দারিদ্র বিমোচনে মডেল যাকাত ভিলেজ
লিখেছেন লিখেছেন মামুন আব্দুল্লাহ ১২ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৫:১৭:১৮ বিকাল
যাকাত সম্পদকে পরিশুদ্ধ করে, আর দারিদ্র একটি জীবনকে অন্ধকারময় করে দেয়। দারিদ্র মানুষের জীবনকে কষ্টের কষাঘাতে শেষ করে দেয়। দারিদ্র থেকেই মানুষের ভেতরে জন্ম নেয় নানা ক্ষোভ, আর এই ক্ষোভ থেকেই মানুষ জড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে। এই দারিদ্রের কষাঘাতের কারনেই অনেক গরীব পরিবার বিভিন্ন রোগ শোকের কারনে তাদের জীবন অকালেই শেষ হয়ে যায়।প্রথমে তারা হয়, কোনো খেয়া ঘাটের কুলি নতুবা রেল লাইনের বস্তিতে অসহায় জীবন যাপন করে , জীবন জীবিকা ও ভাগ্যের অন্বেষনে এই হতদরিদ্র মানুষগুলোই পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন ক্ষোভের কারনে হয়ে উঠে দূর্ধষ ডাকাত ও ভয়ংকর সন্ত্রাসী । অথবা হয়ে উঠে ভয়ংকর অপরাধ জগতের বাসিন্দা । আমাদের দেশে ভয়ংকর সন্ত্রাসীদের অতীত জীবন থেকেই আমরা তা জানতে পারি। ক্ষমতার পালা দবলে এরা হয়ে উঠে আরো বিপদজনক । এদের শিকড় যেতে থাকে অনেক গভীরে। এরা সমাজে, দেশে বিভিন্ন নামে পরিচিতি লাভ করে । কাউকে ডাকা হয় কানা বিল্লাল, কাউকে বলা হয় পিস্তল মানিক আবার কাউকে বা বলা হয়(ছদ্ম নাম) বোমা হারুন। এদের উৎপত্তি; কিন্তু বেশীর ভাগই এই দারিদ্র নামক অভিশাপ থেকেই। এরা এদের ভাগ্যকে পরির্বতন করার জন্যেই এসব ভয়ংকর পথ বেছে নেয় এবং এদেরকে এক শ্রেনীর লোক তাদের স্বার্থে ব্যবহারও করে।
আমাদের দেশটি কিছু স্বার্থান্বষী লোকের কাছে আজ জিম্মি হয়ে আছে। এরা খুবই উচু স্তরের লোক, এদের রয়েছে হাজার হজার কোটি টাকা, এদের রয়েছে ব্যাংক, শিল্প কারখানা, বিভিন্ন শপিং সেন্টার, শিপিং লাইন,হাউজিং ব্যবসা ও আরো হরেক রকমের করমারী ব্যবসা, আর বর্তমানে তো চলছে আরো নতুন নতুন ব্যবসা । এসব ব্যবসার নামে,এসব নামে বেনামী কোটিপতি ব্যবসায়ীরা গড়ে তুলছে হাজার হাজার, কোটি কোটি টাকার সম্পদ। এতে করে তারা সরকারকে কর ফাকি দিচ্ছে, আর সরকার হারাচ্ছে বছরে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব,বাধাগ্রস্থ হচ্ছে দেশের উন্নয়ন, আর বঞ্চিত হচ্ছে দারিদ্র জনগোষ্ঠী। এই শ্রেনীর হাজার হাজার টাকার কোটিপতিরা সরকারের কর ফাকি দেয়ার পাশাপাশি, গরীবের হক যাকাত, এই যাকাত থেকেও, তারা গরীব লোকদের বঞ্চিত করছে, আর যদিও কিছু কিছু ধনাঢ্য ব্যক্তিরা তাদের যাকাত দেয় তাও আবার নামেমাত্র। লোক দেখানো যাকাত। বছরে কিছু শাড়ি, কিছু লুংগি কিনে দিয়েই তারা তাদের যাকাত আদায় করে দেয়। অথবা কিছু দরিদ্র লোককে ডেকে এনে বাড়ির উঠানের সামনে টেবিল বসিয়ে দশ বিশ একশ পাচঁশ করে দিয়ে প্রচার করে যে সে খুব দানশীল, আর বছরে বিভিন্ন মাসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানায় কিছু দান করে লোক দেখানো জন্যে; কিন্তু এতে করে তাদের যাকাত তো আদায়ই হয় না- বরং তারা আরো গুনাহের বাগিদার হয়। অথচ তাদের উচিত তাদের পুরো সম্পদের হিসাব করে শতকরা যতো যাকাত আসে তা পুরোপুরি ভাগ করে দেয়া, যারা এ যাকাতের পুরো হকদার তাদের কাছে । এভাবে আমাদের দেশের হাজার কোটিপতি আছে, যারা তাদের যাকাতের অর্থ এভাবেই বন্টন করছে। এতে করে একজন দারিদ্র লোকের সাময়িক উপকার হলেও তারা আবার সেই আগের অবস্থায় ফিরে আসে। এমন অনেক লোক আছে তারা তাদের যাকাত দেয় না।
