বিবেকের পচন যে সমাজে আজ মহামারী সেখানে ৭১ এর কথিত খুনী, ধর্ষকরা ফেরেশতা বনে গেলো রাতারাতি! সুস্থ বিবেকের কাছে প্রশ্ন এটাও কি সম্ভব!
লিখেছেন লিখেছেন রোজবাড ১৮ জুলাই, ২০১৩, ০৭:০৯:৪৮ সকাল
জামায়াতের যে সব নেতাদের আজ ধরে ধরে ফাঁসী কিংবা জেল দেওয়া হচ্ছে অথচ স্বাধীনতা উত্তর বিয়াল্লিশ বছরেও এই মানুষ গুলোর বিরুদ্ধে খুন ধর্ষণ, লুন্ঠন জাতীয় একটা অপরাধও সংঘটিত করার অভিযোগ আসেনি বরং এই দীর্ঘ সময়ে এই মানুষগুলোর চারিত্রিক মাধুর্যে মুগ্ধ হয়ে অসংখ্য মানুষ জামায়াত শিবিরের ছায়াতলে এসেছে। যার ফলশ্রুতিতে মুক্তিযুদ্ধের সময়ের পাকিস্তান বিভক্তির বিরোধিতাকারী শিশু জামায়াত এখন সারা দেশ ব্যপী বিস্তৃত হয়ে বিশাল বটবৃক্ষে পরিণত হয়েছে। তাই প্রত্যেকের বিবেকের কাছে প্রশ্ন আজ যারা এদের বিরুদ্ধে আনিত কাল্পনিক অভিযোগে বিশ্বাস করে নিজেকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামের লড়াকু সৈনিক ভাবছেন তারা কী একটুও ভেবে দেখছেন না আপনাদের জীবদ্দশায় এদের চরিত্র ও জীবনাচরন আর যারা এদের নির্মুলের জন্য পাগলপ্রায় তাদের জীবনাচারনের মধ্যকার স্পষ্ট পার্থক্যগুলো।
এই মানুষগুলোর নেতৃত্বের এমন শিখরে পৌছেনোটা কিন্তু তাদের মতো না যারা কীনা বাবা, স্বামী কিংবা বন্দুকের বদৌলতে জনগনের নেতা বনে গেছেন। এরা প্রত্যেকেই নিজের মেধা, শ্রম, প্রজ্ঞা, চারিত্রিক মাধুর্য এবং মানুষকে সেবা দেওয়ার অনিয়ন্ত্রিত বাসনা দ্বারা তাড়িত হয়ে মানুষের হৃদয় জয় করেই তাদের নিজ নিজ আসন তৈরী করেছে্ন। আজ এদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালীন সংঘটিত মানবতা বিরোধী অপরাধের যে দায় চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে তার সাথে এদের স্বাধীনতা পরবর্তী ৪২ বছরের চরিত্র কখনোই মেলেনা। দেশ স্বাধীনের এই ৪২ বছরে মানুষকে বদলে দেওয়ার এমন যাদুকরী কোন পরিবেশ এদেশে সৃষ্টি হয়নি যার কারণে এই সব কথিত নরপিশাচ আজ ক্লিন ইমেজের গণমানুষের নেতা হয়ে গেল।
তবে হ্যাঁ। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে মানুষের চরিত্রকে বদলে দেওয়ার মতো অনেক কিছুই ঘটেছে। রাজনীতিতে দুর্বিত্যায়ন বেড়েছে মহামারীর আকারে। ছাত্র রাজনীতিতে মেধার জায়গাকে প্রতিস্থাপন করে নিয়েছে পিস্তল, চাপাতি আর টেন্ডার বাজির নিত্যনৈমিত্তিক প্র্যাক্টিস। দূর্নীতি এখন মহামারীর মতো। প্রতিদিনে পেপার পত্রিকায় ছাপা হওয়া বিশ ত্রিশটা লাশের সংবাদ এখন আর কারও দৃষ্টি আকর্ষন করেনা। নীতি নৈতিকতা বলা যায় শিকেই উঠে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙ্গিনার চিপাচাপায় আর পার্কে আজ অবাধ প্রেমের নামে নারী পুরুষের যে মেশা-মেশি, আর ঘেষা-ঘেষি তাতে বলা যায় ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধ বিলুপ্ত হয়ে যাদুঘরে আশ্রিত হওয়ার অপেক্ষায়। সরকারী প্রভাবশালীদের ছত্র ছায়ায় রাষ্ট্রীয় সম্পদের অবৈধ দখল; নিয়োগ বানিজ্য; মন্ত্রী-এমপি, পুলিশ, বিচারপতি, শুল্ক-কর কর্মকর্তা সহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তেদের মধ্যে ঘুষ বানিজ্য আজ ওপেন সিক্রেট।
এসব শত শত অন্যায় অবিচারের চিপাই পড়ে জনগনের অবস্থা যেখানে ত্রাহি ত্রাহি সেখানে আজ মানবতা বিরোধী অপরাধের দায় একটা বিশেষ দলের মেধাবী নেতৃবৃন্দের কাঁধে চাপিয়ে তাদের চরিত্রকে কলঙ্কিত করার নেশায় আমাদের অনেকেই বুদ হয়ে আছি। নতুন প্রজন্মের একজন হিসাবে নিজের বিবেকের কাছে যে প্রশ্ন করে কোন উত্তর পাইনা তা হলো যদি এই মানুষগুলো সত্যিই ৭১ সালে ঐসব অপরাধ করে থাকতো তাহলে বর্তমান সমাজে মানুষের বিবেকের পচনের এই প্লাবনে তাদের তো আরও ভয়ঙ্কর পৈশাচিক হয়ে উঠার কথা ছিল। অপরাধীর নেচার তো তাই বলে। একটা বিকৃত, ঘুনে ধরা সমাজ ব্যবস্থায় এই কথিত দুশ্চরিত্র মানুষগুলো তাহলে কীভাবে রাতারাতি প্রচলিত স্রোতের উলটো পথে হেটে সমাজের মুক্তিকামী মানুষের মন জয় করে ফেললো। এটা কীভাবে সম্ভব যে এদের একেক জনের সাজার প্রতিবাদে শত শত মানুষ নিজের বুক পেতে দিচ্ছে পুলিশের ঘাতক বুলেটের বিরুদ্ধে! নিজের প্রিয় জীবন বিলিয়ে দিচ্ছে অকাতরে!
অপরদিকে যারা এদের নির্মুলের রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বরং তারাই আজ দুর্নীতির আকুন্ঠ গহবরে নিমজ্জিত হয়ে জনগন কতৃক প্রত্যখ্যাত হতে শুরু করেছে। শত শত মানুষের রক্তে আজ তাদের হাত রঞ্জিত। বিডিয়ার বিদ্রোহে পঞ্চাশাধিক দেশপ্রেমিক আর্মি অফিসারকে নির্মম হত্যা করা হলো যাদের ক্ষমতাকালীন সময়ে। ২৮শে অক্টোবরে প্রকাশ্য রাজপথে পিটিয়ে মানুষ হত্যার অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে। রেলের কালো বিড়াল, পদ্মা সেতু, হলমার্ক, শেয়ার বাজার, ডেস্টিনি প্রভৃতি থেকে হাজার হাজার কোটি জনগনের টাকা তোছরুপে যাদের হাত আজ কালো আলকাতরা। মতিঝিলে রাতের আঁধারে বাতি নিভিয়ে লক্ষাধিক মানুষের উপর পৈশাচিক অভিযান চালিয়ে গণহত্যার অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস তারাই আজ সাধারন, সহজ সরল মানুষের আবেগ নিয়ে খেলছে। ৭১ সালের প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদেরকে ছেড়ে দিয়ে শুধুমাত্র একটি বিশেষ দলের জনপ্রিয় সব নেতাদেরকে টার্গেট করে করে আজ বিচার করে চলছে। জাতিকে যুদ্ধাপরাধের দায় থেকে তথাকথিত পরিত্রানের নামে মানবতাবিরোধী কর্মকান্ডের টাটকা গন্ধযুক্ত চাদরে আবৃত শরীর নিয়ে নিজেরাই এখন মানবতার মহান দূত সেজে বসে আছে। আর ভিন্নমতের মিডিয়ার কন্ঠে স্কচটেপ লাগিয়ে নিজেদের দুর্নীতির টাকায় চালিত গুটিকয়েক হলুদ মিডিয়ার মাধ্যমে অনবরত তার বানী বাজিয়ে চলছে।
তাই নতুন প্রজন্মের কাছে স্বভাবতই কয়েকটা প্রশ্ন জাগে। আমরা কী সত্যি ৭১ সালের যুদ্ধাপরাধের দায় থেকে মুক্ত হতে চলছি? জামায়াতের যে সব নেতাদের এই বিচারের আওতায় এনে যাদেরকে আজ ফাঁসী দেওয়ার বন্দোবস্ত করা হচ্ছে তাদের ফাঁসী দিলেই কী দেশ সম্পূর্ণ পঙ্কিলতা মুক্ত হয়ে যাবে? আমরা কী এই নিশ্চয়তা পাব যে এর পর থেকে দেশে আর একটিও খুন হবেনা? ধর্ষন হবেনা কোন নারী? দেশের কোন মন্ত্রী বা আমলা আর এরপর থেকে দূর্নীতি করবেনা? ছাত্ররা টেন্ডারবাজী আর পিস্তলবাজীর পরিবর্তে শুরু করবে উৎপাদনমুখী মেধার রাজনীতি? চাকরিতে স্বজনপ্রীতি ও অযৌক্তিক কোটার পরিবর্তে করা হবে মেধা ও যোগ্যতার মূল্যায়ন? দেশ হবে প্রকৃতই ক্ষুধা, দূর্নীতি ও দারিদ্র্যমুক্ত? জামায়াতের এসব নেতাদের তথাকথিত পঙ্কিল রক্ত কী আসলেই পারবে মুক্তিযুদ্ধে স্বজন হারিয়ে শোকে পাথর হৃদয়গুলোকে প্রশমিত করতে? প্রকৃত অপরাধীর কৃতকর্মের প্রায়শ্চিত্ত হয়েছে জেনে কবরে শায়িত শহীদের অতৃপ্ত আত্মাগুলো এখন থেকে পরম তৃপ্তিতে পারবে কি ঘুমিয়ে থাকতে?
বুকে হাত দিয়ে প্রত্যেকের বিবেকের কাছে আজ নিজ থেকেই এসব প্রশ্ন তুলা উচিত। সত্যিই কী এই বিচারের মাধ্যমে যাদেরকে আজ জাতির সামনে অপরাধীর কাঠগড়ায় তুলেছি তাদের শাস্তি কার্যকরের মধ্য দিয়ে আমরা বাংলাদেশকে প্রকৃত অর্থেই একটা মানবতা বান্ধব দেশ হিসাবে বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে সক্ষম হবো? আন্তর্জাতিক সাইনবোডে দেশীয় আদালত, আন্তর্জাতিক আইনের নাম ভাঙ্গিয়ে দেশীয় আইন, বিচার প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক মানদন্ড বজায় রাখার প্রত্যয়ে আসামী স্বাক্ষী গুম, বিদেশী আইনজীবি নিষিদ্ধ, স্কাইপি কেলেঙ্কারী, সরকারী হস্তক্ষেপের অভিযোগ, আসামী নির্বাচনে শুধুমাত্র বিশেষ দলকে টার্গেট এসব কিছুকে ছাপিয়ে ইতিহাস কী পারবে এই বিচারের নিরপেক্ষতাকে বিতর্কের উর্ধ্বে রাখতে? যদি এসব ক্ষেত্রে বিবেকের উত্তর হ্যাঁ বোধক সাই না দেয় তবে প্রত্যেক বিবেকবান মানুষকে এখনই ভেবে দেখা দরকার এই গুটিকয়েক টার্গেটকৃত মানুষকে ফাঁসীর দড়িতে ঝুলতে দেখে নিজেরদেরকে মানবতার প্রতীক হিসাবে আত্মতৃপ্তি ঢেকুর তোলা কতটা আবেগমুক্ত।
বিষয়: রাজনীতি
২০৭৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন