চলো না ঘুরে আসি.........
লিখেছেন লিখেছেন আফরোজা হাসান ২০ এপ্রিল, ২০১৩, ১০:৫৬:২৮ রাত
যে কয়েকটা কাজ খুব আত্মমগ্নতার সাথে করে মহিমা তার মধ্যে একটা হচ্ছে ছবি আঁকা। একমনে ছবি আঁকতে থাকা স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে থাকতে ভীষণ ভালো লাগছে মিহিরের। মানুষ যখন তার খুব পছন্দ বা ভালো লাগার কোন কাজ করে তখন অন্যরকম সিগ্ধতা খেলা করে চেহারাতে, মহিমাকে দেখেই সেটা প্রথম উপলব্ধি করেছে মিহির। রান্নাঘরে গিয়ে নিজের জন্য চা আর স্ত্রীর জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে এলো সে। পাশে কফি রাখলে মহিমা বলল, তুমি কষ্ট করতে গেলে কেন? আমার তো প্রায় শেষ। আচ্ছা কি যেন বলবে বলেছিলে তুমি?
-হুমম...তুমি ইয়াকসামের নাম শুনেছো?
-হ্যা শুনেছি পশ্চিম সিকিমের শান্ত সবুজ হিমালয়ের কোলে এক ছোট্ট শহর ইয়াকসাম।
-আমাকে আগামীকাল একটা কাজে ইয়াকসাম যেতে হবে। তুমিও সাথে চলো। সপ্তাহ খানেক থাকবো আমরা। কাজের ফাঁকে ফাঁকে ঘোরাও হয়ে যাবে। চুপ করে আছো যে? আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি তোমার ভালো লাগবে।
- নিশ্চয়তার পেছনে যুক্তি কি?
-(হেসে) রডোডেনড্রেনের গালিচা, নামহারা ফুল, মেঘেদের হাতছানি, সবুজে ঘেরা আঁকা-বাঁকা পথ ধরে ইয়াকসাম যেতে হয়। রংবেরংয়ের ফুল, পাহাড়ি পাখীদের কনসার্ট, ছোট-বড় ঝর্ণা আর সহজ-সরল পাহাড়ি মানুষদের সঙ্গে নিরিবিলিতে সময় কাটাতে তো কারো খারাপ লাগার কথা নয়।
-হুমম...যুক্তিতে তো দম আছে দেখছি।
-(হেসে) আর গুরুগম্ভীর হিমালয় প্রাকৃতিক প্রাচীরের মতো ঘিরে রেখেছে সুপ্রাচীন এই পার্বত্য শহরকে। প্রায় চারশো বছরের ইতিহাসের সাক্ষী ইয়াকসাম সিকিমের প্রথম রাজধানী। তাছাড়া পর্যটনের অতিরিক্ত বাণিজ্যকরণ পৌছাতে না পারার কারণে হিমালয়ের ভার্জিনিটি পুরোপুরি উপভোগ করা যায় ইয়াকসামে।
-তোমার উচিত ছিল কোন অ্যাড এজেন্সিতে সেলসম্যানের কাজ করা।
-কেন?
-কারণ পারফেক্ট সেলসম্যানের সংজ্ঞাতে বলা হয়েছে, তারা এমনভাবে দোযখের বর্ননা দেবে যে মানুষ দোযখে যাবার জন্য অধীর হয়ে যাবে।
-(হেসে) তোমার মতো ঘরকুনো মেয়েকে বাইরে বের করতে যদি সেলসম্যান হতে হয়, না হয় হলামই। তবে আমি তোমাকে কথার ফাঁদে ফেলতে চাচ্ছি না। ইয়াকসাম সত্যিই অসাধারণ সুন্দর একটা জায়গা। তারউপর তুমি ইতিহাস প্রিয় মানুষ। ইয়াকসামের ইতিহাস কিন্তু চমকপ্রদ।
-যেমন?
-১৬৪১ সালে তিনজন লামা সিকিমের প্রথম রাজাকে রাজসিংহাসনে অভিষিক্ত করেন ইয়াকসামে। ৪০০ বছর আগে প্রথম রাজাকে যে সিংহাসনে অভিষিক্ত করা হয়েছিলো, সেই রাজসিংহাসনের অবশিষ্ট আজও অটুটভাবে রয়ে গিয়েছে। পাথরের তৈরি সেই সিংহাসনের গায়ে তিব্বত ভাষায় অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা খোদাই করা আছে। এছাড়া আরো অনেক ঐতিহাসিক জিনিস আছে। যাবে দেখতে?
-না। আমার কোথাও ঘুরতে যেতে ইচ্ছে করছে না।
-সবসময় যে তুমি ইচ্ছারাণী সরকার হয়ে নিত্যনতুন বিল পাশ করে এই বেচারার উপর জুলুম করো সেটা কি বুঝতে পারো?
-পারি কিন্তু যাবো না যেহেতু বলেছি যাবোই না।
-ঠিকআছে তুমি ঘরের কোণেই বসে থাকো।
-(হেসে)রাগ হচ্ছে খুব আমার উপর? আচ্ছা আমার ইচ্ছে না করলে যাবো কেন?
-একসাথে কিছুটা সময় কাটানোর জন্য কি এই ধরণের ইচ্ছেকে ছাড় দেয়া যায় না?
-তুমি তো এমন ভাবে বলছো যেন আমি কখনোই আমার কোন ইচ্ছেকে ছাড় দেই না। আমার ঘুরতে যেতে ভালো লাগে না তাই যেতে চাচ্ছি না।
-ঠিকআছে তোমাকে যেতে হবে না।
-(হেসে) তোমার কণ্ঠ দিয়ে তো টুপটুপ অভিমান ঝরছে। আচ্ছা তোমার কি মনেহয় যে আমার নিজেকে বদলানো উচিত এই ক্ষেত্রে?
-(হেসে) আমি ঘুরতে পছন্দ করি আর তুমি একেবারেই করো না। এখন পছন্দ আর অপছন্দের উপর তো জোর চলে না তাই না? দুজন মানুষের পছন্দ-অপছন্দ, চিন্তা-ভাবনাতে অমিল থাকবে এটাই তো স্বাভাবিক।
-(হেসে) আমার প্রশ্ন কিন্তু বদলানো নিয়ে ছিল। কার বদলানো উচিত বলে মনে করো আমার না তোমার?
-(হেসে) ইনজেনারেলী বদলানোর ব্যাপারটা কিন্তু পুরুষদের জন্য একটু কঠিন। ব্যাপারটা এমন নয় যে পুরুষরা ইচ্ছে করে গো ধরে বসে থাকে। বরং প্রকৃতিই নর-নারীর মধ্যে, তাদের দায়িত্বের মধ্যে, দায়িত্ব সম্পাদনের উপকরণ ও উপাদানের মধ্যে ভেদাভেদ এবং ব্যবধান করেছে। সৃষ্টির মূলে নর-নারীর মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে দেহ, মন, প্রকৃতি, আকৃতি হিসেবে একটু গভীরভাবে অনুভব করলেই তাদের কর্ম-কর্তব্য এবং করণীয়-দায়িত্ব এসব বুঝে নেয়া যায়।
-ঠিক কি বোঝাতে চাইছো তুমি?
-(হেসে) তুমি অনেক পড়াশোনা করো তাই তুমি জানো যে নারীদের বুদ্ধি যেমন পুরুষদের অপেক্ষা দুর্বল, তেমনি নারীদের অনুভূতিও পুরুষদের তুলনায় যথেষ্ট দুর্বল। নৈতিকশক্তি ও দুর্বলতা হিসেবেও তাদের তারতাম্য অনুরূপ। কোন বিষয় বিচারে এই কারণেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে নর-নারীর মতের মিল হয় না। নর-নারীর এই বৈষম্য-তারতাম্য সাময়িক নয় বরং সৃষ্টিগত, চিরশাশ্বত, চিরন্তন সত্য। নারীর স্পর্শশক্তিও পুরুষের তুলনায় দুর্বল। বিশেষ বিশেষ অবস্থায় নারীকে যে অসহ্য যন্ত্রণা ও জীবন-মরণ সমস্যায় উপনীত হতে হয় এবং তারা তা সহ্য করে থাকে। পুরুষদের মতো তীব্র অনুভূতি থাকলে নারীরা সে কষ্ট কোনমতেই সহ্য করতে পারতো না। মহিমা আল্লাহর প্রতিটা জিনিসই আমাদের জন্য মঙ্গলময়। যদি মেয়েদের অনুভূতি শক্তিকে আল্লাহ দুর্বল করে না দিতেন তাহলে পৃথিবীতে নতুন প্রজন্ম কিভাবে সৃষ্টি হতো বলো।
-তারমানে আমাকে বদলাতে হবে এই তো?
-(হেসে) উহু তোমাকে বদলাতে হবে না। তুমি যেমন আছো তেমনই থাকো। এমন তোমাকেই আমার পছন্দ। আমি শুধু এটাই বোঝাতে চেয়েছি যে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের বদলানোটা একটু সহজ। তবে প্রয়োজনে দুজনকেই বদলাতে হবে যার যার সাধ্য অনুযায়ী। ছাড় দেয়ার ক্ষেত্রেও একই নিয়ম খাটে। অর্থাৎ যখন যার জন্য সহজ হবে তখন সে দেবে। কারণ...
ভালোবাসা সর্বদাই নিস্বার্থ হয়
আত্মত্যাগ বহন কতে তার পরিচয়
পার্থিব জীবন সেতো নয় দ্বন্দ্ব মুক্ত
সংসার মানেই কিছু প্রাপ্তি কিছুটা অভুক্ত।
বিষয়: বিবিধ
২৬৪৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন