মসজিদে মহিলাদের জন্য আলাদা জায়গা রাখা জরুরী
লিখেছেন লিখেছেন শরফুদ্দিন আহমদ লিংকন ২৫ মার্চ, ২০১৩, ১১:১১:২৭ রাত
হাদীসের ভাষ্যমতে মহিলাদের জন্য মসজিদে নামায পড়ার চাইতে নিজ ঘরে নামায আদায় করা উত্তম।
হযরত উম্মে হুমাইদ আস সাআদী রা. থেকে বর্ণিত- একবার তিনি রাসুলুল্লাহ সা. এর নিকট এসে আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আপনার পিছনে নামাজ আদায় করতে চাই। নবী করীম সা. উত্তরে ইরশাদ করলেন, আমি ভালো করেই জানি, তুমি আমার পিছনে নামাজ আদায় করতে চাও। কিন্তু তোমার জন্য তোমার রুমে নামাজ আদায় করা অন্য রুমে আদায় করার চেয়ে উত্তম। আর তোমার ঘরের কোনো রুমে আদায় করা বাড়িতে আদায় করার চেয়ে উত্তম। আর তোমার বাড়িতে নামাজ আদায় করা কওমের (এলাকার ) মসজিদে আদায় করার চেয়ে উত্তম। আর তোমার কওমের (এলাকার ) মসজিদে নামাজ আদায় করা আমার পিছনে নামাজ আদায় করার চেয়ে উত্তম। এরপর ঐ মহিলা তার অন্ধকার কুঠরিতে নামাজের জন্য জায়গা নির্ধারণ করে নেয়। এবং মৃত্যু পর্যন্ত সেখানেই নামাজ আদায় করতে থাকে।-মুসনাদে আহমাদ : ৩৭/৪৫
হযরত ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন- নবী করীম সা. ইরশাদ করেন- মহিলাদের ঘরে নামাজ আদায় করা বৈঠকখানায় নামাজ আদায় করার চেয়ে উত্তম। মহিলাদের থাকার ঘরে নামাজ আদায় করার চেয়ে গোপন প্রকোষ্ঠে নামাজ আদায় করা অধিক উত্তম।-আবু দাউদ: ১/২২৩
হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, হযরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরমায়েছেন, ‘‘মহিলাদের উত্তম মসজিদ হলো তাদের ঘরের অভ্যন্তর”। আবু দাউদ/২, মসনদে আহমাদ/২।
বুঝা যাচ্ছে মহিলাদের নিজ ঘরে নামায আদায় করলেই বেশি সাওয়াব। আর এটা তাদের জন্য বিশাল একটা সুযোগ। কারন কষ্ট করে মসজিদে গিয়ে নামায আদায় করলে পুরুষের যে সাওয়াব হয় সে সাওয়াব বা তার চেয়েও বেশি সাওয়াব তারা ঘরে বসেই অর্জন করতে পারেন।
তবে কেউ যদি মসজিদে গিয়ে নামায আদায় করতে চায় তাহলে তাকে বাধা দিতে হাদীসে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৮৮৬; সহীহ বুখারী, নামায অধ্যায়, হাদীস নং-৮৩২)
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সময়ে মসজিদে মহিলারা শুধুমাত্র নামাযের জন্যই প্রবেশ করেন নি বরং দ্বীনি আলোচনা শুনার জন্যও তাঁরা মসজিদে যেতেন। তবে পুরুষ ও মহিলাদের প্রবেশ পথ ও বসার জায়গা আলাদা ছিল।
হাদীস হতে জানা যায় মসজিদে পুরুষের জন্য সর্বোত্তম হলো প্রথম সারি আর মহিলাদের জন্য সর্বোত্তম হলো পিছনের সারি। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ৮৮১)
পশ্চাত্যে বা আরবে বেশীরভাগ মসজিদেই মেয়েদের নামাজ পড়ার আলাদা জায়গা রাখা হয়।
সুতরাং বুঝা যাচ্ছে কোন মহিলা মসজিদে যেতে চাইলে তাকে বাধা দেয়া ইসলামের দৃষ্টিতে অবৈধ। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমাদের দেশে অনেকেই মনে করে মহিলারা মসজিদে গেলে মসজিদ অপবিত্র হয়ে যায়। কয়েক বছর আগের একটি কথা মনে পড়লো। আমাদের গ্রামের বাড়ির মসজিদের সাথে একটি হাফজিয়া মাদ্রাসা আছে। সাধারণত ছাত্রদের অবিভাবকেরা তাদের জন্য খাবার দিয়ে যায়। একবার এক ছাত্রের মা খাবার নিয়ে এসে কাউকে পেলো না। সম্ভবত তখন সবাই অন্য কোন কাজে ব্যস্ত ছিল। উনি বেশ কিছুক্ষন খোজার পরও না পেয়ে ভাবলেন মনে হয় মসজিদের ভিতরে আছে। মসজিদ খোলা ছিল। তাই মসজিদে প্রবেশ করে খোঁজ করলেন উনার ছেলেকে। পরে যখন বিষয়টি জানাজানি হলো, তখন কেউ কেউ এমন কথা বলতে লাগলো যেন উনি মসজিদে ঢুকে বিশাল অপরাধ করে ফেলেছেন।
আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) বলেছিলেন:
"আমি রাসুল (সাঃ) কে বলতে শুনেছি-তোমাদের স্ত্রীগণ যখন তোমাদের কাছে মসজিদে যাওয়ার জন্য অনুমতি প্রার্থনা করে তখন তাদেরকে বাধা দিও না।" তার ছেলে বেলাল বললেন: আল্লাহর কসম! অবশ্যই আমি তাদেরকে বাধাঁ দেব। তিনি তার কাছে গিয়ে তাকে ভৎসনা করলেন;তাকে কটু কথা বললেন;যা তার কাছ থেকে আমি (বর্ণনাকারী;সালেম বিন আব্দুল্লাহ বিন উমার) কখনও শুনিনি। আর বললেন: আমি বলছি রাসুল (সাঃ) এর কথা আর তুমি বলছ অবশ্যই বাধা দেব???!!! (মুসলিম শরীফ: হাদীস নং ৪৪২)
মুসনাদে আবি ইয়ালা তে এসেছে- তখন তিনি ছেলেকে থাপ্পড় দিয়েছিলেন। (হাদীস নং ২০০৬)
আজকাল আমরা মাঝে মাঝে দেখি, নামাযের সময় হলে পুরুষ মানুষ নামায পড়তে মসজিদে যায় আর তার সাথে থাকা মহিলা মসজিদের বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকে। কিন্তু নামায তো তার উপরেও ফরজ। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমাদের দেশে হাতে গোনা কয়েকটি মসজিদ ছাড়া অন্য কোন মসজিদে মহিলাদের নামাযের জন্য কোন ব্যবস্থাই নাই। যার ফলশ্রুতিতে নিতান্ত প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া নামাযী মহিলাদের নামায ক্বাযা হবার সম্ভাবনা থাকে। এখন মনে পড়লো, একবার আমি আর আমার নানু এক জায়গায় যাচ্ছিলাম। দিনটি ছিল জুমাবার। নামাযের সময় হলে গাড়ি থামিয়ে নামযের বিরতী দেয়া হলো। আমি নামায পড়তে মসজিদ যেতে পারলেও নানুকে গাড়িতেই বসে থাকতে হলো।
মহিলাদের জামায়াতের বিপক্ষে অনেক ইসলামী বিশেষজ্ঞ মত প্রকাশ করেছেন। কিন্তু মসজিদে মহিলাদের জন্য আলাদা জায়গা রাখার বিষয়ে কারো কোন দ্বিমত নেই। পুরুষদের থেকে আলাদা করে যদি মসজিদে মহিলাদের জন্য নামাযের জায়গা রাখা হয়, তাহলে ভ্রমণ পথের ও স্কুল কলেজে পড়াশুনা করা এবং বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত মহিলারা যেখানেই নামাযের সময় হবে সেখানেই নামায পড়তে পারবে। তাদের নামায ক্বাযা হবারও আর কোন সম্ভাবনা থাকবে না।
এ বিষয়টিকে আমার কাছে অতীব গূরুত্বপূর্ন বলে মনে হয়। কারন নামায নারী পুরুষ সবার উপরই ফরজ। আর মসজিদে নারী পুরুষের নামাযের স্থান আলাদা হলে ফিতনার কোন সম্ভাবনাও থাকবে না ইনশাআল্লাহ। তাই এ বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য সচেতন ও বুদ্ধিজীবি মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
বিষয়: বিবিধ
২০৯৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন