বেকারত্বের অসহ্য যন্ত্রনা...অতঃপর দেশ ছাড়া......আর এখন!!!!

লিখেছেন লিখেছেন রোজবাড ০১ মে, ২০১৩, ১২:২৪:৪০ রাত

সকালে ইউনিভার্সিটির এক বড়ো ভাইয়ের ফোন পেয়ে ঘুমটা ভেংগে গেল। মাত্র কয়েক সেকেন্ড গড় গড় করে বলে গেলেন। পরীক্ষা আছে তাই আজ বেশী কথা বলতে পারবোনা। এক হাজার ডলার পাঠালাম। ইউনিভার্সিটির কিছু ছোট ভাই সাভার যাবে। ওদের মাধ্যমে এটা দূর্গতদের কাছে পৌছে দিও। ব্যস এতটুকুই! লাইনটা কেটে দিলেন।

মাস্টার্স শেষে হলের বাইরে বাকী তিনটা বছর তিনি ছিলেন আমার রুমমেট। ডিপার্টমেন্টে অনার্স ও মাস্টার্সে আকর্ষণীয় রেজাল্ট করার পরও রাজনৈতিক হিসাব নিকাশের মারপ্যাচে একই ডিপার্টমেন্টে শিক্ষকতার সুযোগটি হাতছাড়া হয়ে যায় তার। এছাড়া সহ্য করতে হয় দুই বছর বেকারত্বের বিষাক্ত যন্ত্রণা। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল গুলোতে আবেদন করলে ডাকতো না আবার ডাকলেও ইন্টারভিউতে পরীক্ষকগণ বলতো আপনি তো আমাদের এখানে থাকবেননা। কাঙ্খিত চাকরি না পেয়েই কষ্টার্জিত টিউশনির টাকা থেকে অল্প অল্প করে কিছু জমিয়ে সেটা দিয়ে একদিন জিআরই আর টোফেল এর রেজিষ্ট্রেশন করে ফেললেন। পরীক্ষার পর স্কোর পেলেন যথাক্রমে ১৪২০ ও ৯৩, যা ছিল তার কাছে সেই সময়ে অনেকটা হতাশার সমুদ্রে হাবুডুবু খেতে খেতে আশার ভেলার সন্ধান প্রাপ্তি স্বরুপ। শুভাকাঙ্খি যারা ছিল তাদের কাছ থেকে কিছু টাকা লোন নিয়ে অ্যামেরিকার কয়েকটা ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি’র জন্য অ্যাপ্লাই করে দিলেন।

তার পরের কয়েকমাস পেইনফুল বেকারত্ব জীবনে তার সে কী আশার অপেক্ষা।

টাকাগুলো তার প্রস্তাব মতো ব্যক্তিদের হাতে পৌঁছে দিয়ে ফিরে আসতে আসতে খুব কাছ থেকে দেখা তার জীবনের এই সংগ্রামী দিকগুলো না চাইতেই স্মৃতিপটে ভেসে উঠলো। আল্লাহর অশেষ রহমত আমার সেই প্রিয় সংগ্রামী ভাইটা আজ ওয়াশিংটন ডিসিতেই একটা ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নরত। পরীক্ষা ও অ্যাসাইনমেন্টের চরম ব্যস্ততার মধ্যেও গত পরশুদিন ফোন দিয়ে প্রায় আধা ঘন্টা কথা বললেন। অনুভব করলাম সাভারের ঘটনায় অনেকের মতোই তার ব্যথিত হৃদয়ের রক্তক্ষরণ। আর আজকে অবলোকন করলাম তার ব্যাথিত হৃদয় নিয়ে সুদূর অ্যামেরিকা থেকেও অসহায় ভুক্তভোগীদের পাশে দাঁড়ানোর একটা ক্ষুদ্র প্রয়াস।

কোটা ও রাজনৈতিক পরিচয়ের আশীর্বাদ ছাড়া যে দেশে চাকুরী জোটেনা, যোগ্যতার শিখরে থেকেও যে রাজ্যে বয়ে বেড়াতে হয় বেকারত্বের যন্ত্রনা সেই দেশের অধিকার বঞ্চিত মেধাবী মুখগুলো যখন দেশ ছেড়ে সুদূর পরবাসে গিয়েও দেশের বিপদে এভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় তখন গর্বে বুকটা ফুলে ওঠে। তাদের দেশপ্রেমের তুলনায় লাল সবুজ পতাকার আদলে তৈরী পোষাকে ঢাকা দেশের মধ্যকার কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষের বিশেষ বিশেষ মুহূর্তে দেশপ্রেমের জোয়ারে নাচানাচি দেখলে আমার কেন যেন সাগরের জোয়ারে ভাসমান মাকাল ফলের কথা মনে পড়ে যায়। যাহোক আমার এই রুমমেট বড়ো ভাইকে আজ স্যালুট না জানিয়ে পারছিনা। সেই সাথে তার মতো সহস্র প্রবাসীদের যারা কিনা দূর দূরান্ত থেকে সাভার ট্রাজেডিতে সাহায্য ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাদেরকেই বা এড়িয়ে যায় কীভাবে! আল্লাহ যেনো আমাকেও এধরণের সংগ্রামী ও দেশপ্রেমী ভালো মানুষদের মিছিলে শামিল করেন।

বিষয়: বিবিধ

১৮৭৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File