উন্মুক্ত সৌদি শ্রমবাজার, সৌদিআরবের অর্থনৈতিক মন্দা ও কিছু কথা।
লিখেছেন লিখেছেন ফখরুল ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০৫:২৬:৫২ বিকাল
প্রবাসী রেমিটেন্স আয়ের ৪৫ ভাগ আসে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে।বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, উপসাগরীয় অঞ্চল থেকে প্রবাসী শ্রমিকরা যে রেমিট্যান্স পাঠায়; তা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ১৫ ভাগেরও বেশি অবদান রাখে। মধ্যপ্রাশ্চ্যের দেশ গুলোর মধ্যে সব চেয়ে বেশি প্রবাসী বাংলাদেশী অবস্থান করেন সৌদি আরবে, বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গেল অর্থবছরে মোট এক হাজার ৫৩১ কোটি (১৫ দশমিক ৩১ বিলিয়ন) ডলারের প্রবাসী আয় দেশে এসেছে।এর মধ্যে সৌদি আরব থেকে এসেছে ৩৩৪ কোটি ৫২ লাখ ডলার, যা গত অর্থবছরে আসা মোট রেমিটেন্সের ২২ শতাংশ।
এদিকে দীর্ঘ ৭ বছর বন্ধ থাকার পর চলতি বছরের ৭ই ফেব্রুয়ারির থেকে বাংলাদেশের জন্য উন্মুক্ত হল সৌদি আরবের শ্রমবাজার। ২০০৮ সালে বাংলাদেশী শ্রমিক নেওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে দেশটি। দক্ষ শ্রমিকরাই সৌদি আরব যাওয়ার সুযোগ পাবেন।
অবশ্যই ইটা একটি খুশির খবর, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আমাদের জন্য খুলেছে সৌদি আরবে দুয়ার, কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়; একটু বলে রাখি আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ক্রমাগত কমতে থাকায় সৌদি রাজকোষে ব্যাপক ঘাটতি। যে কারণে দেশটি ২০১৬ সালে সরকারি ব্যয় কমানো এবং কর ও ভর্তুকিতে বিক্রি করা জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। এতে তাদের শেয়ারবাজারে ব্যাপক দরপতন ঘটেছে। দেখা দিয়েছে অর্থনৈতিক মন্দা । অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব বিরাজ করছে সর্বত্র। সৌদি আরবে চলতি প্রকল্প গুলোর বেশির ভাগ প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ফার্ম বন্ধ করে দিয়েছে ফার্ম মালিকরা, এতে করে বেকায়দায় পড়েছে বিদেশী শ্রমিকরা, অনেক ফার্ম শ্রমিকদের বেতন ভাতা পরিশোধ করতে পারছেন না। ফলে মানবেতর জীবন যাপন করছেন অধিকাংশ প্রবাসী শ্রমিকরা । এমতাবস্থায় বাংলাদেশের শ্রম বাজার উন্মুক্ত হয়ে আমাদের জন্য কত টুকু উপকার তা নাই বলি তবে এই অবস্থায় আমাদের দেশের সাধারণ জনগণের সরলতার সুযোগ নিয়ে কিছু অসাধু ভিসা ব্যবসায়ী হাতিয়ে নিবেন লক্ষ লক্ষ টাকা।
পুরোনো শ্রমিকরা যেখানে কাজের সংকটে রয়েছেন সেখানে নতুন শ্রমিক এসে কি করবে ? কোথায় যাবে ? জানে না কেউ। আমাদের দেশের সাধারন জনগন মনে করেন যে সৌদি আরবের হাঁসও সোনার ডিম পাড়ে। জানা নেই এরা আসলে কিযাতনায় তাদের দিনাতিপাত করছে। যারা চাকুরীরত অবস্থায় আছেন তারাও থাকেন মহা আতংকে, কারণ তারা প্রতিদিনই শুনছে কারো না কারোর চাকুরী হারাবার খবর।
এদিকে বিবিসির এক খবরে বলা হয়, সৌদি আরবে এক বছর ধরে একবেলা খেয়ে আছে ১৪৪ জন বাংলাদেশি।সৌদি আরবে অর্থনৈতিক মন্দার ফলে হাজার হাজার শ্রমিক ছাটাইয়ের পাশাপাশি দেশটিতে এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অনেক শ্রমিক এখন বেকার রয়েছেন।যার ফলে মানবেতর জীবন যাপন করছে অনেক শ্রমিক।
সৌদি কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা যাতে চাকুরি করতে পারেন বা দেশত্যাগ করতে পারেন সে লক্ষ্যে বিধিনিষেধ শিথিল করা হবে।
এর মধ্যে সৌদি আরবের পূর্বঞ্চলের একটি প্রতিষ্ঠানের শতাধিক শ্রমিক গত ৭ মাস যাবত বেকার রয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন ১৪৪ জন বাংলাদেশি। কিভাবে এখন তারা দিন কাটাচ্ছেন? তাদের একজন মিজানুর রহমান বিবিসি কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আমরা এখানে বাংলাদেশি, পাকিস্তানি, নেপাল, এবং শ্রীলঙ্কার দেশগুলোর মানুষ একসাথে আছি। আমরা একটি কোম্পানিতে চাকুরি করতাম।
তিনি আরও বলেন, এক বছরে আগে শুনেছিলাম, এই কোম্পানির লাইন্সেস বাতিল হয়ে গেছে। তারপরে আস্তে আস্তে আমাদের বেতন বন্ধ হতে শুরু করলো। শেষ ৬ মাস আমরা বেতন পাইনি এবং চলতি ৪ মাস কোনো কাজ নেই, কোনো খাবারও নেই। গত ৪ মাস ধরে কোম্পানিটি খাবারের টাকা দেয়াও বন্ধ করে দিয়েছে।
আপনারা এই অবস্থায় কিভাবে দিন কাটাচ্ছেন? উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এখানে একটা ইসলামিক দাওয়াত সেন্টার আছে, সেখান থেকে আমাদের খাবার দেয়া হতো রমজান মাসে। রমজান মাসের আগে এ রকম আরও একটা কোম্পানি আমাদের সাহায্য করেছিল। তখন তারা আমাদের চাল, ডাল, ইত্যাদি কিনে দিয়েছিল। ঐ খাবার আমার এখনো খাচ্ছি। কিন্তু বর্তমানে আমাদের অবস্থা করুণ।
কারণ ঐ খাবারগুলোও প্রায় শেষ এবং কারও কাছে কোনো টাকাও পাইনি। এমনকি, আমরা সৌদি সরকারে প্রতিনিধিদের সাথে অনেকবার এই বিষয় নিয়ে কথা বলেছি কিন্তু তাতে কোনো সাড়া মেলেনি। এ অবস্থায় আমারা বাইরে কোনো কাজেও যেতে পারছিনা। আমরা আপাতত ১ বেলা খেয়ে আছি। ভারতের কিছু কোম্পানি তাদের দেশের লোকদের সাহায্য করছে। ঐ খাবার আমরা সবাই মিলে খেতে পারছি।
আপনাদের কি দেশে ফিরে আসতে হবে? আর আসলেই বা কিভাবে আসবেন? জবাবে মিজানুর রহমান বলেন, এ অবস্থায় বাংলাদেশ থেকে যদি কোনে মন্ত্রী বা বড় মাপের কোনো মানুষ যদি আমাদের পাশে এসে দাঁড়ায় তাহলে হয়তো একটা কিছু হবে। এমনও হতে পারে যে তাদের কারণে আমরা অন্যকোনো কোম্পানিতে কাজ করার সুযোগও পেতে পারি। যদিও জায়গা পরিবর্তন করতে ১ থেকে দেড় লাখ টাকা লাগে এই টাকাটা কে দিবে সেটাও ভাবার বিষয়। কারণ, আমাদের কারও কাছে কোনো টাকা নেই।
তাই বলবো চাকুরী নিশ্চিত না করে কেউ সৌদি আরবের পথে পা বাড়াবেন না, কারন এখানে আসার পর কেউ আপনাকে দেখার থাকবে না হয়তো, বড় নিষ্ঠুর এই প্রবাস জীবন।
বিষয়: বিবিধ
৯১৫৬ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মানুষ মনে করে-'বিদেশ হল টাকার পাহাড়,এল আর বস্তা ভরে তুলে নিল!'
সচেতনমুলক সুন্দর পোষ্টে আশা করি সেই ভূল ভাংবে অনেকের!
জাযাকাল্লাহ!!!
আল্লাহ্ আমাদের হেফাজত করুন।
ধন্যবাদ প্রিয় কাহাফ ভাইকে।
আমি সৌদিআরব একটি সুপ্রতিষ্টিত কম্পানীতে এ্যাডমিিনিস্টেশন এর জব করি কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো আমাদের কম্পানী আজ ৭ মাস বেতন দেয় না
বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে আমার মতো হাজারও শ্রমিক মানবেতর জীবন যাপন করতেছে
নতুনরা আসবে !! কিন্তু যাদের আত্মীয় আছে তাদের হয়তো কোন সমস্যা হবে না অনাত্মিয়রা !! আল্লাহ মাফ করুক কি করবে জানি না
ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন