আমরা কেউ ভবনে ঢুকতে চাচ্ছিলাম না! বস্রা আমাদের দিকে লাঠি নিয়ে তেড়ে আসার পর বাধ্য হয়ে আমরা কারখানায় যাই!!
লিখেছেন লিখেছেন রোজবাড ২৪ এপ্রিল, ২০১৩, ০৭:৩২:৩৩ সন্ধ্যা
না এটা কোন উপন্যাসের বা মুভির ডায়ালগ না। সদ্য মৃত্যুর দুয়ার থেকে সৌভাগ্যক্রমে ফিরে আসা সাভারের গার্মেন্টস কর্মী নুরুল ইসলামের সরল স্বীকারোক্তি। এই উক্তিটিই প্রমাণ করে সাভারের যুবলীগ নেতা সোহেল রানা’র রানা ভবন ধ্বস নিছক কোন দুর্ঘটনা না। ধ্বসে পড়ার নিশ্চিত ঝুঁকি আছে জানার পরও যেসব মালিকরা তাদের শ্রমিকদের জোরপূর্বক কাজে পাঠিয়েছে তারা আর যায় হোক মালিক না। শ্রমিকদের রক্ত চুষে চুষে বিবর্তনের মাধ্যমে পরিবর্তিত হওয়া মনুষ্যত্ব বিহীন এক ধরণের ভ্যাম্পায়ার। মালিক নামক আশ্রয়দাতার খোলসে আবৃত যেটা। সমাজের প্রভু সেজে বসে থাকা এই ব্যক্তিগুলো কত সহজে পারলো তাদের অধীনস্ত দরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষগুলোকে এভাবে মৃত্যুর দুয়ারে ঠেলে দিতে!
অবশ্য বাংলাদেশে এভাবে ঠান্ডা মাথায় শ্রমিক হত্যা নতুন কিছু নয়। আমরা বাংগালীরা সব সয়ে গেছি কীভাবে যেনো। এইতো দু’তিন দিন। সকল টিভি চ্যানেল ও পেপার পত্রিকায় বিশাল বিশাল কভারেজ। স্বজন হারানোর বেদনায় আকাশ বাতাস ভারী হয়ে যাওয়ার সংবাদ। প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকারের বাঘা বাঘা নেতাদের পক্ষ থেকে বিশাল বিশাল সাহায্যের আশ্বাস। বিরোধীদল থেকে বার্থতার দায়ভার গায়ে মাখতে সরকারকে তুলোধুনা। ব্যস এতটুকুই। তারপর সব আগের মতোই স্বাভাবিক।
প্রাত্যহিক জীবনযাত্রার যে স্বাভাবিকতার ঘোরটোপে হয়তো আমরা আবার খুঁজে পাবো ক্ষমতাশীন দলের আরো অনেক সোহেল রানাদের। প্রশাসনকে বৃদ্ধাংগুলি দেখিয়ে যারা অবৈধভাবে ইতিমধ্যেই গড়ে তুলেছে প্রাসাদপ্রম নতুন নতুন রানা ভবন। যেখানে শ্রমিকদের ঘামের প্রতিটি জলকণার বিনিময়ে একইভাবে চলবে পূজিপতিদের পুঁজি তৈরীর মহোৎসব। তারপর একদিন হয়তো হঠাৎ করে একইভাবে ধ্বসে পড়ার ভয়ংকর কোন শব্দ শুনতে পাবো। অথবা আগুনের লেলিহান শিখার দাও দাও শব্দে বাতাসে সদ্য নরমাংস পুড়ার বিভৎসকর ঘ্রাণ। সেই সাথে কুয়োর ব্যাঙের থেমে থেমে দেওয়া লম্ফঝম্ফের মত সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া সাহায্যের আশ্বাস। দায় থেকে বাঁচতে এটা যেনো ঠিক পুরোনো ঘোষণার এক পুনরাবৃত্তি।
এভাবেই হয়তো নির্বিঘ্নে আমাদের জীবন চলে যাবে। সরকার আসবে সরকার যাবে। কিন্তু ভুক্তভোগী জরিনা, ছকিনা বা রাবেয়াদের পরিবারের জীবন কেমন যাচ্ছে তা আমরা জানিনা। সুখের আবেশে সিক্ত এই হৃদয় কখনো জানতেও চাইনা। গ্রাম থেকে যে অবলা নারী গুলো সুদূর ঢাকায় এসেছিল শুধুমাত্র তাদের বৃদ্ধ বাবা মা’র মুখে দু’বেলা অন্ন জোটানোর জন্য। ছোট্ট ভাই বোনদেরকে ঈদের ছুটিতে একটা নতুন জামা উপহার দেওয়ার জন্য। আর নিজেদের একটা সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখার প্রত্যয়ে। কিন্তু বিনিময়ে তারা প্রতিনিয়ত হয়েছে আগুনের খাদ্য। ভবিষ্যতের রঙ্গিন স্বপ্নগুলো চাপা পড়েছে ভগ্ন কংক্রিটের বিশাল বিশাল খন্ডের নীচে। আর এসবই হয়ে চলেছে সমাজের হর্তা কর্তা সেজে বসে থাকা কিছু দূর্নীতিবাজ ও অতিলোভী শোষক শ্রেনীর আর্শীবাদে!
নিশ্চিন্তপুরের তাজরিন গার্মেন্টসের শতাধিক শ্রমিক পুড়ে কয়লা হওয়ার পরও তার মালিক সরকারের বদৌলতে নিশ্চিন্ত জীবন যাপন করতে পারলেও সেই সব হতভাগা শ্রমিকদের পরিবার কতটুকু নিশ্চিন্ত আছে তা হয়তো আমাদের অজানা। তবে মিডিয়ার বদৌলতে এতটুকু আমরা জানি পরিবারের স্বর্বস্ব হারিয়েও নিমতলীর প্রধানমন্ত্রীর সেই দুই কন্যা ভালো আছেন। কিন্তু কয়জনেরই বা সেই সৌভাগ্য হয়।
লিখতে লিখতে একটু জানালা খুলতেই হঠাৎ বাতাসের একটা ঝাপটা মুখের উপর দিয়ে বয়ে গেলো। সম্বিত ফিরে পেয়ে বুঝতে পারলাম এটা কোন নির্মল দক্ষিণা বাতাস নয়। তাতে আছে রক্তের ঝাঝালো গন্ধ। গন্ধে বিমুঢ় হয়ে উপলব্ধি করলাম বিবেকের দরজায় কার যেনো সজোরে কড়া নাড়ার আঘাত। সেখানে কে যেনো চিৎকার দিয়ে বলছে আমাদের মেয়ে গুলো আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কন্যা সেজে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে চায়না। আমাদের দাবী অতি ক্ষুদ্র। ঠিক আমাদের বেতনের মতো। আমরা চাই যারা ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে আমাদেরকে আর পৃথিবীর আলো বাতাসের মুখ দেখতে দিবেনা সেইসব মালিকরূপী ঘাতকদের দিকে প্রধানমন্ত্রীর একটু শ্যোন্ দৃষ্টি। যে দৃষ্টি বার বার অপরাধ করে পার পেয়ে যাওয়া এসব নরপশুদের অন্তত বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর নিশ্চয়তা দিবে। পরিবারের প্রতি সাহায্যের নামে ফাঁকা সান্ত্বনা আমরা চাইনা। যেটা চাই তা হলো তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি...............
বিষয়: বিবিধ
১৮০৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন