একটি লাশের আত্মকাহিনী !
লিখেছেন লিখেছেন মামুন আব্দুল্লাহ ১৮ অক্টোবর, ২০১৭, ০৬:০৯:৩১ সন্ধ্যা
লাশ শব্দটা শুনতে কেমন যেন লাগে, যে মানুষটির কিছুক্ষন আগেও একটি নাম ছিলো, ছিলো একটি সামাজিক পরিচয় অথচ মৃত্যুর পরপরই তার নাম হয়ে গেলো লাশ। তখন আর কেউ তাকে তার নাম ধরে ডাকে না তারও কোনো আফসোস নেই এ নিয়ে। এতো প্রভাব এতো প্রতিপত্তি এতো নাম যশ যার ছিলো,ছিলো না কোন কিছুর অভাব! যে মানুষটি তার ঘরে প্রতি দিন আসতো থাকতো খেতো শুইতোÑ মেয়ে বাবা বলে, ছেলে বাবা বলে ডাকতো। স্ত্রী- স্বামী বলে, মা- পুত্র বলে ডাক দিতেন। প্রতিদিন পরিধান করতেন রং-বেরংয়ের জামা-কাপড়। যার জীবনটা ছিলো এক ধরণের বিলাসিতায় ভরপুর। অফিসে বা কাজে গেলে অধিন¯’ লোকজন তাকে স্যার বলে সম্মোধন করতেন,অফিসের সকলের মধ্যে একটি হুরাহুরি ও কাজের প্রতি একাগ্রতাবোধ চলে আসতো! দেখা হওয়া মাত্রই সালাম দেয়ার প্রতিযোগিতা শুরু করতেন অফিসের লোকজন কার আগে কে সালাম ও কুশল বিনিময় করবেন তা নিয়ে শুরু হতো এক ধরনের প্রতিযোগিতা। কে কিভাবে স্যারের আরো বেশী ঘনিষ্ট হতে পারেন সেই কৌশল নিয়ে আবার একশ্রেনী ব্যস্ত থাকতেন ! অথচ মৃত্যুর পর সেই স্যারকেই আর কোনো মানুষ স্যার বলে বা নাম ধরে ডাকা বন্ধ করে, বলতে থাকেন লাশ!
এটাই দুনিয়ার নিয়ম এটাই পৃথিবীর ধারা। মৃত্যু হলে তখন প্রিয় মানুষটিও আর মানুষ থাকে না সে তখন একটি লাশে পরিনত হয়ে যায়। হোক সে স্বামী স্ত্রী ছেলে কন্যা অথবা মা বাবা । এই নিষ্ঠুর পৃথিবী তখন সবাইকে লাশ বানিয়ে ফেলে । মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যে মানষুটির সাথে সংসার করেছেন এক সাথে জীবন কাটিয়েছেন সেও তখন লাশ বলা শুরু করেন। সে হোক রাজা-রানী,মন্ত্রী কিংবা প্রেসিডেন্ট তখন সকলের নাম একটি হয়ে যায় লাশ । তখন ধনী-গরীব ভিন্ন ভিন্ন নামে ডাকার কোনোই সুযোগ থাকে না। দুনিয়াতে প্রত্যেকেরই আলাদা আলাদা পরিচয়গুলো তখন বিলীন হয়ে যায় লাশ নামের আত্মার কাছে। দুনিয়াতে থাকাকালীন নামের আগে দেয়া টাইটেলগুলোও তখন রাখা যায় না। সকলেই লাশ নামের আত্মার কাছে নিজেদের পরিচয় নাম ডাক যশ সব কিছু এক করে হয়ে যায় একটি নাম। মৃত্যুর পর কেউ বলবে না রাজার গাড়ি আসতেছে সবাই বলবে লাশের গাড়ি! রানীকেও তখন কেউ বলবে না রানীর গাড়ি,রানীর গাড়িও লাশের গাড়িতে পরিনত হবে। এটাই তখন তার পরিচয় হয়ে যাবে। প্রত্যেকের দুনিয়ায় পাওয়া খ্যাতি নাম যশ বংশ পরিচয়গুলো ছেড়ে লাশ নামে পরিচিতি লাভ করবে ।
পৃথিবীর নাম্বার ওয়ান প্রভাবশালী মানুষটির নামটিও হবে লাশ । পৃথিবীর দেয়া নামগুলো তখন শুধু ভাসমান থাকবে সকলের মুখে মুখে । দুনিয়াতে সকলেরই একটি নাম থাকে যে নামে তাকে সকলে চিনে জানে বুঝে মানে। লাশ নামের কাছে দুনিয়ার দেয়া নামগুলো তখন সকলেই ক্ষনিকের জন্যে ভুলে যাবে। সকলেই ডাকতে থাকে লাশটাকে বাহির করো লাশটাকে গোসল দাও লাশের জানাজা পড়তে হবে লাশের কবর করতে হবে লাশের দাফন করা জরুরী । একজন মানুষের মৃত্যুর সাথে সাথেই তার নামটারও কিছু সময়ের জন্যে মৃত্যু হয়ে যায়,আর এভাবেই চিরচেনা প্রিয়জন প্রিয়সাথী প্রিয় মানুষগুলো আমাদের কাছে লাশ হয়ে যায়। তখন শত চেষ্টা করেও কারো মুখ থেকে লাশ ব্যতিত অন্য নাম বের করা কঠিন হয়ে যায়। শুধুমাত্র আমাদের কর্মগুলোই আজীবন বেঁচে থাকবে নাম হয়ে। প্রিন্স,কিং প্রেসিডেন্ট,মন্ত্রী,ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার,ব্যারিষ্টার,
মৃত্যুর পর আমরা লাশের মৃতদেহ নিয়ে অনেকেই গবেষণা করি। সাধারণ ও স্বাভাবিক মৃত্যু হলে কোনো সমস্যা নেই। যদি কেউ আত্মহত্যা করেন বা কাউকে মেরে ফেলা হয় অথবা অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় তাহলে লাশের মৃত্যুর আসল কারন জানার জন্যে কোর্ট থানা-পুলিশ লাশের পরিচয় বা মৃত্যুর কারন সনাক্তকরনের জন্যে লাশের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতঙ্গ নিয়ে পরিক্ষা করেন তখনও সবাই মানুষটিকে লাশ বলেই সম্মোধন করেন। কেউ তার নাম বলে সম্মোধন করেন না। পৃথিবীর এক চিরন্তন সত্য ও কঠিন বাস্তবতা তা হলো মৃত্যুর পর সকলেরই একটি নাম হয়ে যাবে তাহলো লাশ ।
আবদুল্লাহ আল মামুন
লেখক : সাংবাদিক, কবি ও প্রাবন্ধিক
বিষয়: বিবিধ
১১৬৮ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন