অবশেষে হিন্দিই জয়যুক্ত হলো !
লিখেছেন লিখেছেন মামুন আব্দুল্লাহ ০১ জুলাই, ২০১৭, ০৫:০৬:৪৬ বিকাল
ঈদের আগের দিন রাত চুল কাটনোর জন্যে সেলুনে গিয়েছিলাম । রোজা থাকার কারনে একটু ক্লান্ত ছিলাম ! ইফতার ছিলো ৯:২৬ মিনিটে । সেলুনের ভাইটি বললো, ভাই সিরিয়াল নেই । ইফতারের পরে আসেন । জিজ্ঞাসা করলাম কয়টায় বন্ধ হবে সেলুন ! প্রতি উত্তরে বললো সারা রাত আছি ।
ইফতার শেষ করে একটু রেষ্ট নিয়ে আবার আসলাম । চুল কাটাতেই হবে কাল ঈদ । ঈদে চুল না কাটালে ভালো লাগে না ঈদ ঈদ মনে হয় না ! সেলুনে ঢুকে একটু বসতেই পরিচিত অনেকে এসে হাজির । প্রত্যেকের উদ্দেশ্য একটাই চুল কাটাবে ।
সিরিয়াল অনেক পেছনে তাই একটু অপেক্ষা করে আমি এক ফ্রেন্ড ও সিনিয়র ভাই বাহিরে চলে আসলাম । রেস্টুরেন্টে চা ও হালকা নাস্তা করে আবার সেলুনে আসলাম তখন রাত ১২ টা ! এদিকে সেলুনের ভিতরে মোটামুটি অনেক মানুষ একদুই জন ইন্ডিয়ান ও পাকিস্তানী,আর বাকি সবাই বাংলাদেশী ।
একজন বললো রোজা তো শেষ ভাই গান টান ছাড়েন একটু শুনি ! কেউ বলে বাংলা গান দেন কেউ বলে হিন্দি ! এ নিয়ে কিছুক্ষন তর্কাতর্কির পর হিন্দিই জয়যুক্ত হলো ।
শুরু হলো গান ! সেলুনে মেজোরিটি পারেসেন্ট বাংলাদেশী;কিন্তু কেউ বাংলা গান শুনতে রাজি না !
কেউ বলে বাংলা কোনো গান হলো ! না আছে অর্থ না আছে সুর !
কেউ বললো সালমান খানের ঈদ মোবারক গান দিতে আবার কেউ বললো এরাবিক গান !
সবাই খুব মনযোগ সহকারে হিন্দি গান শুনছে বাদ্যের তালে তালে কারো কোনো অবজেক্টশন নেই । যখন একজন ইসলামিক একটি ইংলিশ গান দিলো তখনই শুরু হলো কথা কাটাকাটি !
একজন বললো ভাই ইসলামিক গানে মিউজিক বাজানো কতটুকু ঠিক হয়েছে নানান জনের নানান কথা ।
যাই হোক একজন নজরুলের সেই বিখ্যাত ইসলামিক গানটা ছাড়লো 'ও মোর রজমানেই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ' একুট পর আরেকজন এসে আবার শুরু করলো হিন্দি গান ।
চুল কাটার জন্য আমার সিরিয়াল আসলো । চুল কাটা শেষ । অপেক্ষা বন্ধু ও এক বড় ভাইয়ের জন্য । যথারীতি ৩জনের চুল কাটা শেষ করে রাত ২টার সময় সেলুন থেকে বের হয়ে আসলাম ।
এখন আসি আসল কথায় ! আমরা ইন্ডিয়াকে ঘৃণা করি,ইন্ডিয়াকে খারাপ মনে করি,আমরা বেশীর ভাগ বাংলাদেশী ইন্ডিয়াকে দেখতেই পারি না ! আমরা মনে করি ইন্ডিয়া একটি গালির নাম । ইন্ডিয়ার বিএসএফ গুলি করে বাংলাদেশীদের হত্যা করে,ইন্ডিয়া জোর করে আমাদের উপর অনেক কিছু চাপিয়ে দেয় ! লাশ কাটা তারে ঝুলিয়ে রাখে এটা আমাদের নিয়মিত অভিযোগ !
আমরা উপরে উপরে ইন্ডিয়াকে এতো গালি দেই এতো খারাপ জানি অথচ টিভি সিরিয়ালগুলো পোকার মতো দেখি !
হিন্দি গান ছাড়া আমরা বাংলা গান শুনিনা । বাংলা গান শুনতে ভালো লাগে না ! হিন্দি মুভি কখন রিলিজ হবে তার জন্য অপেক্ষা করি !
হিন্দি সিরিয়াল,হিন্দি গান ও হিন্দি মুভি আমাদের সংস্কৃতিতে নয় আমাদের মনে প্রানে ঢুকে গেছে !
উপর দিয়ে আমরা ইন্ডিয়ানদের গালি দেই,আর ঘরে বসে বাবা -ছেলে,মা-মেয়ে হিন্দি বিনোদনে আসক্ত । এসব নিয়ে কিছু বললেই অনেকেই বলেন,ভালো বাংলা গান তৈরি করুন ভালো বাংলা মুভি তৈরি তরুন ।
মুখে মুখে হিন্দি নায়ক নায়িকাদের নাম গুনগান ! ওমুকের অভিনয় সুন্দর ওমুকে অনেক স্মিল ওমুকে অনেক সুন্দর অভিনয় করে ! ঈদের আগের দিন সেলুনে না গেলে আসলেই বুঝতাম না আমরা বাংলাদেশীরা ভারতীয় গান সিনেমায় এতো মত্ত !
বাংলাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে অনেকেই বলি বাংলা কোনো গান হলো ! বাংলা মুভি এগুলো কি দেখবো,আর ইসলামি গান শুনলে তো অনেকে উপহাস শুরু করে ! অনেকের ইসলামী গানে আবার এলার্জি আছে ।
যেই ইন্ডিয়াকে আমার এতো ঘৃণা করি আবার তাদের সংস্কৃতি নিয়েই এতো মাতামাতি কেন ? ক্রিকেট খেলা হলে ইন্ডিয়াকে চরম বাশ দিতে মরিয়া,আর খেলা দেখে বাড়ি গিয়ে হিন্দি গান মুভি আর সিরিয়ালে ব্যস্ত হয়ে পড়ি ! এই হচ্ছে আমাদের বর্তমান অবস্থা ! কিছু মানুষ বাদ দিলে সবার মধ্যেই বর্তমানে এটা দেখা যায় ! আমরা কাগজে কলমে জানি প্রায় ৮৫ % বাংলাদেশী ভারতকে ঘৃণা করে,অথচ ইউটিউব ও গোগুল সার্চে ভারতীয়দের পর বাংলাদেশীরা হিন্দি মুভি গান সবচেয়ে বেশী দেখে !
অথচ আমরা নাকি আবার ভারতকে ঘৃনা করি ! আমরা মুখে মুখে হয়তো অনেকেই ভারতকে ঘৃণা করি বাংলাদেশের উপর এদের অমানবীয় নিপিড়নের কারনেই;কিন্তু ভিতরে ভিতরে হিন্দি গান,মুভি,সিরিয়াল দেখা বন্ধ করি না !
মাঝে মাঝে আমাদের দেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় দেখি বাংলাদেশের নাকি ৮৫% মানুষ ভারতকে ঘৃনা করে অথচ আমাদের কৃষ্টি কালচার চলন বলনে কথায় সেটা বুঝা যায় না । ঘরে টিভি রিমোট নিয়ে স্বামী-স্ত্রী ঝগড়া কেউ হিন্দি সিরিয়াল দেখবেই আবার কেউ দেশী চ্যানেল !
জড়িপ করলে দেখা যাবে বর্তমানে বেশীর ভাগ তরুন-তরুনী হিন্দি গান হিন্দি মুভি নিয়ে ব্যস্ত থাকে ! আসলেই কি আমরা ভারত বিদ্বেষী? নাকি হিন্দিপ্রেমী !
গান বাজনা রীতিনীতি দেখলে মনে হয় আমরা হিন্দিপ্রেমী আর কথাবার্তায় সোস্যাল মিডিয়ায় আমরা ভারতবিদ্বেষী ! কোনো লাভ নেই এই ভারতবিদ্বেষীর !
যদি না আমরা হিন্দি গান হিন্দি মুভি হিন্দি সিরিয়াল বর্জন করতে না পারি ! আর যদি এগুলো সবাই বিনোদন হিসেবে নেই,তাহলে কি বলার আছে,শুধু শুধু ভারত বিদ্বেষী স্লোগান দিয়ে,আগে তো ভিতর ঠিক করতে হবে,তারপর না হয় .......
_____এম এ মামুন
বিষয়: বিবিধ
১১১৮ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভালো লাগলো
হিন্দী উর্দূর মাসতুতো ভাই । পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকেরা মাথামোটা ছিল , না হলে হিন্দী ভাষা ও কালচার যেভাবে বাংলাদেশীদের কোষে কোষে ঢুকে গেছে সেটা উর্দূর পক্ষে খুবই সম্ভব ছিল। দরকার ছিল ঠান্ডা মাথার কাউকে যারা স্লো পয়জনিং করতে পারতো।
মন্তব্য করতে লগইন করুন