অতি আনন্দের সংবাদটা হজম করতেও যে অশ্রুবিন্দু বিসর্জন করা লাগে সেটা টের পেলাম যখন ...................
লিখেছেন লিখেছেন রোজবাড ০৯ মে, ২০১৩, ০৯:৫৬:১১ রাত
আজ এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট দিল। জীবনে অনেক পরীক্ষায়ই তো দেওয়া হয়। তবে এর মধ্যে বোধ হয় এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের দিনটির একটু আলাদা বিশেষত্ব আছে সবার জীবনে। সারাদেশের ছেলেমেয়েদের আনন্দোৎসব দেখে আমার মধ্যেও কেমন যেন একটা নস্ট্রালজিয়া ভাব জেগে উঠলো। অতীত স্মৃতি হাতড়িয়ে এই মুহূর্তে একটু ফিরে যেতে ইচ্ছা করছে জীবন থেকে হারিয়ে ফেলা একযুগের ও অধিক আগের ঠিক এমনই একটা দিনে। যে দিনটির স্বরণীয় মুহূর্ত এখনো আমাকে আন্দোলিত করে।
দুরু দুরু বুক নিয়ে সেদিন বাইসাইকেল চেপে গ্রাম থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে থানা শহরে গিয়েছিলাম নিজের রেজাল্ট আনতে। আশানরূপ ফল নিয়ে ফেরার পথে যেনো আর ত্বর সচ্ছিলনা। বাড়ীতে ফিরে আব্বা আম্মাকে জানালাম। আম্মা তো খুশির সব গুলো লক্ষণ একযোগে প্রকাশ করে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জ্ঞাপন করলো। কিন্তু আব্বার মুখপানে চেয়ে আমি একটু অবাকই হয়েছিলাম। নিশ্চল, নিশ্চুপ, প্রতিক্রিয়াহীন। যেনো শোনেনই নি। একটু পর যখন লক্ষ করলাম তার চোখের কোণা দিয়ে কয়েকটা অশ্রুবিন্দু গড়িয়ে পড়ছে। তখন কী উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম তার অনুভূতির মাত্রার গভীরতা কত!
সেদিন না বুঝলেও আজ ঠিকই বুঝতে পারলাম। অতি আনন্দের সংবাদটা হজম করতেও যে অশ্রুবিন্দু বিসর্জন করা লাগে সেটা টের পেলাম যখন ছোট ভাইয়ের রোল নম্বরটা শিক্ষাবোর্ডের ওয়েবসাইটে বসিয়ে সাবমিট বাটনটা প্রেস করলাম। কেউ প্রত্যাশার চেয়ে বেশী কিছু উপহার দিলে বুঝি অনুভূতি এতো তীব্রই হয়। গতকাল যখন আম্মাকে ফোন করি কাল তো রেজাল্ট দিবে তা ওর প্রতিক্রিয়া কী? জবাবে আম্মা যেটা বললো তাতে আমি কিছুটা শঙ্কিত হয়েছিলাম। আজ সকাল থেকেই ও নাকি মোবাইল সহ ঝোপের আড়ালে গা ঢাকা দিবে। সেখান থেকেই ইন্টারনেটে রেজাল্ট দেখবে। যদি সম্মানজনক হয় তবে বের হবে নতুবা নয়। আমি ওর এই অদ্ভুত পরিকল্পনায় একটু হেসেই ফেললাম। আম্মাকে বললাম যদি বের না হয় তবে তোমরা কেউ চেষ্টা করবেনা। আমি ঢাকা থেকে আসছি ওকে বের করতে। ফোন্টা রেখে বিড় বিড় করে বললাম কী আজিব দুনিয়া আসলরে বাবা ঝোপের আড়ালে থেকেও রেজাল্ট দেখা যায়!
যাক আমার আর ঢাকা থেকে বাড়ি যাওয়া লাগেনাই। জিপিএ ৫ পেয়ে শুনলাম বেশ ফুরফুরে মেজাজেই আছে, দিব্যি ঘোরাফেরা করছে। স্যারদের মিষ্টি বিতরণ করেছে। বিকেলে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে বের হইছে।
যাহোক দুইবছর আগের জেএসসির ডি গ্রেড মার্কা রেজাল্টের গ্লানি ঘুচিয়ে আজ সত্যিই ও পরিবারের সবার মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে। নিজে নিয়মিত খোঁজ খবর না নিলেও বুঝতে পারলাম শুধু পাড়ায় পাড়ায় আর গ্রামে গ্রামে ফুটবল আর ক্রিকেট খেলে ঘর ভর্তি ক্রেস্টই জমাচ্ছেনা। পড়ালেখাটাও তাহলে একটু করছে!
পরিশেষে এই লেখার মাধ্যমে তাকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। সেই সাথে পাঠকদের কাছে তার জন্য দোয়াও চেয়ে নিচ্ছি। এই সুযোগে আমার পক্ষ থেকে সকল পরীক্ষার্থীকে যারা আজকে কাঙ্খিত ফলাফল পেয়েছ তাদেরকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে দিলাম। আর যারা আশাহত হয়েছ তাদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে আগামীতে সুন্দরের প্রত্যাশায় আজ এপর্যন্তই।
বিষয়: বিবিধ
৯৭৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন