মসজিদে হাতে নাতে স্যান্ডেল চোর ধরার একটা বাস্তব অভিজ্ঞতা ও এ নিয়ে আমার উপলব্ধিবোধ
লিখেছেন লিখেছেন রোজবাড ২১ জুলাই, ২০১৩, ১০:০৩:১৬ রাত
মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়ে জুতা স্যান্ডেল খুয়ানোর অভিজ্ঞতা কম বেশী অনেকেরই আছে। নামাজ শেষে যখন দেখি নিজের প্রিয় স্যান্ডেল বা জুতা জোড়াটা আর নেই তখন যে কী খারাপ লাগে তা ভুক্তভোগীমাত্রই অজানা নয়। জীবনে বেশ কয়েকবার এমন অভিজ্ঞতার তিক্ত স্বাদ আস্বাদন করতে হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতাটা একেবারেই অন্যরকম।
মসজিদে ঢুকে দেখি সবে মাত্র যুহরের জামায়াত শেষ হয়ে গেল। আমি যথারীতি স্যান্ডেল জোড়াটা সামনের বক্সে রেখে নামাজ শুরু করলাম। ফরজ নামাজের একেবারে শেষদিকে জাস্ট সালাম ফিরানোর পূর্বে হঠাৎ মনে হলো কে যেনো বক্স থেকে স্যান্ডেল জোড়াটা উঠিয়ে নিয়ে গেলো। বক্সে চোখ রাখতেই দেখি সত্যিই সেটা হাওয়া! নামাজ ভেংগে পিছনে ছুটেই যে ব্যক্তিকে বেরিয়ে যেতে দেখলাম তাকেই তৎক্ষনাথ পেছন থেকে শার্টের কলার চেপে জোরে একটা হেঁচকা টান দিলাম। পাছে কোন ভদ্র ব্যক্তির উপর আক্রমন চালিয়ে ফেললাম কীনা এ চিন্তা মাথায় আসতেই একটা ইলেক্ট্রিক শক খেলাম। পরে টানের চোটে লোকটি আমার সম্মুখে ঘুরতেই দেখি না অনুমান ঠিক আছে। তার হাতে আমার স্যান্ডেল জোড়া। মহুর্তেই একটা থাপ্পড় দিতেই লোকটা খুবই সরল ভঙ্গিতে নিজের ভুল স্বীকার করে দুই হাত করোজোড়ে ক্ষমা ভিক্ষা করলো। পরে তাকে মসজিদের ভিতর থেকে বাইরে বের করে এনে মারতে উদ্যত হলাম। কিন্তু তার কাকুতি মিনতি দেখে একটু দয়া হলো। ছেড়ে দিতেই দেখি আরেক মুসল্লি এসে হাজির। একইভাবে কলার চেপে ধরেই জিগায় আমার জুতা দুইটা কোই?
মুসল্লিটা লোকটাকে ছিনিয়ে নিজের হাতে নিতেই আমি আবার মসজিদে ফিরে এলাম। বাকি নামাজ আদায় করে বের হয়ে দেখে তো আমি হতভম্ভ। যা দেখলাম তাতে অশ্রু ঠেকিয়ে রাখতে পারলাম না। পাবলিক লোকটাকে গাছের সাথে বেঁধে এমন মার দিছে যে তার মুখ ও নাক দিয়ে যেনো রক্তের স্রোত বইছে। জামা রক্তে ভিজে চুপচুপ। তার জীবন ভিক্ষা কারও যেন হৃদয়ে একটুও মায়ার উদ্রেক করছেনা। সামনে যেতেই আমাকে লক্ষ করে অপকটে বলতেছে এই যে এই ভাইয়ের স্যান্ডেল চুরি করেছিলাম। আমারে শেষবারের মতো মাফ করে দিন। দৃশ্যটা দেখে আমি আর এতটুকুও দাঁড়াতে পারিনি। যাওয়ার আগে সবাইকে অনুরোধ করলাম অনেক হয়েছে ওকে আপনারা এবার ছেড়ে দিন।
বাসায় ফেরার পূর্বে যে চিন্তাটা আমাকে প্রবলভাবে আন্দোলিত করেছিল সেটা হলো সামান্য একজোড়া স্যান্ডেল চুরির অপরাধে ধরা খেয়ে লোকটাকে কীভাবে না গণধোলাই খেতে হলো। অথচ আমাদের দেশের কিছু কিছু মন্ত্রী, এমপি আর আমলা বস্তা বস্তা টাকা চুরি করেও দিব্যি দিনপার করে যাচ্ছেন। কারো কারো ভাগ্যে পাবলিকের গণধিক্কার জুটলেও আবার কেউবা দফতরহীন বা সাময়িক বরখাস্ত থেকেও বেশ স্বাচ্ছন্দেই অফিস চালিয়ে যাচ্ছেন। ডেসটিনি, হলমার্ক, পদ্মাসেতু এবং শেয়ার বাজারের ক্ষেত্রে হাজার হাজার কোটি টাকা চুরির অভিযোগ উঠলেও এর একটার ও কোন সুরাহা বা সাজা হয়নি। বরং সবাই আছে সম্মানে। আর বেচারা অভাবের তাড়নাই স্যান্ডেল চুরি করতে গিয়ে গণধুলাই খেয়ে প্রাণ বাঁচানোরই দায়!
(বিঃদ্রঃ জানিনা ঐ সময় আমার নামাজ ভেংগে দেওয়া ঠিক হয়েছিল কিনা। তবে আলেমরাই ভালো বলতে পারবেন। সত্যি বলতে কী প্রবল সন্দেহ আর অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতাই আমাকে বাধ্য করেছিল।)
বিষয়: বিবিধ
১৭৭৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন