মাহফুজ আনামের মামলা বন্যা নিয়ে কিছু আত্মপলোব্ধিবোধ
লিখেছেন লিখেছেন রোজবাড ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০২:১০:০৯ রাত
একটা ভুল স্বীকারকে কেন্দ্র করে দেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী ইংরেজি প্রত্রিকার সম্পাদক মাহফুজ আনামের যে দৈন্য দশা এটা দেখে আমাদের ভয়ে শিওরে উঠার কথা। মামলার বানে ভেসে যাওয়া মাহফুজ আনামের আকুতি আমাদের মানবিক হৃদয়ে স্পর্শ করে যাওয়ার কথা। মামলার সাগরে ডুবন্ত এই সম্পাদককে উদ্ধার করার ক্ষমতা আমাদের এই আমজনতার না থাকলেও তার প্রতি সহানুভুতিশীল হওয়া। তার পাশে দাঁড়ানো। মানুষ হিসাবে একজন মানুষের এই বিপদে অন্যরা পাশে এসে দাঁড়াবে এটাই মানবিকতার কাম্য। মনুষ্যত্ববোধেরও দাবি।
কিন্তু হায়! আমার মনুষত্ববোধ সাড়া দিচ্ছে না! পাঠকরা হয়তো ভাবছেন আমার মনুষ্যত্ববোধ হয়তো লোপ পেয়ে গেছে। আমি বুঝি বড্ড বেশী অমানবিক হয়ে গেছি। মানুষের কষ্টে আমি ব্যথিত হতে পারার মতো মানবিকতাবোধ টুকু হারিয়ে ফেলেছি। কিন্তু না। আমার মানবিক মূল্যবোধের রক্ত ক্ষরণ হতে হতে সেটি আজ অসাড় ও নিস্তেজ হয়ে গেছে। আগের মতো আর সাড়া দেয়না। কারো হয়রানিতে আর ব্যথিত হইনা। দুঃখ পাইনা।
না অসাড় মূল্যবোধ নিয়ে আমি এই পর্যায়েও নেই। আমার অবস্থার আরো অধঃপতন হহেছে। মানবিক মূল্যবোধের উপরে কিছু একটার আস্তরণ পড়েছে। অনেকটা মরচে ধরা লোহার জিনিসের মতো। সেই আস্তরণ আমাকে কিছুটা স্যাডিস্টিক করে তুলেছে ইদানিং। আমি কারো কারো ব্যাথায় ব্যথিত হওয়া তো দুরের কথা বরং উল্টো এক ধরণের পুলক অনুভব করছি! আমি জানি এটা আমার নৈতিকতার চরম অবক্ষয়। কিন্তু আমি তার চেয়েও ভয়ঙ্কর রকমের মূল্যবোধহীন অবস্থায় আছি। কারণ আমি এই অমানবিক পুলকের জন্য অনুশোচনা বোধ টুকুও করছিনা!
তবে আমার এই অধপতনের জন্য আমার মধ্যে এক ধরণের ঘৃণা বাসা বেঁধেছে। হৃদয়ের আকাশে ক্রমশ পুঞ্জিভুত হয়ে কালবৈশাখির মেঘরূপ ধারণ করেছে। অধিকতর শক্তি সঞ্চিত করে সেই ঘৃণা আর আমার মধ্যে স্থির থাকতে চাচ্ছেনা। বেরিয়ে যেতে চাচ্ছে সবেগে সকল বিনাশী শক্তি নিয়ে। সকল মানুষের মনুষ্যবোধকে অসাড় ও নিস্তেজ করে সেটার উপর একটা করে স্যাডিস্টিক প্রলেপ দিয়ে সে প্রশমিত হতে চাই। দেখতে চাই এদেশের সবাই যেন আমার মতোই পাশবিক হয়ে উঠুক। কারো বিরুদ্ধে রাজনৈতিক হয়রানি দেখে উতফুল্ল হোক। পুলকিত হোক। প্রকাশ্যে অথবা মনে মনে। শাহবাগের প্রজন্ম চত্মরে, প্রিন্ট মিডায়ায়, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় অথবা জেলের শাস্রুদ্ধকর কুঠুরিতে। গ্রুপে গ্রুপে। চেতনার জয়গান গেয়ে অথবা চেতনার চিপা ফিল্টারে আটকা পড়ে। যেভাবেই হোক। হর্ষ চাই! বিষাদে হরিষ চাই! সকলের মানবিক মূল্যবোধের ঠায় দেখতে চাই অ্যাবিসমালে! অন্যায় আর অত্যাচারের মাত্রা বিকশিত হোক সর্বত্র! পাশবিক আনন্দ পরম্পরায় বয়ে যাক জনে জনে!
না না না। আমি এই ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যেতে চাইনা। আমি এক সত্য সন্ধানী মানুষ। আমি পাশবিক নই। আমার দুর্বলতা থাকতে পারে কিন্তু আমি কপট নই। আমি ভুল করতে পারি কিন্তু স্বজ্ঞাতে স্বেচ্ছায় বা কারো কৃপা লাভের প্রত্যাশায় একই ভুলের পূনরাবৃত্তি করিনা। কোন ভুলের মধ্যে ডুবে থেকে ওই ভুলের জন্য ক্ষমা চাওয়ার ভন্ডামি আমি দেখাই না। আমি স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি কিন্তু চেতনা নিয়ে ব্যবসা করিনা। আমি ধার্মিক কিন্তু ধর্মব্যবসায়ী বা মৌলবাদি সন্ত্রাসী নই। রাজনৈতিক স্বার্থে কাউকে এসব ফিল্টারে টেস্ট করতেও যাইনা। আমি ধর্মকে পিটিয়ে ধর্মানুরাগীদের উস্কে দিয়ে তাদের প্রতিক্রিয়াশীলতার নাটক মঞ্চস্থ করিনা। আবার সমাজের নিজস্ব সুস্থ সংস্কৃতির মেরুদন্ড খতম করে বিজাতিয় সংস্কৃতির অশ্লীলতা চর্চার প্রচলনে প্রবৃত্ত তথাকথিত প্রগতিশীলও নই। সুশীলের মোড়কে কপটতা আর প্রগতিশীলের মোড়কে অশ্লীলতা কোনটিই আমার কাছে কাম্য নই। আমি সত্যের পক্ষে। আমি সহিষ্ণুতার পক্ষে। আমি বিভেদের বিপক্ষে। সত্যের পথে নির্ভীক যাত্রীর নির্যাতনের বিপক্ষে।
বিষয়: বিবিধ
১৩৫৬ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মাহমুদকে যে রকম হাঁপানীর মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে মাহফুজকে মনে হয় সেরকম কিছু করতে হবে না ।
মতি-মাহফুজ গংয়েরা বেশ চালাক
মন্তব্য করতে লগইন করুন