মাদিনার বুকে এক টুকরো বাংলদেশ। (ছবি ব্লগ)
লিখেছেন লিখেছেন ফখরুল ০৯ নভেম্বর, ২০১৪, ০৭:৩৯:১৫ সন্ধ্যা
অফিসের কাজে মাদিনায় অবস্থান করতেছি প্রায় ৫ মাস ধরে। অফিসের বেস্ততা ছেড়ে প্রায় প্রতিদিন মসজিদে নববীতে যাওয়া হয় ইশার নামাজের জন্য। নববীর পাশেই মোভেন পিক নামক একটি অভিজাত হোটেলে কর্মরত আসিফ ইকবাল ভাই। মাদিনায় আসার পর তাঁর সাথে পরিচয়। ১ম পরিচয়ে মনে হয়েছে অনেক দিনের জানা শোনা।।
আমার আবার দেশী খাবার ছাড়া কোন কিছুতেই মন ভরে না। আমি আসিফ ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম ভাই এখানে ভাল বাংলাদেশী খাবার কোথায় পাওয়া যাবে? উনি বললেন মাদিনা শহরে অনেক বাংলাদেশী রেস্টুরেন্ট আছে। প্রায় সব গুলই ভাল। তবে দাল্লা নামক একটা জায়গা আছে সেখানে গেলে একদম দেশী পরিবেশে দেশী খাবার খেতে পারবেন। কয়েক দিন পর পরিচয় হল মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া মাসুম বিল্লাহ ভাইয়ের সাথে। উনি এক দিন আমাকে নিয়ে যায় মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে গিয়ে আরও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া বাংলাদেশী ভাইদের সাথে পরিচয় হয়। একদিন মাসুম ভাইকে বললাম ভাই দাল্লা এখান থেকে কত দূর? উনি জবাব দিলেন কেন? বললাম আসিফ ভাই বলেছিল ওখানে নাকি ভাল বাংলাদেশী খাবার পাওয়া যায়? উনি বললেন ঐ যায়গাকে আপনি মিনি বাংলাদেশ বলতে পারেন। শুনে আমার মনে আরও কৌতূহল জাগল। আমি বললাম তাহলে জেতেই হয়। কবে যাবেন বলেন। উনি বললেন ঠিক আছে তাহলে আগামী বৃহস্পতিবার যাওয়া যাবে। আমি বললাম ঠিক আছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরের পরে আমি উনাকে ফোন আবার নিশ্চিত হই। আমি বৃহস্পতিবার অফিস থেকে বের হতে হতে মাগরিবের সময় হয়ে গেল। মাগরিবের নামজ পড়ে মাসুম ভাইকে ফোন দিয়ে বললাম আমি রেডি আছি আপনি আমার বাসার এদিকে চলে আসেন। তিনি তাই করলেন, সাথে উনার রুমমেট জায়েদ ভাইকে নিয়ে আসলেন। উনি এসে আমাকে ফোন দিতেই আমি বাসা থেকে বের হয়ে যাই। একটা ট্যাক্সিতে থামিয়ে তাকে বললাম দাল্লা যাবেন? সে সম্মতি জানাতেই উঠে পড়লাম গাড়িতে।
গাড়ী চলতে শুরু করলো দাল্লার দিকে।
আসলে দাল্লা কোন জায়গার নাম নয়। দাল্লা একটি কোম্পানির নাম। যেখানে প্রায় ৯৫ ভাগ বাংলাদেশী কাজ করেন বলে জানা যায়। শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে আজিজিয়া আখের নামক স্থানে দাল্লা বাংলাবাজার এর অবস্থান। দাল্লা কোম্পানির ক্যাম্প এটি। প্রায় ৬ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশী অবস্থান করেন ঐ ক্যাম্পে জাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা এই বাজার, শুধু বাংলাদেশীদের চাহিদাই নয় বরং মাদিনার পশ্চিম ও দক্ষিন অঞ্চলের প্রবাসী বাংলাদেশী, ইন্ডিয়ান, পাকিস্তানী, শ্রীলংকান, নেপালিদের চাহিদা পূরণ করে যাচ্ছে।
গাড়ী চলছে আর মাসুম ভাই তাঁর সুললিত কণ্ঠে গান গাইছে,আব্দুল আলিমের বিখ্যাত সেই গান।
পরের জাগা পরের জমিন ঘর বানাইয়া আমি রই,
আমিতো সেই ঘরের মালিক নয়।
গান শুনছি আর গাড়ী থেকে বাহিরের দৃশ্য গুল দেখছি। আর প্রভুর শুক্রিয়া আদায় করছি, আর মনে মনে বলছি
“মরু প্রান্তর আর পাহাড় পর্বত ঐ বহমান নদীর ধারা,
বন বনানী সবুজ প্রান্তর সবই তোমার গড়া”
সৌদি আরবের অন্য শহরগুলোর তুলনায় মদিনা শহর টা সবুজে ঘেরা। রাস্তার দু পাশে দাঁড়িয়ে নিম গাছ আর খেজুর গাছের সারি। ততক্ষণে আমাদের গাড়ী দাল্লা ক্যাম্পের সামনে এসে পৌঁছল। গাড়ী থেকে নেমেই আমি সোজা ভিতরে জেতে চাইলে মাসুম ভাই আমাকে বললেন ভাই দাঁড়ান গেইটের ঐ লোকের কাছে আমাদের ইকামা আইডি জমা দিয়ে তারপর জেতে হবে। কি আর করা আইন কে শ্রদ্ধা জানাতেই হবে। মাসুম ভাই গিয়ে গেইটের দারোয়ান কে আইডি দিয়ে আসে তারপর আমার প্রবেশ করি। মেইন গেইট থেকে প্রায় ৩০০ মিটার দূরে অবস্থিত দাল্লা বাজার। পায়ে হেঁটে চলে যাই বাজারে। বাজারে প্রবেশ করতেই দেখলাম তা আমার এই স্বল্প জ্ঞান আর কাঁচা হাতের লেখনিয়ে আপনাদের বুঝাতে পারব না। হয়তো দেখে কিছুতা অনুমান করতে পারবেন। চলে গেলাম খাবারের দোকানের দিকে। নানা ধরনের দেশী খাবারের সুঘ্রান আশা শুরু হল। খাবারের ঘ্রান পেয়ে ক্ষুধার মাত্রা আরও বেড়ে গেল। অবশেষে একটি খাবারের দোকানে গিয়ে বসলাম আমরা তিন জন।
মাসুম ভাই, জায়েদ ভাই কে কি খাবেন সেই বিষয়ে কথোপকথনের সময়।
মদিনার বিখ্যাত তমিজ উদ্দিনের পানের দোকানে এই বাজারে, প্রায় ৩০পদের মসলা আছে ঐ দোকানে। প্রতিদিন কোম্পানির কাজ শেষে বিকেল ৩ টায় দোকান শুরু হয়ে রাত ১২ টা পর্যন্ত চলে দোকান। দূরদূরান্ত থেকে বাংলাদেশ, ইন্ডিয়ান, পাকিস্তানীরা ছুটে আসে পান খাবার জন্য।
মসলা সমূহ,
আজমেরি মিষ্টি
গোলাপ চাটনি
পান পরাগ
বাগদাদ ক্লার্ক
হিরামতি
নারিকেল জর্দা
কাসুন্দি
পোস্টার ক্লার্ক
তাম্বুল বাহার
বাদাম চাটনি
কাজু
১৩০
৩১০
৪২০ ইত্যাদি।
যেমন বাহারি পানের দোকানের মালিক, তেমনি রসিক ও অমায়িক ব্যবহার, তমিজ উদ্দিন ভাই।
মোবাইল দোকান, গ্রামীণ, রবি, বাংলালিংকের সিম কার্ড, ও লোড পাওয়া যায়। Bkash করা হয়।
আছে নানান রকমের বাংলাদেশী সবজি। এ যেন বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি।
জামা কাপড়ের দোকান।
দর্জি দোকান ও আছে কয়েক টা।
এ ছাড়া আছে চায়ের দোকান, সিগারেটের দোকান, সেলুন দোকান, ফটো তুলতে চাইলে টা তারা ফটো না তোলার জন্য অনুরধ করে, কারন জিজ্ঞেস করলে বলে সিকিউরিটি সমস্যা করবে। পরে আমাদের এবং আপনাদের সমস্যা হবে।
ফটো তোলা শেষে চোখে পরে আখের রসের দোকান, দেখে আর দেরি না করে প্রবেশ করি তাজা আখের রসের দোকানে। আমরা তিন জন চেয়ারে বসে আঁখের রস খেলাম। আঁখের রসের দোকানদারকে বললাম আপনার দোকানের একটা ফটো তুলতে পারি ? দোকানদার একই কথা শুনিয়ে অপারগতা প্রকাশ করলেন।
আমরা বের হয়ে আসি বাজার থেকে। গানের সূর ভেসে আসলো কানে। মাসুম ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম, গান বাজে কোথায়? মাসুম ভাই বললেন এখানে প্রতি বৃহস্পতি ও শুক্রবার বার গানের আসর বসে। আমি বললাম চলেন ঐ দিকে যাই, তিনি সাড়া দিলেন চলে গেলাম গানের আসরে। গিয়ে দেখি এলাহি কাণ্ড। শুনতে থাকলাম তাদের গান, আর মনে মনে চিন্তায় মসগুল কিভাবে ফটো তোলা যায়। মাসুম ভাইকে বললাম ফটো তোলা দরকার উনি বললেন, এ ভাবে বললে তুলতে দিবে না। এ কাজ করি আমি গিয়ে বলি আমাদের এখানে এক জন অতিথি শিল্পী আছে উনাকে একটা গানের সুযোগ দিন। গানের সুযোগ দিলে তখন ফটো তুললে আর কেউ কিছু বলবেনা। সেটাই কাজে লাগলো। তারা মাইকে ঘোষণা দিল এখন আপনাদের সামনে গান পরিবেশন করবেন, গায়েন ফখরুল।
অবশেষে নতুন এক অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরে এলাম নিজ গন্তব্যে।
বিঃদ্রঃ কাঁচা হাতের লেখা যা মনে এসেছে তাই লিখেছি।
বিষয়: বিবিধ
৬০৬০ বার পঠিত, ৮৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সাবলিল বর্ণনা আর চমৎকার ছবি সংযোজনে সুন্দর আয়োজন! পানের কথায় জিবে জল এসে গেল,যদিও তেতুলের কথায় আসে শুনেছি!
ভিন্ন আমেজে নিয়ে যাওয়ায় অনেক ধন্যবাদ আপনাকে!!!
অনেক পান খাইতাম,ছোট্ট থেকেই.....
ধন্যবাদ 'পান' নিয়ে আসার সংবাদ জানানোতে! আন্তরিকতায় পুর্ণ এমন খবরেই পাওয়া হে গেছে আমার!!
বাংলাদেশ আর ফর্মালিন দুইটা একে অন্যের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত । একটাকে ছাড়া আরেকটাকে চিন্তাই করা যায় না ।
ছবি লিখা দুইটাই!
কিন্তু আমাদের দেশের মানুষ প্রবাসিদের এই কষ্ট কি একটুও বুঝে!!!
এক সময় প্রবাসীদের দুঃখ অনেকেই বুঝতে পারতনা। তবে এখন সোশ্যাল মিডিয়ার বদলোতে অনেক কিছু অবগত।
প্রবাস থেকে বাংলাদেশের অনুভুতি প্রকাশের জন্য লেখক ও লেখকের বন্ধুদ্বয়কে অভিবাদন জানাই
মদিনাকে নিয়ে আরো লিখুন! আর মদিনার বুকে ছোট বাংলাদেশকে দেখে প্রবাসীরা পাক আন্তরিক শান্তনা!
ধন্যবাদ লেখককে কাঁচা হাতের পাকা লেখনীর জন্য!
উপদেশ দিব যতদিন ওখানে থাকবেন ততদিন গানের আসরে উপস্থিত হবেন এবং তাদের গানের ভুবনে নতুন ধারনা দিয়ে মাতিয়ে রাখবেন। মানিক ভাই যা করছে আমি তা সমর্থন করি এবং প্রবাসে আপনিও তেমন কিছু করুন আমি তা চাই।
আপনার জন্য হৃদয় থেকে ভালোবাসা।
অনেক ধন্যবাদ।
খুব ভালো লাগ্লো...
এই লিঙ্কে দেখুন, ২০১১ সালে রিয়াদ ব্লগারদের উদ্যোগে বিজয়ের ৮০ বৎসর উদযাপন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পরিবেশিত একটি কোরাস দেশের গান।
আপনার জন্য হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা।
এইজে আপনার কমেন্ট হয়েগেছে। আচ্ছা আমার বাড়ীতে আসলেন কি দিব??? আচ্ছা নেন মদিনার বিখ্যাত তমিজ উদ্দিনের পান।
এই নেন একবারে ঘরের বানানো।
মন্তব্য করতে লগইন করুন