্রষ্টাকে অবিশ্বাসের ফলে আত্মার মাঝে সত্যের আলো প্রবেশ লাভ করতে পারে না। ফলে অন্ধকারে সমাচ্ছন্ন আত্মা মিথ্যা বা পাপ দ্বারা আবৃত হয়ে যায়। সত্যকে ত্যাগ করার ফলে আত্মার মাঝে মিথ্যা, আনুষ্ঠানিকতা, কুসংস্কারের প্রতি প্রবল আনুগত্য জন্মে।
৬। আকাশে বাতাসে বিশ্বভুবনে তাঁর সৃষ্টির মাঝে স্রষ্টার হাতের পরশ বিদ্যমান, -এই সত্যের প্রতি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন । স্রষ্টাকে দেখা যায় না, কিন্তু তাঁর সৃষ্টিকে প্রত্যক্ষ করে নিরাকার স্রষ্টাকে হৃদয়ের মাঝে অনুধাবন করা যায়।
৭। মানুষ যখন পাপ দ্বারা তার আত্মাকে কলুষিত করে ফলে সে তার আত্মার পূত পবিত্র অবস্থা হারায়, যা সে সৃষ্টির আদিতে আল্লাহর কাছ থেকে প্রাপ্ত হয়েছিল। তার ফলে সে তাঁর অন্তঃদৃষ্টি বা বিবেক থেকে বঞ্চিত হয়। চক্ষু থেকেও সে হবে অন্ধ ব্যক্তির ন্যায়, জ্ঞান থেকেও সে হবে মুর্খ ব্যক্তির ন্যায়। কলুষতা ও পাপ, আত্মার পুত পবিত্র সৌন্দর্যকে বিনষ্ট করে দেয়।
৮। আমাদের কর্মফলের দরুণই আমরা দুভার্গ্যে পতিত হই। আমাদের পাপই আমাদের সৌভাগ্য ও সমৃদ্ধি থেকে, দুর্ভাগ্য ও দুঃখে পতিত করে। কারণ মানুষের কর্মফল দ্বারাই আল্লাহর হুকুম নিয়ন্ত্রিত হয়।
৯। পার্থিব জীবনটা হচ্ছে আল্লাহ্র পরীক্ষা ক্ষেত্র স্বরূপ। দুঃখ, ব্যথা, বিপদ, বিপর্যয়, ক্ষণস্থায়ী। দুঃখের আগুনে পুড়েই আত্মা খাঁটি সোনাতে রূপান্তরিত হয়, অর্থাৎ , আত্মা পরিপূর্ণতা লাভ করে। আল্লাহ্র উপরে নির্ভরশীলতা থেকে আত্মার মাঝে ধৈর্য, একাগ্রতা, বিনয়ের সৃষ্টি হয় । চরিত্রের মাঝে জন্মলাভ করে দৃঢ়তা ও অধ্যাবসায়।
১০। ঐশ্বর্যের প্রাচুর্যের মাঝেও আল্লাহ্ তাঁর বান্দাকে পরীক্ষা করে থাকেন। যারা ঐশ্বর্যের প্রাচুর্যের মাঝেও আল্লাহ্ নির্দ্দেশিত পথ ত্যাগ করে না, নিজেকে ভোগ-বিলাস ও লোভ-লালসার উর্দ্ধে স্থাপন করতে পারে সেই তো আল্লাহ্র পরীক্ষায় উত্তীর্ণ । তারই চরিত্রে জন্ম নেয় আল্লাহ্র প্রতি সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণের ক্ষমতা।
১১। এবাদতের অর্থ অনেক গভীর ও পরিপূর্ণ। সর্বশক্তিমানের উপরে আন্তরিক বিশ্বাস ব্যতীত এবাদত মূল্যহীন। এযেনো প্রাণহীন দেহ। যারা বিশ্বাসের একগ্রতা ব্যতীত নামাজ পড়ে বা আল্লাহর এবাদত করে তারা তা করে তাদের আত্মার নীতিভ্রংশতা থেকে। তার কিছুটা সামাজিক আচার অনুষ্ঠান, কিছুটা আনুষ্ঠানিকতা, কিছুটা আত্মপ্রসাদ লাভ করা ব্যতীত আর কিছু নয়।
১২। যখন কোন ব্যক্তি বা জাতির উপরে আল্লাহর ক্রোধের প্রকাশ ঘটে সেই জাতির অধঃপতন ঘটে। ফলে সেই সম্প্রদায় বা জাতির জীবন দুর্ভাগ্যের কালো মেঘে আচ্ছাদিত হয়। যে সৌভাগ্য ও সমৃদ্ধি আল্লাহ তাদের দান করেছিলেন তা থেকে তারা বঞ্চিত হয়। আল্লাহর রহমত বা সৌভাগ্য বঞ্চিত হওয়াই হচ্ছে আল্লাহর শাস্তি বা আযাবে পতিত হওয়া। যাদের উপরে আল্লাহর শাস্তি পতিত হয়েছে তাদের রক্ষা করতে পারে এরূপ ক্ষমতা সারা পৃথিবীতে কারও নাই।
সূত্রঃ কুরআন এন্ড তাফসীর ডট কম
বিষয়: বিবিধ
১৯৮৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন