মহামান্য রাষ্ট্রপতির গুরু দয়ালের ক্যারিশমা আর সফলতার অল্টারনেটিভ ফ্যাক্ট!
লিখেছেন লিখেছেন রোজবাড ০৫ মার্চ, ২০১৭, ১১:০৫:১৪ সকাল
সফলতা এমন একটা পর্যায় যেখানে একবার পৌছে গেলে অতীতের অনেক ব্যর্থতা দিয়েই আপনি নিজের কৃতিত্ব জাহির করতে পারেন। এই যেমন ঝুট ব্যবসায়ীরা হঠাৎ যখন গার্মেন্টসের মালিক বনে যান আর বড় বড় ডিগ্রীওয়ালা লোকগুলোকে নিজের কোম্পানির মোটা বেতনের কর্মকর্তা হিসেবে পোষ্যভুক্ত করে থাকেন। তখন তাদের মনের গহীনে অতীতের ব্যর্থতা ভাঙ্গিয়ে কৃতিত্বের স্বাদ আস্বাদনের একটা সুপ্ত খায়েশ পুঞ্জিভূত হয়ে থাকে যা সময় পেলেই সদা জাগ্রত হয়ে পড়ে।
ম্যট্রিকে থার্ড ক্লাশ আর ইন্টারে এক বিষয়ে রেফার্ড নিয়ে পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ফর্ম প্রাপ্তির ক্ষেত্রেই যোগ্যতাহীন একসময়ের ব্যক্তিটি আজ বাংলাদেশের তথাকথিত রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সফল প্রোডাক্ট। তাই অতীতের ব্যর্থতার গ্লানি আর অপ্রাপ্তির চাপা কষ্টের পুঞ্জিভূত দীর্ঘশ্বাসগুলো দেশের সবচেয়ে মেধাবীদের সামনে সফলতার গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি হিসাবে পরিবেশিত করতে পেরেছেন। ইউটিউবে উনার ভিডিওটি দেখলাম। দেখার সময় ঐখানের শ্রোতা গ্রাজুয়েটদের দৃশ্য দেখে মনে হলো তাদের উপর দিয়ে লাফিং গ্যসের কালবৈশাখি অতিক্রম করছে! করারই কথা। কারণ বক্তা যখন নিজের বর্তমান সফলতার নির্যাসে মোহিত হয়ে অবলীলায় অতীত নির্লজ্জ ব্যর্থতার কাঠি দিয়ে উপযুক্ত সময়ে আর উপযুক্ত স্পটে অনবরত কাতুকুতু দিতে থাকেন তখন পরিবেশ এমনই হয়। ইংলিশে এটাকেই হয়ত বলে সারক্যজম।
মহামান্য রাষ্ট্রপতির সেন্স অব হিউমারকে পজিটিভলি নেওয়া যেত যদি সেটার উদ্দেশ্য নিছক হাস্যদ্দীপক করতে গিয়ে নেতিবাচক টোনে ঠাসা না থাকতো। এ প্রসঙ্গে অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবসের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির সমাবর্তন বক্তব্যটির বিষয়টা সামনে আনা যেতে পারে। অতীতের ব্যর্থতা, গ্লানির প্রকাশ লজ্জার কিছু না যদি বর্তমান সফলতা অর্জনের পথে সেগুলোর বিরাট অবদান থাকে। অপ্রাপ্তির বেদনাগুলো অসীম প্রেরণা হয়ে যখন সফলতার সর্বোচ্চ শিখরে আরোহনের প্রতিটি বিপদসংকুল পদক্ষেপে শক্তি যোগায় তখন সেগুলো আর নিছক ব্যর্থতা থাকেনা। বাক্তিগত অর্জনের ভিত্তি স্তর হিসেবে গৃহীত হওয়াকে ছাপিয়ে মাইলফলক রূপে ভবিষ্যত প্রজন্মের সফলতার পথে দিকনিদর্শকের উপকরণ হিসেবে পরিগনিত হয়ে যায়। নিজের অতীত টেনে স্টিভ জবস সম্ভবত তার দেশের ভবিষ্যত কর্ণধার মেধাবীদের সেই উপহার্টিই দিয়ে গিয়েছিলেন সেদিন।
কিন্তু খুবই দুঃখজনক আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতি একই ধরনে একটা মহান সুযোগ পেয়েও অর্থহীন বিনোদনের এক আবহ তৈরী করে পরোক্ষভাবে শুধুমাত্র নিজেকে জাহির করার প্রয়াস পেয়েছেন। যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই দেশ ও জাতির নের্তৃত্ব দিয়ে আসছে, জাতির প্রতিটি সন্ধিক্ষণে দিয়েছে পথের দিশা সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র বা ছাত্রী হওয়া নিঃসন্দেহে গর্বের বিষয়। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর কাছে সমাবর্তনের দিনটি হলো এমনই এক পরম ক্ষণ ঠিক যেই দিনে নিজের মাথার ক্যাপটি আকাশানে ছুড়ে দিয়ে এক লাফে শুন্যে দাঁড়িয়ে অনুভব করতে পারে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটা পূর্ণতাকে। ঠিক সেই মুহূর্তে আমাদের রাষ্ট্রপতি আওড়েছেন গর্বিত হওয়ার অল্টারনেটিভ থিওরি।
যে থিওরির সার কথা হলো যার জন্য তোমরা আজ এত গর্বিত সেক্ষেত্রে আমার অবস্থান ছিল এমন এমন। কিন্তু আজ আমি গর্বিত যে আজ শুধু তোমাদের বিশ্ববিদ্যালয় নয় বাংলাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ও অভিভাবক হলাম আমি। গুরুদয়াল কলেজের জালানা দিয়ে যে গাউন দেখামাত্রই বুকের ভেতর থেকে আচমকা একটা অপ্রাপ্তির তপ্ত দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে যেত সশব্দে, সেই আমি ত্যক্ত বিরক্ত তোমাদের বায়ুনিরোধক ঐ সিন্থেটিক বস্তুটির উপর। কালে ভদ্রে একবারের জন্যেও পরার সৌভাগ্য না পেলেও আজ বুক ফুলিয়ে বলতে পারি পরবর্তীতে ঐটা পরিধানের জন্য আমাকে ডেকো-তবে গরমকালে নয় শীতকালে! রাজনৈতিক নেতা আর তাদের বহিরাগত অছাত্র গেস্টদের দাপটে সিট না পেয়ে মাসের মাস দুর্বিসহ কষ্ট করে হলের গণরুম বা বারান্দায় কাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পার হওয়া একজন নিয়মিত মেধাবী শিক্ষার্থীর সামনে তিনি গর্বের সাথে সব হলে ঢোকা ও রাতে থাকার ফিরিস্তি দিতে পেরেছেন। রাত্রিযাপনের তালিকা থেকে রোকেয়া হলকে পরক্ষণেই বাদ দিয়ে সেটাকে আরো মুখরোচক ও প্রাণবন্ত করেও তুলতে ভুলেননি। কাজেই তোমরা অল্টারনেটিভ ফ্যক্টেই ফ্যাসিনেশন খোঁজো যদি আসল মহাত্ব পেতে চাও। তবে ছাত্রাবস্থায় নিজের দুর্বল অবস্থানের জীবন্ত বর্ণনা দিয়ে শুরু করলেও ঠিক কী কী ভাবে এগুলোকে কম্পেন্সেট করে আজকের এই অবস্থানে পৌছতে সক্ষম হয়েছেন সে সম্পর্কে দয়াল গুরুর ক্যারিশমার ইঙ্গিত ছাড়া বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি তার এই অল্টারনেটিভ থিওরিতে।
সফলতার এই অল্টারনেটিভ থিওরির একটা ঝাপটাও বোধহয় পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালিত ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে। পাছে অল্টারনেটিভ থিওরিতে প্রাপ্ত সফলতার মহাত্ব যদি ম্লান হয়ে যায়! বিশ্ববিদ্যালয়ের গর্বিত ছাত্র ডক্টর ইউনুসের নাম হাওয়া করার জন্য তিনবার এডিট করা লেগেছে সমাবর্তন শুভেচ্ছা বার্তা সম্বলিত ঐ পেজের একটা পোস্টের। সমুদ্রের কাছে নদীর জলের ব্যপকতা যেন ম্লান হয়ে না যায় সেই প্রচেষ্টা বৈকি!
বিষয়: বিবিধ
১১৩৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন