দেশে বিজাতীয় সংস্কৃতির সূক্ষ অনুপ্রবেশ! তাও আবার এক্কেবারে সভ্য, প্রগতিশীলতা ও আধুনিকতার সুগন্ধিযুক্ত মোড়কে! আমরা ইসলামপ্রিয় জনগণ কতটা সচেতন?

লিখেছেন লিখেছেন রোজবাড ০৭ এপ্রিল, ২০১৩, ১০:৩৯:১৯ সকাল

মঙ্গল শোভাযাত্রা, মঙ্গল প্রদীপ জ্বালানো, শহীদ মিনারে ফুল দেয়া, ভাস্কর্য স্থাপন, মেয়ে ছেলের অবাধ মেলামেশা প্রভৃতি ইসলামিক সংস্কৃতির অন্তর্ভূক্ত নয়। শোভাযাত্রা, ফুল দেওয়া বা মঙ্গল প্রদীপ জ্বালানো এসব এসেছে হিন্দু সংস্কৃতি থেকে। আমাদের দেশের প্রগতিশীল দাবীদার রা এই হিন্দুয়ানী সংস্কৃতির বিকাশে খুবই তৎপর। তাদের কাছে এগুলো যেনো প্রগতিশীলতার প্রতীক। একই সাথে তারা মুসলিম সংস্কৃতিকে সেকেলে, মৌলবাদী, রক্ষনশীল, প্রতিক্রিয়াশীল, জংগীবাদী, প্রভৃতি ট্যাগ দিয়ে প্রতিনিয়ত অবহেলার মাধ্যমে দাবীয়ে রাখার প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে।

সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশের এইসব তথাকথিত প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবিদের বিজাতীয় সংস্কৃতির প্রচলনের বিরুদ্ধে দেশের ইসলামপ্রিয় সকলের সচেতন হওয়া জরুরী। সেই সাথে ইসলামী সংস্কৃতির বিকাশে বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মতৎপরতা শুরু করা দরকার। নিজেদের মধ্যে কওমী, আলীয়া, তাবলীগ, জামায়াত, শিবির, চরমোনায় প্রভৃতি ভাবে শত্রুদলের মতো বিভক্ত না থেকে অন্তত ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলোকে কেন্দ্র করে সবার মধ্যে একটা সমন্বয় থাকা দরকার। শত বাধা পেরিয়ে হেফাজতে ইসলামের লাখো মানুষের সমাবেশ এই দিকটাকেই নতুন করে গুরুত্ব সহকারে সামনে নিয়ে এসেছে। রাজনৈতিক বিষয়ে, সামাজিক জীবনের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সিদ্ধান্ত নেওয়া ও কর্মসূচী বাস্তবায়নের স্বরুপ নিয়ে পরস্পরের মধ্যে মতভেদ থাকতে পারে। কিন্তু ইসলামী সংস্কৃতির বিকাশ সাধনে, সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রে, এবং দেশের স্বার্থে প্রত্যেকের কর্মকান্ডের স্বীকৃতির ব্যাপারে সবার শ্রদ্ধা থাকা দরকার। এবং একই সাথে ইসলামের মৌলিক বিষয়ে যখন আঘাত আসে তখন সেই ইস্যু নিয়ে সবার একই মঞ্চে আসা দরকার।

স্বাধীনতা উত্তর এই দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নাম ভাংগিয়ে এমন একটি চেতনা নতুন প্রজন্মের মধ্যে গ্রথিত করার চেষ্টা করা হয়েছে যেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানেই ইসলামী সংস্কৃতির আবহকে চ্ছিন্ন করা। আর এটা করার জন্য অসংখ্য বই লেখা হয়েছে। তৈরী হয়েছে অসংখ্য চলচ্চিত্র। ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্টিং মিডিয়ার মাধ্যমে নিরন্তর চলেছে প্রচারণা। সকল ক্ষেত্রেই প্রচারণার সার বস্তু হলো ইসলামী সংস্কৃতিকে হেও করা। যেমন ভিলেনের চরিত্রকে চিত্রিত করা হয় অশিক্ষিত, চরম প্রতিক্রিয়াশীল, দুশ্চরিত্র সম্পন্ন কোন ব্যক্তিকে কাল্পনিকভাবে মুখে দাঁড়ি, মাথায় টুপি দিয়ে কখনোবা কোন মসজিদের মোয়াজ্জিন বানিয়ে আবার কখনো মওলানা বানিয়ে। আর এই কাল্পনিক চরিত্রগুলো দিয়ে শিশুদের মনে গেঁথে দেওয়া হয় এই জাতীয় লোক গুলো হলো দেশের কীট। তাদের মধ্যে কোন দেশপ্রেম নেই। ৭১ সালে তারা শুধু মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাই করেনি বরং মা বোনদের ধরে ধরে পাকিস্থানী মিলিটারীর হাতে তুলে দিত। ইসলামী ব্যক্তিত্বদের হেয় করার কী সূক্ষ কৌশল।

এসব বিষয়ে আলেম ওলামাদের বছরের পর বছর নীরব ভূমিকা এই অপপ্রচারকারীদেরকে আরো সাহসী করে তুলেছিল। যার ফলশ্রুতিতে মুক্ত চিন্তা বা চিন্তার স্বাধীনতার চটকদার স্লোগানকে সামনে রেখে নতুন প্রজন্মের কিছু ব্যক্তি আবির্ভুত হলো ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট হিসাবে যাদের বুদ্ধিবৃত্তিক লেখালেখির প্রধান টার্গেট হলো ইসলাম, ইসলামী সংস্কৃতি ও ইসলামপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। গভীর কোন জঙ্গলে সদ্য আবিষ্কৃত কোন ক্ষুদ্র উপজাতী গোষ্ঠীর বিরল কৃষ্টি কালচারকে এরা জাতির সামনে আকর্ষণীরুপে তুলে ধরে এবং সেগুলো সংরক্ষণের ব্যপারে বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে পারংগম হলেও ইসলামী সংস্কৃতির ব্যপারে দেখাই প্রচন্ড অ্যালার্জি। যে সংস্কৃতির আবহে তাদের জন্ম, যার মধ্যে তাদের বেড়ে উঠা সেটাকে ঘৃণা করার কী এক অদ্ভুত প্রবণতা এদের মধ্যে।

তাই এখন সময় এসেছে তৌহিদী জনতার চেতনাকে জাগ্রত করার। নতুন প্রজন্মকে নিজস্ব সস্কৃতি ও দেশপ্রেমের আলোকে উজ্জীবিত করে এধরণের অপসাংস্কৃতির আগ্রাসন ও আগ্রাসীদের বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক মোকাবেলা করার। নিজ নিজ অবস্থান থেকে নিজেদের সংস্কৃতির মহিমা তুলে ধরা ও বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশের ব্যপারে জাতিকে সতর্ক করার মাধ্যমেই এটা সম্ভব।

বিষয়: বিবিধ

১২৪৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File