মডেল যাকাত ভিলেজ: মডেল যাকাত ভিলেজ হলো, গ্রাম ভিত্তিক যাকাত প্রকল্প স্থাপন করা। একটি গ্রামকে মডেল হিসেবে উপস্থাপন করে ওই গ্রামে যারা হতদরিদ্র আছে যাদের কোনো জায়গা জমি নাই, তাদেরকে প্রতিবছর যাকাতের একটি অংশ অর্থ দিয়ে শুধু একটি পরিবারকে স্বাবলম্বী করে তোলা । যাতে সে ওই অর্থ দিয়ে ব্যবসা বানিজ্য করতে পারে অথবা তাকে যাকাতের অর্থ দিয়ে ব্যবসা দিয়ে দেয়া এবং তার যাতে পরবর্তিতে, আর কারো কাছে হাত পারতে না হয়। এছাড়া হতদরিদ্র ছাড়াও এমন অনেক লোক আছে যারা লজ্জায় মানুষের কাছে কিছু চাইতে পারে না বা হাত পাততে পারে না তাদেরকে পরবর্তি টার্গেট করা। এভাবে পুরো দেশে ক্রমান্বয়ে আস্তে আস্তে তা বাস্তবায়ন করা । এক সময় দেখা যাবে যে দরিদ্র লোকটিকে যাকাতের একটি অংশ দিয়ে স্বাবলম্বী করে তোলা হয়েছে, সেও অন্যকে সাহায্য করছে।
সরকারের করনীয় : আমাদের দেশে যেকোনো সরকারই ইচ্ছা করলে এই মডেল যাকাত ভিলেজ প্রকল্প শুরু করতে পারে। প্রয়োজন শুধু সকারের ইচ্ছা শক্তি। দেশে কোটিপতি, শিল্পপতি, হাউজিং ব্যবসায়ী, শিপিং ব্যবসায়ী, ভিন্ন করপোরেট ব্যবসায়ী, মাঝারী ব্যবসায়ী, বাড়িওয়ালা যাদের আয় অনেক বেশী এদের তালিকা তৈরী করে এদের কাছ থেকে যাকাত আদায় করা। যেমনি সরকার আদায় করছে এখন কর বা রাজস্ব।
শরীয়ভিত্তিক যাকাত বোর্ড স্থাপন: একটি শরীয়ভিত্তিক যাকাত বোর্ড স্থাপন করা। শরীয় বোর্ড তাদের সম্পদের যাকাত বন্টন করে দেবে। এতে যাতে সরকারের আবার প্রভাবশালী মহলের কোনো প্রভাব না থাকে এবং কোনো রাজনৈতিক নেতা কর্মী যাতে এতে প্রভাবিত না হয়। সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
ধনীদের বজর্নীয়: ধনীদের উচিত তাদের এক রোখা ভাব বর্জন করা। তাদের পয়সার কারনে যারা হতদরিদ্র তারা দিনে দিনে পিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছে। যারা তাদের অধিনস্থ তারা তাদের সাথে অমানবিক আচরন করে, তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করলেই তাদের চাকুরী চলে যায়, তাদেরকে মানসিক ভাবে শাররিকভাবে, কথার মাধ্যমে তারা তাদের ওপর অমানবিক অত্যার চালায়। এতে করে তারা মানসিক, শাররীক বিভিন্ন সমস্যায় ভুগে। এমনকি তাদের সাথে করুনা করা হয়। তাদেরকে তারা তাদের ইচ্ছমতো ব্যবহার করে। তারা তাদের ন্যায মুজুরী থেকে বঞ্চিত করে। তাদের প্রাপ্যকুটুও তাদের দেয়া হয় না। তারা ভাবে যদি তাদের প্রাপ্যটুকু দেয়া হয় এবং তাদের অনেক সম্পদ হয়ে যায়, তাহলে তারা , আর ধনীদের কাছে আসবে না, এবং এদের যে কোটিপতি ভাব সেটা থাকবে না, তাই তারা তাদের যাকাতের ক্ষেত্রে উদাসীনতা, তারা ভাবে যদি তাদের যাকাতের টাকাটা একজনকে দিয়ে দেয়া হয় তাহলে ওই ব্যক্তিটি আর তার কাছে অসবে না। তার তখন টাকা পয়সা হয়ে যাবে তার সম্পদ হয়ে যাবে, একশ্রেনীর হাজারপতি, কোটিপতিরা ইচ্ছা করেই তাদের যাকাতের অর্থ দিতে চায় না। অথচ তাদের ওপর যাকাতকে ফরজ করা হয়েছে, যেমনি ফরজ করা হয়েছিলো তাদের পূর্ব পুরুষদের ওপর। যাকাত প্রদান করলে সম্পদ কমে যায় না; বরং সম্পদ আরো বাড়ে, আমরা মনে করি যাকাত দিলে বুঝি আমাদের সম্পদ কমে যাবে। এই ভ্রান্ত ধারনার কারনেই আমরা অনেকই যাকাত আদায় করি না । অথচ এটা তাদের হক না, এটা গরীবদের হক, আর গরীবরা তাদের প্রাপ্য হক থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
তারা তোমার কাছে জানতে চাইবে তারা কি ( কি খাতে) খরচ করবে, তুমি (তাদের) বলে দাও, যা কিছুই তোমরা তোমাদের পিতামাথার জন্যে, আত্নীয় স্বজনের জন্যে, এতিম অসহায় মেসকীনদের জন্যে এবং মোসাফেরের জন্যে খরচ করবে ( তাই আল্লাহ তায়ালা গ্রহন করবেন) যা ভালো কাজ তোমরা করবে আল্লাহ তায়ালা তা অবশ্যই জানতে পারবেন। বাকারা-২১৫
তারা যখন ব্যয় করে তখন অপব্যয় ( যেমন) করে না, ( তেমনি কোনো প্রকার) কাপর্ণ্যও তারা করে না; বরং তাদের ব্যয় ( সব সময় এ দুয়ের) মধ্যর্বতী( একটি ভারসাম্যমূলক) অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকে। আল ফুরকান-৬৭
( এসব) সাদকা ( যাকাত) হচ্ছে ফকির-মেসকিনদের জন্যে এর( ব্যবস্থাপনার ) ওপর নিয়োজিত কর্মচারীদের জন্যে, যাদের অন্তকরন ( দ্বীনের প্রতি) অনুরাগী( করা প্রয়োজন) তাদের জন্যে, ( এটা কোনো ব্যক্তিকে ) গোলামীর ( বন্ধন) থেকে আযাদ করার মধ্যে, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিদের( ঋণমুক্তির) মধ্যে, আল্লাহ তায়ালার পথে ও মুসাফেরদের জন্যে ( এ সদকার অর্থ ব্যয় করা যাবে), এটা আল্লাহ তায়ালার নির্ধারিত ফরজ, নিসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা ( সব কিছু) জানেন এবং তিনিই হচ্ছেন বিজ্ঞ কুশলী আন আনম-২৪১
( তাদের) প্রত্যেকের কাছেই আমি ( আগের ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিসমূহের) নিদশর্নসমূহ উপস্থাপন করেছি, ( কিন্তু কেউই যখন সর্তকবানী শুনলো না তখন) আমি তাদের সবাইকে চুড়ান্তভাবে নির্মূল করে দিয়েছি। আল ফুরকান-৩৯
তাই আসুন আমরা যারা হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে বসে আছি এবং আরো হাজার হাজার কোটি টাকা তৈরী করার চিন্তা করছি, একবার আমরা ভাবি আমাদের দেশের কথা আমাদের জাতির কথা, এভাবে আর সম্পদ কুক্ষিগত না রেখে আমাদের সম্পদকে পরিশুদ্ধ করি এবং দরিদ্রের ন্যায হক যাকাত প্রদানে এগিয়ে আসি। আমরা যখন লিখতে বসি তখন বলি শ্রমিকের ঘাম শুকিয়ে যাওয়ার আগেই তার মুজুরী বা পাওনা মিটিয়ে দেবো; কিন্তু বাস্তবে তা করি না। আমরা যখন বক্তব্য প্রদান করি তখন উচু গলায় অনেক বুলি আওড়াই। আমাদের বাহিরে এক রূপ আমাদের ভিতরে অন্য রূপ। আমরা ইসলামের কথা বলি আমার দ্বীনের কথা বলি, আমরা দেশের অনেক বড়ো দায়িত্বে নিয়োজিত আছি, আমরা একবার নিজের দিকে তাকাই, আমরা এক সময় কি ছিলাম, আর এখন কি? তাই আবারো বলবো বড়ো বড়ো কথা না বলে , আমরা আমাদের সম্পদকে যাতাক প্রদানের মাধ্যমে পরিশুদ্ধ করি এবং দেশের দারিদ্র বিমোচনে এগিয়ে আসি এবং দেশকে সমৃদ্ধির পথে উন্নয়নের পথে নিয়ে যাই। আমরা যারা সার্মথবান ও সম্পদশালী আমরা ইচ্ছে করলে আমার নিজের এলাকায় নিজের গ্রামে অথবা নিজের আত্নীয় স্বজনের মধ্যে যারা গরীব বা হতদরিদ্র বা যারা অন্যের কাছে কিছু চাইতে লজ্জাবোধ করে এ ধরনের লোকদের বাছাই করে বছরে অনন্ত একটি পরিবাকে ইচ্ছে করলে আমরা স্বাবলম্বী করে তুলতে পারি। এতে করে দেশ হবে সমৃদ্ধিশালী এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠী তাদের দরিদ্রের সেই দুষ্ট চক্র থেকে বাহির হয়ে আসতে পারবে। আমার মতে মডেল যাকাত ভিলেজ প্রকল্প চালু করলে , আমাদের দেশে এটা একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে এতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নাই। তাই আমাদের স্লোগান হওয়া উচিত যৌতক প্রথা বন্ধ করো, যাকাত প্রথা চালু করো, যদি থাকে যাকাত প্রথা দরিদ্র হবে না দেশের ( জনগণ ) মাথা।
বিষয়: বিবিধ
১৭০৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন