স্বাধীনতার অধীনতা মুক্ত পথের পানে একগুচ্ছ ভাবনা
লিখেছেন লিখেছেন রোজবাড ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১০:৪৮:০২ রাত
বছর ঘুরে আমাদের মাঝে আবারও ফিরে এলো বিশেষ দিনটি। হ্যাঁ আমি বিজয়ের কথা বলছি। ১৯৭১ সালের এই দিনেই পৃথিবীর মানচিত্র ফুঁড়ে অঙ্কুরিত হয়ে স্বাধীন স্বত্বা নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল আমাদের প্রিয় এই বাংলাদেশ। বিজয়ের পয়তাল্লিশ বছর পরে এসে সদ্য সেই স্বাধীন দেশটি পত্র পল্লবে বিকশিত হয়ে পৃথিবীর বুকে আজ আপন মহিমায় নিজের জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়েছে। বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতি আজ একটা সুপরিচিত নাম। যে দেশের স্বাধীনতা লাখো শহিদের আত্মত্যাগ আর হাজারো মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত, যে দেশের মানুষের মুখের ভাষার অধিকার দীর্ঘ সংগ্রাম আর জীবন দিয়ে প্রতিষ্ঠিত, সেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের কাছে এক অনুপ্রেরণার নাম। কবি সুকান্তের ভাষায়, “সাবাশ বাংলাদেশ, এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়। জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার, তবু মাথা নোয়াবার নয়।”
আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল অনুপ্রেরণায় ছিল রাজনৈতিক স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক মুক্তি, দারিদ্র্যতা ও শ্রেণিবৈষম্য মুক্ত শিক্ষিত সমাজ গঠনের এক দৃঢ় প্রত্যয়। পাকিস্তানি শাসকদের শোষণ ও নিপীড়ণের যাতাকলে নিস্পেষিত এই জাতি মুক্তির লক্ষ্যে দীর্ঘ নয় মাসের সংগ্রামের মাধ্যমে এক রক্তক্ষয়ী পথ পাড়ি দিয়ে লক্ষ অর্জনের প্রথম বিজয়টি ছিনিয়ে নেয় এই দিনেই। তারপর থেকে আমাদের নিরন্তর পথ চলা স্বাধীনতার অসমাপ্ত কাজগুলি সম্পাদনের নিমিত্তে। এই চলার পথে আমরা আমাদের লক্ষ্যের অভিমুখে কতটুকু অগ্রসর হতে পেরেছি সেটা উপলব্ধিবোধে এনে পর্যালোচনা করার একটা বিশেষ ক্ষণ হতে পারে আজকের এই দিনটি। স্বাধীনতার পরিপূর্ণতা অর্জনের পথে আমাদের সীমাবদ্ধতাগুলো নিরুপন করতে হবে। বিজয়ের আত্মতৃপ্তিতে স্বাধীনতা নিয়ে আমাদের ভাবনা যেনো অহমিকায় পর্যবসিত না হয়। কবি গুরু রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, “শর ভাবে, ছুটে চলি, আমি তো স্বাধীন, ধনুকটা একঠাঁই বদ্ধ চিরদিন। ধনু হেসে বলে, শর, জান না সে কথা- আমারি অধীন জেনো তব স্বাধীনতা।” স্বাধীনতা একটা বিমূর্ত ধারণা। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, বাক প্রকাশের স্বাধীনতা, আর দূর্নীতি ও শোষণমুক্ত সমাজ গঠন বিহীন আমাদের স্বাধীনতা কবির কল্পনার শরের মতোই বাঁধা। তাই স্বাধীনতাত্তোর প্রজন্মের একজন বাসিন্দা হিসাবে আমাদের ভুলে গেলে চলবেনা স্বাধীনতার পরিপূর্ণ সুফল প্রাপ্তির পথের অন্তরায় সমূহকে।
কালের পরম্পরায় সৌভাগ্যক্রমে আমরা এমন এক প্রজন্মের ধারক যারা একটা শতাব্দির পরিবর্তন দেখেছি। প্রত্যক্ষ করেছি সহস্রাব্দেরও বিরল পরিবর্তন। আমদের চোখের সামনেই বিশ্বব্যাপী ঘটে গেছে বিজ্ঞানের বৈল্পবিক সব রূপান্তর। বিশেষ করে গণযোগাযোগের বিষ্ময়কর উন্নয়ন পৃথিবী, দেশ, আর তাদের সীমানারেখা নিয়ে আমাদের গতানুগতিক ধারণাকে আমূলে পাল্ট দিয়েছে। পৃথিবীর দেশ সমূহ আজ পরিনত হয়েছে বৈশ্বিক গ্রামে, সৃষ্টি হয়েছে মুক্ত বাজার অর্থনীতির ধারণা। যা একদিকে যেমন উন্নতি আর সমৃদ্ধির অপার সম্ভবনার দ্বার খুলে দিয়েছে প্রত্যেকটা দেশের জন্য, ঠিক তেমনি বয়ে এনেছে মারাত্বক প্রতিযোগিতা। মিলেনিয়াল প্রজন্মের কান্ডারী হিসাবে সভ্যতার এসব পরিবর্তনের সাথে নিজেদেরকে সুন্দরভাবে খাপ খাওয়াইয়ে এর সুফলগুলো ঘরে তুলতে হবে। প্রতিযোগিতায় টিকে থেকে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। বিশ্বের দরবারে এদেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির মডেলরূপে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে। আর এটাই হবে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের বর্তমান রূপ। আমাদের মনে রাখতে হবে ‘স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন’ এই পরম সত্যটি। এই হোক আজকের বিজয় দিবসে আমাদের ভাবনা।
বিষয়: বিবিধ
১১৪২ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
স্বাধীন দেশ কি স্বাধীনতা পেলাম তোমার কাছ থেকে।
রাতে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলে নিয়ে বানানো হয় জঙ্গি।
এই স্বাধীন দেশ আমরা চেয়েছিলাম।
হাজার হাজার নিরিহ ছেলেদের দুই পা গুলি করে নষ্ট করে দিয়েছে এই স্বাধীন দেশের হায়েনারা।
এই স্বাধীন দেশ বন্ধি আজ এক হায়েনার দলের কাছে।
কবে দেশ আবার মুক্ত হবে হায়েনাদের করাল গ্রাস থেকে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন