আত্মহন্তার এই ভয়ঙ্কর যুদ্ধক্ষেত্র রূপে দেখতে চাইনা আমার সোনার বাংলাকে।
লিখেছেন লিখেছেন রোজবাড ০২ মার্চ, ২০১৩, ০৯:৫৩:০৪ সকাল
কয়েকদিন ধরেই মনটা বড্ড বিমর্ষ ও বিষন্ন হয়ে আছে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিই বোধ হয় এর পেছনের একমাত্র কারণ। দেশের মধ্যে বিয়াল্লিশ বছর আগে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সঙ্ঘটিত মানবত বিরোধী অপরাধের ইস্যু নিয়ে জাতির মধ্যে বিভক্তির যে গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে সেটা দেশের জন্য কোন শুভ ইঙ্গিত বহন করেনা।
একদিকে আমাদের পুলিশ বাহিনী সরকারী মদদে নিজেদের জনগনের উপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে নির্মম এক হত্যাযজ্ঞে লিপ্ত হয়ে পড়েছে এবং সমাজের একটি বড়ো অংশ সেটাকে শুধু সমর্থনই নয় বরং লাশের মিছিল দেখে উল্লাশ প্রকাশ করছে। অপর দিকে জাতির আরেক উল্লেখযোগ্য অংশের মধ্যে কেউ ভাই হারিয়ে কেউ বাবা হারিয়ে আবার কেউ বা স্বামী হারিয়ে চোখের পানিতে আকাশ বাতাশ ভারী করে ফেলছে।
কোন যুদ্ধক্ষেত্রে কেউ দেশের জন্যে শত্রু সৈন্যের হাতে নিহত হলে সেখানে স্বজনদের কাছে থাকে সান্ত্বনার অজস্র উপাদান। এভাবে আত্মত্যাগ অনেক গর্বেরও। কিন্তু আজ আমাকে দেখতে হচ্ছে যুদ্ধক্ষেত্রে লড়াকু সৈন্য, তাদের উপর ঝাপিয়ে পড়া শত্রু সৈন্যদল, রাস্তায় পড়ে থাকা লাশ দেখে উল্লাসিত জনতা, আর স্বজন হারানোর শোকার্ত মানুষের মিছিলের প্রতিনিধিত্ব করছি সব আমরায়। আমাদেরই বাবা, ভাই, সন্তান দিয়ে দেশটাকে আজ পরিণত করে ফেলেছি আত্মহন্তার এক ভয়ঙ্কর যুদ্ধক্ষেত্র!
আর এই যুদ্ধক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে হয়তো আমাদের পরিবারের মতোই কোন এক পরিবারের বড়ো ছেলেটি আইনের পোষাক পরে গুলি ছুঁড়ছি রাস্তায় বিক্ষোভরত ছোট ভাইটিকে খুন করার জন্য। হয়তো একই পরিবারের একটি সন্তান মুক্তিযুদ্ধের তথাকথিত চেতনার চশমা দিয়ে তারই অপর ভাইকে দেখছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিবর্জিত রূপে। যদিও কারো মধ্যে নেই দেশ প্রেমের এতটুকু ঘাটতি।
কিন্তু মনটা আজ খুবই বিষন্ন কারণ আমাকে শুধু কাপুরুষের মতো বসে বসে এটাকে দেখে যেতে হচ্ছে। দেশের এই আত্মঘাতি অবস্থা থেকে উত্তোরণে ভূমিকা রাখতে আমার অক্ষমতা আমাকে তিলে তিলে পিষে মারছে।
পুলিশের নির্বিচারে গুলি, রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ লাশ, তা দেখে উল্লাসিত কিছু মানুষের মুখ, আর স্বজন হারানোর বেদনায় শোকার্তদের অশ্রু বন্যা- স্বাধীনতা প্রাপ্তির এতদিন পর আজ এগুলোই কি আমাদের অর্জন? নতুন প্রজন্মের জন্য আত্মঘাতি এক ভয়ঙ্কর যুদ্ধক্ষেত্র তৈরীতেই কি আমরা দেশ স্বাধীন করেছিলাম?
বিষয়: বিবিধ
১২১৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন