আমার আম্মু একটুও সুন্দর না

লিখেছেন লিখেছেন আফরোজা হাসান ২৯ এপ্রিল, ২০১৩, ০৩:৫৯:১১ দুপুর

ছোট বাচ্চাদের সাথে সময় কাটাতে ভীষণ ভালো লাগে আমার। সংসার আর পড়াশোনার ফাঁকে যেটুকু অবসর পাই চেষ্টা করি বাচ্চাদের সাথে কাটাতে। সবসময় তো আমিই গল্প শোনাই তাই কয়েকদিন আগে ইচ্ছে হলো আজ বাচ্চাদের মুখ থেকে গল্প শুনবো। ওদেরকে বললাম যার যার পরিবার সম্পর্কে বলতে। সাত বছরের রাইমা প্রথমেই বলল যে আমার ভীষণ মন খারাপ লাগে কারণ আমার আম্মু একটুও সুন্দর না। এমন কিছু শোনার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না আমি। সাত বছর বয়সি একটা বাচ্চার মন খারাপের কারণ তার মা দেখতে সুন্দর না! মা দেখতে সুন্দর না এমন চিন্তা এতো ছোট বয়সে কারো মনে আসতে পারে সেটাই জানা ছিল না আমার! থমকে গিয়েছিলাম কিছুক্ষণের জন্য।

আদর করে বললাম একথা কেন বলছো মামনি? জবাব দিলো আমার বন্ধুদের সবার আম্মুরা কত সুন্দর। কত সুন্দর সুন্দর ড্রেস পড়ে কিন্তু আম্মু শুধু বোরখা পড়ে। সবার মায়েরা সাজে কিন্তু আমার আম্মু কখনো সাজে না। সবার আম্মু ফর্সা আর আমার আম্মু কালো। আম্মু স্প্যানিশও বলতে পারে না ঠিকমতো। বললাম তুমি কি বাংলা বলতে পারো ঠিকমতো? জবাব দিলো আমি তো স্প্যানিশ বাংলা বলবো কেন? বললাম, তোমার আম্মু তো বাংলাদেশী সে তাহলে স্প্যানিশ বলবে কেন? জবাব দিলো আমি তো একটু একটু বাংলা বলতে পারি। বললাম, একটু একটু স্প্যানিশ তো আম্মুও বলতে পারে তাই না? তুমি স্প্যানিশ তাই যেমন তোমার বাংলা বলতে কষ্ট হয়, আম্মু বাংলাদেশী তাই তার স্প্যানিশ বলতে কষ্ট হয়। তুমি এখন থেকে আম্মুকে স্প্যানিশ শেখাবে আর আম্মুর কাছ থেকে বাংলা বলা শিখবে। একথা শুনে অনেক খুশি হয়ে উঠলো রাইমা। বাকি ব্যাপারগুলোও বুঝিয়ে বললাম এবং বুদ্ধিমতি মেয়েটা বুঝল এবং মেনে নিলো।

বাচ্চারা চলে যাবার পর মনে পড়লো স্কুল জীবনের কথা। আমার এক ফ্রেন্ড কাউকে কখনো বাসায় নিতো না কারণ তার মা স্মার্ট ছিলেন না। সুন্দর করে কথা বলতে পারতেন না, তেমন লেখাপড়া জানতেন না বলে। মনেহল মাকে ঘিরে হীনমন্যতা কি ওরও রাইমার মত এত ছোট্ট বয়সেই শুরু হয়েছিলো? কিন্তু কিভাবে আর কেনই বা এমন অনুভূতি তৈরি হয় কোন সন্তানের মনে তার মাকে ঘিরে? অনেককেই দেখেছি নিজের পরিবার কে নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগতে। এইসব অনুভূতির পেছনে দায়ী কে? সঠিক শিক্ষা ও মূল্যবোধের অভাব? নাকি পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুযায়ী বুঝিয়ে বলতে পারার অভাব? বাচ্চাদেরকে বুঝিয়ে বলাটা খুব বেশি গুরুত্বপুর্ণ মনেহয় আমার কাছে। আর এরজন্য প্রয়োজন বাচ্চাদের অভিযোগ গুলো মন দিয়ে শোনা এবং অভিযোগের পেছনে ওদের কি কি যুক্তি কাজ করছে সেগুলোকে বুঝতে চেষ্টা করা। আর কখনোই এসব ব্যাপারে বাচ্চাদের সাথে রাগ বা বিরক্তি না দেখানো।

আমার মনেহয় একটা শিশুকে ছোটবেলা থেকেই পরিবারের প্রতি সহানুভূতিশীল করে গড়ে তোলা উচিত। আদর-ভালোবাসা দেবার সাথে সাথে এসবের মর্ম বোঝানোর দায়িত্বও বাবা-মাকে পালন করতে হবে। বাবা-মাকে অনুসরণ করেই শিশুরা জীবন গঠন করে। বাবা-মা ও পরিবারের সদস্যদের আচার-আচরণ, কথাবার্তা, চাল-চলন সব কিছুই শিশুদের প্রভাবিত করে এবং জীবন গঠনে গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই বুঝতে শেখার পর থেকে শিশুদেরকে জানিয়ে দেয়া উচিত তাদের জীবনে বাবা-মা এবং পরিবারের গুরুত্ব কতো খানিক। তাদের এই পৃথিবীতে আসা থেকে নিয়ে শুরু করে ধীরে ধীরে বড় হবার পেছনে বাবা-মা ও পরিবারের অবদান কতো খানিক। কথায় বলে ভালো সেলাই মেশিন ও দক্ষ কারিগর না হলে ভালো কাপড়ও নষ্ট হতে পারে, তেমনি সঠিক শিক্ষার অভাবে ব্যহত হতে পারে একটি শিশুর মানবিক গুণসমূহের সুষ্ঠু বিকাশ।

বিষয়: বিবিধ

২০৬৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File