বাবার পেনশন পর্ব-০১
লিখেছেন লিখেছেন মামুন আব্দুল্লাহ ১১ আগস্ট, ২০১৩, ০৪:০০:৪৩ রাত
শুভ মা বাবার ৩য় সন্তান । শুভরা ভাই বোনের সংখ্যা অনেক । শুভর বাবা ও চাচারা সবাই শিক্ষিত সবাই সরকারী চাকুরী করে । শুভর বাবা একজন ডাক্তার ।
সরকারী চাকুরীর পাশাপাশি প্রাইভেট প্র্যাকটিস করে ; কিন্তু তারপরও তাদের টানাটানির সংসার । শুভর বড় চাচাও সরকারী চাকুরী করে মেঝ চাচাও এমনকি ছোট চাচাও সরকারী চাকুরী করতো তারপরও ছিলো তাদের সংসারে টানাটানি ! প্রতি বছর শুভর মেঝ চাচা দেশে অর্থ্যাত বাড়িতে জমি কিনতো । শুভর মেঝ চাচার জমি কেনা ছিলো এক ধরনের নেশা ! শুভর বাবা বেতন পাবার সাথে সাথে মেঝ চাচা তার বাবার পুরো বেতনের টাকা ও প্র্যাকটিসের টাকাও নিয়ে আসতো । এভাবে দিনের পর দিন বছরের পর বছর চাকুরী করেও একটি টাকাও সন্চয় করতে পারেনি শুভর বাবা ! এদিকে শুভর চাচা প্রতি মাসে তার বাবার পুরো মাসের বেতন নিয়ে আসার কারনে শুভর বাবাও আর বাড়িতে আসতে পারতো না । এ নিয়ে শুভর মায়ের মনেও অনেক কষ্ট ছিলো । শুভর বাবা শহর থেকে ৩ মাস ৪ মাস পর পর বাড়িতে আসতেন তাও নিজের চাকুরীর টাকা নিয়ে নয় প্র্যাকটিসের কিছু উদৃত্ত টাকা জমা করে করে তা দিয়েই বাড়িতে আসতেন তখন দেশে এতো রাস্তা ও রোড ঘাট না থাকার কারনে বাড়ি থেকে অনেক দূরে নামতে হতো বাকি পথ বাড়িতে পায়ে হেটে আসতে হতো । তখন টেলিফোন আর মোবাইলও ছিলো না চিঠির মাধ্যমে জানাতেন যে তিনি এতো তারিখে আসবেন তখন শুভদের বাড়ি থেকে ২/৩ জন লোক গিয়ে বাকি পথ থেকে শুভর বাবাকে এগিয়ে আনতেন কারন তার সাথে অনেক মাল ছামানা ও বিভিন্ন ধরনের মৌসুমী ফল মুল যেমন কাঠাল আম লিচু আনারস ও আরো দেশীয় রকমারী ফল তিনি নিয়ে আসতেন । কারন অনেক পর বাড়িতে আসেন তারপর শুভর দাদা দাদি আছে । শুভ বাবা যখন বাড়িতে আসতেন ১৫/২০ দিন থাকতেন । শুভর বাবা আসলে শুভ ও তার ভাই বোনদের আনন্দের আর সামী থাকতো না। শুভ ও তার ভাই বোনরা মনে করতো আজ তাদের ঈদের দিন ! বাবা আসছে ফল খেতে পারবে সবচেয়ে বড় কথা বাবা আসছে বাবাকে দেখবে তাদের মনে খুশির বন্যা বয়ে যেতো । যতোদিন তার বাবা বাড়িতে থাকতো ততোদিন শুভদের মন খুব ভালো থাকতো । শুভর দাদা দাদি থাকার কারনে তার বাবা তাদের শহরে নিয়ে যায়নি । কারন শুভর দাদা শহরে যেতে রাজি না থাকার কারনে শুভদের বাবার চাকুরী শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত গ্রামেই থাকতে হয়েছে । শুভরা যখন শহরে গেলেন তখন আর শুভর বাবার চাকুরী নেই । শুভর বাবা লেইট ম্যারেজ করার কারনে শুভর ভাই বোন সবাই ছিলো ছোট ছোট । শুভর বাবা যখন রির্টায়াড হয় তখন শুভর বড় বোন এইচ এসসি তে ও বড় ভাই দশম শ্রেনীতে পড়ে আর শুভ তখন অষ্টম শ্রেনীর ছাত্র ।
শুভর বড় বোন ও তাদের ভালো স্কুলে পড়াশুনার জন্য শুভর বাবা শহরে পাড়ি জমালেন ! তখন শুভর বাবার একমাত্র আয় পেনশন আর যেহেতু তিনি ডা: তাই কিছু প্র্যাকটিসের সামান্য আয় ছাড়া তাদের আর আয় ছিলো না । এদিকে শুভর ভাই বোন সবাই ছোট ছোট ! বাবা রির্টায়াড পারসন বয়স প্রায় ৬০ এর কাছে এদিকে স্ত্রী ও ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের নিয়ে এই বয়সে শহরে চলে আসা ; কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাস যখন শুভর বাবার চাকুরী ছিলো তখন বাড়ি থেকে তার চাচারা আসতে দেয়নি বা বলেনি আর যখন তার বাবার চাকুরী নেই এতোগুলো ছোট ছোট ছেলে মেয়ে নিয়ে শহরে এসে বাসা ভাড়া ছেলে মেয়েদের পড়াশুনার খরচ ও সংসার খরচ চালাতে এক রকম হিমশিম খেতে হচ্ছে শুভ বাবার ।
ধারাবাহিক চলবে.......
বিষয়: বিবিধ
১৮৭০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন